Ajker Patrika

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ: উচ্চকক্ষে অনাগ্রহী বিএনপি

  • উচ্চকক্ষের আলোচনা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব বিএনপির।
  • সংখ্যানুপাতিকে উচ্চকক্ষের প্রস্তাবে অনড় জামায়াত-এনসিপিসহ ২০টির বেশি দল।
  • আগামী সপ্তাহের সংলাপে সিদ্ধান্ত জানাবে কমিশন।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৫, ১৫: ৩৭
যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক। ছবি: প্রেস উইং
যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক। ছবি: প্রেস উইং

বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা- সম্পন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে আইন সভায় উচ্চকক্ষের প্রবর্তনের কথা বলা আছে বিএনপির ৩১ দফায়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া অন্য দলগুলোও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে। কিন্তু জট লেগেছে উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে। এ নিয়ে কমিশনে চার দিন আলোচনা করেও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসা যায়নি। এ অবস্থায় উচ্চকক্ষ নিয়ে আলোচনা পরিত্যক্ত ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।

একটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার সংলাপ চলাকালে দুপুর ১২টার পর বিএনপির পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে উচ্চকক্ষের আলোচনা পরিত্যক্ত ঘোষণার প্রস্তাব দেওয়া হয়। জবাবে কমিশন তাদের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিতে বলেছে।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে গতকাল ১৪তম দিনের আলোচনা হয়। আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ। সংলাপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ দলই উচ্চকক্ষ প্রবর্তন একমত হলেও সেটির নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে দেখা দেয় মতভিন্নতা।

উচ্চকক্ষ ছাড়াও দুটি বিষয় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে মতের বড় অনৈক্য থেকে গেছে অন্য দলগুলোর। এর একটি হলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিয়োগ প্রক্রিয়া, অন্যটি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা। জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিয়োগ কীভাবে হবে তা সংবিধানে নির্ধারণ করে দেওয়ার পক্ষে। কিন্তু বিএনপি এটি চাইছে না। অন্য দলগুলো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে চাইলেও বিএনপির এতে সাড়া নেই। এ অবস্থায় বেশির ভাগ দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে কমিশন একটি মতামত দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপিসহ সমমনা পাঁচটি দল নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ ২০টির বেশি দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি উচ্চকক্ষ নির্বাচনের প্রস্তাবে অনড়। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি উচ্চকক্ষসংক্রান্ত আলোচনা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে কমিশনকে উচ্চকক্ষের আলোচনা ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণার প্রস্তাব করেছে দলটি। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী সপ্তাহের সংলাপে উচ্চকক্ষ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

জানা গেছে, বিএনপি নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষ নির্বাচনের প্রস্তাবে অনড় থাকবে। যেহেতু উচ্চকক্ষ প্রবর্তনের প্রস্তাবটি বিএনপির ৩১ দফায় ছিল, তাই দলটি প্রকাশ্য এ নিয়ে বিরোধিতা করবে না। কিন্তু প্রস্তাবটি নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে তারা আর অংশও নেবে না।

উচ্চকক্ষ নিয়ে বিএনপির অবস্থানের দিকে ইঙ্গিত করে গতকাল জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, কোনো একটি দল বা তিনটি দল না চাইলে আটকে (উচ্চকক্ষের প্রস্তাব) যাওয়াটা অবিচার (ইনজাস্টিস) হবে, বৈষম্য হবে। কারণ অধিকাংশ তো পক্ষেই আছে। কোনো এক জায়গাতে একটা সমাধান (সলিউশন) দিতে হবে।

এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন অভিযোগ করেন, বিএনপি ও তার মিত্ররা পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিতা করছে এবং এই প্রশ্নটিকে আলোচনা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে আমরা কোনো ছাড় দেব না।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দলগুলোর কাছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব দিয়েছিল, যার নিম্নকক্ষ নির্বাচিত হবে আসনভিত্তিক তথা বিদ্যমান নিয়মে এবং উচ্চকক্ষ হবে ভোটের সংখ্যানুপাতিক (পিআর) হারে। ঐকমত্য কমিশনের এই প্রস্তাব নিয়ে গতকাল মঙ্গলবারসহ মোট চার দিন আলোচনা করা হয়। সিপিবি ও বাসদ ছাড়া সংলাপে অংশ নেওয়া বাকি ২৮টি দল ও জোটের পক্ষ থেকে উচ্চকক্ষের পক্ষে একমত প্রকাশ করা হয়। তবে নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা দেখা যায়।

বিএনপি ও তাদের সমমনা এনডিএম, লেবার পার্টি, ১২ দলীয় জোট এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের পক্ষ থেকে নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের কথা বলা হয়। চার দিনের আলোচনায় দলগুলোর অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বাকি ২১ দল সংখ্যানুপাতিকে উচ্চকক্ষের প্রস্তাব করে। যার মধ্যে কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে বলা হয় সংখ্যানুপাতিকে না হলে উচ্চকক্ষের প্রয়োজন নেই, যেটা নিম্নকক্ষের রেপ্লিকা হবে। এলডিপি ৫০ আসন নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে, ৫০ আসন ভোটের সংখ্যানুপাতে করার প্রস্তাব করে। এখনই উচ্চকক্ষ চান না বলে গতকালের আলোচনায় জানায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।

বিষয়টি নিয়ে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিএনপি তার পুরোনো অবস্থানেই আছে (নিম্নকক্ষের আসন অনুপাতে)।

গতকাল ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের আলোচ্য সূচি ছিল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, সংবিধান সংশোধন ও সংসদের নারী আসন। তবে শেষেরটি নিয়ে আলোচনা হয়নি। আলোচনায় জামায়াতের পক্ষ থেকে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের কথা জানান সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ। তিনি বলেন, উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষেরও দুই-তৃতীয়াংশের মতের পক্ষে কথা বলেন তিনি।

হামিদুর রহমান আজাদের বক্তব্যের পরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ফ্লোর নেবেন কি না জিজ্ঞেস করেন সঞ্চালক মনির হায়দার। এ সময় সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘সালাহউদ্দিন ভাই আগেও এ নিয়ে কথা বলেছেন। এ নিয়ে আমার সঙ্গে আলাদা করে তাঁর কথা হয়েছে।’ উচ্চকক্ষ নিয়ে গত তিন আলোচনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আলোচনার সারাংশ নিয়ে কমিশনকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ নিয়ে কমিশনকে বুধ ও বৃহস্পতিবার আলোচনা করে রোববার উত্তর দিতে হবে।’

গতকালের সংলাপে দুপুরের বিরতির আগেই সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ, উচ্চকক্ষে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা, সুনির্দিষ্ট বিষয়ে গণভোট। নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ, উচ্চকক্ষে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা, গণভোটের ব্যবস্থা না থাকা এবং উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে পর্যন্ত নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ এবং সুনির্দিষ্ট বিষয়ে গণভোট।

আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, উচ্চকক্ষ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে মনে হয় কারও কোনো দ্বিমত নেই। কিছু বিষয়ে গণভোট লাগবে। গণভোটের বিধান আদালতের মাধ্যমে ফেরত এসেছে। এর বাইরে কিছু সংযোজন বিয়োজন করা হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। জামায়াত তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে একমত জানায়।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, বিদ্যমান সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্ভুক্তির পর ভবিষ্যতে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানানো সেই ইউএনও ওএসডি

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

নিজের চাচা-চাচিকে বাবা-মা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেনকে ওএসডি করেছে সরকার। আজ বুধবার তাঁকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

কামাল হোসেন তাঁর পিতা-মাতা মো. আবুল কাশেম ও মোছা. হাবীয়া খাতুনের পরিবর্তে নিজের চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবীব ও চাচি মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা দেখিয়ে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা নিতে জালিয়াতির অভিযোগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দুদকের ঢাকা-১-এর সম্মিলিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. মনজুরুল ইসলাম মিন্টু বাদী হয়ে কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

কামাল হোসেনের প্রকৃত মা-বাবা কারা, তা নিশ্চিত হতে গত মঙ্গলবার ডিএনএ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরদিন ইউএনও কামাল হোসেনকে ওএসডি করা হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই বিপ্লবীরা নতুন সংবিধান চাইলে সেটাই হতো সংবিধান: অ্যাটর্নি জেনারেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘জুলাই বিপ্লবীরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে বলত, “আমরা ৭২-এর সংবিধান চাই না, আমরা নতুন সংবিধান রচনা করতে চাই”—তাহলে সেটাই হতো সংবিধান। কিন্তু তাদের মধ্যে বিভেদ থাকলে হবে না। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে আজ বুধবার এসব কথা বলেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগে অষ্টম দিনের মতো এ বিষয়ে শুনানি হয়।

এদিন আরও শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আনীক আর হক এবং বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। খায়রুল হক সাহেবরা হুকুম নড়ায়ে দিয়েছেন সংক্ষিপ্ত রায় এবং পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্য দিয়ে; যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শাস্তি হতে পারে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড। সংবিধান একটা অরগানিক ডকুমেন্ট। এটা বিভিন্ন রকমভাবে উপস্থাপিত হয়। কোরআন কিংবা বাইবেল—কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। সংবিধান পরিবর্তনযোগ্য। আজকে সংবিধানের অ্যামেন্ডমেন্টে (সংশোধন) যদি বলে দেন, তত্ত্বাবধায়কে ফিরে গেলাম, সেটাই যে অ্যাবসোলিউট (যথাযথ) হবে—তাও না। এটাও জনগণের চাহিদা অনুসারে হবে। জনগণ যদি মনে করে, এটাতে তার ভোটাধিকার নিশ্চিত হচ্ছে না, জনগণ ইচ্ছা করলে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারবে।’

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মনে করি, ওই (তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল) রায় থাকা উচিত না। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রায়টা লেখা হয়েছে একটি বিশেষ দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য। এই রায় দুটি গ্রাউন্ডে বাতিল হবে। সাতজন মিলে ঘোষণা করলেন, আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। সেখানে উনারা ডেভিয়েট (বিচ্যুত) করে পূর্ণাঙ্গ যে রায় দিলেন, তা ওপেন ঘোষণা রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ঘোষিত রায় পরিবর্তন করার জন্য রিভিউ করতে হবে। রিভিউ যেকোনো পক্ষ করতে পারে। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও করতে পারেন। খায়রুল হক সেই পথে না গিয়ে যে পথে হেঁটেছেন, তা আইনের ব্যত্যয়। রিভিউ না করে উনি রায় পরিবর্তন করেছেন। এটা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারা অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উনি পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে জানতেন, এ ধরনের পরিবর্তন করা আইনে সম্ভব নয়। তারপরও উনি সেটা করেছেন।’

আসাদুজ্জামান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশে আসার পরে যেভাবে দেশের গণতন্ত্র উন্নত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপের পরে সেই সুযোগ হয়নি। এই ব্যবস্থা বাতিল করার পর হত্যা, গুম, রাতের বেলায় ভোট দেওয়া, মিথ্যা মামলায় মানুষকে কারাগারে পাঠানো—এ ধরনের রাজনীতি শুরু হয়। ৭০ লাখের মতো মানুষ গায়েবি মামলায় আসামি হয়। সেই কারণে এটা ২১৯ ধারার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিচারকদের পারিতোষিক ও ছুটিসংক্রান্ত আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পারিতোষিক, ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকারসংক্রান্ত আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে। ১৩ জনের পক্ষে এ রিট করা হয়েছে বলে আজ বুধবার জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

রিটকারীরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, আবদুল্লাহ সাদিক, মো. মিজানুল হক, আব্দুল ওয়াদুদ, রহিম উল্লাহ, আমিনুল ইসলাম শাকিল, ঢাকার জেলা জজ আদালতের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ, শিক্ষানবিশ আইনজীবী সাব্বির রহমান, মাহমুদুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া, রাফিউল সাব্বির, শামিম সাহিদি ও হাবিবুর রহমান আল হাসান।

রিট আবেদনে বলা হয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। সংবিধানের ৯৪(৪) ও ১৪৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। তবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৩ অনুযায়ী বিচারকদের বেতন, পেনশন ও বিশেষাধিকার এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বাস্তবে তাঁদের আর্থিক স্বাধীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করছে।

আবেদনে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রধান বিচারপতি ও বিচারকদের বেতনকাঠামো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় নিম্ন স্তরে রয়েছে। এই অসামঞ্জস্য শুধু আর্থিক নয়, বরং বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের মানের প্রতি সাংঘর্ষিক।

রিটে আরও বলা হয়, সংবিধানে প্রদত্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার বিভাজনের নীতিকে উপেক্ষা করে সংসদ তার সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে উক্ত আইন দুটি প্রণয়ন করেছে। এর ফলে বিচারপতিদের জন্য এক অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক বেতনকাঠামো সৃষ্টি হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিআরআইয়ের অর্থ আত্মসাৎ: জয়, পুতুলসহ ৮ জনের নামে মামলা করবে দুদক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ছবি: সংগৃহীত
সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ছবি: সংগৃহীত

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) কর জালিয়াতি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অনৈতিক অর্থ সুবিধা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৮ জনের নামে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পুতুল সিআরআইয়ের ট্রাস্টি ও ভাইস চেয়ারম্যান।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে মামলাটি অনুমোদনের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। তিনি জানান, জনকল্যাণের নামে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কমিশন থেকে মামলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

অন্য যে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, তাঁরা হলেন সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি (শেখ রেহানার ছেলে), নসরুল হামিদ বিপু (সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী), নির্বাহী পরিচালক শাব্বির বিন শামস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর আপিল) রওশন আরা আক্তার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩-১৪ থেকে ২০২৩-২৪ কর বর্ষ পর্যন্ত সিআরআই ২৩টি কোম্পানির কাছ থেকে ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে নেয়। এ ছাড়া একই সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে ১০০ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৬ টাকা নেয়। বৈধ ব্যয় বাদে হিসাব অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবে ৭০ কোটি ৮০ লাখ ৪২ হাজার ৩৯০ টাকা স্থিতি থাকার কথা। কিন্তু পাওয়া গেছে ৫৫ কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৬ টাকা। অর্থাৎ ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২১ টাকা কম; যা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমাজসেবা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত না থাকা সত্ত্বেও সিআরআই কর সুবিধা লাভের জন্য চাপ প্রয়োগ, প্রতিষ্ঠানটি সুনির্দিষ্ট এসআরও জারি করিয়ে সরকার থেকে কর মওকুফের সুযোগ নিয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি জনকল্যাণের নামে প্রাপ্ত তহবিলকে নিজের সুবিধার্থে ব্যবহার করেছে এবং বহু কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় ও আত্মসাৎ করেছে।

দুদক বলছে, অভিযুক্তরা ২৫টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৪৩৯ কোটি ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮০ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন এবং আয়কর পরিশোধ না করে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত