Ajker Patrika

নেত্র নিউজের অনুসন্ধান

এনআইডি প্রকল্পে দুর্নীতি: কে এই রহস্যময় ‘মিস্টার জি’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৫, ১৩: ৫৬
এনআইডি প্রকল্পে দুর্নীতি এই রহস্যময় ‘জি’ সম্পর্কে দেশে কোনো তথ্য প্রকাশ হয়নি। ছবি: নেত্র নিউজ
এনআইডি প্রকল্পে দুর্নীতি এই রহস্যময় ‘জি’ সম্পর্কে দেশে কোনো তথ্য প্রকাশ হয়নি। ছবি: নেত্র নিউজ

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনে একটি বৈঠকে ফরাসি প্রযুক্তি সংস্থা ওবার্থারের জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল এক রহস্যময় ব্যক্তিকে, যার কোড নাম ছিল ‘মিস্টার জি’। আপাতদৃষ্টিতে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ হলেও, বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রকল্পের বিষয়ে তাদের সহযোগিতা অনেক আগেই নীরবে শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই ‘মিস্টার জি’, যিনি কোটি কোটি টাকা ঘুষ পকেটে ভরতে প্রস্তুত ছিলেন, তিনিই একটি বহুস্তরীয়, সুসংগঠিত দুর্নীতির নেটওয়ার্ককে একসূত্রে গেঁথেছিলেন।

এই লন্ডন বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে দুর্নীতির গন্ধ পাওয়ার অন্তত এক মাস পর। বিশ্বব্যাংক এই নেটওয়ার্কের ওপর নজর রাখে। এখানে তারা যোগসাজশ ও ঘুষের সন্দেহ করছিল। ওবার্থারের একজন কর্মী বিশ্বব্যাংককে জানিয়েছিলেন, ‘মিস্টার জি’-কে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল এবং অনুমান করা যেতে পারে এই ব্যক্তির কিছু প্রভাব রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সাত সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এবং একটি ফরাসি নিষ্পত্তি নথিতে তাঁকে কেবল ‘জি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জড়িতদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ চিঠিপত্রে তাঁকে ‘জেনারেল’ বলা হতো। তিনি মূলত একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, যিনি প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা হয়েছিলেন এবং ট্রেডমার্ক গোঁফের জন্য পরিচিত ছিলেন। তবে ‘মিস্টার জি’-এর নাম কখনো প্রকাশ্যে আসেনি।

এই ‘মিস্টার জি’ কে?

বাংলাদেশি সাংবাদিকদের পরিচালিত সুইডেন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজ বছরের পর বছর ধরে, ওয়াশিংটন, প্যারিস, লন্ডন, জেনেভা এবং ঢাকা জুড়ে এই ঘটনার ধারাবাহিকতা অনুসরণ করেছে। তারা একটি আন্তর্জাতিক দুর্নীতির পরিকল্পনার প্রতিটি অংশকে এক জায়গায় জড়ো করেছে। হাজার হাজার পৃষ্ঠার আদালতের নথি, সম্পত্তির রেকর্ড, করপোরেট পাবলিকেশন, সরকারি মেমো এবং সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে, পরিচালিত অনুসন্ধানে তারা একটি আন্তর্জাতিক ঘুষের ঘটনা উন্মোচিত করেছে। এই দুর্নীতির সঙ্গে বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ দেশের ভেতরে প্রায় অজানাই থেকে গেছে। যদিও এটি বিদেশে উন্মুক্ত রেকর্ড ও নথিপত্র এবং আইনি সিদ্ধান্তে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

নেত্র নিউজের অনুসন্ধানে দেখেছে, ঘটনা পরম্পরা ও ব্যক্তির বিবরণ শুধু একজন ব্যক্তির প্রোফাইলের সঙ্গে মেলে, তিনি মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় এবং ১৫ বছর ধরে তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত সাতজন আনুষ্ঠানিক উপদেষ্টার মধ্যে—যাদের সবাই মন্ত্রীর পদমর্যাদার ছিলেন—তারেক সিদ্দিকীই একমাত্র সামরিক বাহিনীর ব্যক্তি ছিলেন। সেই সময়ে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন যার গোঁফ ছিল!

বিশ্বব্যাংকের তদন্তকারীরা কোড-নেমটিকে ই-মেল, টেক্সট মেসেজ এবং সাক্ষীর সাক্ষ্য ব্যবহার করে একজন বাস্তব ব্যক্তির সঙ্গে মিলিয়েছেন। ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) সতর্ক করার পর ফরাসি প্রসিকিউটররা ওবার্থারের প্যারিস সদর দপ্তরে অভিযান চালান এবং আরও প্রমাণ জব্দ করেন।

যেভাবে দুর্নীতি হয়

এনআইডি প্রকল্পের ঘটনাপ্রবাহ শুরু হয় ২০১১ সালে। ওই সময় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ডিজিটালাইজড বায়োমেট্রিক ভোটার-নিবন্ধন প্রকল্পের জন্য ১৯৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) ঋণ অনুমোদন করে। যদিও নির্বাচন কমিশন এই চুক্তির তদারকি করছিল, এর প্রকল্প ইউনিটে মূলত সামরিক কর্মকর্তারা বেসামরিক দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। এই সামরিক ব্যাক-চ্যানেলটি পরে সিদ্ধান্তমূলক ছিল বলে প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ, নেপথ্যে থেকে তাঁরাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন।

কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক কাজ করার পর, কমিশন ২০১৪ সালের এপ্রিলে দরপত্র আহ্বান করে। প্যারিস-ভিত্তিক নিরাপত্তা-মুদ্রণ সংস্থা ওবার্থার টেকনোলজিস এই কাজ পায়। এর বাংলাদেশি সাব-কন্ট্রাক্টর ছিল টাইগার আইটি। এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে ছিলেন জনৈক জিয়াউর রহমান। বিশ্বব্যাংকের তদন্তকারীরা পরে আবিষ্কার করেন, প্রথম দরপত্র জমা দেওয়ার অনেক আগেই সবকিছু সাজানো হয়ে গিয়েছিল।

দরপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার আট মাস আগে, জিয়াউর রহমান ওবার্থার এবং অন্য একটি সরবরাহকারীকে ভবিষ্যতের চুক্তির গোপনীয় শর্তাবলি ও বিবরণের একটি অনুলিপি ই-মেইল করেছিলেন। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঠেকিয়ে দেওয়া যায় এমন ধারাগুলোতে তাদের মতামত চাওয়া হয়। তিনি উভয় কোম্পানিকে কাজে লাগিয়ে দরপত্রটিকে এত সুনির্দিষ্টভাবে পুনর্গঠন করেছিলেন যে প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলো শর্তাবলি পূরণ করা প্রায় অসম্ভব হবে।

তদন্তকারীরা উপসংহারে পৌঁছেছেন, জিয়াউর রহমানের এই বিশেষ অভ্যন্তরীণ তথ্য প্রাপ্তি তারেক সিদ্দিকীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কারণে সম্ভব হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের একজন আত্মীয় নেত্র নিউজকে জানিয়েছেন, তিনি সেই সময় জেনারেল সিদ্দিকীর বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো আনুষ্ঠানিক কর্তৃত্ব না থাকা সত্ত্বেও, তারেক সিদ্দিকী সেনাবাহিনী-পরিচালিত এই প্রকল্পের ওপর প্রভাব বিস্তার করতেন।

নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে চুক্তিটি চূড়ান্ত করে এবং এক মাস পরে স্বাক্ষর করে। এর পরপরই, তারেক সিদ্দিকী মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিশ্চিত করেন, যাতে কার্ডের অর্ডার ৭০ মিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ৯০ মিলিয়ন করা যায়। এর বিনিময়ে, ওবার্থার ৭ লাখ ৩০ হাজার ইউরো ঘুষ দিতে সম্মত হয়। কৌশল হিসেবে এই বিলটি ‘প্রশিক্ষণ কোর্স’-এর নামে দেওয়ার কথা হয়, যদিও কোনো প্রশিক্ষণ হয়নি। ফরাসি তদন্তকারীরা এই অর্থ প্রদানের তথ্য ২০১৫ সালের মার্চে খুঁজে পান।

বিশ্বব্যাংক এবং ফরাসি কর্তৃপক্ষের নথি অনুসারে, সেই সেপ্টেম্বরে একটি দ্বিতীয় এবং আরও লাভজনক চুক্তি হয়। ওবার্থার প্রাথমিকভাবে জাল-বিরোধী হলোগ্রামের জন্য ২ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ইউরো দেয়, এই খরচ ছিল বাজারের চেয়ে অনেক বেশি। এই অর্থ প্রদান জিয়াউর রহমানের মালিকানাধীন একটি যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডেকাটুরের ব্রিটিশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ফরাসি আদালতের নথিপত্র এই কৌশলটি ব্যাখ্যা করেছে এভাবে: ‘এই সেট-আপ টাইগার আইটি এবং ডেকাটুরকে ওবার্থারের কাছে উচ্চ মূল্যে উপকরণ বিক্রি করতে এবং অতিরিক্ত অর্থ “জি” হিসাবে চিহ্নিত একজন বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে সহায়তা করে।’

১০ দশমিক ৮ মিলিয়ন ইউরোর হলোগ্রাম চুক্তির প্রায় অর্ধেক—প্রায় ৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন ইউরো—তারেক সিদ্দিকীর জন্য নির্ধারিত ছিল বলে ফরাসি নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, ওবার্থারের জ্যেষ্ঠ নির্বাহীরা পুরো অর্থ অগ্রিম পরিশোধ করার ক্ষেত্রে সতর্ক ছিলেন। অভ্যন্তরীণ ই-মেইলগুলোতে দেখা গেছে, একজন নির্বাহী অন্যকে সতর্ক করেছিলেন: ‘আমাদের শেষ পর্যন্ত কিছু সুবিধা ধরে রাখতে হবে।’ অন্যথায়, তিনি সতর্ক করেছিলেন, জেনারেল ‘আর কোনো কিছু পরোয়া করবেন না।’ সেই অনুযায়ী, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে চারটি কিস্তিতে মোট ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করা হয়েছিল, যার ফলে সেই পর্যায়ে তারেক সিদ্দিকীর সম্ভাব্য ভাগ ছিল প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ইউরো।

এদিকে, প্যারিস এবং লন্ডনে, যখন আইনজীবীরা এবং পুলিশ হিসাবপত্র এবং যোগাযোগের চেইন নিয়ে কাজ করছিল, তখন তাদের নিজ নিজ সরকার সেই জেনারেলকেই প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিল। ২০২০ সালের প্রথম দিকে—একটি চলমান দুর্নীতি তদন্তের কয়েক বছর পরেও—ফ্রান্সের বিমানবাহিনীর প্রধান জেনারেল ফিলিপ লাভিন ঢাকা সফর করেন এবং তারেক সিদ্দিকীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করেন। এই সফরই পরবর্তীতে সশস্ত্র বাহিনীর মন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লির ঢাকা সফর এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর পারস্পরিক রাষ্ট্রীয় সফর, ড্যাসল্ট রাফাল যুদ্ধবিমান এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির জন্য ফ্রান্সের আগ্রাসী প্রচেষ্টার অংশ ছিল। তারেক সিদ্দিকী, কার্যত বাংলাদেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভূমিকা পালন করে। এই ধরনের কেনাকাটার আলোচনায় তিনি নির্ধারক প্রভাব রাখতেন।

ব্রিটিশ সরকারও বেশ তৎপর ছিল। ২০১৬ সালের শেষের দিকে, বিশ্বব্যাংকের রেফারেলের ভিত্তিতে, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জিয়াউর রহমানের মালিকানাধীন লন্ডনের অফিস এবং দুটি ফ্ল্যাটের একটিতে অভিযান চালায়। টাইগার আইটি অস্বীকার এই অভিযানের কথা অস্বীকার করলেও স্বীকার করে যে, এনসিএ সেই সময় জিয়াউর রহমানের কাঠ থেকে নথি ‘সংগ্রহ’ করেছিল। এই সম্পত্তিগুলো—যার মধ্যে ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি ফ্ল্যাটও ছিল—তাঁর কোম্পানি এনআইডি চুক্তি জেতার অল্প সময়ের মধ্যে অর্জিত হয়েছিল। এনসিএ কয়েক মাস পরে ফরাসি কর্তৃপক্ষকে যখন সতর্ক করে, তখন তারা তদন্ত আরও জোরালো করে। তাদের তদন্ত আরও প্রায় পাঁচ বছর ধরে সমান্তরালভাবে চলতে থাকে। তারা লাখ লাখ কাগজের নথি এবং ইলেকট্রনিক নথি পরীক্ষা করে।

এনসিএ-এর তদন্তের অগ্রগতি সত্ত্বেও, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন, ২০১৯ সালের শেষ থেকে ২০২০ সালের প্রথম দিকের মধ্যে অন্যান্য ইউরোপীয় দূতের সঙ্গে মিলে তারেক সিদ্দিকীকে ইউরোফাইটার টাইফুন কেনার তদবির করার জন্য চাপ দেন। এটি যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি এবং স্পেনের যৌথ নির্মিত একটি কনসোর্টিয়াম যুদ্ধবিমান। তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস আরও এক ধাপ এগিয়ে শেখ হাসিনাকে বরাবর একটি চিঠির অনুমোদন করেন। নেত্র নিউজ সেই চিঠি দেখেছে। বাংলাদেশ এই বিমানটি কিনলে, ‘শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সহযোগিতা’র প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল চিঠিতে।

এই মামলার আইনি লড়াই দীর্ঘায়িত ছিল এবং একাধিক বিচারব্যবস্থায় বিস্তৃত ছিল। কারণ উভয় কোম্পানি নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার জন্য শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী নিয়োগ করে। ফলে প্রসিকিউটরদের মামলার নথি তৈরিতে বেগ পেতে হয়।

২০১৬ সাল নাগাদ, ওবার্থার এবং টাইগার আইটির মধ্যে অংশীদারত্ব—যা পাঁচ বছর আগে একটি অনুরূপ সরকারি প্রকল্পের সহযোগিতার মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল—ভেঙে পড়তে শুরু করে। বিশ্বব্যাংক বিষয়টি জানালে, যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করে এবং বছরের শেষ নাগাদ, জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে নথি চায়।

এ সময় টাইগার আইটি দ্রুত ঢাকায় তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেয়। যেখানে ওই সময় ঢাকায় প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক প্রভাব সবখানে বিস্তার লাভ করেছে। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে, কোম্পানিটি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি স্থানীয় আদালতে ব্যবসায়িক অংশীদারের বিরুদ্ধে ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের মামলা করে।

কয়েক মাসের মধ্যে, এনসিএ বিষয়টি ফরাসি কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করে। এরপর তারা দ্রুত ওবার্থারের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি তদন্ত শুরু করে।

পরে ২০১৯ সালে, বিশ্বব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা বোর্ড তাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রায় প্রকাশ করে, ঘুষের পরিকল্পনাটি বিশদভাবে তুলে ধরে। টাইগার আইটিকে নয় বছরেরও বেশি সময়, ওবার্থারকে তিন বছরের জন্য এবং জিয়াউর রহমানকে—তাঁর বেশ কয়েকটি বিদেশি-নিবন্ধিত কোম্পানিসহ—নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়।

তবে, তারেক আহমেদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।

২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে, জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হয়। তিনি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার স্বামীর ভাই। শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁকেও মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। অবশ্য এর কোনোটিই এনআইডি সংক্রান্ত মামলা নয়।

এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছিল নেত্র নিউজ। কিন্তু তারেক সিদ্দিকী মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।

বিশ্বব্যাংকের ইনটিগ্রিটি ভাইস-প্রেসিডেন্সি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকার করেছে। ওবার্থারের উত্তরসূরি আইডিইএমআইএ জানিয়েছে, কোম্পানিটি তদন্তে সম্পূর্ণরূপে সহযোগিতা করেছে এবং দোষ স্বীকার না করেই মামলা নিষ্পত্তি করেছে। টাইগার আইটি জানিয়েছে, তারা ‘দৃঢ়ভাবে যেকোনো ঘুষের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে।’

এদিকে, তারেক সিদ্দিকীর পরিবার দেশে এবং বিদেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে। গত জানুয়ারিতে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁর স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকী, তাঁর এবং তাঁদের মেয়ের জন্য একাধিক ‘গোল্ডেন পাসপোর্ট’ পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক স্টেটমেন্টে তাঁর নামে ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার দেখিয়ে গোল্ডেন ভিসা পাওয়া চেষ্টা করেছিলেন। নেত্র নিউজ অ্যাকাউন্টের অস্তিত্ব যাচাই করেছে এবং তাঁর নামে মালয়েশিয়ান আরও রিয়েল-এস্টেট হোল্ডিং খুঁজে পেয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ভূমি রেজিস্ট্রি রেকর্ড অনুযায়ী, তাঁদের মেয়ে বুশরা সিদ্দিকী ২০১৮ সালে তাঁর স্বামীর সঙ্গে লন্ডনে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি বাড়ি কিনেছিলেন। কলেজ শেষ করার মাত্র দুই বছর পর এবং একটি ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম শেষ করার কয়েক মাস পরেই এটি কেনা হয়। তবে, কথিত ঘুষের টাকায় সম্পত্তিটি কেনা হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেত্র নিউজ পায়নি।

এদিকে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিক উপদেষ্টা হিসেবে তারেক সিদ্দিকীর বেতন বছরে ৪০ হাজার ডলারের বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ তিনি রাজধানীর দুটি অভিজাত এলাকা, বারিধারা এবং গুলশানে একটি বহুতল বাড়ি এবং একটি অ্যাপার্টমেন্ট, বসুন্ধরায় তিনটি আবাসিক প্লট, দুটি বাংলো এবং রাজধানীর উপকণ্ঠে ১৬ একর জমির মালিক হয়েছে। সরকারিভাবে, এই সম্পদের মূল্য ৩৮ কোটি টাকা বলে অনুমান করা হয়েছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কার্গো ভিলেজে আগুন: বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

বিচার বিভাগ: পদোন্নতির প্যানেলে ১১ শতাধিক কর্মকর্তা

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দেশ থেকে পালানো পুলিশ কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে আনা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫১
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে যাঁরা অপরাধে জড়িত ছিলেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার দুপুরে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

পুলিশের অনেক কর্মকর্তা যাঁরা অপরাধে জড়িত ছিলেন, দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা হবে কি না—প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁরা আইনের চোখে অপরাধী। তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।’

পুলিশের অনেক কর্মকর্তা, যাঁরা সাবেক ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সময় দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের অনেকেই এখন রাজধানীতে ওসির দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের বাছাই করে বাদ দেওয়া হবে।’

নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীর হাতে ম্যাজিস্ট্রেসি থাকবে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন যেহেতু তারা ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার ব্যবহার করছে, নির্বাচনের সময়ও তা বহাল থাকবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কার্গো ভিলেজে আগুন: বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

বিচার বিভাগ: পদোন্নতির প্যানেলে ১১ শতাধিক কর্মকর্তা

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনী প্রশিক্ষণ নিলেন ৪৮ হাজার ১৩৪ পুলিশ সদস্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে পুলিশ বাহিনীর ৪৮ হাজার ১৩৪ সদস্য তাঁদের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। নির্বাচনে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তাঁদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

আজ মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ পুলিশের ৪৮ হাজার ১৩৪ জন সদস্য এ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এর আগে গত ৩১ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণের ওপর ট্রেনিং অব ট্রেইনার্স কোর্স অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, পুলিশের প্রায় দেড় লাখ সদস্য আগামী সংসদ নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁদের প্রত্যেকের কর্মকাণ্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরীক্ষিত হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে দক্ষ ও সুশৃঙ্খল হিসেবে গড়ে তোলাই নির্বাচনী প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বাংলাদেশ পুলিশের চলমান নির্বাচনী প্রশিক্ষণ নিবিড় তদারকির মাধ্যমে পরিচালনার জন্য পুলিশের সকল ইউনিট প্রধানকে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেছেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম যথাযথভাবে মনিটর করা হচ্ছে।

আইজিপি মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য গত বোরবার (২ নভেম্বর) রাজশাহী ও বগুড়া সফর করেছেন। তিনি নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষণার্থী পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ এই নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। চলমান নির্বাচনী প্রশিক্ষণ আগামী মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে পুলিশ সদস্যদের এ ধরনের প্রশিক্ষণ আয়োজন এবারই প্রথম।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশজুড়ে বাংলাদেশ পুলিশের ১৩০টি ছোট ও চারটি বড় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পুলিশ সদস্যদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মোট ৭ লাখ ৬৮ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য—পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং আনসার ও ভিডিপি সদস্য নিরপেক্ষ ও দক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে বিশেষ নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

এর মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার পুলিশ সদস্যকে আইন ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে পুলিশ সদর দপ্তরের মানবসম্পদ বিভাগ প্রণীত নয়টি প্রশিক্ষণ মডিউলের আওতায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া দেশের ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্রে নিয়োগের লক্ষ্যে ৫ লাখ ৮৫ হাজার আনসার ও ভিডিপি সদস্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যার মধ্যে ১ লাখ ৩৫ হাজার সশস্ত্র এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার নিরস্ত্র সদস্য রয়েছেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে গড়ে ১৩ জন নিরাপত্তা সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, বিজিবির ৩৩ হাজার সদস্য (১ হাজার ১০০ প্লাটুন) নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করছেন, যা ডিসেম্বরের ৩১ তারিখের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৬ সালের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৮০ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে মাঠে থাকবে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, নির্বাচনকালীন সমন্বয়ের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর এবং প্রতিটি জেলায় নির্বাচন কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি ক্যামেরা ও বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন চলাকালে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স সারা দেশে প্রস্তুত থাকবে যাতে কোনো নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে। এ ছাড়া নির্বাচন দায়িত্ব পালনের জন্য ১০ হাজার ২৬৪ পুলিশ সদস্য, ২ হাজার ১৪৫ আনসার ও ভিডিপি সদস্য, ৫ হাজার ৫১৩ বিজিবি সদস্য এবং ৬৩৪ কোস্ট গার্ড সদস্য নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কার্গো ভিলেজে আগুন: বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

বিচার বিভাগ: পদোন্নতির প্যানেলে ১১ শতাধিক কর্মকর্তা

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জোটে নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান রেখে আরপিও অধ্যাদেশ জারি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫৪
জোটে নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান রেখে আরপিও অধ্যাদেশ জারি

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে সরকার অধ্যাদেশ জারি করেছে। আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। তবে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ থেকে গতকাল সোমবার অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

সংশোধিত আরপিওতে জোটবদ্ধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতীক পছন্দের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘অনুচ্ছেদ ১১ এর দফা (১) অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ৩ (তিন) দিনের মধ্যে কমিশনের নিকট আবেদন করা হলে, এবং দুই বা ততোধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল যৌথভাবে নির্বাচন করার উদ্দেশ্যে প্রার্থী মনোনয়নে সম্মত হলে কমিশন সেই যৌথ প্রার্থীকে নিজ রাজনৈতিক দলের জন্য সংরক্ষিত নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ দিতে পারবে।'

প্রস্তাবিত আরপিওতে জোট প্রার্থীর নিজস্ব দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছিল। এ বিষয়টি নিয়ে বিএনপি তীব্র আপত্তি জানায়। এটি সংশোধনের আবেদন জানিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠিও দিয়েছিল তারা। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামী বিধানটি রাখার পক্ষে।

আরপিওতে এবার ‘না’ ভোটের বিধানও যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যাচাই-বাছাই বা পর্যালোচনার পর একটি আসন থেকে সদস্য হিসেবে নির্বাচনের জন্য মাত্র একজন ব্যক্তি বৈধভাবে মনোনীত থাকেন অথবা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর মাত্র একজন প্রার্থী অবশিষ্ট থাকেন, সে ক্ষেত্রে নির্বাচনটি একক প্রার্থী এবং 'না ভোট' (No Vote) বিকল্পের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

যদি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কর্তৃক প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা 'না ভোট'-এর সংখ্যা অপেক্ষা বেশি হয়, তাহলে রিটার্নিং কর্মকর্তা জনবিজ্ঞপ্তি দ্বারা ওই প্রার্থীকে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করবেন।

যদি 'না ভোট'-এর সংখ্যা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কর্তৃক প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা অপেক্ষা বেশি হয়, তবে নতুন সময়সূচি ঘোষণা করে সেই নির্বাচনী এলাকায় নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কার্গো ভিলেজে আগুন: বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

বিচার বিভাগ: পদোন্নতির প্যানেলে ১১ শতাধিক কর্মকর্তা

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিচার বিভাগ: পদোন্নতির প্যানেলে ১১ শতাধিক কর্মকর্তা

  • সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় উঠছে আজ।
  • প্যানেলে আছেন দুদকে অনুসন্ধান চলা কর্মকর্তাও।
  • একসঙ্গে এত কর্মকর্তা আগে প্যানেলভুক্ত হননি।
  • ‘নতুন পদ ও আদালতের কারণে সংখ্যা বেড়েছে।’
এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা  
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ২৬
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আইন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি ১১ শতাধিক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতির প্যানেলভুক্ত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় উঠছে। এ সভায় বিষয়টি অনুমোদিত হলে তা আবারও পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। এরপর সময়ে সময়ে ওই প্যানেল থেকে পদোন্নতি দেওয়া হবে।

বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য প্যানেল তৈরি করে রাখা হয়। পদ খালি হলে পর্যায়ক্রমে শূন্য পদে পদোন্নতি দেওয়া হয় ওই প্যানেল থেকে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতির অংশগ্রহণে আজ ফুলকোর্ট সভা ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। বেলা ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের কনফারেন্স রুমে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সুপ্রিম কোর্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদোন্নতির জন্য প্যানেলে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ থেকে জেলা ও দায়রা জজ পদের জন্য ৩৪৫ জন, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদে ২০৭ জন, সিনিয়র সহকারী জজ থেকে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ পদে ৫৫১ জন। সব মিলিয়ে এবারের পদোন্নতির প্যানেলে ১ হাজার ১০৩ জন বিচারিক কর্মকর্তার নাম রয়েছে।

এবারের পদোন্নতির প্যানেলে কয়েকজন বিতর্কিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার নাম রয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। তাঁদের পদোন্নতির বিষয়ে অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ফুলকোর্ট সভা। ফুলকোর্ট সভার মতামত অনুযায়ী পদোন্নতির বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

এবারের মতো এত বেশিসংখ্যক কর্মকর্তার নাম কখনো একসঙ্গে পদোন্নতির প্যানেলে পাঠানো হয়নি বলে জানিয়েছেন একাধিক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সম্প্রতি ১৯১টি জেলা জজের পদ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত পৃথক করায় নতুন আদালত সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণেই একসঙ্গে এত বিচারকের পদোন্নতির জন্য প্যানেল করে রাখতে হচ্ছে।

এ নিয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোছাইনও কিছুটা অনুরূপ জবাব দেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, এবারের ফুলকোর্টে ২০২৬ সালের ক্যালেন্ডার ও পদোন্নতি-সংক্রান্ত কিছু বিষয় অনুমোদনের জন্য রয়েছে। ...আড়াই শর মতো নতুন পদ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাচের একসঙ্গে পদোন্নতির জন্য প্রস্তাব এসেছে। এ কারণে সংখ্যাটা বেশি মনে হচ্ছে। তবে এটি স্বাভাবিক।’

সব মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতির জন্য ডিপিসি (বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি) থাকে। এ কমিটি পদোন্নতির প্যানেল চূড়ান্ত করার পর তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যায়। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে এক দিনেই প্যানেলের সবার পদোন্নতির আদেশ জারি করা হয়। তবে বিচারকদের ক্ষেত্রে প্যানেল চূড়ান্ত করার পর তা সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়। বাছাই কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় ওঠে। সভায় অনুমোদন দেওয়ার পর তা আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যায়। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে ওই প্যানেল আইন মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত থাকে। এরপর পদ খালি হওয়া সাপেক্ষে সময়ে সময়ে আদেশ জারি করা হয়।

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালা ২০০৭ অনুযায়ী সিনিয়র সহকারী জজ পদে পদোন্নতির জন্য সহকারী জজদের এই পদে চার বছর দায়িত্ব পালনের শর্ত পূরণ করতে হয়। সিনিয়র সহকারী জজদের যুগ্ম জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছর, যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছর এবং অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছরের শর্ত পূরণ করতে হয়। তবে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনেক সময় এই নিয়ম মানা হয় না। অনেকেই প্যানেলভুক্ত হয়ে থাকেন বছরের পর বছর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কার্গো ভিলেজে আগুন: বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

বিচার বিভাগ: পদোন্নতির প্যানেলে ১১ শতাধিক কর্মকর্তা

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত