Ajker Patrika

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যা: বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাসগুলো

  • দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ।
  • বিক্ষোভ থেকে মিটফোর্ডের ব্যবসায়ীসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করা হয়।
  • দেশব্যাপী চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৯: ৪০
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো ফুঁসে উঠেছিল। পরে সেই বিক্ষোভে সাধারণ মানুষও শামিল হয়। পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। এবার পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় আবারও ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে পুরো দেশ। জড়িতদের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। সমাবেশ থেকে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদও জানানো হয়েছে।

রাজধানীতে বিক্ষোভ

রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় মশাল মিছিল বের করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী নেতা- কর্মীরা ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘আমার সোনার বাংলায়, চাঁদাবাজের ঠাঁই নাই’; ‘যে হাত চাঁদা তোলে, সেই হাত ভেঙে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশীদ বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ রকমের অবনতি ঘটেছে। মনে হয়, এখানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বদলে কোনো সংস্কৃতি উপদেষ্টা দায়িত্ব পালন করছেন। কোথাও অপরাধ ঘটলে দুই দিন পরও আমরা তার ভিডিও দেখছি, অথচ গণমাধ্যমে তা দেখা যাচ্ছে না।’

তিনি দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সারা দেশে শুদ্ধি অভিযান চালানোর কথা থাকলেও তা হয়নি। আমরা বলি, যদি আপনারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারেন, তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দিন। ছাত্র-জনতা আর অপেক্ষা করবে না।’

এর আগে দুপুরে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি এবং ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা পৃথক কর্মসূচি পালন করেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘চাঁদাবাজির কারণে মিটফোর্ড এলাকায় যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পাথর দিয়ে পিটিয়ে মানুষ মেরেছে। দল দায় না নিয়ে কেবল বহিষ্কারে সীমাবদ্ধ থেকেছে। এটি পরিকল্পিত দলীয় হত্যাকাণ্ড।’ আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘তারেক রহমানকে বলব, দেশে ফিরে এসে নিজের দলকে সামলান, পরিবর্তনের রাজনীতি করুন।’

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। একই সময়ে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সাকিব বলেন, ‘বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে তৈরি হওয়া সহাবস্থানের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা এই সহিংসতার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’

ঢাকার বাইরে যত বিক্ষোভ

নারায়ণগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কঠোর সমালোচনা করে দলটিকে সতর্ক করেন। গতকাল দুপুরে শহরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা।

ফরিদপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ ছাত্র-জনতা। গতকাল মিছিল শেষে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে হুঁশিয়ারি জানান।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা গতকাল দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিকেলে নগরীর শহীদ ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বরে প্ল্যাটফর্ম ময়মনসিংহের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এর আগে ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মিছিল শেষে সমাবেশ করেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা দেশব্যাপী চলমান খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

টাঙ্গাইলেও বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এদিকে মধুপুরে শিল্প ও বণিক সমিতি এবং শান্তিকামী জনতার ব্যানারে পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা গত শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষার্থীরা। তুলে ধরেন পাঁচ দফা দাবি। গতকাল দুপুরে ‘মাগুরা জেলার সকল ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে শহরের ভায়না মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নওগাঁ শহরে সংগ্রামী ছাত্র-জনতা ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা তানজিম বিন বারীর নেতৃত্বে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সামনে সকালে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘আমরা জুলুম, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলন করেছি। যারা আওয়ামী লীগের মতো আবার চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ করছে, তাদেরও একই পরিণতি হবে।’

এদিকে নিহত ব্যবসায়ী সোহাগের নিজ জেলা বরগুনায় গতকাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে। দুপুরে বরগুনা প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচি থেকে খুনিদের দৃস্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বরগুনা প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম। বরগুনা প্রেসক্লাব সভাপতি সোহেল হাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি মিজানুর রহমান কাসেমী, জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী নাজমা বেগম, জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল, বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সালেহ, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের জেলা সভাপতি জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা প্রমুখ।

এদিকে তৌহিদি জনতার আয়োজনে বরিশালের মুলাদীতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি এফ এম মাইনুল ইসলাম, উপজেলা খেলাফত মজলিশের সভাপতি হাফেজ মো. শহীদুল ইসলাম প্রমুখ। ঝালকাঠিতে ছাত্র-জনতার উদ্যোগে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার সদস্যসচিব রাইয়ান বিন কামাল। ভোলায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ইসলামী যুব আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা গতকাল বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। পরে মুক্তির সোপানে সমাবেশ হয়। রাজশাহীতে শুক্রবার রাতে এবং গতকাল পৃথক বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। শুক্রবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ ছাড়া দুপুরে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে মিছিল বের করা হয়।

নাটোরে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এদিকে যশোর প্রেসক্লাবের সামনে সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বিচারহীনতা এবং কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কঠোর সমালোচনা করেন। এমনকি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দেন। সমাবেশে বক্তৃতা করেন বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড জিল্লুর রহমান ভিটু, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের জেলা সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড তসলিম উর রহমান প্রমুখ।

‘যুবদলের এক গুণ, পাথর মেরে করে খুন’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কুড়িগ্রামের শিক্ষার্থীরা। পরে সমাবেশে বক্তৃতা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ নাহিদ।

রংপুর দুপুরে সাধারণ বিপ্লবী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল শেষে শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর আগের শুক্রবার রাতে রংপুর নগরীতে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত