Ajker Patrika

প্রথমবারের মতো নববর্ষ উদ্‌যাপনে যুক্ত হচ্ছে ব্যান্ড মিউজিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
মঙ্গল শোভাযাত্রা। ফাইল ছবি
মঙ্গল শোভাযাত্রা। ফাইল ছবি

সর্বোচ্চ অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে এবারের বর্ষবরণ উৎসব। প্রথমবারের মতো বর্ষবরণের শোভাযাত্রায় যুক্ত হবে দেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী মানুষেরা। শোভাযাত্রায় কৃষিভিত্তিক সমাজের উপকরণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রথমবারের মতো বর্ষবরণে অংশ নেবেন দেশের ব্যান্ড সংগীতশিল্পীরা। বিশ্বজুড়ে গণহত্যা ও আগ্রাসন, বিশেষ করে, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শান্তির বার্তা পৌঁছাতে গাওয়া হবে ‘ফ্রম রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ শিরোনামের গান। যেখানে দুটি ব্যান্ডের সংগীতশিল্পীরা অংশ নেবেন।

চৈত্রসংক্রান্তি এবং পাহাড় ও সমতলের জাতিগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব নিয়ে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল মাল্টিপারপাস মিলনায়তনে আজ বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এসব কথা বলেন।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এবার সর্বোচ্চ অন্তর্ভুক্তিমূলক একটা নতুন বছর শুরু করতে যাচ্ছি। এর পেছনে অনেক দিনের চিন্তা কাজ করেছে। রাতের পর রাত আমরা আলোচনা করেছি, কী করে সবার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে পারি। আমরা খুব আনন্দিত যে সব জাতিগোষ্ঠী এটাকে সাদরে গ্রহণ করেছে।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আরও বলেন, ‘কেন আমরা এ কাজগুলো করছি, সেই দর্শনটা বলতে চাই। সরকারের গৃহীত সব ব্যবস্থার মূলে আছে দুটি জিনিস। প্রথমটি কালচারাল হিলিং এবং দ্বিতীয়ত কালচারাল ইনক্লুসিভনেস। কালচারাল হিলিং হচ্ছে, আমরা দীর্ঘদিন বিভাজিত ছিলাম, এর ফলে সমাজের একটা গোষ্ঠীর সঙ্গে আরেকটা গোষ্ঠীর মধ্যে দূরত্ব, সংশয় ও অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এটা দূর করা। এই হিলিংয়ের কাজটা এরই মধ্যে শুরু করেছি। এবার দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ৫৪ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার শিল্পকলা একাডেমিতে চাঁদরাতে ঈদের অনুষ্ঠান করা হয়েছে। সামনে সারা দেশে হবে। শুধু মুসলমানদের উৎসবগুলো নয়, অন্যান্য ধর্মের বড় উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করেও একাডেমিতে দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।’

ফারুকী আরও বলেন, ‘নতুন বছরের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সব জাতিগোষ্ঠীকে একসঙ্গে নিয়ে উৎসব করার চেষ্টা করছি। এটার মূল কারণ কালচারাল ইনক্লুসিভনেস। আমাদের শক্তি ও সৌন্দর্য আমাদের বৈচিত্র্যে। সেটাই আমার উদ্‌যাপন করতে চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, যেহেতু চৈত্রসংক্রান্তি থেকে দেশের সব ধরনের জাতিগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়, তাই এবারের বর্ষবরণের আয়োজনও শুরু হবে চৈত্রসংক্রান্তি থেকে। এ উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দেশের ১২টি জেলায় থাকছে সাধুমেলা। ঢাকায় একাডেমির আয়োজনে একটি কনসার্ট হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে গান গাইবে গারো ব্যান্ড এফ মাইনর, মারমা ব্যান্ড লারং, ত্রিপুরা ব্যান্ড ইমাং, খাসিয়া ব্যান্ড ইউনিটি ও চাকমা ব্যান্ড ইনভোকেশন। বাঙালিদের মধ্যে থাকছে মাইলস, ওয়ারফেজ, ভাইকিংস, অ্যাভোয়েড রাফা, দলছুট, লালন ও স্টোন ফ্রি। চৈত্রসংক্রান্তিতে নবপ্রাণ আন্দোলনের উদ্যোগে একাডেমিতে হবে দিনব্যাপী ধামাইল নৃত্য, গান, ভিডিও প্রদর্শনী এবং সন্ধ্যায় বাউল ও ফকিরি গানের আসর। শ্রীমঙ্গলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় হবে চা–শ্রমিকদের উৎসব ফাগুয়া।

বর্ষবরণে ঐতিহ্যগতভাবে যে অনুষ্ঠানগুলো হয়, সেগুলো যথারীতি হবে। ছায়ানটের অনুষ্ঠান আগের মতোই হবে। সুরের ধারার অনুষ্ঠানে স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পরিবর্তে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে এটি আয়োজিত হবে। সুরের ধারার আয়োজনে সরকারের ইনক্লুসিভ নীতি অনুসরণ করে প্রথমবারের মতো অন্য জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরা থাকছেন। তাঁরা তাঁদের গান পরিবেশন করবেন, শুধু বাংলা গান থাকছে না।

নববর্ষের দিনে বড় আয়োজন শোভাযাত্রা। সেখানে বাঙালি বাদে চাকমা, মারমাসহ ২৭টি জাতিগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করছে। তারা প্রত্যেকে তাদের নিজেদের সংস্কৃতি, নিজের পোশাক, নিজেদের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেবে। এ ছাড়া চারুকলার শোভাযাত্রায় বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন (বামবা) যোগ দেবে। তারা দুই শ গিটারিস্ট নিয়ে আসবে। তারা আহ্বান জানিয়েছে, ঢাকা ও এর আশপাশের গিটারিস্টদের। সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে ফিলিস্তিনের একটি পতাকা। ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে শান্তির বার্তা দিয়ে বর্ষবরণে তারা গাইবে ‘ফ্রম দি রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ গান। এ বিষয়টি নিয়ে দুপুর ১২টায় শিল্পকলা একাডেমিতেও একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে বামবার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বর্ষবরণের দিন বিকেলে মানিক মিয়া এভিনিউতে থাকবে কনসার্ট। সন্ধ্যা ৭টায় থাকবে একটি ড্রোন শো। এতে সহযোগিতা করবে চীন দূতাবাস। এই শোয়ের থিম—নতুন বছর, নতুন বাংলাদেশ।

এ ছাড়া বাংলা একাডেমিতে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বিসিকের আয়োজনে মেলা অনুষ্ঠিত হবে। দেশের ৩০টি জেলায় থাকছে বৈশাখ উপলক্ষে লোকনাট্য উৎসব। ১২টি জেলায় থাকছে নববর্ষ উপলক্ষে অ্যাক্রোবেটিক শো। ১৫ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা করছে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। এর বাইরে পাহাড়ে ও সমতলের নৃগোষ্ঠী সেলগুলো মেলা ও উৎসবের আয়োজন করছে।

সংবাদ সম্মেলনে নিরাপত্তা ও শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। উত্তরে জানানো হয়, নিরাপত্তার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র উদেষ্টার সভাতিত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মিটিং হয়েছে। নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি থাকবে না। আর শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন হবে কি না, তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ তাদের সংবাদ সম্মেলনে জানাবে।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘এবার বর্ষবরণে আমরা সবাই মিলে এক হয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। এতে যোগ দিতে সবাইকে আহ্বান জানাই।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত