Ajker Patrika

শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস আজ

শ্রম দিয়েও পারিশ্রমিক পায় না ২০ লাখ শিশু

  • দেশে শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার।
  • এই শিশুদের ১০ লাখ ৭০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সম্পৃক্ত।
  • ২০১৩ সালের তুলনায় ২০২২ সালে শিশুশ্রম বেড়েছে ৩%।
অর্চি হক, ঢাকা 
আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, ১০: ৩৪
লোহালক্কড়ের ওয়ার্কশপে কাজ করছে ১০ বছরের শিশু রাসেল। গতকাল রাজধানীর জিনজিরা তাওয়াপট্টি এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
লোহালক্কড়ের ওয়ার্কশপে কাজ করছে ১০ বছরের শিশু রাসেল। গতকাল রাজধানীর জিনজিরা তাওয়াপট্টি এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘আমাগো ঈদেও ছুটি নাই। এইখানে থাকি, এইখানেই ঘুমাই। বাড়ি গ্যালেই বেতন কাটা।’ বলছিল রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার একটি শিশুপার্কের রাইড অপারেটর রাজু (ছদ্মনাম)। গত বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত সে। লেখাপড়া ছেড়ে গত বছরই ঢাকায় এসে শিশুপার্কের কাজে যোগ দেয় রাজু। এরপর আর স্কুলে ফেরা হয়নি। এখন দিনরাত শিশুপার্কেই কাটে তার। যে বয়সে বাবা-মায়ের হাত ধরে তার শিশুপার্কে ঘুরে বেড়ানোর কথা, সে বয়সে শিশুদের জন্য রাইড চালিয়ে রোজগার করতে হয় তাকে।

বুধবার বিকেলে শিশুপার্কেই কথা হয় রাজুর সঙ্গে। সে জানায়, ছোট ছেলে-মেয়েরা যখন বাবা-মায়ের হাত ধরে পার্কে এসে নানা রকম বায়না ধরে, তখন তার খুব কষ্ট হয়। কারণ, এখানে তার বায়না ধরারও সুযোগ নেই। বাবা-মা আছেন; তাঁরা থাকেন ফরিদপুরের এক গ্রামে। বাবা কৃষিকাজ করেন। আরও তিনজন ভাই-বোন আছে রাজুর। তার বাবার একার পক্ষে সবার দেখভাল করা সম্ভব হয় না। তাই ছোটবেলা থেকে কাজে নামতে হয় তাদের।

রাজু আরও জানায়, সে এই পার্কে বাচ্চাদের ট্রেনের মেশিন অপারেটর। সকাল ১০টা থেকে ১২ ঘণ্টা করতে হয় এই কাজ। নেই কোনো সাপ্তাহিক ছুটি বা ঈদের ছুটি।

রাজুর স্বপ্ন, নানা রকম মেশিন চালানো শেষে একটু বড় হয়ে বিদেশে যাবে সে। রাজু বলে, ‘বিদ্যাশে গিয়া অনেক টাকা রোজগার করবো। যখন ছেলে-মেয়ে হবে, তাগো পড়াশোনা শিখতে দিবো, স্কুলে পাঠাবো। আমার মতো বয়সে কখনো বাইরে কাজে দেবো না।’

শুধু রাজু নয়, দেশের বহু শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। পেটের তাগিদে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়। গত বছরের মার্চে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ, ২০২২ অনুযায়ী, দেশে শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার। তাদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত আছে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু। আর শিশু গৃহকর্মী ২০ লাখ ৯০ হাজার।

বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, শ্রমে নিয়োজিত ২০ লাখ ১০ হাজার শিশুই পারিশ্রমিক পায় না। আর যারা পারিশ্রমিক পায়, তাদের গড় আয় মাসে ৬ হাজার ৬৭৫ টাকা।

অনানুষ্ঠানিক খাত; যেমন গৃহকর্ম, ছোট কারখানায় নিয়োজিত শিশুদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। কারখানায় কাজ শেখানোর কথা বলে মাসের পর মাস শিশুকে বেতন-ভাতার বাইরে রাখা হয়।

শিশু অধিকারকর্মীরা জানান, খুব কম খরচে শিশুদের দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে নেওয়া যায় বলে নিয়োগকর্তারা শিশুদের কাজে নেন। আর পরিবারগুলো কখনো দারিদ্র্যের কারণে, কখনো বাড়তি আয়ের আশায়, কখনো আবার নিরাপত্তাহীনতা কিংবা অসচেতনতার কারণে শিশুদের কাজে পাঠায় ৷

এমন প্রেক্ষাপটে আজ ১২ জুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, ‘স্বপ্নের ডানায় ভর করি, শিশুশ্রমের শৃঙ্খল ছিঁড়ি—এগিয়ে চলি দৃপ্ত পায়ে, আশার আগুন বুকে জ্বালি।’

জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি, ২০১০ অনুযায়ী, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা পরিশ্রম বা ঝুঁকিহীন কাজ করে, তাদের এই শ্রমকে অনুমোদনযোগ্য হিসেবে ধরা হয়। তবে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী কোনো শিশু যদি ঝুঁকিহীন কাজও করে, তবে সেটা শিশুশ্রম হবে। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কেউ যদি সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি কাজ করে, সেটি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শিশুশ্রম নিরসনে এক যুগে ৩৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে নানা প্রকল্প ও কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিশুশ্রম না কমে বরং বেড়েছে। জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ, ২০২২ অনুসারে, দেশে শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭। এটা ২০১৩ সালের জরিপের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ বেশি।

শিশুশ্রম নিরসনে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিশু অধিকারকর্মীরা। এ বিষয়ে বেসরকারি সংস্থা এডুকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক (শিশুশ্রম নিরসন) আফজাল কবির খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে যে পরিকল্পনা ও প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়, তা বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকে না। যেটা বরাদ্দ থাকে, সেটাও সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, তা তদারক করা হয় না।

আফজাল কবির জানান, শিশুশ্রম নিরসনে আইন প্রয়োগের দৃষ্টান্ত থাকা দরকার। যাঁরা প্রকৃতপক্ষেই দারিদ্র্যের কারণে সন্তানকে কাজে দিচ্ছেন, তাঁদের সন্তানকে স্কুলে ফিরিয়ে নিতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন সচেতনতা বাড়ানো।

শিশুশ্রম নিরসনে সরকারি পদক্ষেপ সম্পর্কে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুছ সামাদ আল আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিশুশ্রমের সঙ্গে অভিভাবকেরা জড়িত, দারিদ্র্য জড়িত, আরও বিভিন্ন বিষয় জড়িত। শিশুশ্রম নিরসনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা, ২০২১-২০২৫ গ্রহণ করা হয়েছিল। সেখানে সব অংশীজনকে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করা যায়নি। এই কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়িয়ে সব অংশীজনকে যুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি বাসভবনে একাই থাকতেন শরীয়তপুরের ডিসি, পরিবার থাকত ঢাকায়

স্বামীকে ভিডিও কলে রেখে ফাঁস দিলেন স্ত্রী

‘তোরা তো পুলিশ মারছিস, ফাঁড়ি জ্বালাইছিস’ বলেই জুলাই যোদ্ধাকে মারধর

ইরানে ভূমিকম্প নিয়ে পারমাণবিক পরীক্ষার জল্পনা, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

বুশেহরে হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে ‘ফুকুশিমা’ ঘটতে পারে, বিশ্লেষকদের হুঁশিয়ারি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত