Ajker Patrika

দুদকের ৪ বছরের হয়রানির অবসান, বিডিনিউজ সম্পাদক খালিদীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১: ৪৩
দুদকের ৪ বছরের হয়রানির অবসান, বিডিনিউজ সম্পাদক খালিদীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার

চার বছর হয়রানি করার পর অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিরুদ্ধে ‘অবৈধ সম্পদ অর্জনের’ অভিযোগে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন মামলা প্রত্যাহারের আবেদন গ্রহণ করেন তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে অব্যাহতির আদেশ দেন। 

সেই সঙ্গে মামলাসংশ্লিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করার আদেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে দুদকের বিশেষ পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জানান।

দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হকের সই করা মামলা প্রত্যাহারের আবেদনে বলা হয়, ক্রিমিনাল ‘ল’ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৫৮–এর ১০(৪) ধারা ও ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৫ ধারার বিধানে দুদক মামলাটির প্রসিকিউশন প্রত্যাহারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহারসহ তাদের কোনো সম্পদ ক্রোক, অবরুদ্ধ ও বিদেশ গমনের নিষেধাজ্ঞা থাকলে তার সকল দায় হতে তাদের অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৩০ জুলাই মামলাটি দায়ের করেন। গত ২৫ এপ্রিল এই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, কোনো ধরনের বৈধ উপার্জন ছাড়াই তৌফিক ইমরোজ খালিদী এইচএসবিসি, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট  ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন হিসাবে ৪২ কোটি টাকা জমা রেখেছেন। ‘ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে’ তিনি এসব টাকা অর্জন করেছেন বলে মামলায় অভিযোগে বলা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগও করা হয়।

তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তিনি বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন। তিনি আদালতে বলেছেন, ‘এ অভিযোগ এতটাই হাস্যকর, যুক্তিহীন ও ভিত্তিহীন যে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতাকে তা গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে।’

চার বছরের আইনি লড়াই
২০১৯ সালের শেষ ভাগে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের কাছ থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ পাওয়ার প্রতিবেদন নিজস্ব পোর্টালে প্রকাশ করার সপ্তাহ দুই পর এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়।

বিনিয়োগের ওই টাকাই ‘অবৈধ প্রক্রিয়ায়’ অর্জন করা হয়েছে অভিযোগ করে সাড়ে আট মাস পর মামলা দায়ের করে দুদক। এজাহারে বলা হয়, তৌফিক ইমরোজ খালিদী চারটি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে ৪২ কোটি টাকা জমা রেখেছেন, যার ‘বৈধ কোনো উৎস’ দুদক পায়নি।

এরপর কেটে যায় তিন বছর নয় মাস। তৌফিক ইমরোজ খালিদীর জামিন আটকাতে বারবার চেষ্টা করেছে দুদক, লাভ হয়নি। বরং তৌফিক ইমরোজ খালিদীর আবেদনে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না–তা জানতে চাওয়া হয়েছে সেখানে।

সেই রুল নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই সম্প্রতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানকে তাঁর বর্তমান কর্মস্থল ময়মনসিংহ থেকে ডেকে এনে প্রতিবেদন দিতে বলে কমিশন। তিনি অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর গত ১৮ এপ্রিল কমিশন সভায় তা অনুমোদন করা হয়।

পরে দুদক বক্তব্য পাল্টে বলেছে, এইচএসবিসি, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মূল কোম্পানি এবং প্রধান সম্পাদকের বিভিন্ন হিসাবে ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬৭ টাকা ‘ফ্রিজ’ বা অবরুদ্ধ করে রাখা আছে, তার ‘বৈধ কোনো উৎস নেই’।

কোম্পানির শেয়ার বিক্রির টাকাই যে ওই সব অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে, সে কথা দুদকের এজাহারেও ছিল। অথচ অভিযোগপত্রে দুদক বলছে, তৌফিক ইমরোজ খালিদী ওই সম্পদ ‘অসাধু উপায়ে’ অর্জন করেছেন, যা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে ‘সংগতিপূর্ণ নয়’।

এই কারণ দেখিয়ে ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭ (১) ধারা এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় চার্জশিট অনুমোদন করার কথা বলছে দুদক।

অনুসন্ধান, তলব এবং মামলার এজাহার—সবগুলো পর্যায়ে দুদকের লিখিত ভাষা যেভাবে বারবার বদলে গেছে, তাকে এর আগে ‘দুদকের গোল পোস্ট বদলের নমুনা’ হিসেবে দেখিয়েছিলেন তৌফিক ইমরোজ খালিদীর একজন আইনজীবী।

তাঁর জামিন বাতিলের জন্য ২০২০ সালে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গিয়েছিল দুদক, তা খারিজ করে দিয়ে আপিল বিভাগ কমিশনের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেছিল, এসব আবেদন নিয়ে এসে কেন তিনি আপিল বিভাগের ‘সময় নষ্ট’ করছেন।

মামলাটিকে ‘অসার ও নিবর্তনমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করে ন্যায়বিচারের স্বার্থে তা বাতিলের জন্য ২০২২ সালের এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে হাইকোর্টে একটি আবেদন করেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।

তার আবেদনে বলা হয়, দুদকের দায়ের করা ওই এজাহারে আইন অনুসারে ‘প্রাইমা-ফেসি’ বা প্রাথমিক সারবত্তা নেই। মামলাটি ‘অসার, গোলমেলে, নিপীড়নমূলক’। এটি চালিয়ে যাওয়া হবে আদালত ও আইনগত প্রক্রিয়ার অপব্যবহার। তাই ‘চূড়ান্ত ন্যায়বিচারের স্বার্থে’ এটির কার্যক্রম বাতিল চাওয়া হয়।

আরজিতে যুক্তি দেওয়া হয়, এফআইআরে বলা অভিযোগ যদি সত্য বলে ধরেও নেওয়া হয়, তাহলেও তা দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনে বিচার্য নয়।

এজাহারে অর্থের উৎস নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তা খণ্ডন করে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর আবেদনে বলা হয়েছে, স্বীকৃতভাবে শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে ওই টাকা অর্জন করা হয়েছে। তাই বিক্রি করা শেয়ারের অর্থের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে তা শেয়ার ক্রয়কারীকে করা উচিত।

তা ছাড়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের দপ্তর থেকে যথাযথভাবে নিবন্ধিত একটি বেসরকারি কোম্পানি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। সুতরাং, শেয়ার বিক্রির জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে জানানোর বাধ্যবাধকতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রযোজ্য নয়।

এরপর পৌনে দুই বছরে বেশ কয়েকবার এ মামলার তারিখ পড়ে। দুদকের পক্ষ থেকে বারবার সময় চেয়ে শুনানি পেছানো হয়। কয়েকটি তারিখে দুদকের আইনজীবী হাজির না থাকায় শুনানি করা যায়নি।

শেষ পর্যন্ত খালিদীর করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ চলতি বছরের ২ জানুয়ারি রুলসহ আদেশ দেন।

দুদকের করা এ মামলা কেন বাতিল করা হবে না, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয় রুলে। দুদক চেয়ারম্যান এবং ঢাকার জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত