Ajker Patrika

হাসনাতের বক্তব্য অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব: নেত্র নিউজকে সেনাসদর

আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৫, ১৬: ২৫
হাসনাতের বক্তব্য অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব: নেত্র নিউজকে সেনাসদর

আওয়ামী লীগের ‘সংশোধিত’ একটি পক্ষের রাজনৈতিক পুনর্বাসনে রাজি হতে সেনানিবাস থেকে চাপ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ। তাঁর সেই অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সেনাবাহিনী সদর দপ্তর।

গতকাল শনিবার নেত্র নিউজকে দেওয়া সেনাসদরের এক বিবৃতিতে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে, সেনানিবাসে খোদ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে গত ১১ মার্চ বৈঠকটি হয়। তবে হাসনাত আব্দুল্লাহকে ‘ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয়ে তাঁদের প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগ’ করার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বরং হাসনাত আব্দুল্লাহ ও তাঁর দলের আরেক মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের আগ্রহেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নতুন রূপে পুনর্বাসনের বিষয়ে সেনানিবাসের কাছ থেকে ‘ভারতের পরিকল্পনা’ উপস্থাপন করা হয়েছে—গত শুক্রবার হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক এমন পোস্ট দেওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে নেত্র নিউজ যোগাযোগ করলে এক মুখপাত্রের মাধ্যমে বক্তব্য দেয় সেনাসদর। হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টকে ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়’ বলেও মন্তব্য করা হয়েছে সেনা সদরের বিবৃতিতে। এ ছাড়া ২৭ বছর বয়সী এই ছাত্রনেতার বক্তব্যকে ‘অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার’ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে সেনাসদর।

বাংলাদেশে গত আগস্টে যেই গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল, তার সূচনা হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালে আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ–বিক্ষোভের মাধ্যমে। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠিত হলে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন।

এরপর, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গঠিত নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ওই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত তিনজন ছাত্রনেতা দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের একজন নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন। ওই দলে দুই আঞ্চলিক মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্ব পান হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম।

গত শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শিরিন শারমিন ও ঢাকার মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে ‘ “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ” নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে।’

সুনির্দিষ্টভাবে তিনি বলেন, সেনানিবাস থেকে ১১ মার্চ দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে এক বৈঠকে তাদের এই নয়া আওয়ামী লীগকে মেনে নিতে সমঝোতা ও সংসদের আসন ভাগাভাগির প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাঁর পোস্টের পর ওই রাতেই জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে নেত্র নিউজের একজন প্রতিবেদক হাসনাত আব্দুল্লাহকে প্রশ্ন করেন, সেনানিবাসে তিনি যে বৈঠকটির কথা বলছেন, তা কি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে হয়েছিল কিনা। কিন্তু এই বিষয়ে তিনি সরাসরি জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান। হাসনাত বলেন, ‘আমিতো সেখানে “ক্যান্টনমেন্ট” উল্লেখ করেছি, আপনারা কথা বলতে পারেন সেখানে।’

আরেক সাংবাদিক তাঁকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন কার উদ্যোগে বৈঠকটি হয়েছিল। জবাবে হাসনাত বলেন, সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ও বিদ্যমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন ছিল। এসব বিষয়ে ‘কথা বলার জন্য আমাদের আহ্বান জানানো হয়েছিল।’

সংবাদ সম্মেলনের পর নেত্র নিউজের এক প্রতিবেদক আবারও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি ‘বাইনারি’ অর্থাৎ হ্যাঁ–না জবাব দিতে অস্বীকার করেন।

অপরদিকে নেত্র নিউজকে পাঠানো বিবৃতিতে সেনাসদর নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে, সেনাপ্রধানের সঙ্গেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল; তবে ওই বৈঠক ছাত্রনেতাদের আগ্রহেই হয়েছিল বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সারজিস আলম দীর্ঘদিন যাবৎ সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য ইচ্ছা পোষণ করছিলেন। পরবর্তীতে সারজিস আলম ১১ মার্চ ২০২৫ তারিখে সেনাপ্রধানের মিলিটারি অ্যাডভাইজারকে ফোন দিয়ে সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চান। এর প্রেক্ষিতে মিলিটারি অ্যাডভাইজার তাঁদের সেনাসদরে আসার জন্য বলেন।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অতঃপর ১১ মার্চ দুপুরে সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহ সেনাসদরে না এসে সরাসরি সেনাভবনে সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করেন। পরবর্তীতে সেনাপ্রধান অফিস কার্যক্রম শেষ করে সেনা ভবনে এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন।’

সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে ছাত্রনেতাদের বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল, সে বিষয়ে নেত্র নিউজ নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিটের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নেত্র নিউজকে বলেছেন, ছাত্রনেতাদের আগ্রহ ও উদ্যোগেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল।

সে ক্ষেত্রে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের এই বৈঠক তাঁদের ব্যক্তিগত আগ্রহে নাকি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষ থেকে পূর্বানুমোদন ছিল, তা স্পষ্ট নয়।

তবে গতকাল শনিবার সিলেটে এক ইফতার মাহফিলে এনসিপির আরেক নেতা নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী সহকর্মী হাসনাতের ওই ফেসবুক পোস্টকে ‘শিষ্টাচার বর্জিত’ হিসেবে উল্লেখ করেন। হাসনাত, সারজিস ও নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী—সবাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ‘সেনাবাহিনী কিংবা সেনাপ্রধানের সঙ্গে দূরত্ব বা রেষারেষি নেই’ উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন।

এর আগে, হাসনাত আব্দুল্লাহ তাঁর ফেসবুক পোস্টে সেনানিবাসে ১১ মার্চের বৈঠকে হওয়া কিছু কথোপকথনকে উদ্ধৃত করে লেখেন, অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই কথিত সংশোধিত আওয়ামী লীগকে মেনে নিয়েছে। তিনি লিখেন, ‘আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন (সমঝোতার) বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদের বলা হয়—ইতিমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা না-কি ভালো।’

হাসনাত আরও লেখেন, ‘আমাদের আরও বলা হয়—রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।’

আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে আলোচনা হওয়ার বিষয়টি সেনা সদরের বক্তব্যে অস্বীকার করা হয়নি। সেখানে বলা হয় আলোচনায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ উঠে আসলে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান নিজের অভিমতের কথা ছাত্রনেতাদের জানান।

বিবৃতিতে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা ফৌজদারি মামলায় জড়িত নয় ও ক্লিন ইমেজের অধিকারী তাদের সমন্বয়ে নতুন আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, ফলপ্রসূ ও আন্তর্জাতিক মহলে অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা পাবে। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকার ও সব রাজনৈতিক দল মিলে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।’

আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গে দেওয়া বক্তব্য সেনাপ্রধানের নিজস্ব অভিমত হিসেবে আখ্যা দিয়ে ছাত্রনেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ বিবৃতিতে অস্বীকার করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি কোনোক্রমেই তাদের ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয় নিয়ে তাদের প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগ করার ঘটনা নয়।’

হাসনাতের ফেসবুক পোস্ট প্রসঙ্গে সেনাসদরের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর (মতো) প্রতিষ্ঠিত সুশৃঙ্খল বাহিনীর প্রধান সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের যুগ্ম সংগঠকদের ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন বা চাপ প্রয়োগ করছেন যা অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার বলে প্রতীয়মান (হয়)।’

নিজের বহুল আলোচিত ফেসবুক পোস্টে ‘অপরপক্ষের’ সুনির্দিষ্ট বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেছিলেন, ‘আলোচনার একপর্যায়ে বলি—যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কীভাবে ক্ষমা করে দেবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, “ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডম অ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর অ্যাটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। (তোমরা কিছুই জানো না। তোমাদের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অভাব আছে। আমরা চাকরিতে আছি কমপক্ষে ৪০ বছর ধরে।) তোমার বয়সের থেকে বেশি। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া “ইনক্লুসিভ” (অংশগ্রহণমূলক) ইলেকশন হবে না।’

অপরদিকে সেনাসদরের বক্তব্যে বলা হয়, এই দুই ছাত্র সমন্বয়ককে সেনাবাহিনী প্রধান ‘অত্যন্ত স্নেহের দৃষ্টিতে ছেলের’ মতো দেখতেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তিনি (স্নেহবৎসল) পরিবেশে তাদের সঙ্গে নানা আলাপচারিতা করেন। প্রাসঙ্গিকভাবে তাদের নতুন দল গঠনের শুভকামনা ও পরবর্তী রাজনৈতিক পথ চলার বিষয়ে নানা প্রসঙ্গে আলাপ করেন।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এ ছাড়া, পরবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি (সেনাপ্রধান) তাদের রাজনৈতিক দলের প্রস্তুতি, অংশগ্রহণ ও অন্যান্য সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সকল দলের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে ব্যাখ্যা করেন। সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করার ১০ দিন পর ফেসবুকে হাসনাত আব্দুল্লাহর এই ধরনের অনভিপ্রেতকর পোস্ট দেওয়া সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সালমানসহ ৩৪ জনের নামে দুদকের পাঁচ মামলা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সালমান এফ রহমান। ফাইল ছবি
সালমান এফ রহমান। ফাইল ছবি

প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি, আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানসহ ৩৪ জনের নামে পৃথক পাঁচটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মামলার বিষয়টি জানান কমিশনের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধান শেষে গত বৃহস্পতিবার মামলা করার আবেদন করলে কমিশন তা অনুমোদন করে।

দুদকের মহাপরিচালক বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে মামলাগুলো করা হয়।

এই পাঁচ মামলার বাদী হলেন দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন রহমান ও সাজ্জাদ হোসেন, উপসহকারী পরিচালক রোমান উদ্দিন ও এলমান আহম্মদ অনি।

মামলাগুলোতে সালমান এফ রহমান ছাড়াও তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, সালমানের ভাই এ এস এফ রহমান, তাঁর ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ১৮ জন ও রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ১২ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।

অন্য আসামিরা হলেন বেক্সিমকো লিমিটেডের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক, রীম এইচ শামসুদ্দোহা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওসমান কাওসার চৌধুরী, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি আনোয়ারুল বাশার, পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজ লিমিটেডের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন, পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার, মোসা. নুসরাত হায়দার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান মজলিস, পরিচালক আব্দুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলসের এমডি মাহফুজুর রহমান খান, পরিচালক সৈয়দ তানভীর এলাহী, পিয়ারলেস গার্মেন্টসের এমডি ওয়াসীউর রহমান, পরিচালক রিজিয়া আক্তার।

জনতা ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে তাঁরা হলেন ব্যাংকটির সাবেক এমডি ও সিইও আবদুস ছালাম আজাদ, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, উপমহাব্যবস্থাপক (অব.) মো. আব্দুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. শহিদুল ইসলাম, ডিজিএম (অব.) মো. মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক মো. সালেহ আহমেদ, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (অব.) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম মোহাম্মদ শাজাহান, ব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবির ঢালী ও ব্যবস্থাপক শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশা।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পিয়ারলেস গার্মেন্টস ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস ১ কোটি ৮৯ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৪ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলারসহ মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ ডলার বা (প্রতি ডলার ৯০ টাকা হারে) ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ৯৪ টাকা জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে ঋণের নামে আত্মসাৎ করে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।

সালমানের বিরুদ্ধে আরও ২০ মামলা হচ্ছে

জনতা ব্যাংক থেকে ঋণের নামে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সালমান এফ রহমানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আরও ২০টি মামলা করা হবে বলে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন।

দুদকের ওই কর্মকর্তা জানান, এসব মামলায় জনতা ব্যাংক থেকে এলসি সুবিধা নেওয়ার নামে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হবে।

মামলাগুলোতে সায়ান ফজলুর রহমান, সোহেল ফশিউর রহমানের (এ এস এফ রহমান), আহমেদ শাহরিয়ার রহমান ও জনতা ব্যাংকের সাবেক এমডি আবদুস ছালামসহ প্রায় ৬০০ জনকে আসামি করা হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রাক-প্রস্তুতি সভার নির্দেশ ‎ইসির

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রাক-প্রস্তুতি সভা আয়োজন করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আজ ‎সোমবার ইসির উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেনের সই করা এ-সংক্রান্ত চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ইসির সব আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের এর মধ্যে এ নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, ইসি সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে গত ১৬ অক্টোবর মাসিক সমন্বয় সভায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে প্রাক-প্রস্তুতিমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারের ৩১টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে প্রাক-প্রস্তুতি সভা করেছে ইসি।

এর ধারাবাহিকতায় মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভোটের করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা জানাতে তাঁদের সঙ্গেও নির্বাচনী প্রস্তুতিমূলক সভায় বসবে ইসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ২৩
ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে তিন বছর মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।

এ-সংক্রান্ত রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আব্দুল ওয়াহাব।

আব্দুল ওয়াহাব বলেন, রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

গত ১৪ আগস্ট ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে তিন বছর মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। পরে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন লিয়াকত আলী নামের এক ব্যক্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো কিছু যাচাই না করে শেয়ার করবেন না: সিইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। ফাইল ছবি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। ফাইল ছবি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু দেখলেই তা বিশ্বাস করবেন না, শেয়ার করবেন না। আগে সেই তথ্যের সঠিকতা যাচাই করবেন। তথ্য সঠিক হলে তারপর তা শেয়ার করবেন।’

আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারার আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) জাতীয় নির্বাচনে আনসার-ভিডিপির ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা মহড়া ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সিইসি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ বর্তমানে এক ‘সংকটময় অবস্থায়’ দাঁড়িয়ে আছে এবং আগামী সংসদ নির্বাচন দেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ ও গণতন্ত্রের পথচলা নির্ধারণ করবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, তিনি তাঁর দায়িত্বকে গতানুগতিক ‘রুটিন কাজ’ বা ‘চাকরি’ হিসেবে না দেখে এটিকে ‘মিশন’ এবং ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে নিয়ে কাজ করছেন।

সিইসি বলেন, ‘ভবিষ্যতের জন্য কী বাংলাদেশ রেখে যাব, কোন ধরনের বাংলাদেশ রেখে যাব, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ রেখে যাব কি না, কীভাবে রেখে যাব—সেই চিন্তা আমাকে সারাক্ষণ ভাবায়।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে গতানুগতিক ধারায় কাজ করলে চলবে না, বরং ‘দায়িত্বসীমার বাইরে গিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’

সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করে সিইসি বলেন, ‘ভোটার, রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সবাই মিলে আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেব।’

সিইসি জানান, এবারের নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে প্রায় ১০ লাখ লোক যুক্ত থাকবে। তাঁদের সুবিধার্থে নির্বাচন কমিশন এবার একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। সাধারণত যারা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকেন, তারা নিজেরা ভোট দিতে পারেন না। কিন্তু এবার সেই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যেন সবাই ভোট দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

নাসির উদ্দিন আরও বলেন, ‘আইনি হেফাজতে যাঁরা কারাগারে রয়েছেন, তাঁরা এ দেশের নাগরিক। তাঁরাও যাতে ভোট দিতে পারেন, সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। এ ছাড়া প্রবাসীরা এবার ভোট দিতে পারবেন।’

ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে আনসার সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি তাঁদের ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মূল শক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে যারা দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদের ওপর আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের দায়িত্ব এসে পড়েছে।’

আনসার প্লাটুন সদস্যদের প্রশিক্ষণকে ‘স্বস্তির’ উল্লেখ করে সিইসি দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশাল নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে এআইসহ যেকোনো অপপ্রচার রোধে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব জানান, নির্বাচনে প্রায় পাঁচ লাখ সদস্য মোতায়েন থাকবে। সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি হিসেবে গত এক বছরে বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে ১ লাখ ৪৫ হাজার নতুন সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত