Ajker Patrika

ঝটিকা মিছিলের মামলায় ১৫ দিনে অভিযোগপত্র

  • রাজধানীতে চলতি মাসে অন্তত ৪০টি ঝটিকা মিছিল, গ্রেপ্তার ১৯৯।
  • ঝটিকা মিছিলের পর গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ৪০% জামিন পেয়েছেন।
  • গ্রেপ্তার ৭০% রাজধানীর বাইরের, জামিন পেয়ে আবার মিছিলে।
শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে কড়া নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ। পাশাপাশি এসব মিছিলের ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্র ১৫ দিনের মধ্যে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে; যাতে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা দ্রুত জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার সংগঠিত হয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করতে না পারেন।

ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য এবং এসব মামলার অভিযোগপত্র যথাসময়ে দিতে না পারলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে গত সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই বৈঠকের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ডিএমপির ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও পরিদর্শকদের সতর্কবার্তা দেন। সর্বশেষ গত রোববার আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভাতেও ঝটিকা মিছিল নিয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য ইতিমধ্যে শেরেবাংলা নগর থানার দুই পরিদর্শক, মোহাম্মদপুরে সহকারী কমিশনারসহ (এসি) তিনি পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে সেদিন ভারতে চলে যান। গ্রেপ্তার হন সাবেক অনেক মন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্যসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী। অনেকে দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে আছেন। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা-কর্মী হঠাৎ জড়ো হয়ে ঝটিকা মিছিল করছেন। পুলিশ মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের গ্রেপ্তারও করছে। তবে সম্প্রতি এই মিছিলের সংখ্যা বেড়েছে।

ডিএমপির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে এখন পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের অন্তত ৪০টি ঝটিকা মিছিল হয়েছে। এসব মিছিল থেকে ১৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত দুই মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলটির ৩২১ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। মিছিলের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেছে।

পুলিশ বলছে, মিছিলের অভিযোগে গ্রেপ্তার অনেকে সাত থেকে ১৫ দিনের মধ্যে জামিন পেয়েছেন। জামিনে মুক্তি পেয়ে তাঁরা আবার মিছিল করছেন। সর্বশেষ গতকাল সোমবার ঝটিকা মিছিলের সময় গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে দুজন কিছুদিন আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

সূত্র জানায়, ঝটিকা মিছিলকারীরা যেন কোনোভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারেন, সে জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, এ নির্দেশনা অমান্য করলে শাস্তি দেওয়া হবে। রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সর্বশেষ সভায়ও বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটির মিছিল বন্ধ করতে চায় সরকার। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আইনের মধ্যে দীর্ঘ সময় কারাগারে রাখতে চায়।

ঝটিকা মিছিল নিয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির ডিবিপ্রধান শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে ডিবি পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে, যাতে বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা যায়; যাতে তাঁরা জামিনে বের হয়ে আবার মিছিল করার সুযোগ না পান।

পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ঝটিকা মিছিল বাড়ায় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার ও গ্রেপ্তারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর রাজধানীতে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ পরে জামিন পেয়েছেন। গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলছে, মিছিলে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঢাকার বাইরে থেকে আসাদের সংখ্যাই ৭০ শতাংশ। দিনে দিনে তা বাড়ছে। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, কাকরাইল, মতিঝিল, ধানমন্ডি ও উত্তরায় ঝটিকা মিছিল করেছে।

রোববার আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, গ্রেপ্তারের পর মামলার মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন পর্যন্ত আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁদের কারাগারে রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। কুমিল্লা সদর দক্ষিণে রোববার কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের ঘটনায় পুলিশ ২০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীও রয়েছেন। চট্টগ্রামে একটি মিছিল থেকে কয়েক দফায় ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিএমপি কমিশনারের বার্তা অনুযায়ী, রাজধানীর যে থানা এলাকায় আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল হবে, সেই থানার ওসি ও পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে। পরিদর্শকদের থানা থেকে প্রত্যাহারও করা হবে। পুলিশের সূত্র বলেছে, একই বার্তা দেওয়া হয়েছে সারা দেশের থানায়। গত শুক্রবার ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য মোহাম্মদপুরের এক এসিসহ তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে শেরেবাংলা নগর থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় দুই পরিদর্শককে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুর হক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যে ফাটল ধরায় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঠ নিয়ন্ত্রণে সীমাবদ্ধতার সুযোগে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৌকীর-বিপাশা বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন যে কারণে

মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বাসায় নিয়ে গায়েব করেন উপদেষ্টা— আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের মেয়রের অভিযোগ

চীনা যুদ্ধবিমান থেকে এলএস-৬ বোমা ফেলে কেন নিজ দেশে ‘হত্যাযজ্ঞ’ চালাল পাকিস্তান

ফিলিস্তিনকে আজই রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে আরও ৬ দেশ, বিরোধিতা ইসরায়েল–যুক্তরাষ্ট্রের

ধর্ষণের শিকার শিশুর স্বজনকে মারতে উদ্যত হওয়া সেই চিকিৎসক বরখাস্ত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত