Ajker Patrika

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি: অর্ধেক সনদ যাচাই শেষ, গরমিল ৪ শতাংশে

  • মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কর্মরত আছেন ৯০,০৯১ জন।
  • ৫২ হাজারের সনদ যাচাই শেষ, গরমিল ২,১১২টিতে।
  • ভুয়াদের চাকরিচ্যুত ও ফৌজদারি মামলা দেওয়া হবে।
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি: অর্ধেক সনদ যাচাই শেষ, গরমিল ৪ শতাংশে

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরিতে আছেন ৯০ হাজার ৯১ জন। তাঁদের মধ্যে ৫২ হাজার জনের সনদ যাচাই শেষ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ৪ শতাংশ সনদে গরমিল পাওয়া গেছে। যাঁদের সনদে গরমিল পাওয়া যাবে, নিয়োগকারী মন্ত্রণালয় তাঁদের কাছে তথ্যপ্রমাণসহ ব্যাখ্যা চাইবে।

সূত্র বলেছে, যাঁরা যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারবেন, তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বৈধ বলে গণ্য করা হবে। তথ্যপ্রমাণ দেখাতে না পারলে সেগুলোকে ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করে চাকরি থেকে অপসারণের পাশাপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ভুয়া সনদে চাকরির পর বেতন-ভাতা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ ফেরত নেওয়া হবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গত বছরের আগস্টে মুক্তিযোদ্ধা কোটার চাকরিধারীদের তালিকা করার নির্দেশনা দেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিরতদের তথ্য জানাতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দেয়। সব সরকারি দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়া ৯০ হাজার ৯১ জন বর্তমানে কর্মরত আছেন।

সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ৫২ হাজার জনের মুক্তিযোদ্ধার সনদসংক্রান্ত তথ্য যাচাই শেষ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তাঁদের মধ্যে ২ হাজার ১১২ জনের সনদে গরমিল পাওয়া গেছে, যা ৪ শতাংশের কিছু বেশি। পুরো তালিকা যাচাই শেষ করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করবে মন্ত্রণালয়।

সনদ যাচাইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রায় অর্ধেক সনদ যাচাই শেষে তাঁদের ধারণা, ৪ শতাংশের কিছু বেশি সনদে গরমিল পাওয়া যাবে। তবে সব সনদ ভুয়া নয়। কেউ কেউ ভুল তথ্য দিয়েছেন।

কারও কারও কোনো তথ্য সমন্বিত তালিকার তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে শতভাগ মিলছে না। যাঁদের নাম কোনো তালিকাতেই পাওয়া যায়নি, সেগুলো অবশ্যই ভুয়া। তথ্যে গরমিল থাকা সবাইকেই নিয়োগকারী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিতে বলা হবে।

মুক্তিযোদ্ধাদের ৩৪ ধরনের গেজেটের সরকারি স্বীকৃতি রয়েছে। এগুলো হলো—বেসামরিক গেজেট, শহীদ বেসামরিক গেজেট, সশস্ত্র বাহিনী শহীদ গেজেট, শহীদ বিজিবি গেজেট, শহীদ পুলিশ গেজেট, যুদ্ধাহত গেজেট, খেতাবপ্রাপ্ত গেজেট, মুজিবনগর গেজেট, বিসিএস ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গেজেট, বিসিএস গেজেট, সেনাবাহিনী গেজেট, বিমানবাহিনী গেজেট, নৌবাহিনী গেজেট, নৌ-কমান্ডো গেজেট, বিজিবি গেজেট, পুলিশ বাহিনী গেজেট, আনসার বাহিনী গেজেট, স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দ সৈনিক গেজেট, বীরাঙ্গনা গেজেট, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গেজেট, ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী গেজেট, লাল মুক্তিবার্তা, লাল মুক্তিবার্তা স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী), মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (পদ্মা), মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (মেঘনা), যুদ্ধাহত পঙ্গু (বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ) গেজেট, যুদ্ধাহত (বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ) গেজেট, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেক্টর), বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়োজিত বা দায়িত্ব পালনকারী মুক্তিযোদ্ধা গেজেট, যুদ্ধাহত সেনা গেজেট, প্রবাসে বিশ্বজনমত গেজেট, যুদ্ধাহত নৌবাহিনী গেজেট এবং যুদ্ধাহত বিমানবাহিনী গেজেট।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ১৫০ জনের সনদ কোনো গেজেটেই পাওয়া যায়নি। তাঁদের ধারণা, এসব সনদ ভুয়া। অনেকের সনদ তাঁদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী সংশ্লিষ্ট গেজেটে পাওয়া যায়নি। অনেকের মা-বাবার নাম ভুল পাওয়া গেছে। সমন্বিত তালিকায় নাম থাকলেও অনেকের নাম মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) নেই। কিছু নাম এমআইএসে থাকলেও সমন্বিত তালিকায় পাওয়া যায়নি; গেজেট বাতিল হওয়ার পর হয়তো সমন্বিত তালিকা থেকে সেসব নাম বাদ দেওয়া হয়নি।

সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২২ কর্মকর্তা এখন সনদ যাচাই করছেন। তাড়াতাড়ি এই প্রক্রিয়া শেষ করতে সবাইকে প্রতিদিন ১০০ করে সনদ যাচাইয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সনদ যাচাইয়ে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিরতদের মধ্যে এখন সব থেকে বেশি আছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। এরপর পুলিশে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদে ব্যাংকে চাকরি নেওয়ার হার বেশি পাওয়া গেছে, তারপরেই পুলিশে। পুরো তালিকা যাচাই শেষে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে বলা যাবে।

তালিকা যাচাইয়ের পর তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিয়োগকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ করছি। নিয়মিত কাজের পাশাপাশি কর্মকর্তারা এই কাজ করছেন। কবে শেষ করা হবে, সেই সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। আশা করছি, তাড়াতাড়িই শেষ করতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই অভ্যুত্থানের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা দিল সেনাবাহিনী

নানা গুঞ্জনের মধ্যে ড. ইউনূসের সঙ্গে নাহিদের সাক্ষাৎ

অভ্যুত্থানের পরে সেনানিবাসে প্রাণ রক্ষার্থে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিবর্গ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর অবস্থান

ভারতে জাহাজ নির্মাণের জন্য ২১ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল করল বাংলাদেশ

যে কুমির ডেকে আনছেন, তা আপনাদেরকেই খাবে: কাদের ইঙ্গিত করলেন উপদেষ্টা আসিফ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত