Ajker Patrika

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ৫৮ ভাগই শিশু

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ৪৯
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ৫৮ ভাগই শিশু

করোনার মধ্যে এ বছর সবচেয়ে দাপট ছিল ডেঙ্গুর। তবে গত জুলাই, আগস্ট ও চলতি মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এই তিন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৪ জন। এদের মধ্যে ৩১ জনই শিশু, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৫৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, শিশুরা বাসায় থাকছে বেশি। তাদের ত্বক নরম থাকায় মশা বেশি কামড়াচ্ছে। আক্রান্ত শিশুদের দেরিতে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে এবং সর্বোপরি আক্রান্ত শিশুরা সবকিছু খুলে বলতে পারছে না। এসব কারণে তাদের আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এ বছর বেশি হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৪ জন। এঁদের মধ্যে ৩১ জনই শিশু। এর মধ্যে ১-১০ বছর বয়সী ১৮ জন এবং ১১-১৮ বছর বয়সী ১৩ জন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১৪ হাজার ২২১ জন। এঁদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১২ হাজার ৮৯৬ জন। অধিকাংশই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৩১৯ জন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ২৪৮ জন। এদের মধ্যে শিশু ৩৮২ জন। এখানে মৃত্যু হয়েছে একজনের। ঢাকা শিশু হাসপাতালে এ পর্যন্ত মোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬০৫ জন। এঁদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে নয়জনের। অন্যরা রাজধানী ও অন্যান্য স্থানে ভর্তির পর মারা যান।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শফি আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, সারা বিশ্বেই ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ১০ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা বেশি। কম বয়সী শিশুদের এডিস মশা কামড়ালে তারা বলতে পারে না। চলতি বছর করোনা মহামারির কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা বাসায় অবস্থান করেছে। এ কারণে আক্রান্তও বেশি হয়েছে।

ডা. শফি আহমেদের তথ্যানুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুদের জীবনযাত্রা পরিবর্তন হয়েছে। অনেকেই রাতের পরিবর্তে দিনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ছাড়াই ঘুমিয়েছে। এসব কারণে এ বছর শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আর আক্রান্ত শিশুদের বেশির ভাগই অনেক দেরিতে হাসপাতালে ভর্তির জন্য আনা হচ্ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, শিশুরা বাসায় অবস্থানের কারণে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের চামড়া নরম হওয়ায় তাদের মশা কামড়ায় বেশি। চিকিৎসার ক্ষেত্রেও পরিবারের অবহেলা রয়েছে। এসব কারণে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ মুন্সি বলেছেন, দেশে ডেনভি-৩ ধরন প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৭ সালে। এর আগে ডেনভি-১, ২-এ আক্রান্ত হয়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে উঠেছে অনেকের। কিন্তু ডেনভি-৩-এর বিরুদ্ধে এই ক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। যাঁরা আগের দুই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত, তাঁরা নতুন করে ডেনভি-৩ আক্রান্ত হলে হেমোরেজ বা সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়ছেন। তাই এবার মৃত্যু বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত