বৈদেশিক সম্পর্ক
কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তিন মাস আগে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কথা হয়েছিল চীন ও ভারতের দুই শীর্ষ নেতার। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে অচলাবস্থা চলছে, তাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে অন্তত বরফ গলতে শুরু করবে, এমন আশাবাদ ছিল সরকারের। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের সুযোগে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের পালে জোর হাওয়া লাগার আশা জাগে সরকারের অনেকের ভেতর। কিন্তু বাস্তবে দুই আঞ্চলিক পরাশক্তির কারও সঙ্গেই সম্পর্ক তেমন এগোচ্ছে না।
তিন দেশের কূটনীতিকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারত শুরু থেকেই খুব প্রয়োজন না হলে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল নেয়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা আসার পর বাংলাদেশে সরকারের ভেতরে-বাইরে ধীরে হলেও নির্বাচনের হাওয়া বইছে। কয়েকটি দল এরই মধ্যে মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী প্রচারও শুরু করে দিয়েছে। এখন ভারতের পাশাপাশি চীনও নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার আসবে, তার সঙ্গে কাজ করার জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা মনে করছেন, দিল্লি থেকে একের পর এক বিভ্রান্তিকর সংকেত আসছে। ভারতের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের সঙ্গে ‘সম্পর্ক মেরামতের’ পরামর্শ দিচ্ছেন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও মাঝেমধ্যে ভালো ভালো কথা বলে। কিন্তু বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তার উল্টো। পুশ ইন ও সীমান্ত হত্যা চলছে। নিয়মিত কিছু বৈঠক চেয়েও কোনো সাড়া মেলে না। এমন অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সম্পর্কের বরফ গলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরকারের বাইরের বিশ্লেষকেরা অবশ্য মনে করছেন, বাংলাদেশের চারদিকে ভারত থাকায় দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সমালোচনার ভয়ে সরকার সেদিকে যাচ্ছে না। এর বাইরে চীনসহ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কেও বাস্তবে তেমন অগ্রগতি নেই।
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সাবেক চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, কারও সঙ্গেই সম্পর্ক খুব একটা এগোচ্ছে না। সরকারের নামই যখন অন্তর্বর্তী সরকার, তখন সবাই বোঝে, এ সরকার সীমিত সময়ের জন্য। এ কারণে দেশগুলো নিয়মিত সরকারের মতো এ সরকারকে গণ্য করে না; এটাই স্বাভাবিক।
চীনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা এই কূটনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ সরকার এলেও তারা কতটা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, সে বিষয়েও বিদেশিদের মধ্যে প্রশ্ন আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। এ কারণে প্রায় সব দেশ নির্বাচিত নিয়মিত সরকার দায়িত্বে আসার জন্য অপেক্ষা করছে।
মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি গত ৪ এপ্রিল ব্যাংককের বৈঠকে গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়ন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা, শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করেন।
এমন প্রেক্ষাপটে দিল্লি থেকে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর সংকেত আসার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এক কূটনীতিক বলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গত ২৬ জুন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ‘ভালো করার’ চেষ্টার কথা ঢাকায় সাংবাদিকদের জানান। পরদিন (২৭ জুন) দিল্লি থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তিন ধরনের সংকেত এসেছে।
তৌহিদ হোসেনের মন্তব্যকে সূত্র করে দিল্লিতে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ২৭ জুন বলেন, অনুকূল পরিবেশে বাংলাদেশের সঙ্গে সব বিষয়ে ভারত সরকার প্রস্তুত। বাংলাদেশের সঙ্গে ঝুলে থাকা বিভিন্ন ইস্যু সমাধানেও ভারত সরকার অপেক্ষা করছে।
একই দিন (২৭ জুন) দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে কথা বলেন দেশটির সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, বাংলাদেশে সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস, অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ আতা হাসনাইন ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অমিতাভ মাতো।
কমিটির চেয়ারম্যান বিরোধী কংগ্রেস নেতা ও এমপি শশী থারুর বৈঠকের পর দিল্লির গণমাধ্যমকে জানান, বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তাঁদের অভিমত দিয়েছেন। তাঁরা ভারতে যাওয়া বাংলাদেশের নাগরিকের সংখ্যা কমে আসার কথা জানান।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান ক্ষমতাকাঠামোর নতুন বাস্তবতা বুঝে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মেরামত করা দরকার। বেসরকারি খাতের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে হলেও ইউনূসের সরকারের সঙ্গে ভারতকে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থ তৈরি করতে হবে।
ভারতীয় বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ‘চীন-পাকিস্তান চক্র’ অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন উপায়ে যেভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা বাড়াচ্ছে, তার প্রভাব বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বর্তমান টানাপোড়েনের সম্পর্কের ওপর পড়বে। পাকিস্তানকে ভারত যেভাবে দেখে, বাংলাদেশকে একই দৃষ্টিতে না দেখার ওপরও তাঁরা জোর দেন। তাঁরা মনে করেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা নেতিবাচক।
সেদিনই (২৭ জুন) ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ৯ ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। যেসব পণ্যের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা এসেছে, সেগুলো হলো কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা ও বিশেষ ধরনের কাপড়। তবে শুধু মুম্বাইয়ের নভোসেবা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য ভারতে যেতে পারবে। অথচ এসব পণ্য সাধারণত স্থলবন্দর হয়েই রপ্তানি হয়ে থাকে।
সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, এই ৯ বাংলাদেশি পণ্য ভারতের স্থলবন্দর হয়ে নেপাল ও ভুটানে রপ্তানির ক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব পণ্য ব্যবহার করে তৈরি হওয়া পণ্য দেশ দুটি অন্য দেশে রপ্তানি করতে পারবে না।
এই নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ভারত তিন মাসে তিন দফা বিধিনিষেধ আরোপ করল। এর আগে গত ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা, সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় বাংলাদেশ থেকে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আর গত ৭ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা ভারত সরকার প্রত্যাহার করে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, দেশটি থেকে স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশে রপ্তানির ওপর আসা বিধিনিষেধের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত।
বাংলাভাষী ভারতীয়দের বাংলাদেশে পুশ ইন করার বিপক্ষে সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সার্বিকভাবে পুশ ইন বন্ধ হয়নি। পুশ ইনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার জন্য কনস্যুলার সংলাপ চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ বিষয়ে ভারতের দিক থেকে কোনো সাড়া নেই। এর বাইরে অনেকগুলো নিয়মিত বৈঠকও আটকে আছে ভারতের অনাগ্রহে।
বাংলাদেশে ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর বিষয়ে ভারত সরকারের মন্তব্য করাকেও এখানে সরকার ভালোভাবে নিচ্ছে না। কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নীতিগত অবস্থান হিসেবেই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা হয় না। কিন্তু ভারতের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ সেটাই করে চলেছে।
১৯৯৬ সালে ৩০ বছরের জন্য সই হওয়া গঙ্গা নদীর পানি ভাগাভাগি চুক্তির মেয়াদ আগামী বছর (২০২৬) শেষ হচ্ছে। ২০২৪ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারতে শেখ হাসিনার সর্বশেষ সফরে চুক্তিটি পর্যালোচনার বিষয়টি আসে। দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের এ বিষয়ে কাজ করার কথা। কিন্তু হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর বিষয়টি আর এগোয়নি।
ভারতে অথবা ভারত হয়ে অন্য দেশে রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টির পাশাপাশি ভারত থেকে মানুষের পুশ ইন, সীমান্ত হত্যাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপকে স্থানীয় কর্মকর্তারা বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে গণ্য করছেন।
মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার করার আশাবাদের কথা জানান।
এর তিন মাসের মাথায় গত সপ্তাহে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে দেশটি সফর করে এলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল ঢাকায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর আশাবাদের কথা চীনা নেতারা তাঁদের জানিয়েছেন।
ফখরুল বলেন, ‘চীন আশা করছে, একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে তারা আরও গভীর, আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করতে পারবে।’
বিএনপি নেতার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বজায় রাখার দিকটিতেও চীনাদের আগ্রহ আছে।
চীনের এক কূটনীতিক বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক বজায় থাকা তিন দেশের জন্যই প্রয়োজন। এতে চীনেরও স্বার্থ আছে। সেটা হলো আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকা। এ ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকা দরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তিন মাস আগে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কথা হয়েছিল চীন ও ভারতের দুই শীর্ষ নেতার। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে অচলাবস্থা চলছে, তাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে অন্তত বরফ গলতে শুরু করবে, এমন আশাবাদ ছিল সরকারের। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের সুযোগে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের পালে জোর হাওয়া লাগার আশা জাগে সরকারের অনেকের ভেতর। কিন্তু বাস্তবে দুই আঞ্চলিক পরাশক্তির কারও সঙ্গেই সম্পর্ক তেমন এগোচ্ছে না।
তিন দেশের কূটনীতিকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারত শুরু থেকেই খুব প্রয়োজন না হলে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল নেয়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা আসার পর বাংলাদেশে সরকারের ভেতরে-বাইরে ধীরে হলেও নির্বাচনের হাওয়া বইছে। কয়েকটি দল এরই মধ্যে মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী প্রচারও শুরু করে দিয়েছে। এখন ভারতের পাশাপাশি চীনও নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার আসবে, তার সঙ্গে কাজ করার জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা মনে করছেন, দিল্লি থেকে একের পর এক বিভ্রান্তিকর সংকেত আসছে। ভারতের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের সঙ্গে ‘সম্পর্ক মেরামতের’ পরামর্শ দিচ্ছেন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও মাঝেমধ্যে ভালো ভালো কথা বলে। কিন্তু বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তার উল্টো। পুশ ইন ও সীমান্ত হত্যা চলছে। নিয়মিত কিছু বৈঠক চেয়েও কোনো সাড়া মেলে না। এমন অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সম্পর্কের বরফ গলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরকারের বাইরের বিশ্লেষকেরা অবশ্য মনে করছেন, বাংলাদেশের চারদিকে ভারত থাকায় দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সমালোচনার ভয়ে সরকার সেদিকে যাচ্ছে না। এর বাইরে চীনসহ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কেও বাস্তবে তেমন অগ্রগতি নেই।
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সাবেক চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, কারও সঙ্গেই সম্পর্ক খুব একটা এগোচ্ছে না। সরকারের নামই যখন অন্তর্বর্তী সরকার, তখন সবাই বোঝে, এ সরকার সীমিত সময়ের জন্য। এ কারণে দেশগুলো নিয়মিত সরকারের মতো এ সরকারকে গণ্য করে না; এটাই স্বাভাবিক।
চীনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা এই কূটনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ সরকার এলেও তারা কতটা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, সে বিষয়েও বিদেশিদের মধ্যে প্রশ্ন আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। এ কারণে প্রায় সব দেশ নির্বাচিত নিয়মিত সরকার দায়িত্বে আসার জন্য অপেক্ষা করছে।
মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি গত ৪ এপ্রিল ব্যাংককের বৈঠকে গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়ন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা, শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করেন।
এমন প্রেক্ষাপটে দিল্লি থেকে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর সংকেত আসার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এক কূটনীতিক বলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গত ২৬ জুন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ‘ভালো করার’ চেষ্টার কথা ঢাকায় সাংবাদিকদের জানান। পরদিন (২৭ জুন) দিল্লি থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তিন ধরনের সংকেত এসেছে।
তৌহিদ হোসেনের মন্তব্যকে সূত্র করে দিল্লিতে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ২৭ জুন বলেন, অনুকূল পরিবেশে বাংলাদেশের সঙ্গে সব বিষয়ে ভারত সরকার প্রস্তুত। বাংলাদেশের সঙ্গে ঝুলে থাকা বিভিন্ন ইস্যু সমাধানেও ভারত সরকার অপেক্ষা করছে।
একই দিন (২৭ জুন) দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে কথা বলেন দেশটির সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, বাংলাদেশে সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস, অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ আতা হাসনাইন ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অমিতাভ মাতো।
কমিটির চেয়ারম্যান বিরোধী কংগ্রেস নেতা ও এমপি শশী থারুর বৈঠকের পর দিল্লির গণমাধ্যমকে জানান, বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তাঁদের অভিমত দিয়েছেন। তাঁরা ভারতে যাওয়া বাংলাদেশের নাগরিকের সংখ্যা কমে আসার কথা জানান।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান ক্ষমতাকাঠামোর নতুন বাস্তবতা বুঝে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মেরামত করা দরকার। বেসরকারি খাতের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে হলেও ইউনূসের সরকারের সঙ্গে ভারতকে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থ তৈরি করতে হবে।
ভারতীয় বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ‘চীন-পাকিস্তান চক্র’ অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন উপায়ে যেভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা বাড়াচ্ছে, তার প্রভাব বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বর্তমান টানাপোড়েনের সম্পর্কের ওপর পড়বে। পাকিস্তানকে ভারত যেভাবে দেখে, বাংলাদেশকে একই দৃষ্টিতে না দেখার ওপরও তাঁরা জোর দেন। তাঁরা মনে করেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা নেতিবাচক।
সেদিনই (২৭ জুন) ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ৯ ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। যেসব পণ্যের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা এসেছে, সেগুলো হলো কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা ও বিশেষ ধরনের কাপড়। তবে শুধু মুম্বাইয়ের নভোসেবা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য ভারতে যেতে পারবে। অথচ এসব পণ্য সাধারণত স্থলবন্দর হয়েই রপ্তানি হয়ে থাকে।
সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, এই ৯ বাংলাদেশি পণ্য ভারতের স্থলবন্দর হয়ে নেপাল ও ভুটানে রপ্তানির ক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব পণ্য ব্যবহার করে তৈরি হওয়া পণ্য দেশ দুটি অন্য দেশে রপ্তানি করতে পারবে না।
এই নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ভারত তিন মাসে তিন দফা বিধিনিষেধ আরোপ করল। এর আগে গত ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা, সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় বাংলাদেশ থেকে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আর গত ৭ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা ভারত সরকার প্রত্যাহার করে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, দেশটি থেকে স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশে রপ্তানির ওপর আসা বিধিনিষেধের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত।
বাংলাভাষী ভারতীয়দের বাংলাদেশে পুশ ইন করার বিপক্ষে সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সার্বিকভাবে পুশ ইন বন্ধ হয়নি। পুশ ইনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার জন্য কনস্যুলার সংলাপ চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ বিষয়ে ভারতের দিক থেকে কোনো সাড়া নেই। এর বাইরে অনেকগুলো নিয়মিত বৈঠকও আটকে আছে ভারতের অনাগ্রহে।
বাংলাদেশে ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর বিষয়ে ভারত সরকারের মন্তব্য করাকেও এখানে সরকার ভালোভাবে নিচ্ছে না। কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নীতিগত অবস্থান হিসেবেই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা হয় না। কিন্তু ভারতের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ সেটাই করে চলেছে।
১৯৯৬ সালে ৩০ বছরের জন্য সই হওয়া গঙ্গা নদীর পানি ভাগাভাগি চুক্তির মেয়াদ আগামী বছর (২০২৬) শেষ হচ্ছে। ২০২৪ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারতে শেখ হাসিনার সর্বশেষ সফরে চুক্তিটি পর্যালোচনার বিষয়টি আসে। দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের এ বিষয়ে কাজ করার কথা। কিন্তু হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর বিষয়টি আর এগোয়নি।
ভারতে অথবা ভারত হয়ে অন্য দেশে রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টির পাশাপাশি ভারত থেকে মানুষের পুশ ইন, সীমান্ত হত্যাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপকে স্থানীয় কর্মকর্তারা বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে গণ্য করছেন।
মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার করার আশাবাদের কথা জানান।
এর তিন মাসের মাথায় গত সপ্তাহে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে দেশটি সফর করে এলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল ঢাকায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর আশাবাদের কথা চীনা নেতারা তাঁদের জানিয়েছেন।
ফখরুল বলেন, ‘চীন আশা করছে, একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে তারা আরও গভীর, আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করতে পারবে।’
বিএনপি নেতার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বজায় রাখার দিকটিতেও চীনাদের আগ্রহ আছে।
চীনের এক কূটনীতিক বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক বজায় থাকা তিন দেশের জন্যই প্রয়োজন। এতে চীনেরও স্বার্থ আছে। সেটা হলো আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকা। এ ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকা দরকার।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিবের দায়িত্বে ছিলেন আট কর্মকর্তা। তাঁদের ছয়জনের নামেই দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে এক নারীর ধর্ষণের ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে তীব্র জনরোষ দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) কুমিল্লায় বাবার বাড়িতে ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে একাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
৮ ঘণ্টা আগেবেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাগুলোর জন্য মূল্য নির্ধারণ করে নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত আদায় করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদারে যৌথ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এক ফোনালাপে তাঁরা এই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
৯ ঘণ্টা আগে