Ajker Patrika

হাইকোর্টের নির্দেশের ৯ বছরেও দেশে সাক্ষী সুরক্ষা আইন নেই

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
হাইকোর্টের নির্দেশের ৯ বছরেও দেশে সাক্ষী সুরক্ষা আইন নেই

একটি হত্যা মামলায় পুলিশ ২০১০ সালের ১০ জুলাই হীরা ওরফে হারুনকে গ্রেপ্তার করেছিল। ওই মামলায় ২০১২ সালে অভিযোগ গঠন হওয়ার পর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১০টি তারিখ পড়লেও কোনো সাক্ষী হাজির হননি। পরে আসামি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তা খারিজ করে দিয়ে সাক্ষী হাজির না হওয়ার কারণ জানতে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটরকে তলব করেন। তিনি হাজির হয়ে জানান, প্রভাবশালী আসামি ভয়ভীতি দেখানোয় সাক্ষীরা আসছেন না। শুনানি শেষে সেদিনই হাইকোর্ট সাক্ষী সুরক্ষা আইন করার উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন। ফৌজদারি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এবং নির্ধারিত তারিখে সাক্ষীর উপস্থিতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনটি করার নির্দেশ দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্রসচিব ও আইনসচিবকে।

বিচারকেরা বিভিন্ন সময় সাক্ষী বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো আইন নেই। আইন কমিশন ২০০৬ সালে ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার বিষয়ে একটি আইনের খসড়া করেছিল। ২০১১ সালে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেয় কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যথাযথ ব্যবস্থা বা বিধান না থাকায় ন্যায়বিচার ব্যাহত হয়। তবে সেই সুপারিশ এখনো বাস্তবায়ন করেনি সরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, এগুলো নিয়ে কাজ চলছে।

সম্প্রতি কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে ধারের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এক গৃহবধূকে দুই মাস ধরে দলবদ্ধ ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের বাধার কারণে থানায় মামলাও করতে পারেননি ওই গৃহবধূ। ভুক্তভোগী আত্মহত্যা করার পর চিকিৎসার ব্যয় দেখিয়ে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য। তিনি ধর্ষণের ঘটনা গোপন রাখার কথা বলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের জন্য পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ফাঁকা স্টাম্পে স্বাক্ষরও নেন। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ২ জুন জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। ভয়ে অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত যেমন আসতে চান না, সাক্ষীও আসতে চান না।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, নিরপেক্ষ সাক্ষীদের অনেকে ভয়ে আসেন না। আসলেও ভয়ে সত্য কথা বলতে চান না। আবার অনেক সময় সমাজে নিগৃহীত হওয়ার পরও ভিকটিম মামলা করতে চান না ভয়ে।

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশে যাঁরা সাক্ষ্য দিতে আসেন, তাঁরা কোথাও সুরক্ষিত নন। তাঁরা নানাভাবে বাধাপ্রাপ্ত হন। যিনি শক্তিশালী, তিনি এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারলেও দুর্বলরা সাক্ষ্য দেওয়ার পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেন না। আবার অনেক ভুক্তভোগী নিরাপত্তার অভাবে আইনগত পদক্ষেপ নিতে চান না। তাই ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের সুরক্ষায় আইন করা দরকার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গভর্নর আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার কে: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুল

সেই রুহুল আমিনের বসুন্ধরা, বনানী ও উত্তরার জমিসহ ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

ঠাকুরগাঁওয়ের ৩টি আসনেই জয়ী হবে জামায়াত: মাওলানা হালিম

ছাত্রীকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ, গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে বিয়ে

কেশবপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বর্ণের কারিগরসহ দুই ব্যক্তি নিহত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত