শাহরিয়ার হাসান
ঢাকা: যশোর এলাকার এক সাংসদের দেহরক্ষীর রয়েছে উজি পিস্তল। সেই পিস্তল নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়ান। একজন শিল্পপতির স্ত্রীও কিনেছেন সেই অস্ত্র। তালিকায় আরও আছেন জর্দা ফ্যাক্টরির মালিক, মাছ ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, শিপিং ব্যবসায়ী এবং পুলিশে কর্মরত ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাহলে বাদ যাবেন কেন? তাঁরাও জনে জনে কিনেছেন উজি পিস্তল।
ইসরায়েলের তৈরি এই অস্ত্রটি এ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবহার করে না। এটা মূলত সামরিক অস্ত্র। কিন্তু সামরিক বাহিনীর ব্যবহার উপযোগী এই আধুনিক অস্ত্রটি এত লোকের হাতে গেল কী করে? পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এর জবাব পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তাতে বলা হয়েছে, পয়েন্ট টুটু বোর রাইফেল কেনার অনুমতি নিয়ে পয়েন্ট টুটু বোর পিস্তল কিনেছেন এই লাইসেন্সধারীরা। আর আমদানিকারকেরা অস্ত্রটি এনেছেন ভুল তথ্য দিয়ে। পুলিশ বাহিনীর আশঙ্কা, অস্ত্রটি জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের হাতে গেলে মহাসর্বনাশ হবে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে দায়সারা গোয়েন্দা তদন্ত আর দুর্বল নীতিমালার কারণেই কি সবাই অস্ত্র কেনার লাইসেন্স পাচ্ছেন? সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব কামাল উদ্দিনের আশঙ্কাও তেমনই। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য নন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বা কাউকে ধরে লাইসেন্স নিয়েছেন। এমন ব্যক্তিরা অবশ্যই বিপজ্জনক। যাঁরা লাইসেন্স পেয়েছেন, তাঁদের কেউ কেউ যে বিপথগামী হবেন না, তা কিন্তু নয়। এমন নজিরও আছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) জাহাংগীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন এসেছে। এটা নিয়ে একটি কমিটিও হয়েছ। কমিটির সুপারিশ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অবৈধভাবে উজি অস্ত্র আমদানি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে বেশ কিছু লেখালেখি হয়। এরপর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এ নিয়ে তদন্ত নামে। সেই তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে জমাও হয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পরিদর্শক আমিনুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমদানি করা অবৈধ ১০৯টি উজি পিস্তলের মধ্যে বিক্রি হওয়া ৫৩টি উজি পিস্তলের ব্যবহারকারীর তথ্য তাঁরা পেয়েছেন। এর মধ্যে ৩০টি ব্যক্তির নামে এবং ২৩টি রয়েছে সাব আর্মস ডিলারের নামে। ৩০ ব্যক্তির তালিকায় আছেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও তাঁদের স্বজনেরা। পুলিশের বর্তমান ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও আছেন।
পুলিশের প্রতিবেদনের তথ্য ও অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত বছর রাজধানী থেকে উজি পিস্তল, মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মিনাল শরীফ নামের এক ব্যক্তি। তিনি যশোর-৩ আসনের সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদের সাবেক দেহরক্ষী বলে পুলিশ জানিয়েছে। ডিবির কাছে জব্দ থাকা এই অস্ত্রের সিরিয়াল নম্বর ডিআর–০০৭৮৪০।
অস্ত্র লাইসেন্সের নীতিমালা অনুসারে কেউ পিস্তল কিনতে চাইলে তাঁকে তিন লাখ টাকা করে কমপক্ষে তিন বছর আয়কর দেওয়ার প্রমাণ দেখাতে হবে। প্রশ্ন হলো, এই দেহরক্ষীর কি সেই সক্ষমতা আছে? সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
গোয়েন্দা এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পিস্তলটি অন্য যাঁরা ব্যবহার করছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন ঢাকা মহানগর হাতিরঝিল–রমনা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল কবির। যাঁর অস্ত্রের ক্রমিক নম্বর ডব্লিউআই–০০৬৯৮০। উজি পিস্তল কেন কিনলেন, জানতে চাইলে আনোয়ারুল কবির বলেন, লাইসেন্সের বিপরীতে পিস্তলটি পছন্দ হয়েছিল, তাই কিনেছিলাম।
সাত বছর ধরে একই অস্ত্র ব্যবহার করছেন ইকবাল হোসেন তিতু। তিতু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য। উজি কেনার তালিকায় আছেন ঢাকার গেন্ডারিয়ার সুলতান মাহমুদ। বর্তমানে তিনি ব্যবসা করলেও আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদস্য থাকা অবস্থায় পিস্তলটি কেনেন। উজি কেনার ব্যাপারে জানতে চাইলে সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘এখন এই অস্ত্র অবৈধ হলে ফেরত দিয়ে দেব। যে অস্ত্র দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেই নাই, তা আমার কাছে থাকবে কীভাবে?’
উজি পিস্তল রয়েছে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেলের। ফরিদপুরের কোতোয়ালির থানা শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সেলিম হাসানের। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা জাহিদুর ইসলাম সুজনের। সুজন বলেন, ‘পিস্তল আমার শখ না, প্রয়োজন। রাজনীতি করি। সঙ্গে একটা পিস্তল রাখতে হয়, তাই নিয়েছি। সেটা উজিই হতে হবে এমন না।’
পাবনা সদর পৌর আওয়ামীর সদস্য রুহুল আমিন বিশ্বাসের। হবিগঞ্জ চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বড় ভাই রফিকউদ্দিন চৌধুরীর। আশুলিয়া ২ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার জাকিরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলমের। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে অস্ত্রটি জাকিরই ব্যবহার করছেন বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে অস্ত্রটি শুধু রাজনীতিবিদেরাই কেনেনি, শিল্পপতিও আছেন তালিকায়। গোয়েন্দা পুলিশের প্রতিবেদনে এ তালিকায় আছেন একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকের স্ত্রী। শিল্পপতি রাজিবুল হকও এই অস্ত্র সংগ্রহে রেখেছেন। তিনি শাহী জর্দার মালিক। খুলনার মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল, যশোরের কোতোয়ালির গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আলম তারেক, ঢাকার রমনার শিপিং ব্যবসায়ী মাসুদ করিমসহ রয়েছে আরও বেশ কয়েকজনের নাম।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে এ অস্ত্রটি কেনেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশে কর্মরত সার্জেন্ট রুমি কাউসার অস্ত্রটি কিনেছেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি সেটা ব্যবহার করছেন। তালিকায় আছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট কুড়িগ্রামের উলিপুরের আবু তাহের খায়রুল হকও। জানতে চাইলে খায়রুল হক বলেন, ‘চাকরির সময় অস্ত্র নাড়াচাড়া করতাম। তাই শখ থেকে নিয়েছি। সরকার চাইলে জমা দিয়ে দেব।’
ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্রেতাদের অনেকেই না বুঝে অস্ত্রটি কিনেছেন। ‘মেশিন পিস্তল’ নামে পরিচিত আধুনিক ও সর্বশেষ মডেলের অস্ত্রটির প্রতি তাঁদের বেশ আগ্রহ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, লাইসেন্সধারী অস্ত্রের সংখ্যার পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য নেই। জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭৫ হাজার বৈধ অস্ত্রের একটা তালিকা করেছেন তাঁরা। তবে এটাই চূড়ান্ত কোনো তালিকা না। সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে ৮৪টি লাইসেন্সধারী বৈধ অস্ত্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে রাজধানী ঢাকায় আছে ৩২টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠান সরাসরি অস্ত্র আমদানি করে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো ওই ১৪ প্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে বিক্রি করে।
উজি পিস্তল আমদানি ও বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা বলছেন, অস্ত্রের গায়ে উজি পিস্তল লেখা থাকলেও এটি মূলত উজি রাইফেলের শর্ট ভার্সন। তাঁরা সরকারের সব ধরনের নিয়ম মেনেই এটি আমদানি করেছে। তবে সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক থেকে দেওয়া মৌখিক নির্দেশে পয়েন্ট ২২ বোর মডেলের এই অস্ত্র বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
উজি পিস্তল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মঈন ফায়ার আর্মস কোম্পানির মালিক মো. মঈন ইকবাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সরকারের সব নিয়ম মেনে কর দিয়ে যখন অস্ত্র আমদানির অনুমতি পাই, তা তখন এক্সপোর্ট কান্ট্রিতে পাঠাই। এই চাহিদাপত্রের সঠিকতা তাঁরা যাচাই করে। এরপর অস্ত্র রপ্তানি করে। পিস্তলের এইচএস কোড আর রাইফেলের এইচএসকোড ভিন্ন। একটির এইচএস কোডে অন্যটি আনা সম্ভব না।’
এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য জব্দ করা উজি পিস্তল ও লাইসেন্সটি ঢাকা সেনানিবাসের পরিচালক, সদর দপ্তর, লজিস্টিকস এরিয়া (ইএমই) শাখা বরাবর পাঠিয়েছিল ডিবি পুলিশ। সেখান থেকে পাঠানো মতামতে বলা হয়, অস্ত্রের লাইসেন্সে পয়েন্ট ২২ বোর রাইফেলের কথা উল্লেখ থাকলে তা দিয়ে উজি পিস্তল (সেমি অটোমেটিক) কেনা যাবে না। উজি পিস্তল এবং উজি রাইফেল দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র।
সার্বিক বিষয়ে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ওয়াহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকার ঘোষিত অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানসংক্রান্ত পরিপত্র অনুযায়ী উজি পিস্তল বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরো বিষয়টি অবহিত রয়েছেন। পরবর্তী নির্দেশনা সেখান থেকেই আসবে।
সামরিক অস্ত্র এভাবে সাধারণ মানুষের হাতে থাকা কতটা নিরাপদ, জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘উজি পিস্তল একটি মিলিটারি গ্রেডের অস্ত্র। যেটা সাধারণত ইসরায়েলে তৈরি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবহৃত অস্ত্রের (পিস্তল) চেয়ে এটি অত্যাধুনিক অস্ত্র। এর যে সক্ষমতা আছে, সেটা একজন ব্যক্তির প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়। সামরিক অস্ত্র ব্যক্তির হাতে থাকতে পারে না।’
ঢাকা: যশোর এলাকার এক সাংসদের দেহরক্ষীর রয়েছে উজি পিস্তল। সেই পিস্তল নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়ান। একজন শিল্পপতির স্ত্রীও কিনেছেন সেই অস্ত্র। তালিকায় আরও আছেন জর্দা ফ্যাক্টরির মালিক, মাছ ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, শিপিং ব্যবসায়ী এবং পুলিশে কর্মরত ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাহলে বাদ যাবেন কেন? তাঁরাও জনে জনে কিনেছেন উজি পিস্তল।
ইসরায়েলের তৈরি এই অস্ত্রটি এ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবহার করে না। এটা মূলত সামরিক অস্ত্র। কিন্তু সামরিক বাহিনীর ব্যবহার উপযোগী এই আধুনিক অস্ত্রটি এত লোকের হাতে গেল কী করে? পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এর জবাব পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তাতে বলা হয়েছে, পয়েন্ট টুটু বোর রাইফেল কেনার অনুমতি নিয়ে পয়েন্ট টুটু বোর পিস্তল কিনেছেন এই লাইসেন্সধারীরা। আর আমদানিকারকেরা অস্ত্রটি এনেছেন ভুল তথ্য দিয়ে। পুলিশ বাহিনীর আশঙ্কা, অস্ত্রটি জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের হাতে গেলে মহাসর্বনাশ হবে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে দায়সারা গোয়েন্দা তদন্ত আর দুর্বল নীতিমালার কারণেই কি সবাই অস্ত্র কেনার লাইসেন্স পাচ্ছেন? সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব কামাল উদ্দিনের আশঙ্কাও তেমনই। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য নন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বা কাউকে ধরে লাইসেন্স নিয়েছেন। এমন ব্যক্তিরা অবশ্যই বিপজ্জনক। যাঁরা লাইসেন্স পেয়েছেন, তাঁদের কেউ কেউ যে বিপথগামী হবেন না, তা কিন্তু নয়। এমন নজিরও আছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) জাহাংগীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন এসেছে। এটা নিয়ে একটি কমিটিও হয়েছ। কমিটির সুপারিশ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অবৈধভাবে উজি অস্ত্র আমদানি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে বেশ কিছু লেখালেখি হয়। এরপর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এ নিয়ে তদন্ত নামে। সেই তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে জমাও হয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পরিদর্শক আমিনুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমদানি করা অবৈধ ১০৯টি উজি পিস্তলের মধ্যে বিক্রি হওয়া ৫৩টি উজি পিস্তলের ব্যবহারকারীর তথ্য তাঁরা পেয়েছেন। এর মধ্যে ৩০টি ব্যক্তির নামে এবং ২৩টি রয়েছে সাব আর্মস ডিলারের নামে। ৩০ ব্যক্তির তালিকায় আছেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও তাঁদের স্বজনেরা। পুলিশের বর্তমান ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও আছেন।
পুলিশের প্রতিবেদনের তথ্য ও অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত বছর রাজধানী থেকে উজি পিস্তল, মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মিনাল শরীফ নামের এক ব্যক্তি। তিনি যশোর-৩ আসনের সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদের সাবেক দেহরক্ষী বলে পুলিশ জানিয়েছে। ডিবির কাছে জব্দ থাকা এই অস্ত্রের সিরিয়াল নম্বর ডিআর–০০৭৮৪০।
অস্ত্র লাইসেন্সের নীতিমালা অনুসারে কেউ পিস্তল কিনতে চাইলে তাঁকে তিন লাখ টাকা করে কমপক্ষে তিন বছর আয়কর দেওয়ার প্রমাণ দেখাতে হবে। প্রশ্ন হলো, এই দেহরক্ষীর কি সেই সক্ষমতা আছে? সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
গোয়েন্দা এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পিস্তলটি অন্য যাঁরা ব্যবহার করছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন ঢাকা মহানগর হাতিরঝিল–রমনা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল কবির। যাঁর অস্ত্রের ক্রমিক নম্বর ডব্লিউআই–০০৬৯৮০। উজি পিস্তল কেন কিনলেন, জানতে চাইলে আনোয়ারুল কবির বলেন, লাইসেন্সের বিপরীতে পিস্তলটি পছন্দ হয়েছিল, তাই কিনেছিলাম।
সাত বছর ধরে একই অস্ত্র ব্যবহার করছেন ইকবাল হোসেন তিতু। তিতু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য। উজি কেনার তালিকায় আছেন ঢাকার গেন্ডারিয়ার সুলতান মাহমুদ। বর্তমানে তিনি ব্যবসা করলেও আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদস্য থাকা অবস্থায় পিস্তলটি কেনেন। উজি কেনার ব্যাপারে জানতে চাইলে সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘এখন এই অস্ত্র অবৈধ হলে ফেরত দিয়ে দেব। যে অস্ত্র দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেই নাই, তা আমার কাছে থাকবে কীভাবে?’
উজি পিস্তল রয়েছে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেলের। ফরিদপুরের কোতোয়ালির থানা শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সেলিম হাসানের। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা জাহিদুর ইসলাম সুজনের। সুজন বলেন, ‘পিস্তল আমার শখ না, প্রয়োজন। রাজনীতি করি। সঙ্গে একটা পিস্তল রাখতে হয়, তাই নিয়েছি। সেটা উজিই হতে হবে এমন না।’
পাবনা সদর পৌর আওয়ামীর সদস্য রুহুল আমিন বিশ্বাসের। হবিগঞ্জ চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বড় ভাই রফিকউদ্দিন চৌধুরীর। আশুলিয়া ২ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার জাকিরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলমের। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে অস্ত্রটি জাকিরই ব্যবহার করছেন বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে অস্ত্রটি শুধু রাজনীতিবিদেরাই কেনেনি, শিল্পপতিও আছেন তালিকায়। গোয়েন্দা পুলিশের প্রতিবেদনে এ তালিকায় আছেন একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকের স্ত্রী। শিল্পপতি রাজিবুল হকও এই অস্ত্র সংগ্রহে রেখেছেন। তিনি শাহী জর্দার মালিক। খুলনার মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল, যশোরের কোতোয়ালির গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আলম তারেক, ঢাকার রমনার শিপিং ব্যবসায়ী মাসুদ করিমসহ রয়েছে আরও বেশ কয়েকজনের নাম।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে এ অস্ত্রটি কেনেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশে কর্মরত সার্জেন্ট রুমি কাউসার অস্ত্রটি কিনেছেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি সেটা ব্যবহার করছেন। তালিকায় আছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট কুড়িগ্রামের উলিপুরের আবু তাহের খায়রুল হকও। জানতে চাইলে খায়রুল হক বলেন, ‘চাকরির সময় অস্ত্র নাড়াচাড়া করতাম। তাই শখ থেকে নিয়েছি। সরকার চাইলে জমা দিয়ে দেব।’
ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্রেতাদের অনেকেই না বুঝে অস্ত্রটি কিনেছেন। ‘মেশিন পিস্তল’ নামে পরিচিত আধুনিক ও সর্বশেষ মডেলের অস্ত্রটির প্রতি তাঁদের বেশ আগ্রহ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, লাইসেন্সধারী অস্ত্রের সংখ্যার পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য নেই। জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭৫ হাজার বৈধ অস্ত্রের একটা তালিকা করেছেন তাঁরা। তবে এটাই চূড়ান্ত কোনো তালিকা না। সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে ৮৪টি লাইসেন্সধারী বৈধ অস্ত্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে রাজধানী ঢাকায় আছে ৩২টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠান সরাসরি অস্ত্র আমদানি করে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো ওই ১৪ প্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে বিক্রি করে।
উজি পিস্তল আমদানি ও বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা বলছেন, অস্ত্রের গায়ে উজি পিস্তল লেখা থাকলেও এটি মূলত উজি রাইফেলের শর্ট ভার্সন। তাঁরা সরকারের সব ধরনের নিয়ম মেনেই এটি আমদানি করেছে। তবে সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক থেকে দেওয়া মৌখিক নির্দেশে পয়েন্ট ২২ বোর মডেলের এই অস্ত্র বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
উজি পিস্তল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মঈন ফায়ার আর্মস কোম্পানির মালিক মো. মঈন ইকবাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সরকারের সব নিয়ম মেনে কর দিয়ে যখন অস্ত্র আমদানির অনুমতি পাই, তা তখন এক্সপোর্ট কান্ট্রিতে পাঠাই। এই চাহিদাপত্রের সঠিকতা তাঁরা যাচাই করে। এরপর অস্ত্র রপ্তানি করে। পিস্তলের এইচএস কোড আর রাইফেলের এইচএসকোড ভিন্ন। একটির এইচএস কোডে অন্যটি আনা সম্ভব না।’
এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য জব্দ করা উজি পিস্তল ও লাইসেন্সটি ঢাকা সেনানিবাসের পরিচালক, সদর দপ্তর, লজিস্টিকস এরিয়া (ইএমই) শাখা বরাবর পাঠিয়েছিল ডিবি পুলিশ। সেখান থেকে পাঠানো মতামতে বলা হয়, অস্ত্রের লাইসেন্সে পয়েন্ট ২২ বোর রাইফেলের কথা উল্লেখ থাকলে তা দিয়ে উজি পিস্তল (সেমি অটোমেটিক) কেনা যাবে না। উজি পিস্তল এবং উজি রাইফেল দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র।
সার্বিক বিষয়ে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ওয়াহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকার ঘোষিত অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানসংক্রান্ত পরিপত্র অনুযায়ী উজি পিস্তল বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরো বিষয়টি অবহিত রয়েছেন। পরবর্তী নির্দেশনা সেখান থেকেই আসবে।
সামরিক অস্ত্র এভাবে সাধারণ মানুষের হাতে থাকা কতটা নিরাপদ, জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘উজি পিস্তল একটি মিলিটারি গ্রেডের অস্ত্র। যেটা সাধারণত ইসরায়েলে তৈরি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবহৃত অস্ত্রের (পিস্তল) চেয়ে এটি অত্যাধুনিক অস্ত্র। এর যে সক্ষমতা আছে, সেটা একজন ব্যক্তির প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়। সামরিক অস্ত্র ব্যক্তির হাতে থাকতে পারে না।’
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ২৫ জনকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা সারজিস আলমের শ্বশুরও রয়েছেন। তিনি হলেন অ্যাডভোকেট মো. লুৎফর রহমান। তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আজ বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেলেন..
৩২ মিনিট আগেঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৪ জনকে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ...
১ ঘণ্টা আগেসুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ২৫ জন অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। আজ সোমবার (২৫ আগস্ট) তাঁদের নিয়োগের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আগামীকাল মঙ্গলবার তাঁদের শপথ পড়ানো হবে বলে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোসাইন।
১ ঘণ্টা আগেসম্মেলনে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক নিজ নিজ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। সীমান্তরক্ষীদের পাশাপাশি সীমান্ত-সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেবেন। এ সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা, পুশইন ও অনুপ্রবেশ বন্ধ, ভারত থেকে মাদক, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ জিনিসপত্রের...
১ ঘণ্টা আগে