Ajker Patrika

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যা: বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাসগুলো

  • দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ।
  • বিক্ষোভ থেকে মিটফোর্ডের ব্যবসায়ীসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করা হয়।
  • দেশব্যাপী চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ।
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৯: ৪০
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো ফুঁসে উঠেছিল। পরে সেই বিক্ষোভে সাধারণ মানুষও শামিল হয়। পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। এবার পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় আবারও ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে পুরো দেশ। জড়িতদের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। সমাবেশ থেকে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদও জানানো হয়েছে।

রাজধানীতে বিক্ষোভ

রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় মশাল মিছিল বের করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী নেতা- কর্মীরা ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘আমার সোনার বাংলায়, চাঁদাবাজের ঠাঁই নাই’; ‘যে হাত চাঁদা তোলে, সেই হাত ভেঙে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশীদ বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ রকমের অবনতি ঘটেছে। মনে হয়, এখানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বদলে কোনো সংস্কৃতি উপদেষ্টা দায়িত্ব পালন করছেন। কোথাও অপরাধ ঘটলে দুই দিন পরও আমরা তার ভিডিও দেখছি, অথচ গণমাধ্যমে তা দেখা যাচ্ছে না।’

তিনি দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সারা দেশে শুদ্ধি অভিযান চালানোর কথা থাকলেও তা হয়নি। আমরা বলি, যদি আপনারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারেন, তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দিন। ছাত্র-জনতা আর অপেক্ষা করবে না।’

এর আগে দুপুরে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি এবং ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা পৃথক কর্মসূচি পালন করেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘চাঁদাবাজির কারণে মিটফোর্ড এলাকায় যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পাথর দিয়ে পিটিয়ে মানুষ মেরেছে। দল দায় না নিয়ে কেবল বহিষ্কারে সীমাবদ্ধ থেকেছে। এটি পরিকল্পিত দলীয় হত্যাকাণ্ড।’ আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘তারেক রহমানকে বলব, দেশে ফিরে এসে নিজের দলকে সামলান, পরিবর্তনের রাজনীতি করুন।’

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। একই সময়ে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সাকিব বলেন, ‘বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে তৈরি হওয়া সহাবস্থানের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা এই সহিংসতার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’

ঢাকার বাইরে যত বিক্ষোভ

নারায়ণগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কঠোর সমালোচনা করে দলটিকে সতর্ক করেন। গতকাল দুপুরে শহরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা।

ফরিদপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ ছাত্র-জনতা। গতকাল মিছিল শেষে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে হুঁশিয়ারি জানান।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা গতকাল দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিকেলে নগরীর শহীদ ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বরে প্ল্যাটফর্ম ময়মনসিংহের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এর আগে ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মিছিল শেষে সমাবেশ করেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা দেশব্যাপী চলমান খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

টাঙ্গাইলেও বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এদিকে মধুপুরে শিল্প ও বণিক সমিতি এবং শান্তিকামী জনতার ব্যানারে পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা গত শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষার্থীরা। তুলে ধরেন পাঁচ দফা দাবি। গতকাল দুপুরে ‘মাগুরা জেলার সকল ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে শহরের ভায়না মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নওগাঁ শহরে সংগ্রামী ছাত্র-জনতা ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা তানজিম বিন বারীর নেতৃত্বে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সামনে সকালে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘আমরা জুলুম, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলন করেছি। যারা আওয়ামী লীগের মতো আবার চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ করছে, তাদেরও একই পরিণতি হবে।’

এদিকে নিহত ব্যবসায়ী সোহাগের নিজ জেলা বরগুনায় গতকাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে। দুপুরে বরগুনা প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচি থেকে খুনিদের দৃস্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বরগুনা প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম। বরগুনা প্রেসক্লাব সভাপতি সোহেল হাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি মিজানুর রহমান কাসেমী, জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী নাজমা বেগম, জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল, বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সালেহ, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের জেলা সভাপতি জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা প্রমুখ।

এদিকে তৌহিদি জনতার আয়োজনে বরিশালের মুলাদীতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি এফ এম মাইনুল ইসলাম, উপজেলা খেলাফত মজলিশের সভাপতি হাফেজ মো. শহীদুল ইসলাম প্রমুখ। ঝালকাঠিতে ছাত্র-জনতার উদ্যোগে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার সদস্যসচিব রাইয়ান বিন কামাল। ভোলায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ইসলামী যুব আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা গতকাল বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। পরে মুক্তির সোপানে সমাবেশ হয়। রাজশাহীতে শুক্রবার রাতে এবং গতকাল পৃথক বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। শুক্রবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ ছাড়া দুপুরে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে মিছিল বের করা হয়।

নাটোরে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এদিকে যশোর প্রেসক্লাবের সামনে সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বিচারহীনতা এবং কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কঠোর সমালোচনা করেন। এমনকি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দেন। সমাবেশে বক্তৃতা করেন বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড জিল্লুর রহমান ভিটু, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের জেলা সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড তসলিম উর রহমান প্রমুখ।

‘যুবদলের এক গুণ, পাথর মেরে করে খুন’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কুড়িগ্রামের শিক্ষার্থীরা। পরে সমাবেশে বক্তৃতা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ নাহিদ।

রংপুর দুপুরে সাধারণ বিপ্লবী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল শেষে শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর আগের শুক্রবার রাতে রংপুর নগরীতে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাসিনা, রেহানা, টিউলিপের বিরুদ্ধে তিন মামলায় সাক্ষ্য দিলেন আরও ৫ জন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও শেখ রেহানা। ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও শেখ রেহানা। ছবি: সংগৃহীত

রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে তিনটি প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকসহ অন্যদের বিরুদ্ধে করা তিনটি মামলায় আরও পাঁচজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজ রোববার (২ নভেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এ তাঁরা সাক্ষ্য দেন।

এই পাঁচ সাক্ষীর প্রত্যেকে তিন মামলাতেই সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিচারক রবিউল ইসলাম ৯ নভেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ পিপি তরিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য জানান।

এই তিন মামলায় গত ১৩ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। সেদিন তিন মামলার বাদী যথাক্রমে দুদকের উপপরিচালক সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া এবং এস এম রাশেদুল হাসান সাক্ষ্য দেন। পরে পাঁচটি তারিখে আরও ২০ জন সাক্ষ্য দেন।

এ তিন মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ রেহানার দুই মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক এবং ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিকে আসামি করা হয়েছে। একটি মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, টিউলিপ সিদ্দিকসহ ১৭ জন; আরেক মামলায় শেখ হাসিনা, আজমিনা সিদ্দিকসহ ১৮ জন এবং অপর মামলায় শেখ হাসিনা, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকসহ ১৮ জন আসামি।

তবে প্রতিটি মামলায় শেখ হাসিনা এবং রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তা আসামি। তাঁদের মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করা রাজউকের সাবেক সদস্য খুরশিদ আলমের পক্ষে আজ সাক্ষীদের জেরা করা হয়। অন্যরা পলাতক থাকায় তাঁদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে-মেয়ে এবং তাঁর বোন, বোনের এক মেয়ে ও ছেলের নামে ১০ কাঠা করে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে এ তিনটিসহ মোট ছয়টি মামলা করেছে দুদক। বাকি তিনটি মামলা করা হয় শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ অন্যদের বিরুদ্ধে। ওই তিন মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এ।

এ ছয়টি মামলার অভিযোগপত্রে শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবারের সদস্যরাসহ ২৯ জন আসামি। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বইমেলা ফেব্রুয়ারিতেই, তবে নির্বাচনের পর: বাংলা একাডেমি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছুটির দিনে পাঠক ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ছুটির দিনে পাঠক ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা

অমর একুশে বইমেলা-২০২৬ আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারিতে হলেও মেলা অনুষ্ঠিত হবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাপুসের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে অমর একুশে বইমেলা ২০২৬-এর সময় নির্ধারণ বিষয়ে সমিতির প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

বৈঠকে বাপুস মেলার কয়েকটি সম্ভাব্য সময়ের কথা উপস্থাপন করে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থার পরামর্শও সেখানে পর্যালোচনা করা হয়। সবকিছু মিলিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপর ফেব্রুয়ারি মাসে মেলা আয়োজনের প্রস্তাবকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাস্তবসম্মত বলে গ্রহণ করা হয়েছে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, নির্বাচনের তারিখ নির্দিষ্ট হওয়ার পরেই মেলার তারিখ ঘোষণা করা হবে।

অমর একুশে বইমেলা-২০২৬ আয়োজনের বিষয়ে বাংলা একাডেমি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।

এর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রমজানের কারণে অমর একুশে বইমেলা-২০২৬-এর সময় এগিয়ে এনে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে স্থগিত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আপিল শুনানিতে নেপালের প্রধান বিচারপতি, পেলেন সংবর্ধনা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ০৭
নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউত। ছবি: সংগৃহীত
নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউত। ছবি: সংগৃহীত

নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউতকে আপিল বিভাগে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার আপিল বিভাগে প্রথমে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন নেপালের প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেন।

নেপালের প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগে চলমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি পর্যবেক্ষণ করেন।

পরে সংবর্ধনার জবাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন তিনি।

এ সময় আপিল বিভাগে নেপালের উচ্চ আদালতের বিচারপতি, বাংলাদেশে নেপালের রাষ্ট্রদূত, ইউএনডিপির প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

আজ শুরুতে বিএনপি মহাসচিবের পক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা-সংক্রান্ত আপিল শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এরপর বিরতি শেষে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ নেপালের প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে আবার এজলাসে আসেন। নেপালের প্রধান বিচারপতিকে বসানো হয় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির ডান পাশের চেয়ারে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানিতে বিএনপি মহাসচিবের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা-সংক্রান্ত আপিল শুনানি বেলা ১টা পর্যন্ত চলে। পরে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়।

শুনানিতে যা বললেন রুহুল কুদ্দুস

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আপিল বিভাগের তিনজন বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে রায় দিয়েছেন আর চারজন রায় দেন বাতিলের পক্ষে। সংক্ষিপ্ত রায়ে পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার জন্য বলা হয়েছিল। খায়রুল হক (সাবেক প্রধান বিচারপতি) অবসরের ১৬ মাস পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় দেন। তবে সেখানে পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার বিষয়টি ছিল না। প্রকাশ্য আদালতে রায় দেওয়ার পর করণিক ভুল ছাড়া আর কোনো কিছু পরিবর্তন করা যায় না।

রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়েছে, অবসরের ছয় মাসের মধ্যে রায়ে স্বাক্ষর করতে হবে। আর এই রায়ে স্বাক্ষর করা হয়েছে অবসরের ১৬ মাস পর। গণতন্ত্রের স্বার্থে, আইনের শাসনের স্বার্থে, বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে এ বি এম খায়রুল হকের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

এদিকে আদালত থেকে বের হয়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমি শুনানিতে বলেছি, দেশের মধ্যে এই যে মারামারি, দিনের ভোট রাতে হয়েছে এবং কোনো ভোটই হয়নি—সবকিছুর মূলেই খায়রুল হক। খায়রুল হক দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন। তাঁর এই ব্যবহারের কারণেই আজকে ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা। খায়রুল হকের ওই রায় কোনোভাবেই থাকতে পারে না। ওই রায় থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশে বৈষম্যমূলক ধারা সংশোধনের আহ্বান টিআইবির

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এ বৈষম্যমূলক কমিশন গঠনে সহায়ক ধারা ও প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীনতা ক্ষুণ্নের ঝুঁকি সৃষ্টিকারী দুর্বল বিধান অব্যাহত থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংস্থাটি অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন এনে কমিশনকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছে।

আজ রোববার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা জানান।

এই অধ্যাদেশের ফলে মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে বলেও মনে করে টিআইবি।

লিখিত বিবৃতিতে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রতিষ্ঠানটির সৃষ্টিলগ্নে যে মৌলিক দুর্বলতার বীজ বপন করা হয়েছিল, তা কেন অব্যাহত রাখতে হবে, তা বোধগম্য নয়। কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সাত সদস্যের মধ্যে দুজনকে খণ্ডকালীন নিয়োগের বিধান বৈষম্যমূলক এবং সদস্যদের মধ্যে মর্যাদা ও এখতিয়ারে বিভাজন তৈরি করে, যা প্রতিষ্ঠানটির অকার্যকরতার অন্যতম কারণ।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কমিশনের সব সদস্যের পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা ও দায়িত্ব-কর্তব্যে সমতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি এই বিধান সংশোধন করে কমিশনের কার্যক্রমে গতিশীলতা ও কার্যকরতা আনা জরুরি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, চেয়ারপারসন ও কমিশনার বাছাইয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া এবং প্রাথমিকভাবে বাছাই করা প্রার্থীদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশের প্রস্তাব টিআইবি দিয়েছিল, কিন্তু তা গৃহীত হয়নি। তা ছাড়া কোনো সংস্থার আটকস্থল যদি কমিশনের নিকট আইনবহির্ভূত মনে হয়, তবে তা বন্ধের ক্ষমতা ও দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিতের সুপারিশও উপেক্ষিত হয়েছে, যা হতাশাজনক।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, মানবাধিকার সংরক্ষণের পরিপন্থী কোনো আইন সংশোধনের সুপারিশ করার ক্ষমতা কমিশনের থাকা উচিত।

টিআইবির মতে, অধ্যাদেশে ধারা ১৪-তে ‘মানবাধিকারসংক্রান্ত অন্য কোনো আইন এই আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে এই আইন প্রাধান্য পাবে’–এই অংশ যুক্ত করা হলে ভবিষ্যতে মানবাধিকার বিষয়ে আইনগত সংঘাত এড়ানো সহজ হতো।

এ ছাড়া সব অভিযোগে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক অনুসন্ধানের বিধান বাতিল করে আমলযোগ্য অভিযোগে সরাসরি তদন্তের সুযোগ রাখার প্রস্তাবও গৃহীত হয়নি।

টিআইবির আশঙ্কা, এতে অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হবে এবং ভুক্তভোগীর হয়রানি ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মকর্তা বা সরকারি কর্মচারীকে কমিশনে প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ সীমা নির্ধারণ এবং প্রেষণপ্রক্রিয়াকে যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পরিচালনার প্রস্তাবও অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এমনকি কমিশনের দ্বিমতের ভিত্তিতে কোনো প্রেষণ প্রত্যাখ্যানের সুযোগের বিধান রাখার সুপারিশও বিবেচিত হয়নি।

টিআইবি মনে করে, কমিশনের আয়-ব্যয়ের বার্ষিক নিরীক্ষা সম্পন্নের পর তা ওয়েবসাইটে প্রকাশের বিধান যুক্ত করা উচিত। এসব সংস্কারই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত