Ajker Patrika

স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতা খুবই কম

ডা. বে-নজির আহমেদ
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২১, ১৩: ১৫
স্বাস্থ্য বিভাগের  সক্ষমতা খুবই  কম

কোভিড-১৯ আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষতগুলো সামনে নিয়ে এসেছে। এই ক্ষত আসলে যুগ যুগ ধরেই স্বাস্থ্য খাতে ছিল। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতা খুবই কম। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অনেক কাজ হয় না। জবাবদিহির অভাব আছে। আর ঘুষ, দুর্নীতি, কাজে গাফিলতি তো আছেই।

আমি যখন স্বাস্থ্যের ডিজি উপদেষ্টা ছিলাম, তখন এই বিভাগের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি। পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাতে খুব কাজ হয়েছে, তা নয়। স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ছুটিছাটা, পদোন্নতি পুরো বিষয়টাকে আমি অটোমেশন করার চেষ্টা করেছিলাম, যাতে কোনো কাজে দীর্ঘসূত্রতা না থাকে। কে কবে ছুটি নিল, কে কোন কাজ করছে, কোন ফাইল কোথায় আটকে আছে—সবকিছু যেন নজরদারিতে থাকে, সেই ব্যবস্থাটা থাকা খুব দরকার। এটা করতে ৯৯ শতাংশ কাজ এগিয়েও ছিল। কিন্তু অটোমেশনব্যবস্থাটা চালু করা যায়নি। কারণ, এটা চালু করলে অনেক ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যেত। অনেকেই এতে আপত্তি জানিয়েছিল। একেবারে শেষ পর্যায়ে গিয়ে সেটা আটকে যায়।

স্বাস্থ্য খাতে জনবলও একেবারেই কম। করোনা সেটা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। কোনো পদ সৃষ্টি করা বা কোনো পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়াটা অত্যন্ত জটিল। স্বাস্থ্যে নিয়োগ দিতে হলে প্রথম একটা ফাইল তৈরি করা হয়। সেটা প্রথমে অধিদপ্তরের আট–দশটা টেবিল ঘোরে। তারপর সেটা যায় মন্ত্রণালয়ে। সেখানে গিয়ে আবার ষোলো–সতেরোটা টেবিল ঘোরে। তারপর এটা যায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। তারপর যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। তারপর আবার ফিরে আসে। যদি এটা প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো পদের নিয়োগ হয়, তাহলে এটা আবার পিএসসিতে যায়। সেখানে আবার টেবিলে ঘোরাঘুরি চলে। এ ছাড়া বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমেও অনেক নিয়োগ হয়।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেসব কমিটিতে দেখা যায় দুটো দল থাকে। একটা দল চিন্তা করে নিয়োগটা কীভাবে ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায়। দক্ষ–যোগ্য লোক নেওয়া যায়।

আরেকটা দল ভাবে কীভাবে পকেট ভারী করা যায়। কীভাবে নিজেদের আত্মীয়স্বজন নিয়োগ দেওয়া যায়। আর রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগে দেনদরবার তো থাকেই।

সবকিছুর শেষে এর বলি হয় সাধারণ জনগণ। আর বেহাল থেকে বেহালতর হয় আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। তবু স্বপ্ন দেখি, এ অবস্থার হয়তো পরিবর্তন হবে। ৫০ বা ১০০ বছর যত সময়ই লাগুক না কেন, ঘুরে দাঁড়াবে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা।

ডা. বে-নজির আহমেদ
সাবেক পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত