Ajker Patrika

নির্বাচিত সরকার এলে চুপচাপ সরে যাব: ড. ইউনূস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ১৭: ১১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশে নির্বাচিত সরকার এলে তিনি চুপচাপ সরে যাবেন। গত ১২ জুন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক আন্দোলনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও মানুষ এখনো সরকারকে শত্রু হিসেবে দেখে’।

ড. ইউনূসের ভাষায়, ‘নতুন বাংলাদেশে’ বিশ্বাস আনতে হলে গ্রামের পর গ্রাম, সরকারের প্রতিটি স্তর থেকে দুর্নীতি দূর করা ছাড়া উপায় নেই। শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস জানান, গত বছর জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতনের পর তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। এখন তিনি চান, এমন একটি রাষ্ট্র গড়ে উঠুক, যা সাধারণ মানুষকে কিছু ফিরিয়ে দিতে পারবে। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে মানুষ মনে করে, সরকার তাদের কোনো কিছুই দেয় না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পাসপোর্ট থেকে শুরু করে ব্যবসার লাইসেন্স নিতে গেলে ঘুষ দিতে হয়। সরকারের সদস্যরা টাকা আত্মসাৎ করেছে। প্রতিটি স্তরে দুর্নীতির বিস্তার রয়েছে। তিনি বলেন, ‘সব সময়ই কেউ না কেউ ওঁৎ পেতে থাকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। মানুষ মনে করে, সরকার হলো তাদের চিরস্থায়ী শত্রু। এই শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করেই বাঁচতে হয়। এই শত্রু এতই শক্তিশালী যে মানুষ তার কাছ থেকে দূরে থাকতে চায়।’

সরকারি চাকরিতে কোটার মাধ্যমে আওয়ামী লীগপন্থীদের সুবিধা দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ থেকে আন্দোলন শুরু হলেও এর পেছনে অন্য কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল—জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় ও তরুণদের সুযোগের অভাব। আওয়ামী লীগপ্রধান হাসিনা ধীরে ধীরে একনায়কতান্ত্রিক হয়ে উঠেছিলেন। বিরোধীদের দমন করছিলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করছিলেন। ব্যাংকিং খাত ভেঙে পড়েছিল তাঁর দলের লোকজনের দুর্নীতির কারণে। এলিট শ্রেণির একাংশ বিশাল অঙ্কের ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করায় সাধারণ মানুষ নিজের টাকাও তুলতে পারছিল না।

২০২৪ সালের সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অনেকে আশা করেছিলেন, দেশের বিষাক্ত ও দ্বন্দ্বপূর্ণ রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। যেখানে দুই প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার ক্ষমতার জন্য মুখোমুখি হয়েছে। ইউনূস বলেন, ‘আমাদের শুরুটা ছিল এক ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি, এক বিপর্যস্ত সমাজ নিয়ে। প্রশাসন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। আমরা জানতাম না, আমাদের বিলগুলো মেটাতে পারব কি না। বিপুল অঙ্কের সম্পদ যেন কারও মালিকানায় নেই, এমনভাবে লুটপাট করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে, কিন্তু তারা জানত এটা ঋণ নয়, উপহার—যা আর কখনোই ফিরে আসবে না।’

চলতি বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচনী ব্যবস্থা, দুর্নীতি আর জনকল্যাণ নিয়ে কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। ড. ইউনূস এখন চেষ্টা করছেন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তুলতে। আগামী জুলাইয়ে আন্দোলনের এক বছরপূর্তির আগেই ‘জুলাই সনদ’ নামে ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পন্ন করতে চান তিনি, যেন এরপর এপ্রিলের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া যায়।

ইউনূস বলেন, ‘এই চুক্তি হবে ঐতিহাসিক। সব দলকে একত্র করবে। কমিশনগুলো যে সুপারিশ দিয়েছে, সেগুলো সাধারণ নয়। এগুলো ভাসা-ভাসা কিছু নয়, একটু ভালো করার বা সামান্য পরিবর্তনের পরামর্শ নয়। আমাদের দায়িত্ব এসব বাস্তবায়ন করা এবং দেশকে এক কার্যকর, স্বাভাবিক ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়া।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘তারপর আমরা গর্ব করে বলতে পারব, একটা নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে।’ তবে ইউনূস স্বীকার করেন, সব পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য আনা সহজ হবে না। বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল এবং নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে। তারা দ্রুতই ভোট চায়। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী পদে দুই মেয়াদের সীমাবদ্ধতার বিরোধিতা করছে।

তবু ইউনূস মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখন যেভাবে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সেটি আগের বাংলাদেশে দেখা যায়নি। যেখানে দীর্ঘদিন ধরেই একে অপরের সঙ্গে মতৈক্যের কোনো নজির ছিল না। রাষ্ট্র কীভাবে মানুষের জন্য কাজ করবে—সেটি বদলাতে চান ইউনূস। তিনি চান, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা কিংবা অন্যান্য খাতে কাজ হোক। তিনি নিজেই যে মাইক্রোক্রেডিট মডেল তৈরি করেছিলেন, সেটিকে আরও সম্প্রসারিত করতে চান।

এই খাত বর্তমানে এনজিও-নির্ভর। যারা দরিদ্র মানুষকে ছোট ঋণ দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে সাহায্য করে। ইউনূস চান, এটি একটি আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা হোক। যেখানে ক্ষুদ্রঋণের জন্য বিশেষায়িত ব্যাংক থাকবে। তাঁর ভাষায়, এতে উদ্যোক্তা তৈরি হবে। কারণ দরিদ্র মানুষ সাধারণ ব্যাংকের কাছে যেতে পারে না, তারা ঋণ দেয় না।

মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে নেতিবাচক ভাবনা তৈরি হয়েছে। কারণ, কিছু ঋণদাতা উচ্চ সুদ আরোপ করেছে। তবে ইউনূস বলেন, এই মডেল বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ ভাবে, মাইক্রোক্রেডিট দরিদ্রদের কাছ থেকে টাকা কেড়ে নিচ্ছে। কিন্তু আসলে তা নয়। তাই একে খারাপ নাম দেওয়া হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে, এটা ঠিক করতে হবে। কিন্তু আমি বলি, ঠিক করার কিছু নেই। মাইক্রোক্রেডিটের কোনো ভুল নেই।’

ইউনূস বরাবরই প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার সমালোচক। কারণ, এতে দরিদ্রদের প্রবেশাধিকার নেই। আবার একই সঙ্গে এই ব্যাংক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে ক্ষমতাসীনদের ঋণখেলাপির কারণে। মানুষ পর্যন্ত নিজের জমানো টাকা তুলতে পারেনি।

এক বছর আগেও শেখ হাসিনা তাঁকে প্রকাশ্যে আক্রমণ করতেন। হঠাৎ করেই তাঁকে সরকারে নিয়ে আসা হয়। ইউনূস বলেন, তিনি নির্বাচন পর্যন্তই দায়িত্ব পালন করবেন। পরে আর সরকারের সঙ্গে থাকবেন না। এখন তাঁর কাজ বিভিন্ন রাজনৈতিক চাপের ভারসাম্য রক্ষা করে সংস্কার বাস্তবায়ন।

ইউনূস বলেন, ‘আগে আওয়ামী লীগের লোকেরা আমাকে আক্রমণ করত, এখন সবাই করে। এটা স্বাভাবিক। এই দায়িত্বে থাকলে সবাই আপনাকে নিয়ে কিছু বলবেই। আপনাকে সেটা মেনে নিতে হবে।’ ইউনূস বলেন, নির্বাচিত সরকার এলে ‘আমরা চুপচাপ সরে যাব’।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটিতে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিং করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: পিআইডি
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিং করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: পিআইডি

রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছিল, এর কারণ হিসেবে যুদ্ধবিমানের পাইলটের উড্ডয়ন ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে তদন্তে।

ঘটনার তিন মাস পর আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের কিছু তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রেস সচিব বলেন, ‘দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল, পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটি। ট্রেনিংয়ের সময় যখন ফ্লাই করছিলেন, পরিস্থিতি তাঁর আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। এটা হচ্ছে কনক্লুশন। এই পুরো তদন্ত কমিটি ১৫০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। তার মধ্যে এক্সপার্ট আছেন, আই উইটনেস আছেন, ভিকটিমস আছেন। সবার সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। উনারা ১৬৮টি তথ্য উদ্‌ঘাটন করেছেন এবং তার মধ্যে তাঁরা ৩৩টি রিকমেন্ডেশন করেছেন। প্রতিবেদনে অনেকগুলো ফাইন্ডিংসে অনেকগুলো রিকমেন্ডেশন এসেছে।’

প্রেস সচিব আরও বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে বিমানবন্দর ও আশপাশের ফায়ার স্টেশনগুলোর জন্য বিশেষ সরঞ্জাম ও ফোমের মতো উপকরণ থাকা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। উড়োজাহাজের উড্ডয়ন ও অবতরণের পথে যে অংশ পড়ে (ফানেল), তার মধ্যে নির্মিত কাঠামোর উচ্চতার বিধিনিষেধ কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এই ওঠানামার পথ বা ফানেলের আশপাশে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী হাসপাতাল, স্কুল বা বেশি জনসমাগম হয় এমন স্থাপনা নির্মাণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে ৩৬ জন নিহত হয়, এর অধিকাংশই শিক্ষার্থী। বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামও নিহত হন।

এ ঘটনা নিয়ে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনকে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিত, কারণ, দায়দায়িত্ব ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং ঘটনাসংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয় চিহ্নিত করতে বলা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবধান! ৯৯৯ ক্লোন করে বিকাশ-নগদের পিন চাচ্ছে প্রতারকেরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৭
সাবধান! ৯৯৯ ক্লোন করে বিকাশ-নগদের পিন চাচ্ছে প্রতারকেরা

সম্প্রতি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বর ক্লোন করে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারকেরা ৯৯৯ নম্বর ব্যবহার করে বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর ও ব্যাংকের কার্ডসংক্রান্ত তথ্য জানতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর প্রধান অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মহিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কখনোই কোনো নাগরিকের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বা ব্যাংক কার্ডের পিন নম্বর জানতে চায় না। নাগরিকদের চাহিদা অনুযায়ী জরুরি মুহূর্তে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সসেবা দেওয়া হয়।

আজ সকাল ১০টার দিকে এ ধরনের দুটি প্রতারণার ঘটনা ঘটে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কাশিয়াডাঙ্গা থানার আরপুর বাগানপাড়া এলাকার এক বাসিন্দাকে প্রতারকেরা ৯৯৯ নম্বর ক্লোন করে ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টের তথ্য জানতে চায়। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে সরাসরি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করেন। পরে ৯৯৯ থেকে স্থানীয় থানার সঙ্গে ভুক্তভোগীর যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয় এবং ঘটনাটি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।

আরও এক ঘটনায় এক ব্যক্তিকে ৯৯৯ নম্বর থেকে ফোন করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানানো হয় এবং বিকাশ অ্যাকাউন্টের তথ্য দাবি করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ও ব্যাংকের কার্ডের পিন নম্বর কোনো অবস্থায় কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। এ ধরনের প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকা ও তাদের সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট থানা বা ৯৯৯ নম্বরে জানাতে জনগণকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানানো সেই ইউএনও ওএসডি

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

নিজের চাচা-চাচিকে বাবা-মা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেনকে ওএসডি করেছে সরকার। আজ বুধবার তাঁকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

কামাল হোসেন তাঁর পিতা-মাতা মো. আবুল কাশেম ও মোছা. হাবীয়া খাতুনের পরিবর্তে নিজের চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবীব ও চাচি মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা দেখিয়ে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা নিতে জালিয়াতির অভিযোগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দুদকের ঢাকা-১-এর সম্মিলিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. মনজুরুল ইসলাম মিন্টু বাদী হয়ে কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

কামাল হোসেনের প্রকৃত মা-বাবা কারা, তা নিশ্চিত হতে গত মঙ্গলবার ডিএনএ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরদিন ইউএনও কামাল হোসেনকে ওএসডি করা হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই বিপ্লবীরা নতুন সংবিধান চাইলে সেটাই হতো সংবিধান: অ্যাটর্নি জেনারেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘জুলাই বিপ্লবীরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে বলত, “আমরা ৭২-এর সংবিধান চাই না, আমরা নতুন সংবিধান রচনা করতে চাই”—তাহলে সেটাই হতো সংবিধান। কিন্তু তাদের মধ্যে বিভেদ থাকলে হবে না। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে আজ বুধবার এসব কথা বলেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগে অষ্টম দিনের মতো এ বিষয়ে শুনানি হয়।

এদিন আরও শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আনীক আর হক এবং বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। খায়রুল হক সাহেবরা হুকুম নড়ায়ে দিয়েছেন সংক্ষিপ্ত রায় এবং পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্য দিয়ে; যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শাস্তি হতে পারে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড। সংবিধান একটা অরগানিক ডকুমেন্ট। এটা বিভিন্ন রকমভাবে উপস্থাপিত হয়। কোরআন কিংবা বাইবেল—কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। সংবিধান পরিবর্তনযোগ্য। আজকে সংবিধানের অ্যামেন্ডমেন্টে (সংশোধন) যদি বলে দেন, তত্ত্বাবধায়কে ফিরে গেলাম, সেটাই যে অ্যাবসোলিউট (যথাযথ) হবে—তাও না। এটাও জনগণের চাহিদা অনুসারে হবে। জনগণ যদি মনে করে, এটাতে তার ভোটাধিকার নিশ্চিত হচ্ছে না, জনগণ ইচ্ছা করলে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারবে।’

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মনে করি, ওই (তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল) রায় থাকা উচিত না। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রায়টা লেখা হয়েছে একটি বিশেষ দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য। এই রায় দুটি গ্রাউন্ডে বাতিল হবে। সাতজন মিলে ঘোষণা করলেন, আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। সেখানে উনারা ডেভিয়েট (বিচ্যুত) করে পূর্ণাঙ্গ যে রায় দিলেন, তা ওপেন ঘোষণা রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ঘোষিত রায় পরিবর্তন করার জন্য রিভিউ করতে হবে। রিভিউ যেকোনো পক্ষ করতে পারে। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও করতে পারেন। খায়রুল হক সেই পথে না গিয়ে যে পথে হেঁটেছেন, তা আইনের ব্যত্যয়। রিভিউ না করে উনি রায় পরিবর্তন করেছেন। এটা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারা অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উনি পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে জানতেন, এ ধরনের পরিবর্তন করা আইনে সম্ভব নয়। তারপরও উনি সেটা করেছেন।’

আসাদুজ্জামান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশে আসার পরে যেভাবে দেশের গণতন্ত্র উন্নত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপের পরে সেই সুযোগ হয়নি। এই ব্যবস্থা বাতিল করার পর হত্যা, গুম, রাতের বেলায় ভোট দেওয়া, মিথ্যা মামলায় মানুষকে কারাগারে পাঠানো—এ ধরনের রাজনীতি শুরু হয়। ৭০ লাখের মতো মানুষ গায়েবি মামলায় আসামি হয়। সেই কারণে এটা ২১৯ ধারার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত