Ajker Patrika

কাপ্তাইয়ে ক্যাম্পিং ও কায়াকিং

শিমুল খালেদ
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৩, ১৯: ৩২
কাপ্তাইয়ে ক্যাম্পিং ও কায়াকিং

সকালবেলার চন্দ্রঘোনা। কুয়াশার আচ্ছাদন থেকে চারপাশ আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠতে শুরু করেছে কেবল। রাঙ্গুনিয়া লিচুবাগান হয়ে আমরা যখন চন্দ্রঘোনা বাজারে পৌঁছাই, বেলা বাড়ার সঙ্গে মফস্বল শহরটিও ব্যস্ত হয়ে উঠছে। দূর পাহাড়ের জুমে ফলানো আনারস এক জায়গায় স্তূপ করে রাখা; গায়ের চাদর একপাশে রেখে মিঠে রোদ গায়ে মাখতে মাখতে মধ্যবয়সী বিক্রেতা বেতের মোড়া পেতে বসেছেন। ধাতব শব্দ তুলে দোকানের শাটার একটা-দুটো করে উঠতে শুরু করেছে। 

দীর্ঘ ভ্রমণের পর আড়ষ্ট হয়ে থাকা শরীর এক-আধটু কসরতের জন্য মুখিয়ে ছিল। তবে সেই আশায় গুঁড়েবালি। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের তাড়া—তড়িঘড়ি ওঠে পড়তে হবে। তিন চাকায় চড়িয়ে নিয়ে যাবে আমাদের গন্তব্যস্থল কাপ্তাইয়ে, কর্ণফুলী নদীর তীরসংলগ্ন ক্যাম্পসাইটে। সারা রাত সিলেট-চট্টগ্রাম ট্রেন ভ্রমণের পর ভোরবেলায় বাস, অতঃপর অটোরিকশায় প্রায় ষোলো ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষ হচ্ছে। রাঙামাটিতে এটা আমার প্রথম ভ্রমণ এবং এই আসাটাও হুটহাট করেই। 

সপ্তাহের মাঝামাঝি এক সকালবেলার কথা। সেদিন সকাল সকাল অচেনা নম্বর থেকে ফোনে একটা এসএমএস আসে। আমেরিকাপ্রবাসী বন্ধু রাফাত আনসারী সেটি পাঠিয়েছে। মেসেজের সারমর্ম, সে দুই দিন আগে দেশে ছুটিতে এসেছে এবং সপ্তাহের শেষ দিকে কয়েকজন মিলে রাঙামাটি বেড়াতে যাচ্ছে। আমাকেও সেই দলের সদস্য ধরে নিয়ে ইতিমধ্যে ট্রেনের টিকিটও কেটে ফেলেছে। আমি যেন অমত না করি! 

পাহাড়ের গা পেঁচিয়ে ফিতার মতো চলে যাওয়া পিচঢালা পথ ধরে ছোট বাহনজোড়া চলতে থাকল। মাঝে মাঝে একটা-দুটো সিঁড়িপথ চোখে পড়ল, মূল পথ থেকে ওপরের দিকে উঠে গেছে, পাহাড়ের চূড়ায় বাংলো আকৃতির একটা-দুটো কুটির। যেতে যেতে পথের দুপাশ ঘন সবুজ হয়ে ওঠে। বনানীর চেহারাও পাল্টায়। পাহাড়জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা বনের ঠাসবুনোট, বনতলে লতাগুল্ম কন্দজাতীয় উদ্ভিদের আচ্ছাদন। আন্দাজ করি, কাপ্তাইয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমায় চলে এসেছি। পথের ধারে সাঁটানো সাইনবোর্ড দেখে নিশ্চিত হলাম কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান হয়েই যাচ্ছি। 

অরণ্যের বুনো স্পর্শ মেখে চোখেমুখে আছড়ে পড়ছে পৌষের বাতাস। গন্তব্যস্থল কাপ্তাই প্রশান্তি পার্কের ফটকের সামনে ইতিমধ্যে এসে পড়েছি। ঘড়ির কাঁটা বলছে, সবে দুপুর হতে চলেছে। আমরা এসেছি ক্যাম্পিং ট্যুরে। তাই আপাতত বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সবার ব্যাগ-ব্যাগেজ রাখার জন্য একটা রুম পাওয়া গেল। সেখানে ব্যাগপত্র রেখে ছাউনিতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে চলে গেলাম নদীর একদম তীরে। 

নদীর স্রোতে ভাসিয়ে কায়াকখরস্রোতা কর্ণফুলীর কলকল স্রোত বয়ে চলেছে জীবনের উচ্ছ্বাসে। নদীর একদম পাশ ঘেঁষে পার্ক কর্তৃপক্ষের বানানো একটা মাচাঘর। ওপরে শণ ও বেত, মেঝে মুলিবাঁশ দিয়ে তৈরি। ক্লান্ত শরীর নিয়ে সাত-পাঁচ না ভেবেই মাচার মেঝেতে শুয়ে পড়ি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দল ভারী করতে যোগ দেয় রাফাত ও রুবেল। শীত ঋতুর শান্ত সৌম্য কর্ণফুলী। উজ্জ্বল সূর্যালোকে ঝলমল করছে ছোট ছোট ঢেউ কিংবা অল্পস্বল্প নড়াচড়া। 

নদী পেরিয়ে ওই পাশে শিলাপাথরের পাহাড়, তার গায়ে ঘন পাহাড়ি বন। দীর্ঘ ভ্রমণের পর গা এলানোর সুযোগ পেয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে, শীতে দুপুরের ফুরফুরে শীতল হাওয়া গায়ে মেখে কতক্ষণ শুয়ে ছিলাম ঠিক জানি না। বছর ষোলোর ছিপছিপে গড়নের এক কিশোরের গলার আওয়াজে সংবিৎ ফিরল। ঘাটে কায়াক প্রস্তুত; আমাদের কায়াকিংয়ের সময় হয়ে গেছে। মরা ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শুকনো একটি গাছের নিচে অপেক্ষমাণ রংবেরঙের কয়েকটি কায়াক। চারটি নৌকার প্রতিটিতে দুজন করে ভাগ হয়ে আমরা আটজন চেপে কর্ণফুলীর টলমলে জলে নেমে পড়ি।

নদীর ওপর পাশে পাথুরে পাড়একদম প্রথম বোটের সামনের সিটে আমি, পেছনের সিটে সঙ্গী সুমন। বোটগুলোর প্রতিটির জন্য একটা করেই বইঠা বরাদ্দ। দুপাশে পাখা লাগানো বইঠা ঠেলতে ঠেলতে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছিল। এ এক আজব জলতরি, যেটার পেটের ভেতরে ঢুকলে অর্ধেক শরীর ঢুকে যায় আন্ডারওয়াটার বা পানির তলায়! বেশ রোমাঞ্চ লাগছিল। পানিতে বইঠার চাপে কায়াক ছুটতে থাকে। ভাটি ধরে যেতে যেতে আমরা দেখতে থাকি নদীতীরের দিনযাপন। পানিতে হাপুস-হুপুস করছিল ছেলেপুলেদের একটা দল। আরেকটু সামনে যেতেই দেখলাম ছোট জাল নদী থেকে তুলে তা থেকে মাছ ধরে খলুইতে রাখছেন এক জেলে দম্পতি। 

বইঠা বাইতে বাইতে খেয়াল করলাম, নদীর ঠিক মাঝামাঝি চলে এসেছি। আর সেখান থেকে চোখের সামনে দৃশ্যমান হয় মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্যপট। নদীর মাঝ বরাবর পানির সমতলের দেড়-দুই ফুট ওপর থেকে সামনে তাকালে ভাটির পানে বয়ে যাওয়া জলস্রোত পেরিয়ে দুই পাড়জুড়ে ঘন অরণ্যঢাকা পাহাড়শ্রেণি। নদীর গা ঘেঁষা সেই পাহাড় পেরিয়ে পেছনে উঁকি দিচ্ছে আরও উঁচু পাহাড়। তারপর আরও উঁচু পাহাড় স্তর। অপূর্ব সেই দৃশ্য! 

সীতা পাহাড় আর রাম পাহাড় নামের এই পাহাড়ের মধ্য দিয়েই খরস্রোতা কর্ণফুলী প্রবাহিত হয়েছে। কর্ণফুলীর উচ্ছল স্রোতোধারা আর চারপাশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট জন্ম দিয়েছে না জানি কত শত ছন্দ আর কবিতার! প্রেমের কবি নজরুল তাই তো কর্ণফুলীকে ভালোবেসে লিখেছিলেন, ‘তোমার সলিলে পড়েছিল কবে কার কানফুল খুলি, তোমার স্রোতের উজান ঠেলিয়া কোন তরুণী কে জানে, সাম্পান নায়ে ফিরেছিল তার-দয়িতের সন্ধানে, আনমনে তার খুলে গেল খোঁপা, কানফুল গেল খুলি, সে ফুল যতনে পরিয়া কর্ণে হলে কি কর্ণফুলী?’

কর্ণফুলীর জলে কায়াকিং করছেন লেখককর্ণফুলী নদীর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে নানা কাহিনি শোনা যায়। তবে সবচেয়ে প্রচলিত গল্পটি হচ্ছে—আরাকানের এক রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক রাজপুত্রের প্রেমে পড়ে। এক জ্যোৎস্না রাতে তারা দুজন এই নদীতে নৌভ্রমণ উপভোগ করছিল। নদীর পানিতে চাঁদের প্রতিফলন দেখার সময় রাজকন্যার কানে গোঁজা একটি ফুল পানিতে পড়ে যায়। ফুলটি হারিয়ে কাতর রাজকন্যা সেটি উদ্ধারের জন্য পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু প্রবল স্রোতে রাজকন্যা ভেসে যায়, তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। 

রাজপুত্র রাজকন্যাকে বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপ দেয়, কিন্তু সফল হয়নি। প্রিয়তমার শোকে রাজপুত্র পানিতে ডুবে আত্মাহুতি দেয়। করুণ এই কাহিনি থেকেই নদীটির নাম হয় কর্ণফুলী। মারমা জনগোষ্ঠীর কাছে এর নাম কিনসা খিয়ং। উজানে সীমান্তের ওপারে মিজোরামে কর্ণফুলীকে ডাকা হয় খাওৎলাং তুইপুই নামে। 

বইঠা থামিয়ে মাঝ নদীতে থেমে ভরদুপুরের মৌনতা কিছুক্ষণ উপভোগ করে তারপর কায়াকের মাথা নদীর অপর পাশ অভিমুখে ঘুরালাম। সেখানে কয়েকজন জেলে পাথুরে পাহাড়ের দেয়াল ঘেঁষে নৌকা নিয়ে একদম স্থির বসে ছিল। চোখে শ্যেনদৃষ্টি; নিবদ্ধ নদীর পানির দিকে। যেন স্রোতের ভেতরে কোনো বিশেষ নড়াচড়ার অপেক্ষায়। পাহাড়ের পাথুরে শিলা উপরিভাগে যতটা দৃশ্যমান হয়; তার চেয়েও নদীর তলদেশে লুকিয়ে থাকা অংশ খুব একটা কম নয়। জেলেদের সঙ্গে আলাপে জানলাম, নদীর এই অংশে গভীরতা ৩৫-৪০ ফুটের মতো। 

খেয়াল করলাম, নদীর অপরাপর দিকে পানি বাতাসে মৃদু ঢেউ খেলানো থাকলেও এখানে একদম স্থির। উজান থেকে নেমে আসা স্রোতে পাথুরে দেয়ালে বাধা পেয়ে ঘূর্ণিপাক খাচ্ছিল। লাইফ জ্যাকেট পরা থাকলেও সঙ্গী সুমন সাঁতার জানেন না। তাই সেখান থেকে তড়িঘড়ি করে এপাশে ঘাটের দিকে চলে আসি। কায়াক পর্ব শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর লাঞ্চের ডাক পড়ে। পরের গন্তব্য কাপ্তাই হ্রদ। 

পার্কের ফটক থেকে কাপ্তাই সদর অভিমুখে চলে যাওয়া পথের পুরোটাই ক্রমশ ওপরের দিকে উঠে গেছে। এক পাশে সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমি, অপর পাশে বেশ নিচে কর্ণফুলী। কাপ্তাই সদরে বাহন থেকে মাটিতে পা ফেলার আগেই চোখে পড়ল কাপ্তাই হ্রদের অবারিত জলরাশি। নৌকাঘাট সামনেই। ডানের রাস্তাটি চলে গেছে জলবিদ্যুৎ বাঁধের দিকে। বাহন থেকে নেমে প্রথমেই কানে এল মধ্যবয়সী এক নারীকণ্ঠ—মামা, লেকে ঘুরবেন, সাম্পান দিয়া?

জোড়া সাম্পান আর কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ বাঁধঘাটে গিয়ে দরদাম শেষে আটজনের দলের জন্য একটা জুতসই লঞ্চ নেওয়া হলো। লঞ্চের চালকই গাইড। কাপ্তাই হ্রদের জলরাশিতে আলোড়ন তুলে ছুটে চলল জলযান। দূরে এক-দুটো সাম্পান নৌকা ভাসতে দেখলাম। নৌকার দুপাশে একজোড়া বইঠা। বইঠা দুটো গলুইয়ের দুপাশ থেকে উঠে গিয়ে তার হাতল একসঙ্গে বাঁধা হয়েছে কোমরসমান উঁচুতে। মাঝিকে তাই দাঁড়িয়ে ঠেলতে হচ্ছিল বইঠাযুগল। ছোট নৌকা, তাই দুজন করেই যাত্রী দেখলাম। লঞ্চ আস্তে আস্তে হ্রদের গভীরের দিকে যাচ্ছে আর আমরা যেন ক্রমশ ঢুকে যাচ্ছি নীলাভ কোনো রাজ্যপাটে!

কাপ্তাই হ্রদের নীল-সবুজের রাজত্বেহ্রদের নীল জল যেন সুনয়নার নীলচক্ষু! জলরাশির মাঝে সবুজ দ্বীপের মতো জেগে আছে একেকটা টিলা। টিলাগুলোর বেশির ভাগেই জনবসতি নেই। নীল আর সবুজ মিলেমিশে দৃষ্টিতে মুগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দিতে থাকল। ভাসতে ভাসতে অন্য নৌকায় যাত্রী হওয়া পাহাড়ের স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হয়। দূরে, বহু দূরে আবছা অবয়বে কয়েক স্তরের পাহাড়শ্রেণি। মাঝি বলল, পাহাড়ের ওই গহিনে মিজোরাম সীমান্ত। আরও কিছুক্ষণ হ্রদে ভাসার পর একটি টিলার পাশে লঞ্চ নোঙর করা হলো। 

একটা বয়সী পাকুড়গাছ দাঁড়িয়ে আছে পাকা সিঁড়ি বাঁধানো ঘাটে। টিলার ওপর একটা বাজার। নেমে পা বাড়াই সেদিকে। বাজারটির ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই চাকমা। ছোট ছোট দোকান। বয়সী কয়েকজন প্রৌঢ় এক জায়গায় জটলা বেঁধে গল্প জুড়ে দিয়েছেন। কথা চলছিল তাঁদের মাতৃভাষায়। টিলার ওপর বাজারের শেষ মাথায় অল্পনা চাকমা দিদির ছোট্ট খাবারের দোকান। কড়াইয়ের গরম তেলে পিঠা ভাজা হচ্ছিল। নারকেলের টুকরো আর গুড়ের সঙ্গে ময়দার মিশ্রণে বানানো লালচে রঙের সেই পিঠার স্বাদ মুখে লেগে আছে এখনো।

কাপ্তাই হ্রদে ভেসে ভেসেরাঙামাটির মগবান ইউনিয়নে পড়েছে এই বাজার। নাম নতুন বাজার। টিলার অন্য পাশে চাকমাদের পাড়াটার নাম দোখাইয়াপাড়া। দোকানগুলোর টিনের দেয়ালে সাঁটানো নির্বাচনী পোস্টার। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলছিল তখন। হ্রদে নৌকায় করে মাইকে চলছিল প্রার্থীদের প্রচার। এ রকম এক মাইক থেকে কানে আসে, ‘পাহাড়ি বাঙালি ভাই ভাই, আনারস মার্কায় ভোট চাই’। নৌকায় ফিরে আরও কিছুক্ষণ নৌযাত্রার পর আমরা প্রবেশ করলাম জীবনতলী ইউনিয়নে। বিকেল গড়াচ্ছে, রোদও মিঠে মিঠে হচ্ছে। মাঝি এবার নোঙর করল এক বৌদ্ধবিহারের টিলার পাদদেশে।

গোধূলির সোনা-রঙে সেজেছে কাপ্তাই হ্রদ।টিলার চূড়ায় সোনালি রঙের বুদ্ধমূর্তি। বেশ দূর থেকেও স্পষ্ট চোখে পড়ে। টিলার সিঁড়ি বেয়ে আমরা ওপরে উঠে এলাম। বৌদ্ধমন্দিরে পুণ্যার্থীদের ভিড়। প্রার্থনাকক্ষের ভেতরে মৃদু আলোয় যেন অন্যরকম আবহ! ফুরফুরে বাতাস উঠে আসছে হ্রদ থেকে। ধনপাতা বনবিহার থেকে নৌকায় ফিরে এলাম আমরা; মাঝিও আবার নোঙর তুললেন।

ধনপাতা বনবিহারে বৌদ্ধ প্যাগোডা। কাপ্তাই হ্রদ এবার সেজেছে অন্যরকম চেহারায়। সূর্য পাটে যাচ্ছে। গোধূলির সোনা রঙে নৈসর্গিক মুগ্ধতায় সেজেছে পুরো হ্রদ। চারপাশজুড়ে অপূর্ব এক নীরবতা। অনুভব করতে জানলে মৌনতারও প্রগাঢ় কোনো ভাষা থাকে! ফুরোমন পাহাড়ের রাজ্যপাটে পৌষের শীতলতা ভর করতে শুরু করেছে। সন্ধ্যার ছাই রং আস্তে আস্তে চারপাশের সোনালি জলরাশির ওপর আঁধারের চাদর ফেলে ঢেকে দিচ্ছে। কাপ্তাই নৌকাঘাটে ফেরার আগেই গ্রাস করল ঘুটঘুটে অন্ধকার। 

ফানুস ওড়ানোর তোড়জোড়ঘাটে নেমে সেখানের এক টংদোকানে চায়ের পর্ব সেরে ফিরে এলাম আস্তানায়। ক্যাম্পসাইটে তাঁবু বসানো হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। রাতের খাবারের ডাক পড়ল একটু আগেভাগেই। উদরপূর্তির পর তাঁবুতে ফিরে টের পেলাম হাড় কাঁপানো ঠান্ডা চেপে ধরছে। শীতে কাঁপতে কাঁপতে নদীর পাড়ে বসে কিছুক্ষণ চলল আড্ডা-গল্প। কিছু ফানুস আমরা সঙ্গে করে নিয়েছিলাম। সেগুলো ওড়াতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হলো। নদী থেকে আসা বাতাসের দাপটে দেশলাইয়ের কাঠিতে আগুন জ্বালানো যাচ্ছিল না। কয়েকবারের প্রচেষ্টার পর ওড়ানো গেল। রঙিন কাপড়ের ভেতরে আলোর প্রদীপ জ্বলতে জ্বলতে ওপরে উঠে যেতে থাকে। ঘাড় পেছনে বাঁকিয়ে একটানা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় তারাদের ভিড়ে কোনটা ফানুস সেটা আর ঠাহর করতে পারলাম না। 

রাত বাড়ছে; ক্যাম্পিংয়ে আসা প্রায় সবাই ইতিমধ্যে ঢুকে পড়েছে যার যার তাঁবুতে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে গেছে নদীর অন্য পাশের ঘন বন। বন্যপ্রাণীবিষয়ক এক লেখকের বয়ানে জেনেছিলাম, কাপ্তাইয়ের ওই পাহাড়ি বনভূমিতে বসবাস করে বিড়াল গোত্রের সুন্দরতম এক সদস্য ক্লাউডেড লেপার্ড বা মেঘলা চিতা। স্থানীয়রা যাকে ডাকে লতা বাঘ বা গেছোবাঘ নামে। সারা দিন কোনো গাছের ডালে অলস শুয়ে থেকে নিশ্চয় তার সময় হয়েছে শিকারের সন্ধানে বের হওয়ার! নদীপাড়ের পাথরের চাতালে থাবার শক্ত নখে ভারসাম্য রক্ষা করে সামনে ঝুঁকে তৃষ্ণা মেটাতে মেটাতে দেখছে কি অন্য পাড়ের মনুষ্য ক্রিয়াকলাপ? 

তাঁবুতে ঢুকে পড়ার পর শীত যেন আরও জেঁকে বসল। নদী থেকে ধেয়ে আসা বাতাসের সঙ্গে হাড় কাঁপানো শীত; দাঁতে দাঁত বাড়ি লাগছিল যেন। বেড হিসেবে প্রতিটি তাঁবুর মেঝেতে দেওয়া হয়েছে দুই ফালি ককশিট। নিচ থেকে ওঠা ঠান্ডা আটকানোর জন্য তা যথেষ্ট না হওয়ায় রাফাত তাঁবু থেকে বের হয়ে কোত্থেকে জানি আরও দুই ফালি ককশিট নিয়ে এল। এবার বেডটা মোটামুটি আরামদায়ক হয়ে উঠল। ঝিম ধরে থাকা শীতের রাতে নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে কানে আসছিল ফোঁটা ফোঁটা কুয়াশা দলা বেঁধে তাঁবুর গায়ে আছড়ে পড়ার শব্দ। দূর থেকে থেমে থেমে কানে আসছিল একপাল শেয়ালের হুক্কাহুয়া। 

ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে রাত কাটানোর পর ঘুম ভাঙল বেশ ভোরে। তাঁবুর চেইন খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখি ইতিমধ্যে দলের অনেকেই উঠে পড়েছে। ভোরের কর্ণফুলী সবে আড়মোড়া ভাঙছে। কুয়াশার দঙ্গল সারা রাত নদীর ওপর ঘাপটি মেরে বসে থাকার পর আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। নদীর শান্ত জলে ছুঁয়ে ছুঁয়ে কুয়াশার অস্থির ছুটে চলার সঙ্গে যোগ দেয় একট-দুটো পানকৌড়ি। নদীর ওপর পাশের বনের চেহারাও হয়ে গেছে কুয়াশাময়।

কুয়াশায় মোড়ানো ভোরের কর্ণফুলীজেলেরা তাঁদের নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন সেই ভোরেই। কোনোটা ছইওয়ালা, আবার কোনোটা খোলা ছোট নৌকা। হাড় কাঁপানো এমন শীতও যেন তাঁদের থোড়াই কেয়ার! আগের দিন কায়াকিংয়ের সময় জেলেদের কাছে জেনেছিলাম, নদীর অপর পাশের পাথুরে পাহাড়ের খাড়ির অংশ বেশি গভীর। ক্যাটফিশ গোত্রীয় মাছের আবাসস্থল সেই পাথুরে তলদেশে। আর পুরো নদীতেই চলাফেরা করে কার্পজাতীয় মাছ। এসব নিয়ে যখন ভাবছিলাম, হঠাৎই একটা বড়সড় মাছের ঘাই নদীর মাঝ বরাবর আলোড়ন তুলল! শান্ত পানিতে তৈরি হওয়া ঢেউয়ের গোলাকার বলয় চারপাশে প্রসারিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ল মিলিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। 

ক্যাম্পসাইট থেকে ফিরে নাশতার জন্য রেস্তোরাঁয় ডাক পড়ল। ডিম ভুনার সঙ্গে গরম-গরম খিচুড়িতে পেট পুরে নাশতা সেরে ঝটপট গোছগাছ সেরে বেরিয়ে পড়তে হলো। আমাদের পরের গন্তব্য রাঙামাটি শহর। কাপ্তাই হ্রদের পাশজুড়ে শৈল্পিক রেখা টেনে চলে গেছে যে পাহাড়শ্রেণি, তার ওপর দিয়ে চলে যাওয়া চড়াই-উতরাই পথ ধরে আমরা যাব। বাহনে চেপে বসার আগে ঘাড় ফিরিয়ে আরেকবার কর্ণফুলীর দিকে চোখ রেখে অস্ফুটে বললাম, ভালো থেকো কাপ্তাই; আবার দেখা হবে নিশ্চয়! 

লেখক: ব্যাংক কর্মকর্তা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

চার গুণ বাড়িয়ে পেঁয়াজ আমদানি দৈনিক ৬ হাজার টন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অনুষ্ঠিত হলো দেশের প্রথম এআইএমএস সার্টিফায়েড ৩০ কিলোমিটার ম্যারাথন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৩৬
ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো দেশের প্রথম এআইএমএস সার্টিফায়েড ৩০ কিলোমিটার ম্যারাথন। আর আয়োজনে ছিল ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান ট্রায়াথলন ড্রিমার্স। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো দেশের প্রথম এআইএমএস সার্টিফায়েড ৩০ কিলোমিটার ম্যারাথন। আর আয়োজনে ছিল ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান ট্রায়াথলন ড্রিমার্স। ছবি: সংগৃহীত

সুস্থ, সচেতন ও সক্রিয় নগরজীবন গঠনের বিভিন্ন আন্দোলন আছে ঢাকা শহরে। আছে তাদের নিয়মিত ইভেন্ট। এ ইতিহাসে যুক্ত হলো ‘ঢাকা ড্যাশ ৩০-কে’ ম্যারাথন। এর আয়োজক ছিল ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান ট্রায়াথলন ড্রিমার্স। আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, এটি ছিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম এআইএমএস সার্টিফায়েড ৩০ কিলোমিটার ম্যারাথন।

গতকাল ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর হাতিরঝিলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা ড্যাশ ৩০-কে নামের এই ম্যারাথনটি। ‘এক শহর, এক দৌড়, এক ইতিহাস’ স্লোগানে আয়োজিত এ আন্তর্জাতিক রোড রেসে অংশ নেন হাজারো দৌড়বিদ। এদের মধ্যে ছিলেন দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞ রানার ও শৌখিন অ্যাথলেটরা।

৩০ কিলোমিটার ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত
৩০ কিলোমিটার ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার হাতিরঝিল অ্যাম্ফিথিয়েটার থেকে ভোর ৪টা ৩০ মিনিটে ৩০ কিলোমিটার ক্যাটাগির এ ম্যারাথনের উদ্বোধন করা হয়। এ ছাড়া ১৫ এবং ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার রেসের উদ্বোধন হয় ভোর ৫টা। অংশগ্রহণকারী দৌড়বিদেরা হাতিরঝিলের চারপাশে বিস্তৃত একটি চ্যালেঞ্জিং ও মনোরম ট্র্যাকে তাঁদের দৌড় সম্পন্ন করেন।

আয়োজকেরা জানিয়েছেন, এ ইভেন্টে অন্তর্ভুক্ত ছিল চারটি প্রতিযোগিতা ক্যাটাগরি। এগুলো হলো,

  • ৩০ কিলোমিটার রান
  • ১৫ কিলোমিটার রান
  • ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার রান
  • ১ কিলোমিটার কিডস রান

৩০ কিলোমিটার ম্যারাথনে ছেলেদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন মামুন আহম্মেদ। দৌড়ের পথ শেষ করতে তিনি সময় নেন ১ ঘণ্টা ৫৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। একই ইভেন্টে মেয়েদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন হামিদা আক্তার জেবা। তিনি শেষ করতে সময় নিয়েছে ২ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড।

এদিকে ১৫ কিলোমিটার ম্যারাথনে ছেলেদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন পলাশ শেখ। এ পথ শেষ করতে তিনি সময় নেন ৫৩ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড। একই ইভেন্টে মেয়েদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন সাজিয়া হেপ্পি। তিনি দৌড় শেষ করতে সময় নেন ১ ঘণ্টা ২১ মিনিট ৭ সেকেন্ড।

ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারীদের একজন। ছবি: সংগৃহীত
ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারীদের একজন। ছবি: সংগৃহীত

৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার ম্যারাথনে ছেলেদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন মোস্তাক আহমেদ আভিন। দৌড় শেষ করতে তিনি সময় নেন ২৬ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড। একই ইভেন্টে মেয়েদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন সাবরিনা আক্তার স্বর্ণা। তিনি ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৌড় শেষ করতে সময় নিয়েছেন ৪৩ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড।

এ ছাড়া এক কিলোমিটার ওভারল চ্যাম্পিয়ন হয় সাইফান ওময়ের।

দৌড়বিদদের সুবিধার্থে ইভেন্ট এরিয়ায় স্থাপন করা হয়েছিল মেডিকেল সাপোর্ট সিস্টেম, একাধিক হাইড্রেশন ও কুলিং জোন, লাইভ টাইমিং সুবিধা। ইভেন্ট নিরাপদ করতে ছিল শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ ইভেন্টে কাজ করেন শতাধিক প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিবিড় সহযোগিতায় ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা ছিল অত্যন্ত সমন্বিত।

ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী তরুণদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত
ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী তরুণদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ড্যাশ ৩০-কে ম্যারাথন রেস ডিরেক্টর মো. আল-আমীন বলেন, ‘ঢাকা ড্যাশ ৩০-কে শুধু একটি রেস নয়, এটি একটি সুস্থ, সচেতন ও সক্রিয় নগরজীবন গঠনের আন্দোলন। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে, দৌড়ের পাশাপাশি আমরা চাই ঢাকাকে একটি প্রাণবন্ত ও ইতিবাচক শহরে রূপান্তরিত করতে।’

আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন, বিশাল অংশগ্রহণ, পেশাদার ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপদ আয়োজন, সব মিলিয়ে ঢাকা ড্যাশ ৩০-কে আজ বাংলাদেশের দৌড় ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

চার গুণ বাড়িয়ে পেঁয়াজ আমদানি দৈনিক ৬ হাজার টন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মানসিক সমস্যার কারণে চুলকানি হলে কী করবেন

ফারিয়া রহমান খান 
দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে থাকলে শরীরে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। ফলে সময় শরীরে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হতে পারে। প্রতীকী ছবি: পেক্সেলস
দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে থাকলে শরীরে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। ফলে সময় শরীরে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হতে পারে। প্রতীকী ছবি: পেক্সেলস

আমাদের শরীর ও মন পরস্পর ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। আমরা যখন দুশ্চিন্তা করি বা মানসিক চাপে থাকি, তখন শরীরে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়; যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং এর ফলে অনেক সময় শরীরে চুলকানি বা জ্বালাপোড়ার মতো হতে পারে। এই অবস্থাকেই বলে ‘অ্যাংজাইটি ইচিং’ বা উদ্বেগজনিত চুলকানি।

অতিরিক্ত উদ্বেগ থেকে হওয়া ‘সোমাটিক সিম্পটম’ বা শারীরিক প্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে একটি হলো অ্যাংজাইটি ইচিং বা সাইকোজেনিক চুলকানি। উদ্বিগ্নতার তীব্রতা বেশি হলে করটিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এর কারণে ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি সেরোটোনিন বা ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্যহীনতার ফলেও অনেক সময় চুলকানি শুরু হয়। এই সমস্যা সাধারণত মাথার তালু, মুখ বা পিঠের উপরিভাগে বেশি দেখা যায়। তাই মানসিক চাপের কারণ খুঁজে বের করে চিকিৎসকের সহায়তা নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা ছাড়া মেডিটেশন বা ইয়োগা করা যেতে পারে; পাশাপাশি চুলকানি কমাতে ভালো মানের ময়শ্চরাইজার ব্যবহার করতে হবে, পর্যাপ্ত পানি পান করাসহ অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম পানি দিয়ে গোসল এড়াতে হবে। ডা. তাহরিয়াত আহমেদ শরীফ, সহকারী রেজিস্ট্রার, মেডিসিন বিভাগ, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, ঢাকা

মানসিক চাপের কারণে চুলকানি কেন হয়

উদ্বেগ ও চুলকানি আপাতদৃষ্টে সম্পর্কহীন মনে হলেও এই দুটি একে অপরের সঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ে জড়িত। মানসিক চাপের প্রভাবে শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দেয়, যেগুলোর ফলে চুলকানি হয়। যেমন—

স্ট্রেস হাইভস: মানসিক চাপের কারণে অনেক সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। ফলে শরীরে চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ি দেখা দেয়।

ঘামাচি বা র‍্যাশ: উদ্বেগের ফলে ঘাম বেড়ে যায়। ফলে শরীরে ঘামাচি বা র‍্যাশ দেখা দেয়। এগুলো খুবই চুলকায় এবং ২ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

বিদ্যমান রোগ বাড়িয়ে দেওয়া: যাদের আগে থেকে একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সমস্যা আছে, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ তাদের এই রোগগুলো আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলে চুলকানির মাত্রা বেড়ে যায়।

চুলকানির তীব্রতা বৃদ্ধি: মানসিক চাপ ও উদ্বেগ সামান্য চুলকানির তীব্রতাও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়, যা রোগীর কাছে অসহনীয় মনে হতে পারে।

অ্যাংজাইটি ইচিং নিয়ন্ত্রণের কিছু উপায়

অ্যাংজাইটি ইচিং নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রথমে মানসিক চাপের কারণ বের করে তার সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে আরাম পাওয়া যেতে পারে। সেগুলো হলো—

  • পরিষ্কার থাকুন। পোশাক, বাড়িঘর ও চারপাশ সব সময় পরিষ্কার রাখুন। চুলকানি থেকে সংক্রমণ কমাতে সব সময় নখ ছোট করে কেটে রাখুন।
  • চুলকানির জায়গায় ক্যালামাইন লোশন বা ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শে কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করুন। এতে আরাম পাওয়া যায়।
  • রুক্ষ পোশাকের বদলে সুতির নরম পোশাক পরুন। অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন না এবং সূর্যের তাপ এড়িয়ে চলুন।
  • ত্বক আর্দ্র রাখতে নিয়মিত সুগন্ধিবিহীন ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন। তা ছাড়া ঘরের বাতাসে আর্দ্রতা বাড়াতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, ধ্যান ও যোগব্যায়াম করুন।
  • সুষম খাদ্য খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত শরীর চর্চা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। নিয়মিত এগুলো করার চেষ্টা করুন।

কীভাবে অ্যাংজাইটি ইচিং নির্ণয় করা হয়

প্রথমে চিকিৎসক চুলকানির শারীরিক কারণ; যেমন পোকামাকড়ের কামড়, ত্বকের শুষ্কতা, একজিমা বা অ্যালার্জি আছে কি না, তা নির্ণয় করা হয়। তারপর ডায়াবেটিস, অ্যানিমিয়া বা থাইরয়েডের মতো রোগগুলোও খতিয়ে দেখা হয়। সঠিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যসহ সম্পূর্ণ রোগের সব তথ্য চিকিৎসককে জানাতে হবে। এর ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসক নিশ্চিত হবেন, চুলকানি মানসিক চাপের জন্য হচ্ছে, নাকি অন্য কোনো কারণে। মানসিক চাপের জন্য চুলকানি হচ্ছে নিশ্চিত হলে সেই অনুযায়ী চিকিৎসক উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

কারণ ছাড়া অতিরিক্ত চুলকানি অনেক সময় কোনো অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও হতে পারে। মূল কারণ জানা এবং সঠিক চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অ্যাংজাইটি ইচিং যদি আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত করে, ত্বকে সংক্রমণ বা গুরুতর ক্ষতি করে বা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঘরোয়া চিকিৎসায়ও না কমে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এ ছাড়া চুলকানির সঙ্গে জ্বর, রাতে ঘাম হওয়া বা অস্বাভাবিক হারে ওজন কমার মতো লক্ষণ থাকলেও দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। মনে রাখবেন, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমেই অ্যাংজাইটি ইচিংয়ের মতো সমস্যা কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।

সূত্র: স্টাইলক্রেজ ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

চার গুণ বাড়িয়ে পেঁয়াজ আমদানি দৈনিক ৬ হাজার টন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিলাসিতার স্বাদে মোড়া পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খাবার

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৫
সামুদ্রিক খাবারের মুকুট হলো অ্যালমাস ক্যাভিয়ার। ছবি: পেক্সেলস
সামুদ্রিক খাবারের মুকুট হলো অ্যালমাস ক্যাভিয়ার। ছবি: পেক্সেলস

বিলাসিতা কেমন হতে পারে? এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের চোখ চলে যায় পৃথিবীর সেই সব বিরল উপাদানের দিকে, যেগুলোর মূল্য প্রায় আকাশছোঁয়া। এই উপাদানগুলোর দুর্লভতা এবং অনন্যতাই তাদের করে তুলেছে বিশেষ। যারা জীবনের সেরা জিনিসগুলোর খোঁজ করেন তাদের জন্য এই ধরনের খাবার উপভোগ করতে পারা একটি বিশেষ চাহিদা হতে পারে। এই খাবারগুলো কেবল খাদ্য নয় বরং শিল্পের এক একটি অংশ হয়ে উঠেছে। আর তাই এরা তাদের ক্রেতাদের কাছে ক্ষমতা, প্রাচুর্য এবং এক বিশেষ জীবনযাত্রার প্রতীক।

মাটির নিচের অমূল্য রত্ন এবং মসলার রাজা

সবচেয়ে দামি খাবারের তালিকায় প্রথমে আসে সেই মাটির নিচের রহস্য। যা সোনার চেয়েও মূল্যবান। ইতালির পিডমন্ট অঞ্চলের স্থানীয় সাদা ট্রাফল এমনই এক ছত্রাক, যা অত্যন্ত দুর্লভ ও ব্যয়বহুল। একবার চীনের ম্যাকাও-এর এক ক্যাসিনো মালিক প্রায় দেড় কেজি ওজনের একটি ট্রাফল ৩,৩০, ০০০ ডলারে কিনেছিলেন। টাকায় হিসাব করলে যার দাম হয় ৪ কোটি ১ লাখ ৯৩ হাজার ৪০০ টাকা। অন্যদিকে, মসলার জগতে রাজা হলো জাফরান। যাকে ডাকা হয় ’লাল সোনা’ নামে। এক কেজি জাফরান তৈরি করতে হাজার হাজার ফুল লাগে। এ জন্য এর দাম পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মসলার স্থানে নিয়ে গেছে। ফরাসি দ্বীপ নুয়ারমুতিয়ে-তে জন্মানো লা বোনোটে আলুর ক্ষেত্রেও সেই বিরলতা দেখা যায়। বিশেষ পরিবেশে ও শৈবালের কারণে এদের প্রতি কেজির দাম প্রায় ৬০০ ডলার বা ৭৩,১৭৮ টাকা।

সমুদ্র ও মাংসের জগতের মহার্ঘ উপহার

মাংস এবং সামুদ্রিক খাবারের জগতেও রয়েছে মহাযজ্ঞের ছোঁয়া। জাপানের ওয়াগিউ বিফ কেবল সুস্বাদুই নয়, এর পেছনের প্রক্রিয়াটিও রাজকীয়। এই গরুগুলোকে বিশেষ খাবার দেওয়া হয়। এমনকি প্রতিদিন মালিশও করা হয়। যার ফলস্বরূপ এর ১০০ গ্রাম মাংসের দাম প্রায় ৫০ ডলার। অর্থাৎ ৬০৯৯ টাকা। আরও একধাপ এগিয়ে, ২০১৯ সালে জাপানে একটি স্নো ক্র্যাব। যা নিলামে বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৪৬,০০০ ডলারে। তবে সামুদ্রিক খাবারের মুকুট হলো অ্যালমাস ক্যাভিয়ার। এই বিরল বেলুগা ক্যাভিয়ার প্রতি কেজি ৩৪,৫০০ ডলারে বিক্রি হয়ে থাকে। যার বাংলাদেশি মূল্য দাঁড়ায় ৪২,০৮৩১০ টাকা। যা সত্যিকারের বিলাসিতার প্রতিচ্ছবি। অন্যদিকে, স্পেনের ঐতিহ্যবাহী ইবেরিকো হ্যাম-এর এক পা বা লেগ ৪,৫০০ ডলারের মতো দামে বিক্রি হওয়ার বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে।

মসলার জগতে রাজা হলো জাফরান। যাকে ডাকা হয় ’লাল সোনা’ নামে। ছবি: পেক্সেলস
মসলার জগতে রাজা হলো জাফরান। যাকে ডাকা হয় ’লাল সোনা’ নামে। ছবি: পেক্সেলস

সাধারণ খাবারে অসাধারণ মূল্য সংযোজন

রেস্টুরেন্টে গেলে ৮০০ টাকা থাকে শুরু করে ৩০০০ টাকায় পিৎজা পাওয়া যায়। তবে ১২,০০০ ডলার বা ১,৪৬৩, ৭৬০ টাকার পিৎজা কখনো শুনেছেন? আপনি না শুনে থাকলেও পৃথিবীতে তা আছে। পিৎজা নির্মাতা রেনাটো ভায়োলা তৈরি করেছিলেন লিউস XIII পিৎজা। যার উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল তিন ধরনের ক্যাভিয়ার। আবার স্কটল্যান্ডের ডোমিনিকো ক্রলা-এর তৈরি পিৎজা রয়্যাল ০০৭ বিকোয় ৪,২০০ ডলারে। যেখানে কগনাক-এ ম্যারিনেট করা লবস্টার ও শ্যাম্পেনে ভেজানো ক্যাভিয়ার ব্যবহার করা হয়েছিল। মেক্সিকোর গ্র্যান্ড ভেলাস রিসোর্টে পাওয়া গ্র্যান্ড ভেলাস লস কাবোস টাকো। যার মূল্য ২৫,০০০ ডলার, যেখানে ছিল কোবে বিফ এবং সোনা-মিশ্রিত টর্টিলা। এমনকি নিউ ইয়র্কের একটি সাধারণ গ্রিলড চিজ স্যান্ডউইচও যখন শ্যাম্পেনে ভেজানো রুটি আর সোনার ফ্লেক্সের সঙ্গে আসে, তখন সেই কুইন্টেসেনশিয়াল গ্রিলড চিজ-এর দাম দাঁড়ায় ২১৪ ডলার।

ডেজার্ট, পানীয় এবং কফি জগতের বিস্ময়

মিষ্টি এবং পানীয়ের ক্ষেত্রেও বিলাসিতা তার ছাপ ফেলেছে। পেস্ট্রি শেফ জেওং হং-ইয়ংটো এক মাস সময় নিয়ে একটি ক্রিসমাস কেক তৈরি করেছিলেন, যাতে ছিল ২২৩টি হিরা, আর এর দাম ছিল অবিশ্বাস্য ১.৭ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, জাপানি ফলগুলোর মধ্যেও রয়েছে রাজকীয়তা। একটি ডেনসুকে ওয়াটারমেলন নিলামে ৬,১০০ ডলারে বিক্রি হয়েছিল এবং দুটি ইউবারি কিং মেলন ৪৫,০০০ ডলারের বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল। পানীয়ের ক্ষেত্রে, ১৯৫২ সালের বিরল টুলিবার্ডিন হুইস্কির একটি বোতলের দাম ৪১,০০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছেছিল। তবে প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়ালের ফল হলো কপি লুয়াক কফি। সিভেট ক্যাট বা গন্ধগোকুলের হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি এই কফি প্রতি কেজি প্রায় ৭০০ ডলারে বিক্রি হয়।

সূত্র: স্টার্স ইনসাইডার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

চার গুণ বাড়িয়ে পেঁয়াজ আমদানি দৈনিক ৬ হাজার টন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৬ সালের জন্য এয়ারবিএনবি-এর পূর্বাভাস

ফিচার ডেস্ক
ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

আপনি যদি ২৫ সালের শেষে এসে বারবার ভাবেন, "সময় কোথায় গেল? " তবে জেনে রাখুন, এই অনুভূতি কেবল আপনার একার নয়। সময় মুহূর্তের মধ্যে ফুরিয়ে যায় নদীর স্রোতের মতন। দেখতে দেখতে আমরা আরও একটি বছরের প্রায় শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি। তবে চিন্তার কিছু নেই, কারণ নতুন বছর আমাদের জন্য নতুন করে ঘুরে দেখার আর অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ নিয়ে আসছে। আর এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে সাহায্য করার জন্য এয়ারবিএনবি প্রকাশ করেছে ২০২৬ সালের জন্য তাদের ভ্রমণ প্রবণতা পূর্বাভাস।

এই হোম-শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আগামী বছর ভ্রমণকারীরা তাদের ছুটি থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে চাইবেন। যা হবে অভিজ্ঞতার কেন্দ্রিক। তাদের রিপোর্টে বেশ কয়েকটি মূল বিষয় উঠে এসেছে। যা আপনাকেও বিশ্ব ভ্রমণের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতে সাহায্য করতে পারে। এখানে উল্লিখিত পূর্বাভাসগুলো ইঙ্গিত দেয় যে ২০২৬ সালে ভ্রমণ হবে আরও সংক্ষিপ্ত, প্রকৃতির কাছাকাছি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভরপুর এবং অবশ্যই খাদ্য-কেন্দ্রিক। আপনিও আপনার পরবর্তী ভ্রমণের জন্য এই নতুন ধারাগুলো বিবেচনা করতে পারেন।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

জেনও জিদের আলট্রা-শর্ট আন্তর্জাতিক ট্রিপ

২০২৬ সালে ভ্রমণের সংজ্ঞাই পাল্টে দিচ্ছে জেনারেশন জি বা জেন জি। বিশাল, বহু-সপ্তাহব্যাপী ভ্রমণের পরিকল্পনাকে ভুলে যান। জেন জি আমাদের শেখাচ্ছে কীভাবে ৪৮ ঘণ্টা বা তারও কম সময়ে যেকোনো স্থানে উড়ে যাওয়া যায়। এয়ারবিএনবি-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, জেন জি রা ’কুইক ট্রিপ’-এর ধারণাটি নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। দীর্ঘ অবকাশের তুলনায় তাদের ১-২ দিনের আন্তর্জাতিক যাত্রা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। টিকটক-এর ভাইরাল ডে-ট্রিপ ট্রেন্ড দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, এই তরুণ প্রজন্ম সংস্কৃতি-সমৃদ্ধ, উচ্চ-শক্তির অভিজ্ঞতার জন্য মহাদেশ পাড়ি দিচ্ছে। এয়ারবিএনবি বলছে, জেন জি রা কর্মবিরতি সর্বাধিক ভাবে ব্যবহার করার এক নতুন কৌশল দেখাচ্ছে। তারা শান্ত সমুদ্র সৈকতের বদলে বেছে নিচ্ছে সংগীত, নৃত্য, ঐতিহাসিক স্থান এবং খাঁটি খাবারে পূর্ণ প্রাণবন্ত শহুরে অভিজ্ঞতা। এই প্রজন্মের পছন্দের গন্তব্যগুলোর মধ্যে রয়েছে বুয়েনোস আইরেস (আর্জেন্টিনা), বুসান (দক্ষিণ কোরিয়া), কো সামুই (থাইল্যান্ড), মারাকেশ (মরক্কো), মেক্সিকো সিটি (মেক্সিকো), সান জুয়ান (পুয়ের্তো রিকো) এবং স্টকহোম (সুইডেন)।

প্রকৃতির সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানো

প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভ করা ২০২৫ সালেও একটি জনপ্রিয় প্রবণতা ছিল। আর ২০২৬ সালে এটি আরও বেগবান হবে। এয়ারবিএনবি জানিয়েছে যে বিশ্বজুড়ে জাতীয় উদ্যানগুলির প্রতি অনুসন্ধান এবং আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, একটি জাতীয় উদ্যানের কাছাকাছি থাকার জায়গা খোঁজার হার আগামী বছরের জন্য ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে গ্রেট স্মোকি মাউন্টেনস, শেনানডোহ এবং গ্র্যান্ড টেটনের মতো মার্কিন পার্কগুলোর শতবর্ষ উদ্‌যাপনের কারণে সেগুলোর প্রতি আগ্রহ আরও বাড়ছে। বৈশ্বিক গন্তব্যগুলোর মধ্যে স্যামারিয়া জর্জ ন্যাশনাল পার্কের কাছাকাছি গ্রিসের ক্রিট, ভিয়েনা, ইন্ডিয়ার গোয়া এবং ইতালির সার্ডিনিয়ার মতো স্থানগুলো ভ্রমণকারীদের নজরে রয়েছে।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

বড় ইভেন্টগুলোর টানে ভিড় জমছে

২০২৬ সালে ভ্রমণকারীরা বড় ধরনের সাংস্কৃতিক, খেলাধুলা এবং সংগীত অনুষ্ঠানগুলোকে ঘিরে তাদের যাত্রা পরিকল্পনা করছেন। এয়ারবিএনবি-এর তথ্য অনুযায়ী, আগামী বছরের জন্য শীর্ষ-অনুসন্ধান করা তারিখ এবং শহরগুলোর ৬৫ শতাংশই প্রধান ইভেন্টগুলোর সঙ্গে মিলে যায়। যেমন ফিফা বিশ্বকাপ, কার্নিভাল বা কোচেলা। ভ্রমণকারীরা এই অভিজ্ঞতাগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, যেন টিকিটই তাদের পাসপোর্টে পরিণত হচ্ছে। কার্নিভালের জন্য রিউ দে জানেরো, কোচেলার জন্য ইন্ডিয়ো, মার্ডি গ্রাস-এর জন্য নিউ অর্লিন্স এবং ২০২৬ অলিম্পিক উইন্টার গেমসের জন্য ইতালির মিলান শীর্ষ অনুসন্ধান তালিকায় রয়েছে।

একক ভ্রমণের পুনরুত্থান

একাকী ভ্রমণ বা সোল ট্রাভেল আবার তার কৃতিত্ব ফিরে পাচ্ছে। স্ব-আবিষ্কারের অনলাইন আলোচনায় উৎসাহিত হয়ে, একক ভ্রমণকারীরা এখন কেবল পুরোনো জায়গায় ফিরে যাচ্ছেন না বরং নতুন হটস্পট আবিষ্কার করছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার ইডিল্ডওয়াইল্ড, ডোমিনিকান রিপাবলিকের লা আলতাগ্রেসিয়া এবং নরওয়ের ট্রোমসো-এর মতো জায়গাগুলোতে অনুসন্ধান তিন অঙ্কের বৃদ্ধি দেখছে। অন্যান্য জনপ্রিয় একক ভ্রমণের গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে পর্তুগালের আলগার্ভ অঞ্চল, স্পেনের কোস্টা দেল সল, ফ্লোরিডা কিস এবং স্কটল্যান্ডের ইনভারনেস।

রন্ধনশিল্পের প্রতি আকর্ষণ

২০২৬ সালের জন্য খাবার ও পানীয় সম্পর্কিত ভ্রমণ যেন একেবারে আগুন ঝরাচ্ছে। যেখানে বেকারি ক্লাস এবং ওয়াইন অঞ্চলগুলো শীর্ষে রয়েছে। প্যারিসে ক্রোসঁ তৈরির ক্লাস বা টোকিওতে মোচি বানানো শেখার মতন হাতে-কলমে অভিজ্ঞতার দিকে ভ্রমণকারীরা ঝুঁকছেন। ভাইরাল হওয়া টিকটক ফুড ভিডিওগুলো বিশ্বজুড়ে বেকারি এবং রান্নার ক্লাসের প্রতি আগ্রহ তৈরি করছে। ওয়াইন-প্রেমীরা বেঙ্গালুরু (ভারত), ফিঙ্গার লেকস (নিউ ইয়র্ক), মেলবোর্ন (অস্ট্রেলিয়া)-এর মতো উঠতি ওয়াইন অঞ্চলগুলিতে যাচ্ছেন। বেকারি-হটস্পটগুলোর মধ্যে ইস্তাম্বুল, লিসবন, প্যারিস, তাইপে এবং টোকিও বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

সূত্র: ট্রাভেল+লিজার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

চার গুণ বাড়িয়ে পেঁয়াজ আমদানি দৈনিক ৬ হাজার টন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত