Ajker Patrika

গণভোটের প্রশ্ন ও সময় পরিবর্তনের চিন্তা নেই

  • প্রশ্ন সংশোধন করে আপত্তির বিষয়গুলো সংযুক্ত করার দাবি বিএনপির।
  • আপত্তির বিষয়গুলো যে নেই, তা স্পষ্ট করতে বলেছে এনসিপি।
  • জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা দলগুলোর চাওয়া গণভোট আগে হোক।
তানিম আহমেদ, ঢাকা 
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ২১
গণভোটের প্রশ্ন ও সময় পরিবর্তনের চিন্তা নেই

রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারই সিদ্ধান্ত নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো এই আদেশের সরাসরি বিরোধিতা না করলেও নিজ নিজ অবস্থান থেকে গণভোটের সময় ও প্রশ্নসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তনের দাবি তুলেছে। তবে সরকার বলেছে, গণভোটের প্রশ্ন পরিবর্তন করার সম্ভাবনা আপাতত নেই। ভোটের সময় পরিবর্তনেরও চিন্তা নেই সরকারের।

১৩ নভেম্বর জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ জারি করে সরকার। এই আদেশের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। একটি প্রশ্নে চারটি বিষয়ের ওপর জনগণ হ্যাঁ বা না ভোট দিতে পারবে।

গণভোটের প্রশ্নে সংশোধনী এনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নোট অব ডিসেন্ট না রাখার বিষয়টি স্পষ্ট করতে বলেছে। আর জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলোর দাবি, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হোক। তবে ভোটের আগে গণভোট নিয়ে জামায়াত শেষ পর্যন্ত অনড় অবস্থানে থাকবে না বলে সূত্রে জানা গেছে।

গণভোটের প্রশ্ন ও দিনক্ষণ পরিবর্তনে সরকারের কোনো চিন্তাভাবনা নেই বলে জানান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, যে তারিখ (গণভোট) ঘোষিত হয়েছে এবং আয়োজনের সুবিধার্থে সরকার সে তারিখকেই বাস্তবসম্মত মনে করছে। প্রশ্ন পরিবর্তনের বিষয়েও সরকার কিছু চিন্তা করছে না।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিএনপি-এনসিপির দাবি অনুযায়ী গণভোটের প্রশ্ন পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছি না। এ ক্ষেত্রে সরকার একটি বিষয়ে পরিবর্তন করলে, অনেক বিষয় পরিবর্তন করতে হবে। তখন জামায়াতের দাবি অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট করতে হবে। তাই আদেশের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারের সরে আসার সম্ভাবনা দেখি না।’

গণভোটের ফলাফল ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সরকারের দায়িত্বশীলেরা। একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি তো গণভোটে ‘না’ ভোটের প্রচার করতে পারবে না। যদি করে তখন তারা সংস্কারবিরোধী হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিতি পাবে। অন্যদিকে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হলে বাস্তবায়নে বিএনপির ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হবে, সেটি নিয়ে তারা চিন্তিত।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গণভোটের প্রশ্ন নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তারা প্রশ্নের সরাসরি সমালোচনা করতে পারবে না। আবার সমর্থনও করতে পারছে না। বিরোধিতা করলে ভাবমূর্তি সংকটে পড়তে পারে। অন্যদিকে, গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা করছে দলটি। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গণভোট প্রশ্নের ‘ক’ ও ‘খ’ ধারা নিয়ে আপত্তি আছে। যেখানে ‘ক’ ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী হবে, যেখানে প্রক্রিয়া বলতে আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) রাখা হয়নি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ন্যায়পাল, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), ন্যায়পাল, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিয়োগে সাংবিধানিক কমিটি গঠনে বিএনপির আপত্তি রয়েছে।

অন্যদিকে ‘খ’ ধারায় দুই কক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) উচ্চকক্ষ ও উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদনে সংবিধান সংশোধনের বিধানেও বিএনপির আপত্তি আছে। যেখানে আদেশ মানলে বিএনপিকে ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে ভোট দিতে হবে। ‘ক’ ও ‘খ’ ধারাটি পরিবর্তনের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানানো হবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তবে প্রশ্নের ‘গ’ ও ‘ঘ’ ধারা নিয়ে বিএনপির আপত্তি নেই।

বিষয়টি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা স্বাক্ষরিত জুলাই সনদকেই রাষ্ট্র সংস্কারের ভিত্তি হিসেবে দেখছি। সেখানে গণভোটে যেসব বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে, যেসব বিষয়ে গণভোট আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। সেসব বিষয়ের সঙ্গে স্বাক্ষরিত জুলাই সনদের কোনো সাংঘর্ষিক অবস্থা থাকলে, তা পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হবে।’

গণভোটের মূল প্রশ্ন নিয়ে এনসিপির আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার। তবে প্রশ্নের অতিরিক্ত ধারাগুলো নিয়ে দলটির আপত্তি রয়েছে। বিশেষ করে ‘ক’ ধারাটি স্পষ্ট করার দাবি তাদের। সেখানে বলা আছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে। এটাকে এমনভাবে বলা হয়েছে, যে সরকার আসবে, তারা দলীয় অবস্থান অনুযায়ী ব্যাখ্যা করতে পারবে। বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে।

সরোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গণভোটের মূল প্রশ্নটা ঠিক আছে। সেখানে কোনো অস্পষ্টতা নেই। কিন্তু ব্যাখ্যামূলক (ক, খ, গ ও ঘ) প্রশ্নে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে, সেগুলো দূর করা উচিত।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরও বলেন, অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। সেটার মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পড়বে কি? পড়বে না? এটা তো ফাঁকা রাখলে সমস্যা। আবার বলা হয়েছে, স্বাক্ষরিত জুলাই সনদের কথা বলা আছে। সে ক্ষেত্রে কোন কোন দল বলতে পারে, আমরা যেহেতু আপত্তিসহ (নোট অব ডিসেন্ট) স্বাক্ষর করেছি। তাই সেটি কার্যকর হবে। গণভোটে আপত্তিগুলো কার্যকর হবে না—সেটি পরিষ্কার হয়নি।

জামায়াতের পক্ষ থেকে গণভোটের বিষয়ে সরকারকে প্রচার চালানোর অনুরোধ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কোন কোন সেক্টরে পরিবর্তন হবে, সেগুলো তুলে ধরার আহ্বান জানানো হচ্ছে। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল রোববার এক কর্মসূচিতে বলেন, নির্বাচন কমিশন তার ওয়েবসাইটে পাবলিক করতে পারে, সরকারি প্রচারপত্র বিলি করে, জাতীয় প্রচারমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করে, জনগণ যেন এই সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ বলতে পারে। তার প্রয়োজনীয় উৎসাহ দেওয়া, প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে জিনিসটাকে সহজ করা দরকার। তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্যে যেভাবে বলেছেন, সাধারণ স্বল্পশিক্ষিত মানুষ সংস্কারের ইন্টারনাল এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ খুব কমই বোঝে। এটাকে অতি সহজ করে, কিসে আমরা “হ্যাঁ” বলতে যাচ্ছি—সংস্কারে গৃহীত সব বিষয়কে অতি সহজ করে ভোটারদের কাছে, দেশবাসীর কাছে সরকারকে পেশ করতে হবে।’

গণভোটের বিষয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভিডিও তথ্যচিত্র, পোস্টার বানানোসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টেলিভিশন, পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ছাড়াও দেয়ালে টানানো হতে পারে। সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, সেখানে গণভোটে কোন সংস্কারের বিষয়ে মানুষ ভোটে দেবে, সেগুলো আলাদা আলাদা এবং একসঙ্গে প্রচার করা হবে। নির্বাচন পর্যন্ত এ প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন, সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ এবং পিআরে উচ্চকক্ষ গঠিত হলে রাষ্ট্র কাঠামোয় যে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে, প্রচারে সেগুলো তুলে ধরা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বুলেট হাদির বাঁ কানের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে: প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি

মাথায় গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, বাঁ কানের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বুলেট হাদির মস্তিষ্কের কাণ্ড বা ব্রেনস্টেম পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা চিকিৎসাশাস্ত্রে ‘ম্যাসিভ ব্রেন ইনজুরি’ হিসেবে বিবেচিত। তাঁর মতে, আগামী ৭২ ঘণ্টা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং এ সময়ে কোনো নতুন ইন্টারভেনশন করা হবে না।

আজ শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাদির শারীরিক অবস্থা পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সায়েদুর রহমান এসব তথ্য জানান।

সায়েদুর রহমান বলেন, হাদি এখন খুবই ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছেন এবং আগামী ৭২ ঘণ্টাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তাঁকে আপাতত কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসে রাখা হয়েছে, যদিও চিকিৎসকেরা এখনো আশার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না।

সায়েদুর রহমান আরও জানান, গুলি বাঁ কানের ঠিক ওপর দিয়ে মাথায় ঢুকে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। এই পথ বরাবর মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্রেনস্টেমেও ইনজুরি হয়েছে, যা জীবনরক্ষাকারী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি বলেন, ‘এটা আমরা ম্যাসিভ ব্রেন ইনজুরি হিসেবে বিবেচনা করছি। এখন কোনো ধরনের ইন্টারভেনশন সম্ভব নয়। রোগীকে কেবল লাইফ সাপোর্টে ধরে রাখার চেষ্টা চলছে।’

সায়েদুর রহমানের ভাষায়, রোগীকে এখন কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। তবু একটুখানি আশার জায়গা আছে, ‘রোগীর শরীরে এখনো সাইন অব লাইফ আছে। অপারেশনের সময় তাঁর নিজের শ্বাস নেওয়ার কিছু প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছিল।’

তবে পথটা সহজ নয় বলেও জানান ডা. সায়েদুর। তাঁর মতে, হাদি অস্ত্রোপচারের আগেই একবার শকে চলে গিয়েছিলেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে স্থানান্তরের সময় তাঁর নাক ও গলা দিয়ে প্রবল রক্তক্ষরণ শুরু হয়। যদিও আপাতত সেটি নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে।

বিশেষ সহকারী আরও জানান, এখনই আশার কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, দুপুরে পল্টনের বিজয়নগর এলাকায় ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এই হামলা বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত: প্রধান উপদেষ্টা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শুক্রবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠকে তিনি এই মন্তব্য করেন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির হামলা অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকালে অন‍্যতম উদ্বেগজনক ঘটনা। এই হামলা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার ওপর সুপরিকল্পিত আঘাত। এর মাধ্যমে পরাজিত শক্তি দেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই ধরনের হামলার চেষ্টাকে আমরা যেকোনো মূল্যে ব‍্যর্থ করে দিব। জাতির ওপর এই ধরনের অপশক্তির আঘাত কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।

এই হামলার মধ‍্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো অবস্থাতেই এই ধরনের ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দিব না। আঘাত যা-ই আসুক, যত ঝড়-তুফান আসুক, কোনো শক্তিই আগামী নির্বাচনকে বানচাল করতে পারবে না।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা দেশের আপামর জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের সম্মিলিত শক্তি দিয়ে জাতির জন‍্য একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করব।’

সভায় বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান জানান, ওসমান হাদির অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। তাঁর পরিবারের ইচ্ছায় ইতোমধ্যে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যে করেই হোক, দ্রুততম সময়ের মধ‍্যে হাদির ওপর হামলা এবং হামলার পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’ তিনি দেশবাসীকে ওসমান হাদির দ্রুত আরোগ্য কামনায় মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করতে আহ্বান জানান।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এরই মধ্যে হামলার স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন‍্যান‍্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।

তাৎক্ষণিকভাবে সীমান্তে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘হামলাকারীরা যাতে কোনোভাবেই দেশ ছাড়তে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই অভ‍্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থাকার কারণে যাঁরা সম্ভাব্য টার্গেটে পরিণত হয়ে থাকতে পারেন, তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।’

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাচনকালীন যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এবং তাৎক্ষণিক ব‍্যবস্থা নিশ্চিত করতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটি বিশেষ হটলাইন নম্বর চালু করা হবে।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সম্ভাব্য যেসব স্থানে অপরাধীরা লুকিয়ে থাকতে পারে, সেখানে অভিযান জোরদারের সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। প্রধান উপদেষ্টা উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে শিগগির প্রধান প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এবং পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির ভাইয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ, সর্বোচ্চ সহযোগিতার নিশ্চয়তা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৭
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আজ রাত ৯টার দিকে এই টেলিফোন কলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় উপদেষ্টা পরিষদ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও ব্যথিত।’

সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার নিশ্চয়তা দিয়ে ওসমান হাদির ভাইকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি কয়েকজন উপদেষ্টাসহ পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি জরুরি বৈঠক করেছি। হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তার করতে বৈঠক থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, হাদির চিকিৎসার সকল ব্যয় সরকার বহন করবে। তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় দেশে-বিদেশে যেখানে প্রয়োজন হয়, সেখানেই সর্বোত্তম চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে সরকার।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘হাদি আমাদের সবার অতি আপন ও স্নেহের মানুষ। আমরা তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। আমরা তার জন্য দোয়া করছি, আশা করি তিনি দ্রুতই আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসির সম্মতি ছাড়া নির্বাচন কর্মকর্তাদের বদলি না করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে ডিও লেটার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সম্মতি ছাড়া অন্যত্র বদলি না করতে সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে এ অনুরোধ জানিয়ে আধা সরকারিপত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।

এতে তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটের পর ১৫ দিন পর্যন্ত আইন অনুযায়ী এ নির্দেশনা অনুসরণ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন গতকাল বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১২ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণ হবে। নির্বাচনে দুজন বিভাগীয় কমিশনার, ৬৪ জন জেলা প্রশাসক ও তিনজন ইসির আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইসির কর্মকর্তারা হয়েছেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা।

চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ তথা সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত অফিস/প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্য থেকে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেসরকারি অফিস/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। গণভোট ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আইন ও বিধিমোতাবেক নিরপেক্ষভাবে পালনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেবেন।

এ লক্ষ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পূর্বালোচনা ছাড়া কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি বা ছুটি প্রদান না করা হয় অথবা নির্বাচনী দায়িত্ব ব্যাহত হতে পারে—এমন কোনো কাজে নিয়োজিত না করা হয় তার নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তথা সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিতে অনুরোধ করেছে ইসি সচিবালয়। চিঠিতে সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৫ ও ৪৪ (ঙ) অনুচ্ছেদকে উদ্ধৃত করা হয়।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, এই ডিও লেটারের ফলে এখন সব মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিব, পুলিশের আইজিসহ মাঠ প্রশাসন, পুলিশের দায়িত্বশীলদের কাছে এ-সংক্রান্ত পরিপত্র দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বলেন, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের রদবদল চলমান প্রক্রিয়া। তফসিল ঘোষণার পর ইসি প্রয়োজন হলে যখন যা দরকার ব্যবস্থা নেবে। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি নিশ্চিত করবে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য বেশ কিছু পরিপত্র ও চিঠি জারি করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত