Ajker Patrika

কোরবানির পরে লকডাউনে ট্যানারি চালু রাখতে চায় মালিকেরা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
কোরবানির পরে লকডাউনে ট্যানারি চালু রাখতে চায় মালিকেরা 

কোরবানির ঈদের একদিন পর থেকে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনে সব ধরনের কলকারখানা বন্ধের সরকারি ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন ট্যানারি শিল্প মালিকেরা। কোরবানির পশুর চামড়া কেনার পর তা প্রক্রিয়াজাত ও পচে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে এবং আর্থিক ক্ষতি রোধে ট্যানারি চালু রাখতে চায় তারা। এ ছাড়া লকডাউনে বন্ধ থাকলে সারা দেশে কোরবানির কাঁচা চামড়া কেনাবেচাও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

এদিকে, বাণিজ্যসচিব জানিয়েছেন, ট্যানারি মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য আগামীকাল রোববার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেওয়া হবে। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, কোরবানির পর স্থানীয়ভাবে যাতে সংরক্ষণ করতে পারা যায় সে জন্য পর্যাপ্ত লবণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

লবণ দিয়ে প্রায় দুই মাস চামড়া সংরক্ষণ করা যায় উল্লেখ করে বাণিজ্যসচিব আর বলেন, জরুরি পরিবহনের জন্য ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চামড়া পরিবহনের বিষয়টি শিথিল করার জন্যও আমরা পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছি। এ ছাড়া বিষয়টি সার্বিকভাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে সমন্বয় করা হবে।

বাণিজ্যসচিব আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা থাকায় বাংলাদেশের চামড়া রপ্তানি দিন দিন বাড়ছে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনলাইনে চামড়ার দাম নির্ধারণী সভায়ও লকডাউনের সময় ট্যানারি চালু রাখার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন দেশের চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি প্রস্তাবিত লকডাউনে কারখানা চালু রাখার সুযোগ দিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। তবে এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে এখনও কোন ফলপ্রসূ আশ্বাস পায়নি তারা।

এ ছাড়া ট্যানারি ও কারখানাগুলো চালু রাখার ব্যবস্থা করতে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) কাছেও বিটিএ’র পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, এ বছর সারা দেশে ১ কোটি ১৯ লাখ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবারের সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী এবার লবণযুক্ত গরুর চামড়া ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৪০-৪৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৩-৩৭ টাকা, সারা দেশে খাসির চামড়ার বর্গফুট ১৫-১৭ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ১২-১৪ টাকা নির্ধারণ করেন। গত বছরের চেয়ে এবার গরুর চামড়ার দাম বর্গফুটে ৫ টাকা এবং খাসি ও ছাগলের চামড়ার দাম বর্গফুট ২ টাকা বাড়ানো হয়। তবে সভায় ঈদের পর লকডাউনের সময় ট্যানারি চালু রাখার বিষয়ে কোন ইতিবাচক আশ্বাস দেননি বাণিজ্যমন্ত্রী।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, পচনশীল পণ্য হওয়ায় কোরবানীর পর পরই ট্যানারিতে প্রক্রিয়াজাত করতে না পারলে চামড়া পচে যেতে পারে। এজন্য লকডাউনের সময় ট্যানারিগুলো চালু রাখা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

বিটিএ এর তথ্যানুযায়ী, সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্প নগরীতে মোট কারখানার সংখ্যা ১৫৫ টি। এখানে প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত। এছাড়া কোরবানীর সময় সারা দেশে কয়েক লাখ মানুষ চামড়া কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত থাকেন।

বাংলাদেশ লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফএমইএ) সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, কোরবানির পর পরই সারা দেশে সবচেয়ে বেশি চামড়া কেনাবেচা হয়। এই সময় লকডাউনে চামড়া কেনা এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ট্যানারি চালু না রাখলে এ খাতের ব্যবসায়ী–রপ্তানিকারকরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। 
 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত