Ajker Patrika

রাষ্ট্র মানে গ্রামীণ ব্যাংক চালানো নয়—ড. ইউনূসকে ফরহাদ মজহার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানকে অস্বীকার করেছেন এবং সেই কারণে তাঁর সরকারের কোনো বৈধতা নেই।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজ এই সভার আয়োজন করে।

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আপনি (ড. ইউনূস) শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানকে অস্বীকার করেছেন। রাজনীতি কাকে বলে—এটা যেন আপনি বোঝেন! আইন কাকে বলে—এটা যেন আপনি বোঝেন! আমরা অপেক্ষা করেছি, কিন্তু আর নয়। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, রাষ্ট্র মানে গ্রামীণ ব্যাংক চালানো না, রাষ্ট্র আলাদা জিনিস। সেই ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই যে কথাগুলো আমি বলছি, তার যথোপযুক্ত উত্তর আমি আপনার কাছে আশা করি।’

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর প্রশাসনের কয়েকটি বিশেষ সিদ্ধান্ত ও নিয়োগকেও চ্যালেঞ্জ করেন মজহার।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন, বিভিন্ন বিদেশি উদ্যোগের প্রবেশ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে মজহার বলেন, ‘আপনি শেখ হাসিনার সংবিধান রক্ষার মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানকে অস্বীকার করেছেন। সংবিধান, প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক ও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে মুক্ত না হলে নির্বাচন নিয়ে কথা বলার কোনো অর্থ নেই।’

মজহার প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কেন নির্বাচন করতে চাইছেন? আপনি তো গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এসেছেন; কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের মহানায়ক নন, কেউ ব্যক্তিগতভাবে মহানায়ক নয়, জনগণই প্রধান।’

ড. ইউনূসের নেওয়া ‘ভুল সিদ্ধান্তের’ বিষয়ে মজহার বলেন, ‘কিছু তরুণকে “মাস্টারমাইন্ড” হিসেবে দাবি করা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের সঙ্গে পর্যাপ্ত আলোচনার অভাব রয়েছে। এত বড় আত্মত্যাগের পরে কেন নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে—এই প্রশ্ন থেকেই আমার অভিযোগ।’

ফরহাদ মজহার রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের বিষয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘আপনারা বললেন প্রধানমন্ত্রী লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন; কিন্তু তা এখনো দেখানো হয়নি। প্রেসিডেন্টও জানেন না পদত্যাগপত্র কোথায়—এটা চলবে না। রাষ্ট্রের ১৭ কোটি মানুষকে সাথে নিয়ে তামাশা করা যায় না।’

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আপনাকে নতুন গণপরিষদ গঠন করতে হবে। গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একমাত্র সেই সংসদে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে—সেই সিদ্ধান্তই আইনগতভাবে বৈধ হবে। সামরিক অভ্যুত্থানের পরে সেনাবাহিনী কী করত? আমাদের সংবিধান স্থগিত রাখত। তারা দেশে ফরমান দিয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চালাত। আর আমাদের গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে আপনি কোনো ফরমান দিতে পারেননি। আমাকে বলুন—আপনি কার পক্ষে কাজ করছেন? আপনি কার স্বার্থ রক্ষা করছেন? এটা তো চলবে না, এটা তো হতে পারে না।’

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে লোক এনেছেন, বিদেশ থেকে লোক এনেছেন—এরা বড় বড় বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করেছে, করপোরেট স্বার্থ রক্ষার জন্য। আপনি এনেছেন এমন লোকদের, যাদের সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসি বলে, “সে আমাদের লোক।” এদের দিয়ে আপনি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছেন। আমরা আমাদের দেশের নিরাপত্তা কীভাবে রক্ষা করব, আমরা তা জানি না। আমি দুঃখিত, আমি অত্যন্ত আহত ও ভীত হয়ে এসব কথা বলছি।’

ফরহাদ মজহার আরও বলেন, ‘আপনি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন বিশাল বহর নিয়ে—কেন যাচ্ছেন? আপনি একজন উপদেষ্টা; আপনার প্রধান কাজ হওয়া উচিত ছিল দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তপোক্ত করা। সেনাবাহিনীকে আপনি ম্যাজিস্ট্রেসিতে এনেছেন—এ অভিযোগ উঠেছে যে গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী চারজনকে হত্যা করেছে; যে দলই করা হোক না কেন, সেনাবাহিনী হত্যায় জড়িত হয়েছে। আপনি সেনাবাহিনীকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আপনার সামনে অনেক বড় বিপদ রয়েছে; একটির নাম হলো রোহিঙ্গা-মিয়ানমার ইস্যু। আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে ভূরাজনীতি অনুসরণ করছেন, সেই ভূরাজনীতিকে কীভাবে মোকাবিলা করবেন? আরাকান সশস্ত্র বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে কার্যক্রম চালাচ্ছে; এই ঘটনার বিচ্ছিন্ন দিক নেই। আজ যদি বিলোনিয়া থেকে চট্টগ্রাম আলাদা হয়ে যায়—তা-ও আমাকে অবাক করবে না।

‘চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের জাতীয় প্রতিরক্ষার অংশ; আপনি সেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন একপ্রকারে অস্বীকার করে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিচ্ছেন। কার কাছে আপনি অনুমতি নিচ্ছেন—জনগণ কি আপনাকে সে অনুমতি দিয়েছে?’

নিজের আশঙ্কা ব্যক্ত করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমাদের আশা ছিল, যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের যে দুর্বলতা, সে দুর্বলতাগুলোকে আমরা মোকাবিলা করতে পারব। তার (ড. ইউনূস) আন্তরিকতা যদি পাই। তিনি যদি গণ-অভ্যুত্থানের অভিপ্রায়টুকু বোঝেন। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, তিনি এটা বোঝেন নাই। শুধু বোঝেন নাই না, এখন তিনি যে জায়গায় দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন—সেটা অত্যন্ত বিপজ্জনক।’

আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, আইনজীবী আবু হেনা রাজ্জাকী, সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজায় মার্কিন শান্তি প্রস্তাবে আরব-ইউরোপসহ সবাই একমত, কী আছে ট্রাম্পের ২০ দফায়

ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে হামলা, ছুরিকাঘাতে জামায়াত নেতা নিহত

গান গাওয়া ও শোনা নিষিদ্ধের দাবিও উঠবে

পুলিশের জালে জালিয়াতির মামলায় ফাঁসলেন ‘সম্পদের দেবী’, উদ্ধার ৬১ হাজার বিটকয়েন

এখন ভারতের অন্যতম বিশেষত্ব হলো ভুয়া খবর: ড. ইউনূস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত