জিনাতুন নুর

পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১ হাজার বছর সময়কে মধ্যযুগ ধরা হয়। সেটা ছিল সাংস্কৃতিক বিবর্তন ও ধর্মীয় ক্ষমতা চর্চার সুবর্ণ সময়। বিশ্বজুড়ে তখন জনসংখ্যা বেড়ে চলছে, গড়ে উঠছে নতুন নতুন শহর। ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যাই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শাসকশ্রেণির জন্য উপকারী ক্ষমতার প্রতীক হয়ে ওঠে। সেই সময়ে আটটি উল্লেখযোগ্য শহরের গোড়াপত্তন হয়। আয়তন বা জনসংখ্যার দিক থেকে নেহাত বিশাল না হলেও যুগের হিসাবে শহরগুলো গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই আট শহর নিয়েই আমাদের আজকের গল্প।
১। আঙ্খোর
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ এখনকার কম্বোডিয়ায় মধ্যযুগে খেমার সাম্রাজ্য ছিল প্রভাবশালী। ১১০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে সেই সাম্রাজ্যে আঙ্খোর নামে শহর ছিল। আয়তন ও জনসংখ্যা উভয় দিক থেকেই শহরটি ছিল বিশাল। এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম শহর হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ১ হাজার বর্গ কিলোমিটারজুড়ে (৩৯০ বর্গমাইল) বিস্তৃত সেই নগরে তখন প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসবাস করত। ‘মন্দিরের শহর’ হিসেবে পরিচিত প্রাচীন এই নগরী ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময় পর্যন্ত পরিত্যক্ত ছিল। কিন্তু এখন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা এবং একই সঙ্গে প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনস্থলও। তবে দেশটিতে কয়েক শ বছর ধরে চলমাণ সংঘাতের কারণে প্রত্নতাত্ত্বিক উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে এখনো উন্নয়নকাজ চলছে।
বিশাল ওই শহরের অনেক কিছুই কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে, কিন্তু আঙ্খোর ওয়াত নামে একটি স্থাপনা টিকে আছে। এটি ছিল খেমার সাম্রাজ্যের রাজধানী। জাতিসংঘ ঘোষিত ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ বা বিশ্বের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় এটি সুসংরক্ষিত আছে।
আঙ্খোর শহর ছিল দেবরাজদের শহর। তাদের হিন্দু দেবতা শিবের পার্থিব অবতার বলে মনে করা হতো। শহরটির জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়, সরকারি হাসপাতালের সংখ্যাও বাড়ে। প্রাচীন এই রাজধানী শহরে ছিল বিমানবন্দরের রানওয়ের মতো প্রশস্ত রাস্তা, খাল ও ধানের খেত; ছিল হাতে কাটা বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম জলাশয়; আর ফসলের বাম্পার উৎপাদনের জন্য বর্ষা মৌসুমকে কেন্দ্র করে জটিল সেচব্যবস্থা।
২। বাগদাদ
মধ্যযুগের শুরুতে আব্বাসীয় খিলাফত বা সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল আধুনিক ইরাকের বাগদাদ। ৭৬২ খ্রিষ্টাব্দে শহরটির নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং অষ্টম শতকের মধ্যে শেষ হয়। সেখানে প্রায় ৫ লাখ মানুষের বাস ছিল। সে সময় শহরটি মধ্যপ্রাচ্যের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল। ৭০০ খ্রিষ্টাব্দ ও ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রায় বাগদাদ বা এর শহরতলিতে ১০ লাখ মানুষ বসবাস করত। ট্রাইগ্রিস নদীর উভয় পাশে দুটি অর্ধবৃত্ত নকশায় বাগদাদের গোড়াপত্তন হয়। আধুনিক অবকাঠমোর সঙ্গে শহরটিতে ছিল কৃত্রিম খাল, পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, বেশ কিছু নাগরিক চত্বর ও প্রশস্ত রাস্তা।
শহরটির সোনালি যুগের কয়েক শতাব্দী পর ইয়াকুত নামে এক আরব গবেষক সেখানে বাস করতেন। তাঁর মতে, বাগদাদের রাস্তাগুলো ৪০ হাত বা ৬০ ফুট প্রশস্ত করে তৈরি করা হয়েছিল এবং শহরে প্রাচীরের মধ্যে আবর্জনা ফেলা নিষিদ্ধ ছিল। দশম শতকের পরে আব্বাসীয় শাসনের পতন হয়। কারণ, মধ্যযুগে বাগদাদ শহরে দুটি বড় হামলা হয়। এর মধ্যে ১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দে মোঙ্গলরা এবং ১৪০১ খ্রিষ্টাব্দে তাদেরই উত্তরসূরি তাইমুরের আক্রমণের শিকার হয়। আব্বাসীয়দের পতন হলেও বাগদাদ শহর গুরুত্ব হারায়নি। এটি এখনো আধুনিক ইরাকের রাজধানী এবং আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।
৩। কনস্টান্টিনোপল
বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বৃহৎ কেন্দ্রভূমি ছিল কনস্টান্টিনোপল। রোমান সম্রাট কনস্টান্টিনের আমলে ৩৩০ খ্রিষ্টাব্দে, অর্থাৎ প্রাচীন যুগে এই শহরের গোড়াপত্তন হয়। কিন্তু মধ্যযুগও কনস্টান্টিনোপল শহরের জন্য স্বর্ণযুগ ছিল বলা যায়। পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য। তখনো কনস্টান্টিনোপল থেকেই রোম শাসন করতেন সম্রাট জাস্টিনিয়ান।
রোমান থেকে বাইজেন্টাইন, বাইজেন্টাইন থেকে অটোমান সাম্রাজ্য এবং রোমান সাম্রাজ্যে প্রত্যাবর্তনের এই বড় সময়ের পালাবদলের জোয়ারের মধ্যেও নিজ অবয়বে বহাল ছিল কনস্টান্টিনোপল। ইতিহাসের নানা সময়ে এই শহরে প্রায় কোটি মানুষের বাস ছিল এবং এটিই ছিল প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। ইউরোপ ও এশিয়া—দুই মহাদেশজুড়ে থাকা শহর হিসেবে অনন্য অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক বিষয় ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কনস্টান্টিনোপল মুখ্য ভূমিকা রাখে।
ভেনিস, মধ্যপ্রাচ্য ও দূরপ্রাচ্যের ব্যবসায়ী ও বণিকেরা এই শহরে আসত। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে শহরটি ব্যাপক পরিচিত পায়। কনস্টান্টিনোপল অবিরত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে এবং যুদ্ধ ও অবরোধের কারণে নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঝুঁকিতে ছিল। তার পরও মধ্যযুগীয় বড় শহর হিসেবে শহরটি টিকে ছিল। শুধু তাই নয়, ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দে এটি অটোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী হয়ে ওঠে। পুরো মধ্যযুগে এবং আধুনিক যুগেও কনস্টান্টিনোপলের প্রভাবশালী ভূমিকা অব্যাহত ছিল। কনস্টান্টিনোপলের নাম পাল্টেছে, এটির নাম এখন ইস্তানবুল। তুরস্কের বড় শহর হিসেবে এটি ইউরোপ ও এশিয়া—দুই মহাদেশের আন্তর্জাতিক বিষয়েই জোরালো প্রভাব রাখে।
৪। কায়রো
বাগদাদের বিপরীতে ইসলামি বিশ্বের বৃহত্তম শহর হিসেবে ৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে মিসরে কায়রো শহর নির্মাণ করে ফাতেমীয় রাজবংশ। এই শহর যেমন ফাতেমীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল, তেমনি গোটা মধ্যযুগে ইসলামী শিক্ষা ও ক্ষমতার উৎসও ছিল এটি। কায়রো ‘হাজার মিনারের শহর’ হিসেবে পরিচিত। এটি বাস্তবিকই ইসলামি শহর। শহরজুড়ে হাজারের বেশি মসজিদ আছে বলে কেউ কেউ দাবি করেন এবং সংখ্যাটি অতিরঞ্জিত নয়। মধ্যযুগের কায়রোতে এসব মসজিদ ইবাদতের জায়গার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনকেন্দ্র হিসেবেও কাজ করত। আল-হাসান মসজিদ ছিল এই শহরের প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র। সেখানে ধনী কিংবা গরিব হাজার হাজার মিসরীয় ও বিদেশি তরুণ শিক্ষা নিত।
মামলূক রাজবংশ শহরটি দখলে নিলে মসজিদগুলো হাসপাতাল ও কমিউনিটি সেন্টার হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। দাসত্ব থেকে লড়াই করে ক্ষমতা অর্জন করায় মামলুক শাসকেরা শহরের প্রান্তিক মানুষের প্রতি যত্নশীল ছিল। তাঁরা শহরটিকে ক্রুসেডের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ইসলামি দুর্গ হিসেবে গড়ে তোলে। ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বাণিজ্যপথের সঙ্গমস্থলে থাকায় শহরটি মধ্যযুগের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। অবস্থানগত কারণে কায়রো বিশ্বের অন্যতম ধনী মধ্যযুগীয় শহরে পরিণত হয়।
কায়রো এখনো মিসরের রাজধানী এবং একই সঙ্গে আরব বিশ্বের বৃহত্তম শহর। আধুনিককালের কিছু দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ঘটনার মধ্যেও এটি উত্তর আফ্রিকার ইসলামি শক্তির বড় কেন্দ্র।
৫। হ্যাংঝু
চীনের সাতটি প্রাচীন রাজধানীর মধ্যে হ্যাংঝু উল্লেখযোগ্য। সম্ভবত দ্বাদশ শতাব্দীতে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শহরও এটি। গ্র্যান্ড ক্যানালের শেষ প্রান্তে অবস্থিত ১০ লাখ মানুষের শহরটি একাধিক চীনা রাজবংশের রাজধানী ছিল।
অবস্থানগত কারণে হ্যাংঝু সমৃদ্ধি পায়। কারণ সিল্করোড নামে চীনের সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্য পথের সঙ্গে এর সরাসরি সংযোগ ছিল। এটি বাণিজ্য নগরী হিসেবে বিকাশ লাভ করেছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে সুদূর ইরানেও মধ্যযুগে চীনা পণ্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এটি ইউয়ে রাজ্য এবং দক্ষিণ সং রাজবংশের রাজধানী ছিল। এমনকি যখন এটি রাজধানী শহর ছিল না, তখনো কৌশলগত অবস্থানের কারণে হ্যাংঝু শক্তিশালী শহর ছিল।
ধনসম্পদের জন্য হ্যাংঝু সুপরিচিত ছিল। চীনা সংস্কৃতির মহান কেন্দ্রও ছিল এটি। প্রাচীন সাহিত্য ও বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত এই শহর। এর সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব মার্কো পলো ও ইবনে বতুতার মতো পর্যটকককে আকৃষ্ট করেছিল। তাদের লেখায় শহরটির চমৎকার বর্ণনা উঠে এসেছে। মার্কো পলোর মতে, এটি নিঃসন্দেহে ‘বিশ্বের সেরা ও সবচেয়ে জমকালো শহর’। এই শহরের পাকা রাস্তা ও বিপুলসংখ্যক সেতু দেখে তিনি বিস্মিত হন। মার্কো পলোর লেখাগুলো ত্রয়োদশ শতাব্দীর হ্যাংঝুর জাঁকজমক অবস্থা তুলে ধরে। তখনো এটি বিশ্বের বৃহত্তম শহর ছিল। হ্যাংঝু এখনো গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। সেখানে প্রচুর পরিমাণে ধান ও রেশম উৎপাদন হয়। এখন রাজধানী না হলেও এটি অন্তত ১ কোটি মানুষের আধুনিক নগর।
৬। প্যারিস
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। মধ্যযুগের শুরুতে বিশাল বহুজাতিক শহরে বিকশিত হয় এটি। এর আগে এই শহরের তেমন গুরুত্ব ছিল না। দশম শতকের প্যারিসে একটি ক্যাথেড্র্যাল ছাড়া আর কিছু ছিল না। তবু প্রাদেশিক শহরের চেয়ে একটু বেশিই মর্যাদা পেত এই শহর। কিন্তু ক্যাপেশীয় রাজারা ইল দু লা সিতে থেকে ফ্রান্স শাসনের সিদ্ধান্ত নিলে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। এটাকে যে তারা শুধু রাজপ্রাসাদে পরিণত করেছে, তাই নয়। এখানে নতুন নটর ডেম ক্যাথেড্রালকেও জায়গা দেওয়া হয়। ক্যাপেশীয়দের অধীনে প্যারিস একাধারে ধর্মীয়, শিক্ষা ও বাণিজ্য—তিন দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। শিন নদীর বাম তীর ছিল ফরাসি গির্জা মঠের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ছিল বেশ কিছু কলেজ, যেগুলো ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ডান তীরে বন্দর, বণিকশ্রেণি ও বাজার প্যারিসকে বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত করে। ধর্ম ও শিক্ষার সঙ্গে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি প্যারিসকে স্বর্ণ ও রৌপ্যখচিত পান্ডুলিপির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে। পাশাপাশি এই শহরে প্রথম গথিক নির্মাণশৈলীর প্রচলন হয়।
১৩২৮ খ্রিষ্টাব্দের আগে প্যারিসের বাসিন্দা কত ছিল, তা নির্দিষ্ট ছিল না। কিন্তু সে বছরের আদমশুমারিতে শুধু শহরের ভেতরে ৬১ হাজার পরিবার পাওয়া যায়। তা থেকে সে সময় পুরো প্যারিসের জনসংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজার থেকে ২ লাখ ৭০ হাজারের মধ্যে ছিল বলে অনুমান করা যায়। শহরটি মহামারি ও বহিঃশক্তির অবরোধের কবলে পড়ে কিছুটা বিপর্যস্ত হলে নিজেকে সামলে নিয়ে মধ্যযুগে পশ্চিমা বিশ্বের অনত্যম জনবহুল শহরে পরিণত হয়।
৭। তেনোচতিতলান
এখনকার মেক্সিকোতে অবস্থিত তেনোচতিতলান প্রাক-কলম্বিয়ান আমেরিকায়, অর্থাৎ ক্রিস্টোফার কলম্বাসের অভিযানের মাধ্যমে ইউরোপের উপনিবেশ হওয়ার আগে পর্যন্ত আমেরিকার বৃহত্তম শহর ছিল। পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত এক শতাব্দীজুড়ে এটি ছিল বিস্তৃত আজটেক সাম্রাজ্যের রাজধানী। টেক্সকোকো দ্বীপের মাঝখানে তেনোচতিতলান শহর গড়ে তোলা হয়। সেখানে ছিল রাজকীয় প্রাসাদ, মন্দির, বাজার ও অন্যান্য সরকারি ভবন। এ সবই আজটেক জনগোষ্ঠীর কল্যাণের পাশাপাশি শহর ও সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
অ্যাজটেক সম্রাজ্যের বিশাল বাণিজ্য নেটওয়ার্ক ছিল, যা তেনোচতিতলান থেকে ম্যাক্সিকো উপসাগর এবং সম্ভবত ইনকা সাম্রাজ্য পযন্ত বিস্তৃত ছিল। এই শহরের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখের কাছাকাছি। সেই জনগোষ্ঠী এমন সামাজিক শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল, যা মেসোআমেরিকান বিশ্বে সবচেয়ে জটিল।
স্পেনীয় বিজেতারা এই রাজধানী শহরে পৌঁছে একে সমৃদ্ধশালী হিসেবেই খুঁজে পায়। জনসংখ্যার দিক থেকে ইউরোপের ভেনিস কিংবা প্যারিসের সমকক্ষ ছিল। সম্রাট দ্বিতীয় মক্তেজুমার রাজপ্রাসাদ ছিল বিস্তৃত ভবন, যেখানে চিড়িয়াখানা, বোটানক্যিল গার্ডেন ও অ্যাকুরিয়াম ছিল। হেরনান কর্তেসের নেতৃত্বে স্পেনীয়রা শহরটিকে দখল করে নয়া স্পেনের রাজপ্রতিনিধির পৌরসভায় পরিণত করে। কয়েক শতাব্দী ধরে শহরটি স্পেনীয় শাসনের অধীনে থাকলেও মেক্সিকোর রাজধানী স্থানান্তরিত হয়নি; মধ্যযুগীয় রাজধানীটির আশপাশেই তা গড়ে ওঠে। আধুনিক ম্যাক্সিকো শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্রে তেনোচতিতলানের অবস্থান। প্রায় ১ কোটি মানুষের শহরটি আমেরিকার মধ্যে অন্যতম জনবহুল।
৮। ভেনিস
মধ্যযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ নৌশক্তিধর হিসেবে বিবেচিত ভেনিস। পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর পালিয়ে আসা শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে এই শহরের যাত্রা শুরু হয়। চারপাশ ঘিরে থাকা লেগুন বা উপহ্রদ কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভেনিসকে প্রজাতন্ত্রে পরিণত করতে সহায়তা করেছে। এই লেগুন ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় ইউরোপের বাকি অংশের সঙ্গে রোমানদের বৃহত্তর বাণিজ্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
রোমান সাম্রাজ্য ও অপর ইতালীয় শক্তি থেকে উচ্চমাত্রার স্বাধীনতা পেয়েছিল ভেনিস—সেটা ধর্ম ও শাসনব্যবস্থা উভয় দিক থেকেই ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল দখল করা শুরু করে এই নগররাষ্ট্র। ভেনিসের শাসক ছিলেন একজন ডিউক। তিনি ভেনিসের গ্রেট কাউন্সিল দ্বারা নির্বাচিত হতেন এবং আজীবন দায়িত্ব পালন করতেন। ভেনিস নামে প্রজাতন্ত্র হলেও এটি শাসন করত বড় ব্যবসায়ীদের গোষ্ঠী।
ক্রমাগত সমৃদ্ধ হতে হতে মধ্যযুগে শিল্প, স্থাপত্য ও প্রকাশনার বড় কেন্দ্রে পরিণত হয় ভেনিস। ইতালি রেনেসাঁ বা পুনর্জাগরণের আগে ভেনিসে রেনেসাঁ শুরু হয়। অর্থনৈতিক দক্ষতা এবং নৌ প্রজাতন্ত্রের সেবায় শিল্পের উন্নয়নের প্রত্যক্ষ পরণতি ছিল এই রেনেসাঁ। ষোড়শ শতকের আগপর্যন্ত ভেনিস ছিল কিছুটা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এরপর আমেরিকা ও ইস্ট ইন্ডিজে বাণিজ্যপথ চালু হলে তার প্রভাব কমে। কারণ, তখন অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিও বাণিজ্য বাড়িয়ে ভেনিসের সমকক্ষ প্রভাব অর্জন করে।
উনিশ শতকের শেষের দিকে একক ইতালি রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত হয় ভেনিস। এটি এখন ইতালির বড় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। তবে আগের মতো প্রভাব আর নেই। চারপাশের খালের কারণে ভেনিস ছিল অনন্য এবং সম্পূর্ণরূপে নৌশক্তিনির্ভর। বিশাল নৌবহরের পরিবর্তে সেই খালগুলোতে এখন পর্যটকদের পছন্দের গন্ডোলা রাইড ও ওয়াটার ট্যাক্সি চলে।
(দ্য কালেক্টর থেকে অনূদিত)
লেখক: ইতিহাসে স্নাতকোত্তর, ইডেন কলেজ

পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১ হাজার বছর সময়কে মধ্যযুগ ধরা হয়। সেটা ছিল সাংস্কৃতিক বিবর্তন ও ধর্মীয় ক্ষমতা চর্চার সুবর্ণ সময়। বিশ্বজুড়ে তখন জনসংখ্যা বেড়ে চলছে, গড়ে উঠছে নতুন নতুন শহর। ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যাই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শাসকশ্রেণির জন্য উপকারী ক্ষমতার প্রতীক হয়ে ওঠে। সেই সময়ে আটটি উল্লেখযোগ্য শহরের গোড়াপত্তন হয়। আয়তন বা জনসংখ্যার দিক থেকে নেহাত বিশাল না হলেও যুগের হিসাবে শহরগুলো গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই আট শহর নিয়েই আমাদের আজকের গল্প।
১। আঙ্খোর
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ এখনকার কম্বোডিয়ায় মধ্যযুগে খেমার সাম্রাজ্য ছিল প্রভাবশালী। ১১০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে সেই সাম্রাজ্যে আঙ্খোর নামে শহর ছিল। আয়তন ও জনসংখ্যা উভয় দিক থেকেই শহরটি ছিল বিশাল। এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম শহর হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ১ হাজার বর্গ কিলোমিটারজুড়ে (৩৯০ বর্গমাইল) বিস্তৃত সেই নগরে তখন প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসবাস করত। ‘মন্দিরের শহর’ হিসেবে পরিচিত প্রাচীন এই নগরী ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময় পর্যন্ত পরিত্যক্ত ছিল। কিন্তু এখন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা এবং একই সঙ্গে প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনস্থলও। তবে দেশটিতে কয়েক শ বছর ধরে চলমাণ সংঘাতের কারণে প্রত্নতাত্ত্বিক উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে এখনো উন্নয়নকাজ চলছে।
বিশাল ওই শহরের অনেক কিছুই কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে, কিন্তু আঙ্খোর ওয়াত নামে একটি স্থাপনা টিকে আছে। এটি ছিল খেমার সাম্রাজ্যের রাজধানী। জাতিসংঘ ঘোষিত ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ বা বিশ্বের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় এটি সুসংরক্ষিত আছে।
আঙ্খোর শহর ছিল দেবরাজদের শহর। তাদের হিন্দু দেবতা শিবের পার্থিব অবতার বলে মনে করা হতো। শহরটির জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়, সরকারি হাসপাতালের সংখ্যাও বাড়ে। প্রাচীন এই রাজধানী শহরে ছিল বিমানবন্দরের রানওয়ের মতো প্রশস্ত রাস্তা, খাল ও ধানের খেত; ছিল হাতে কাটা বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম জলাশয়; আর ফসলের বাম্পার উৎপাদনের জন্য বর্ষা মৌসুমকে কেন্দ্র করে জটিল সেচব্যবস্থা।
২। বাগদাদ
মধ্যযুগের শুরুতে আব্বাসীয় খিলাফত বা সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল আধুনিক ইরাকের বাগদাদ। ৭৬২ খ্রিষ্টাব্দে শহরটির নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং অষ্টম শতকের মধ্যে শেষ হয়। সেখানে প্রায় ৫ লাখ মানুষের বাস ছিল। সে সময় শহরটি মধ্যপ্রাচ্যের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল। ৭০০ খ্রিষ্টাব্দ ও ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রায় বাগদাদ বা এর শহরতলিতে ১০ লাখ মানুষ বসবাস করত। ট্রাইগ্রিস নদীর উভয় পাশে দুটি অর্ধবৃত্ত নকশায় বাগদাদের গোড়াপত্তন হয়। আধুনিক অবকাঠমোর সঙ্গে শহরটিতে ছিল কৃত্রিম খাল, পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, বেশ কিছু নাগরিক চত্বর ও প্রশস্ত রাস্তা।
শহরটির সোনালি যুগের কয়েক শতাব্দী পর ইয়াকুত নামে এক আরব গবেষক সেখানে বাস করতেন। তাঁর মতে, বাগদাদের রাস্তাগুলো ৪০ হাত বা ৬০ ফুট প্রশস্ত করে তৈরি করা হয়েছিল এবং শহরে প্রাচীরের মধ্যে আবর্জনা ফেলা নিষিদ্ধ ছিল। দশম শতকের পরে আব্বাসীয় শাসনের পতন হয়। কারণ, মধ্যযুগে বাগদাদ শহরে দুটি বড় হামলা হয়। এর মধ্যে ১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দে মোঙ্গলরা এবং ১৪০১ খ্রিষ্টাব্দে তাদেরই উত্তরসূরি তাইমুরের আক্রমণের শিকার হয়। আব্বাসীয়দের পতন হলেও বাগদাদ শহর গুরুত্ব হারায়নি। এটি এখনো আধুনিক ইরাকের রাজধানী এবং আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।
৩। কনস্টান্টিনোপল
বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বৃহৎ কেন্দ্রভূমি ছিল কনস্টান্টিনোপল। রোমান সম্রাট কনস্টান্টিনের আমলে ৩৩০ খ্রিষ্টাব্দে, অর্থাৎ প্রাচীন যুগে এই শহরের গোড়াপত্তন হয়। কিন্তু মধ্যযুগও কনস্টান্টিনোপল শহরের জন্য স্বর্ণযুগ ছিল বলা যায়। পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য। তখনো কনস্টান্টিনোপল থেকেই রোম শাসন করতেন সম্রাট জাস্টিনিয়ান।
রোমান থেকে বাইজেন্টাইন, বাইজেন্টাইন থেকে অটোমান সাম্রাজ্য এবং রোমান সাম্রাজ্যে প্রত্যাবর্তনের এই বড় সময়ের পালাবদলের জোয়ারের মধ্যেও নিজ অবয়বে বহাল ছিল কনস্টান্টিনোপল। ইতিহাসের নানা সময়ে এই শহরে প্রায় কোটি মানুষের বাস ছিল এবং এটিই ছিল প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। ইউরোপ ও এশিয়া—দুই মহাদেশজুড়ে থাকা শহর হিসেবে অনন্য অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক বিষয় ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কনস্টান্টিনোপল মুখ্য ভূমিকা রাখে।
ভেনিস, মধ্যপ্রাচ্য ও দূরপ্রাচ্যের ব্যবসায়ী ও বণিকেরা এই শহরে আসত। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে শহরটি ব্যাপক পরিচিত পায়। কনস্টান্টিনোপল অবিরত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে এবং যুদ্ধ ও অবরোধের কারণে নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঝুঁকিতে ছিল। তার পরও মধ্যযুগীয় বড় শহর হিসেবে শহরটি টিকে ছিল। শুধু তাই নয়, ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দে এটি অটোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী হয়ে ওঠে। পুরো মধ্যযুগে এবং আধুনিক যুগেও কনস্টান্টিনোপলের প্রভাবশালী ভূমিকা অব্যাহত ছিল। কনস্টান্টিনোপলের নাম পাল্টেছে, এটির নাম এখন ইস্তানবুল। তুরস্কের বড় শহর হিসেবে এটি ইউরোপ ও এশিয়া—দুই মহাদেশের আন্তর্জাতিক বিষয়েই জোরালো প্রভাব রাখে।
৪। কায়রো
বাগদাদের বিপরীতে ইসলামি বিশ্বের বৃহত্তম শহর হিসেবে ৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে মিসরে কায়রো শহর নির্মাণ করে ফাতেমীয় রাজবংশ। এই শহর যেমন ফাতেমীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল, তেমনি গোটা মধ্যযুগে ইসলামী শিক্ষা ও ক্ষমতার উৎসও ছিল এটি। কায়রো ‘হাজার মিনারের শহর’ হিসেবে পরিচিত। এটি বাস্তবিকই ইসলামি শহর। শহরজুড়ে হাজারের বেশি মসজিদ আছে বলে কেউ কেউ দাবি করেন এবং সংখ্যাটি অতিরঞ্জিত নয়। মধ্যযুগের কায়রোতে এসব মসজিদ ইবাদতের জায়গার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনকেন্দ্র হিসেবেও কাজ করত। আল-হাসান মসজিদ ছিল এই শহরের প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র। সেখানে ধনী কিংবা গরিব হাজার হাজার মিসরীয় ও বিদেশি তরুণ শিক্ষা নিত।
মামলূক রাজবংশ শহরটি দখলে নিলে মসজিদগুলো হাসপাতাল ও কমিউনিটি সেন্টার হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। দাসত্ব থেকে লড়াই করে ক্ষমতা অর্জন করায় মামলুক শাসকেরা শহরের প্রান্তিক মানুষের প্রতি যত্নশীল ছিল। তাঁরা শহরটিকে ক্রুসেডের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ইসলামি দুর্গ হিসেবে গড়ে তোলে। ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বাণিজ্যপথের সঙ্গমস্থলে থাকায় শহরটি মধ্যযুগের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। অবস্থানগত কারণে কায়রো বিশ্বের অন্যতম ধনী মধ্যযুগীয় শহরে পরিণত হয়।
কায়রো এখনো মিসরের রাজধানী এবং একই সঙ্গে আরব বিশ্বের বৃহত্তম শহর। আধুনিককালের কিছু দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ঘটনার মধ্যেও এটি উত্তর আফ্রিকার ইসলামি শক্তির বড় কেন্দ্র।
৫। হ্যাংঝু
চীনের সাতটি প্রাচীন রাজধানীর মধ্যে হ্যাংঝু উল্লেখযোগ্য। সম্ভবত দ্বাদশ শতাব্দীতে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শহরও এটি। গ্র্যান্ড ক্যানালের শেষ প্রান্তে অবস্থিত ১০ লাখ মানুষের শহরটি একাধিক চীনা রাজবংশের রাজধানী ছিল।
অবস্থানগত কারণে হ্যাংঝু সমৃদ্ধি পায়। কারণ সিল্করোড নামে চীনের সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্য পথের সঙ্গে এর সরাসরি সংযোগ ছিল। এটি বাণিজ্য নগরী হিসেবে বিকাশ লাভ করেছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে সুদূর ইরানেও মধ্যযুগে চীনা পণ্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এটি ইউয়ে রাজ্য এবং দক্ষিণ সং রাজবংশের রাজধানী ছিল। এমনকি যখন এটি রাজধানী শহর ছিল না, তখনো কৌশলগত অবস্থানের কারণে হ্যাংঝু শক্তিশালী শহর ছিল।
ধনসম্পদের জন্য হ্যাংঝু সুপরিচিত ছিল। চীনা সংস্কৃতির মহান কেন্দ্রও ছিল এটি। প্রাচীন সাহিত্য ও বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত এই শহর। এর সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব মার্কো পলো ও ইবনে বতুতার মতো পর্যটকককে আকৃষ্ট করেছিল। তাদের লেখায় শহরটির চমৎকার বর্ণনা উঠে এসেছে। মার্কো পলোর মতে, এটি নিঃসন্দেহে ‘বিশ্বের সেরা ও সবচেয়ে জমকালো শহর’। এই শহরের পাকা রাস্তা ও বিপুলসংখ্যক সেতু দেখে তিনি বিস্মিত হন। মার্কো পলোর লেখাগুলো ত্রয়োদশ শতাব্দীর হ্যাংঝুর জাঁকজমক অবস্থা তুলে ধরে। তখনো এটি বিশ্বের বৃহত্তম শহর ছিল। হ্যাংঝু এখনো গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। সেখানে প্রচুর পরিমাণে ধান ও রেশম উৎপাদন হয়। এখন রাজধানী না হলেও এটি অন্তত ১ কোটি মানুষের আধুনিক নগর।
৬। প্যারিস
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। মধ্যযুগের শুরুতে বিশাল বহুজাতিক শহরে বিকশিত হয় এটি। এর আগে এই শহরের তেমন গুরুত্ব ছিল না। দশম শতকের প্যারিসে একটি ক্যাথেড্র্যাল ছাড়া আর কিছু ছিল না। তবু প্রাদেশিক শহরের চেয়ে একটু বেশিই মর্যাদা পেত এই শহর। কিন্তু ক্যাপেশীয় রাজারা ইল দু লা সিতে থেকে ফ্রান্স শাসনের সিদ্ধান্ত নিলে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। এটাকে যে তারা শুধু রাজপ্রাসাদে পরিণত করেছে, তাই নয়। এখানে নতুন নটর ডেম ক্যাথেড্রালকেও জায়গা দেওয়া হয়। ক্যাপেশীয়দের অধীনে প্যারিস একাধারে ধর্মীয়, শিক্ষা ও বাণিজ্য—তিন দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। শিন নদীর বাম তীর ছিল ফরাসি গির্জা মঠের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ছিল বেশ কিছু কলেজ, যেগুলো ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ডান তীরে বন্দর, বণিকশ্রেণি ও বাজার প্যারিসকে বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত করে। ধর্ম ও শিক্ষার সঙ্গে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি প্যারিসকে স্বর্ণ ও রৌপ্যখচিত পান্ডুলিপির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে। পাশাপাশি এই শহরে প্রথম গথিক নির্মাণশৈলীর প্রচলন হয়।
১৩২৮ খ্রিষ্টাব্দের আগে প্যারিসের বাসিন্দা কত ছিল, তা নির্দিষ্ট ছিল না। কিন্তু সে বছরের আদমশুমারিতে শুধু শহরের ভেতরে ৬১ হাজার পরিবার পাওয়া যায়। তা থেকে সে সময় পুরো প্যারিসের জনসংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজার থেকে ২ লাখ ৭০ হাজারের মধ্যে ছিল বলে অনুমান করা যায়। শহরটি মহামারি ও বহিঃশক্তির অবরোধের কবলে পড়ে কিছুটা বিপর্যস্ত হলে নিজেকে সামলে নিয়ে মধ্যযুগে পশ্চিমা বিশ্বের অনত্যম জনবহুল শহরে পরিণত হয়।
৭। তেনোচতিতলান
এখনকার মেক্সিকোতে অবস্থিত তেনোচতিতলান প্রাক-কলম্বিয়ান আমেরিকায়, অর্থাৎ ক্রিস্টোফার কলম্বাসের অভিযানের মাধ্যমে ইউরোপের উপনিবেশ হওয়ার আগে পর্যন্ত আমেরিকার বৃহত্তম শহর ছিল। পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত এক শতাব্দীজুড়ে এটি ছিল বিস্তৃত আজটেক সাম্রাজ্যের রাজধানী। টেক্সকোকো দ্বীপের মাঝখানে তেনোচতিতলান শহর গড়ে তোলা হয়। সেখানে ছিল রাজকীয় প্রাসাদ, মন্দির, বাজার ও অন্যান্য সরকারি ভবন। এ সবই আজটেক জনগোষ্ঠীর কল্যাণের পাশাপাশি শহর ও সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
অ্যাজটেক সম্রাজ্যের বিশাল বাণিজ্য নেটওয়ার্ক ছিল, যা তেনোচতিতলান থেকে ম্যাক্সিকো উপসাগর এবং সম্ভবত ইনকা সাম্রাজ্য পযন্ত বিস্তৃত ছিল। এই শহরের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখের কাছাকাছি। সেই জনগোষ্ঠী এমন সামাজিক শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল, যা মেসোআমেরিকান বিশ্বে সবচেয়ে জটিল।
স্পেনীয় বিজেতারা এই রাজধানী শহরে পৌঁছে একে সমৃদ্ধশালী হিসেবেই খুঁজে পায়। জনসংখ্যার দিক থেকে ইউরোপের ভেনিস কিংবা প্যারিসের সমকক্ষ ছিল। সম্রাট দ্বিতীয় মক্তেজুমার রাজপ্রাসাদ ছিল বিস্তৃত ভবন, যেখানে চিড়িয়াখানা, বোটানক্যিল গার্ডেন ও অ্যাকুরিয়াম ছিল। হেরনান কর্তেসের নেতৃত্বে স্পেনীয়রা শহরটিকে দখল করে নয়া স্পেনের রাজপ্রতিনিধির পৌরসভায় পরিণত করে। কয়েক শতাব্দী ধরে শহরটি স্পেনীয় শাসনের অধীনে থাকলেও মেক্সিকোর রাজধানী স্থানান্তরিত হয়নি; মধ্যযুগীয় রাজধানীটির আশপাশেই তা গড়ে ওঠে। আধুনিক ম্যাক্সিকো শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্রে তেনোচতিতলানের অবস্থান। প্রায় ১ কোটি মানুষের শহরটি আমেরিকার মধ্যে অন্যতম জনবহুল।
৮। ভেনিস
মধ্যযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ নৌশক্তিধর হিসেবে বিবেচিত ভেনিস। পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর পালিয়ে আসা শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে এই শহরের যাত্রা শুরু হয়। চারপাশ ঘিরে থাকা লেগুন বা উপহ্রদ কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভেনিসকে প্রজাতন্ত্রে পরিণত করতে সহায়তা করেছে। এই লেগুন ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় ইউরোপের বাকি অংশের সঙ্গে রোমানদের বৃহত্তর বাণিজ্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
রোমান সাম্রাজ্য ও অপর ইতালীয় শক্তি থেকে উচ্চমাত্রার স্বাধীনতা পেয়েছিল ভেনিস—সেটা ধর্ম ও শাসনব্যবস্থা উভয় দিক থেকেই ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল দখল করা শুরু করে এই নগররাষ্ট্র। ভেনিসের শাসক ছিলেন একজন ডিউক। তিনি ভেনিসের গ্রেট কাউন্সিল দ্বারা নির্বাচিত হতেন এবং আজীবন দায়িত্ব পালন করতেন। ভেনিস নামে প্রজাতন্ত্র হলেও এটি শাসন করত বড় ব্যবসায়ীদের গোষ্ঠী।
ক্রমাগত সমৃদ্ধ হতে হতে মধ্যযুগে শিল্প, স্থাপত্য ও প্রকাশনার বড় কেন্দ্রে পরিণত হয় ভেনিস। ইতালি রেনেসাঁ বা পুনর্জাগরণের আগে ভেনিসে রেনেসাঁ শুরু হয়। অর্থনৈতিক দক্ষতা এবং নৌ প্রজাতন্ত্রের সেবায় শিল্পের উন্নয়নের প্রত্যক্ষ পরণতি ছিল এই রেনেসাঁ। ষোড়শ শতকের আগপর্যন্ত ভেনিস ছিল কিছুটা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এরপর আমেরিকা ও ইস্ট ইন্ডিজে বাণিজ্যপথ চালু হলে তার প্রভাব কমে। কারণ, তখন অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিও বাণিজ্য বাড়িয়ে ভেনিসের সমকক্ষ প্রভাব অর্জন করে।
উনিশ শতকের শেষের দিকে একক ইতালি রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত হয় ভেনিস। এটি এখন ইতালির বড় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। তবে আগের মতো প্রভাব আর নেই। চারপাশের খালের কারণে ভেনিস ছিল অনন্য এবং সম্পূর্ণরূপে নৌশক্তিনির্ভর। বিশাল নৌবহরের পরিবর্তে সেই খালগুলোতে এখন পর্যটকদের পছন্দের গন্ডোলা রাইড ও ওয়াটার ট্যাক্সি চলে।
(দ্য কালেক্টর থেকে অনূদিত)
লেখক: ইতিহাসে স্নাতকোত্তর, ইডেন কলেজ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি তুলে ধরার এই যুগে, প্রেম বা দাম্পত্য সম্পর্ককে প্রকাশ্যে আনা বা ‘হার্ড-লঞ্চ’ করার ক্ষেত্রে দ্বিধা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণী ও নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা অনেক বেশি। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই প্রবণতা এখন এতটাই প্রবল যে, ব্রিটিশ ভোগ ম্যাগাজিনও প্রশ্ন তুলেছে,
২ ঘণ্টা আগে
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য থাইল্যান্ড। নিয়মিত যাঁরা ভ্রমণ করেন, তাঁদের অনেকে দেশটিতে একাধিকবার গেছেন। এর অন্যতম কারণ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ। পর্যটকদের জন্য সব ধরনের আয়োজন রয়েছে দেশটিতে। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির সরকারের এক সিদ্ধান্ত পর্যটকদের কপালে ভাঁজ এনে দিয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগে
ফরসা রঙের মানুষদের একসময় সুন্দর বলা হতো; কিন্তু সৌন্দর্যের সেই ধারণা বর্তমানে বদলে গেছে। এখন সুন্দর বলতে বোঝায় দেহের সুন্দর গড়নকে। সেটিকে আমরা সুস্থতা না ধরে, ধরে নিয়েছি একটা নির্দিষ্ট মাপে, তা হলো ৩৬-২৪-৩৬। এটা যেন সব নারীর আরাধ্য ফিগার।
৮ ঘণ্টা আগে
শীত এলেই ত্বক টানটান লাগে। এ ছাড়া নাকের পাশ শুকিয়ে যায়, ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়, চুলেও রুক্ষ ভাব বাড়ে। আবহাওয়ার কারণে শরীরের আর্দ্রতা কমে যায় বলে এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এই মৌসুমে খুব ভালো কাজ করে অ্যালোভেরা জেল। এটি যেমন ত্বক আর্দ্র করে, তেমনি সার্বিক সুস্থতায়ও কাজে দেয়। দোকানে থাকা জেলে অনেক...
৮ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি তুলে ধরার এই যুগে, প্রেম বা দাম্পত্য সম্পর্ককে প্রকাশ্যে আনা বা ‘হার্ড-লঞ্চ’ করার ক্ষেত্রে দ্বিধা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণী ও নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা অনেক বেশি। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই প্রবণতা এখন এতটাই প্রবল যে, ব্রিটিশ ভোগ ম্যাগাজিনও প্রশ্ন তুলেছে, ‘প্রেমিক থাকা কি এখন লজ্জার ব্যাপার?’
ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকে এখন অনেকেই সঙ্গীর মুখ আড়াল করে ছবি দিচ্ছেন, শুধু হাত বা পানীয়ের গ্লাস ঠোকাঠুকির মতো ইঙ্গিতপূর্ণ ‘সফট লঞ্চ’ করছেন। এর পেছনে রয়েছে ব্র্যান্ডিং, আত্মনির্ভরতার বার্তা দেওয়া এবং ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষার মতো একাধিক কারণ। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে দৃষ্টান্ত হিসেবে ইনফ্লুয়েন্সার তাওয়ানা মুসভাবুরির কথা উল্লেখ করেছে বিবিসি। তাওয়ানার ৩৩ হাজার ফলোয়ার রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করে প্রেমিকের চেহারা আড়াল করে রাখেন। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী বলেন, তিনি এমন একটি ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন যেখানে তাঁর প্রেমিকের কোনো অংশ নেই।
তিনি বিবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমি নিজেকে একজন শক্তিশালী নারী হিসেবে তুলে ধরতে চাই, যেন মনে হয় আমার সবটা আমার নিয়ন্ত্রণে। আপনি চান না যে, লোকজনের মনে হোক যে এটি কোনো অংশ একজন পুরুষের সহায়তায় গড়ে উঠেছে। যখন আমি বলি, আমি এটি নিজেই করেছি, তখন সেটা আমাকে আরও বেশি তৃপ্তি দেয়।’
তাওয়ানার মতে, এমনকি যদি তিনি বাগদান বা বিয়েও করেন, তাহলেও সেই সম্পর্ক প্রকাশ্যে আনার জন্য শুধু একটি আংটিই যথেষ্ট নয়।
ভোগ ম্যাগাজিনের ভাইরাল হওয়া নিবন্ধে লেখক শঁতে জোসেফ উল্লেখ করেন, বিষমকামী নারীরা এখন তাঁদের সম্পর্ক অনলাইনে যেভাবে তুলে ধরছেন, তাতে একটি বড়সড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নারীরা এখন সঙ্গী থাকার ‘সামাজিক সুবিধা’ উপভোগ করতে চাইলেও, একই সঙ্গে ‘বয়ফ্রেন্ড-পাগল’ হিসেবে পরিচিত হতে চান না।
জোসেফের মতে, ঘন ঘন সঙ্গীর ছবি পোস্ট করাকে অনেকে ‘বিরক্তিকর’ বা ‘সাংস্কৃতিক দিক থেকে ব্যর্থতার লক্ষণ’ বলে মনে করেন। আরও গুরুতর যে বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছেন সেটি হলো, প্রেমিক থাকা এখন আর ‘কোনো অর্জন’ হিসেবে বিবেচিত হয় না। তিনি মনে করেন, নারীরা এখন পিতৃতান্ত্রিক সমাজের ‘দমিয়ে রাখার’ প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সম্পর্ক আড়াল করছেন।
ইনফ্লুয়েন্সারদের ক্ষেত্রে এটি কেবল সামাজিক ধারণা নয়, বরং উপার্জনের প্রশ্নও বটে। দক্ষিণ লন্ডনের কনটেন্ট ক্রিয়েটর স্টেফানি ইয়েবোয়াহ ভোগ ম্যাগাজিনকে জানান, একবার তাঁর প্রেমিকের ছবি পোস্ট করার পর তাঁর খুব অনুশোচনা হয়েছে।
তিনি বিবিসিকে বলেন, তাঁর ইনবক্সে বার্তা আসতে শুরু করে যে লোকেরা তাঁকে আর অনুসরণ করতে পারছে না। কারণ তাঁর কনটেন্টে এখন প্রেমিক যুক্ত হয়ে গেছেন। ইয়েবোয়াহ স্মরণ করেন, ‘সেই দিন প্রায় ১ হাজার মানুষ আমাকে আনফলো করেছিল।’
কিং’স কলেজ লন্ডনের ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ ড. জিলিয়ান ব্রুকস বলেন, ইনফ্লুয়েন্সাররা একটি স্বতন্ত্র রুচি বা নান্দনিকতা বিক্রি করেন। তাঁদের দর্শকদের জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড তৈরি করা হয়। যদি তাঁরা সেই ব্র্যান্ডের বাইরে চলে যান, তবে শ্রোতাদের বিভ্রান্ত করেন এবং এতে তাঁদের ফলোয়ার কমে যেতে পারে।
যারা ইনফ্লুয়েন্সার নন, তাঁদেরও সম্পর্ক আড়াল করার নিজস্ব অনেক কারণ আছে। যেমন: নির্ভরশীলতা এড়ানো—মিল্লি নামের ২৫ বছর বয়সী এক তরুণী বলেন, তিনি তাঁর বাগদত্তের ছবি দিতে দ্বিধা বোধ করেন। তিনি চান না যে তাঁকে সঙ্গীর ওপর ‘নির্ভরশীল’ বা এমন কেউ বলে মনে করা হোক যার ‘পুরো ব্যক্তিত্ব’টাই এই সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল।
গোপনীয়তা রক্ষাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০ বছর বয়সী শার্লট বিশ্বাস করেন, বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ককে ‘আরও বেশি ব্যক্তিগত’ রাখা উচিত। তিনি মনে করেন, ছবি পোস্ট করা মানেই লোককে বলা, ‘দেখো আমার কত গভীর নিখুঁত সম্পর্ক’—বাস্তবে এটি সত্য নয়।
কু-নজরের ভয়! প্রথম পাঠে খটকা লাগলেও অনেকে ক্ষেত্রে এটি সত্য। ২১ বছর বয়সী আথেরা জানান, তাঁর অনেক বন্ধু সম্পর্কের গোপনীয়তা রাখতে চান কু-নজর বা ‘ইভিল আই’-এর ভয়ে। প্রায় সব সংস্কৃতিতেই কু-নজর বলতে এমন একটি বিশ্বাস বা সংস্কার যে, ঈর্ষা বা বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টির পড়লে ক্ষতি হতে পারে।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাজ মনোবিজ্ঞানী ড. গোয়েনডোলিন সাইডম্যান মনে করেন, ব্যক্তিগত জীবনের এত বড় অংশ অনলাইনে শেয়ার করার সঙ্গে এক ধরনের উদ্বেগ জড়িত। এই উদ্বেগ মূলত অনলাইনে তথ্যের স্থায়িত্বের ভয় থেকে আসে। মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে যে একবার কিছু অনলাইনে পোস্ট হলে তা মুছে ফেলা কঠিন। তাই তারা এখন আরও সতর্ক থাকতে চাচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি তুলে ধরার এই যুগে, প্রেম বা দাম্পত্য সম্পর্ককে প্রকাশ্যে আনা বা ‘হার্ড-লঞ্চ’ করার ক্ষেত্রে দ্বিধা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণী ও নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা অনেক বেশি। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই প্রবণতা এখন এতটাই প্রবল যে, ব্রিটিশ ভোগ ম্যাগাজিনও প্রশ্ন তুলেছে, ‘প্রেমিক থাকা কি এখন লজ্জার ব্যাপার?’
ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকে এখন অনেকেই সঙ্গীর মুখ আড়াল করে ছবি দিচ্ছেন, শুধু হাত বা পানীয়ের গ্লাস ঠোকাঠুকির মতো ইঙ্গিতপূর্ণ ‘সফট লঞ্চ’ করছেন। এর পেছনে রয়েছে ব্র্যান্ডিং, আত্মনির্ভরতার বার্তা দেওয়া এবং ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষার মতো একাধিক কারণ। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে দৃষ্টান্ত হিসেবে ইনফ্লুয়েন্সার তাওয়ানা মুসভাবুরির কথা উল্লেখ করেছে বিবিসি। তাওয়ানার ৩৩ হাজার ফলোয়ার রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করে প্রেমিকের চেহারা আড়াল করে রাখেন। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী বলেন, তিনি এমন একটি ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন যেখানে তাঁর প্রেমিকের কোনো অংশ নেই।
তিনি বিবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমি নিজেকে একজন শক্তিশালী নারী হিসেবে তুলে ধরতে চাই, যেন মনে হয় আমার সবটা আমার নিয়ন্ত্রণে। আপনি চান না যে, লোকজনের মনে হোক যে এটি কোনো অংশ একজন পুরুষের সহায়তায় গড়ে উঠেছে। যখন আমি বলি, আমি এটি নিজেই করেছি, তখন সেটা আমাকে আরও বেশি তৃপ্তি দেয়।’
তাওয়ানার মতে, এমনকি যদি তিনি বাগদান বা বিয়েও করেন, তাহলেও সেই সম্পর্ক প্রকাশ্যে আনার জন্য শুধু একটি আংটিই যথেষ্ট নয়।
ভোগ ম্যাগাজিনের ভাইরাল হওয়া নিবন্ধে লেখক শঁতে জোসেফ উল্লেখ করেন, বিষমকামী নারীরা এখন তাঁদের সম্পর্ক অনলাইনে যেভাবে তুলে ধরছেন, তাতে একটি বড়সড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নারীরা এখন সঙ্গী থাকার ‘সামাজিক সুবিধা’ উপভোগ করতে চাইলেও, একই সঙ্গে ‘বয়ফ্রেন্ড-পাগল’ হিসেবে পরিচিত হতে চান না।
জোসেফের মতে, ঘন ঘন সঙ্গীর ছবি পোস্ট করাকে অনেকে ‘বিরক্তিকর’ বা ‘সাংস্কৃতিক দিক থেকে ব্যর্থতার লক্ষণ’ বলে মনে করেন। আরও গুরুতর যে বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছেন সেটি হলো, প্রেমিক থাকা এখন আর ‘কোনো অর্জন’ হিসেবে বিবেচিত হয় না। তিনি মনে করেন, নারীরা এখন পিতৃতান্ত্রিক সমাজের ‘দমিয়ে রাখার’ প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সম্পর্ক আড়াল করছেন।
ইনফ্লুয়েন্সারদের ক্ষেত্রে এটি কেবল সামাজিক ধারণা নয়, বরং উপার্জনের প্রশ্নও বটে। দক্ষিণ লন্ডনের কনটেন্ট ক্রিয়েটর স্টেফানি ইয়েবোয়াহ ভোগ ম্যাগাজিনকে জানান, একবার তাঁর প্রেমিকের ছবি পোস্ট করার পর তাঁর খুব অনুশোচনা হয়েছে।
তিনি বিবিসিকে বলেন, তাঁর ইনবক্সে বার্তা আসতে শুরু করে যে লোকেরা তাঁকে আর অনুসরণ করতে পারছে না। কারণ তাঁর কনটেন্টে এখন প্রেমিক যুক্ত হয়ে গেছেন। ইয়েবোয়াহ স্মরণ করেন, ‘সেই দিন প্রায় ১ হাজার মানুষ আমাকে আনফলো করেছিল।’
কিং’স কলেজ লন্ডনের ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ ড. জিলিয়ান ব্রুকস বলেন, ইনফ্লুয়েন্সাররা একটি স্বতন্ত্র রুচি বা নান্দনিকতা বিক্রি করেন। তাঁদের দর্শকদের জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড তৈরি করা হয়। যদি তাঁরা সেই ব্র্যান্ডের বাইরে চলে যান, তবে শ্রোতাদের বিভ্রান্ত করেন এবং এতে তাঁদের ফলোয়ার কমে যেতে পারে।
যারা ইনফ্লুয়েন্সার নন, তাঁদেরও সম্পর্ক আড়াল করার নিজস্ব অনেক কারণ আছে। যেমন: নির্ভরশীলতা এড়ানো—মিল্লি নামের ২৫ বছর বয়সী এক তরুণী বলেন, তিনি তাঁর বাগদত্তের ছবি দিতে দ্বিধা বোধ করেন। তিনি চান না যে তাঁকে সঙ্গীর ওপর ‘নির্ভরশীল’ বা এমন কেউ বলে মনে করা হোক যার ‘পুরো ব্যক্তিত্ব’টাই এই সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল।
গোপনীয়তা রক্ষাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০ বছর বয়সী শার্লট বিশ্বাস করেন, বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ককে ‘আরও বেশি ব্যক্তিগত’ রাখা উচিত। তিনি মনে করেন, ছবি পোস্ট করা মানেই লোককে বলা, ‘দেখো আমার কত গভীর নিখুঁত সম্পর্ক’—বাস্তবে এটি সত্য নয়।
কু-নজরের ভয়! প্রথম পাঠে খটকা লাগলেও অনেকে ক্ষেত্রে এটি সত্য। ২১ বছর বয়সী আথেরা জানান, তাঁর অনেক বন্ধু সম্পর্কের গোপনীয়তা রাখতে চান কু-নজর বা ‘ইভিল আই’-এর ভয়ে। প্রায় সব সংস্কৃতিতেই কু-নজর বলতে এমন একটি বিশ্বাস বা সংস্কার যে, ঈর্ষা বা বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টির পড়লে ক্ষতি হতে পারে।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাজ মনোবিজ্ঞানী ড. গোয়েনডোলিন সাইডম্যান মনে করেন, ব্যক্তিগত জীবনের এত বড় অংশ অনলাইনে শেয়ার করার সঙ্গে এক ধরনের উদ্বেগ জড়িত। এই উদ্বেগ মূলত অনলাইনে তথ্যের স্থায়িত্বের ভয় থেকে আসে। মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে যে একবার কিছু অনলাইনে পোস্ট হলে তা মুছে ফেলা কঠিন। তাই তারা এখন আরও সতর্ক থাকতে চাচ্ছে।

পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১ হাজার বছর সময়কে মধ্যযুগ ধরা হয়। সেটা ছিল সাংস্কৃতিক বিবর্তন ও ধর্মীয় ক্ষমতা চর্চার সুবর্ণ সময়। বিশ্বজুড়ে তখন জনসংখ্যা বেড়ে চলছে, গড়ে উঠছে নতুন নতুন শহর। ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যাই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শাসক শ্রেণির জন্য উপকারী ক্ষমতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
২৫ মে ২০২৪
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য থাইল্যান্ড। নিয়মিত যাঁরা ভ্রমণ করেন, তাঁদের অনেকে দেশটিতে একাধিকবার গেছেন। এর অন্যতম কারণ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ। পর্যটকদের জন্য সব ধরনের আয়োজন রয়েছে দেশটিতে। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির সরকারের এক সিদ্ধান্ত পর্যটকদের কপালে ভাঁজ এনে দিয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগে
ফরসা রঙের মানুষদের একসময় সুন্দর বলা হতো; কিন্তু সৌন্দর্যের সেই ধারণা বর্তমানে বদলে গেছে। এখন সুন্দর বলতে বোঝায় দেহের সুন্দর গড়নকে। সেটিকে আমরা সুস্থতা না ধরে, ধরে নিয়েছি একটা নির্দিষ্ট মাপে, তা হলো ৩৬-২৪-৩৬। এটা যেন সব নারীর আরাধ্য ফিগার।
৮ ঘণ্টা আগে
শীত এলেই ত্বক টানটান লাগে। এ ছাড়া নাকের পাশ শুকিয়ে যায়, ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়, চুলেও রুক্ষ ভাব বাড়ে। আবহাওয়ার কারণে শরীরের আর্দ্রতা কমে যায় বলে এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এই মৌসুমে খুব ভালো কাজ করে অ্যালোভেরা জেল। এটি যেমন ত্বক আর্দ্র করে, তেমনি সার্বিক সুস্থতায়ও কাজে দেয়। দোকানে থাকা জেলে অনেক...
৮ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য থাইল্যান্ড। নিয়মিত যাঁরা ভ্রমণ করেন, তাঁদের অনেকে দেশটিতে একাধিকবার গেছেন। এর অন্যতম কারণ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ। পর্যটকদের জন্য সব ধরনের আয়োজন রয়েছে দেশটিতে। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির সরকারের এক সিদ্ধান্ত পর্যটকদের কপালে ভাঁজ এনে দিয়েছে।
৮ নভেম্বর থেকে থাইল্যান্ডে দিনের বেলা নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অ্যালকোহল পান গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে থাইল্যান্ডে। এই অপরাধ করলে প্রায় ৩০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী শুধু বিক্রেতা নয়, গ্রাহকেরাও এই জরিমানার আওতায় আসবেন।
নতুন নিয়ম
বিক্রির অনুমোদিত সময়ের বাইরে রেস্টুরেন্ট বা বিনোদনের স্থানে বসে অ্যালকোহল পান করা নিষেধ। ধরা পড়লে এই জরিমানা প্রযোজ্য হবে। অ্যালকোহল কেনার অনুমোদিত সময় হলো—
পর্যটন খাতের উদ্বেগ
নতুন নিয়মটি ঘোষণার পর থাইল্যান্ডের পর্যটন ও বিনোদন খাতের উদ্যোক্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তাঁরা বলছেন, নিয়মটি করোনা-পরবর্তী পর্যটন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এক রেস্টুরেন্টের মালিক জানান, নতুন নিয়ম অনুযায়ী অনুমোদিত সময়ের বাইরে গ্রাহকেরা অ্যালকোহলের দোকানে বসে থাকলেও তাঁর জরিমানা হতে পারে। অর্থাৎ, বেলা ১১টা থেকে ২টা কিংবা বিকেল ৫টা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে মদ কেনা বৈধ হলেও যদি গ্রাহক সেই সময়ের বাইরে দোকানে মদ পান না করে বসে থাকলেও জরিমানা গুনতে হবে। রেস্টুরেন্ট মালিক ও পর্যটন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি পর্যটকদের জন্য অযৌক্তিক ও বিরক্তিকর। এমন নিয়ম পর্যটকেরা পছন্দ না-ও করতে পারেন। পর্যটন বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, শীতকালীন ছুটির মৌসুমে নতুন নিয়মের কারণে পর্যটক কমে যেতে পারে। পর্যটনশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
নতুন আইনটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক মাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেক বিদেশি সংবাদপত্র পর্যটকদের সতর্ক করেছে, যাতে তাঁরা থাইল্যান্ডে ভ্রমণের সময় নতুন নিয়ম সম্পর্কে সচেতন থাকেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পর্যটকেরা এই নিয়মকে অযৌক্তিক এবং পর্যটকবিরোধী বলে সমালোচনা করেছেন। তাঁরা লিখেছেন, এমন কঠোর নিয়মের কারণে পর্যটকেরা স্বচ্ছন্দে ঘুরতে পারবেন না এবং তাঁদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা খারাপ হতে পারে। এমনকি কিছু বিদেশি পর্যটক সরাসরি বলেছেন, তাঁরা এবার থাইল্যান্ডে যাবেন না। এর পরিবর্তে পাশের দেশগুলোতে ছুটি কাটাবেন, যেখানে অ্যালকোহলের বিধিনিষেধ তুলনামূলক কম এবং পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক। এই প্রতিক্রিয়াগুলো দেখে বোঝা যায়, নতুন আইনটি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের মধ্যে উদ্বেগ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এটি দীর্ঘ মেয়াদে থাইল্যান্ডের পর্যটনশিল্পকে প্রভাবিত করতে পারে।

সরকারের পদক্ষেপ
এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল নির্দেশ দিয়েছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন নিয়মে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে অঞ্চলভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা তুলে ফেলা, যাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অ্যালকোহল পানের সময় এক রকম হয়। এর সঙ্গে পরিবেশনের অনুমোদিত সময় রাত ৪টা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা। এ ছাড়া সরকার চাইছে, আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া জানুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে সম্পন্ন করা হোক। সরকার আশা করছে, অ্যালকোহল বিক্রির সময় বাড়ানো হলে পর্যটক বৃদ্ধি পাবে। রাতের সময়টা আরও জমজমাট হবে এবং এটি রাজস্ব বাড়াতে সাহায্য করবে।
পূর্ববর্তী বিধিনিষেধ
২০২৩ সালে ব্যাংকক, ফুকেট, চোনবুরি, চিয়াং মাই ও কো সমুই অঞ্চলের বিনোদনকেন্দ্রে রাত ৪টা পর্যন্ত অ্যালকোহল বিক্রির অনুমতি ছিল। তবে নিবন্ধন ও নিয়ম মানার প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী সমস্যায় পড়তেন।
মালিক ও পর্যটকের মন্তব্য
এক পর্যটন কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, নিয়মটি ঠিকমতো না সাজালে পর্যটকেরা আতঙ্কিত হতে পারে। পর্যটনশিল্প এখনো পুনরুদ্ধারের সময়ে রয়েছে। নতুন আইন যদি শিথিল না হয়, তাহলে শীতকালীন পর্যটন মৌসুম ক্ষতির মুখে পড়বে।
এক রেস্টুরেন্ট মালিক আরও জানান, এমন কঠোর নিয়ম পর্যটকদের আগ্রহ কমাবে। সাধারণ পর্যটকেরা থাইল্যান্ড ভ্রমণে আগ্রহ হারাবেন। এটি সরাসরি পর্যটনশিল্পে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য থাইল্যান্ড। নিয়মিত যাঁরা ভ্রমণ করেন, তাঁদের অনেকে দেশটিতে একাধিকবার গেছেন। এর অন্যতম কারণ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ। পর্যটকদের জন্য সব ধরনের আয়োজন রয়েছে দেশটিতে। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির সরকারের এক সিদ্ধান্ত পর্যটকদের কপালে ভাঁজ এনে দিয়েছে।
৮ নভেম্বর থেকে থাইল্যান্ডে দিনের বেলা নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অ্যালকোহল পান গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে থাইল্যান্ডে। এই অপরাধ করলে প্রায় ৩০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী শুধু বিক্রেতা নয়, গ্রাহকেরাও এই জরিমানার আওতায় আসবেন।
নতুন নিয়ম
বিক্রির অনুমোদিত সময়ের বাইরে রেস্টুরেন্ট বা বিনোদনের স্থানে বসে অ্যালকোহল পান করা নিষেধ। ধরা পড়লে এই জরিমানা প্রযোজ্য হবে। অ্যালকোহল কেনার অনুমোদিত সময় হলো—
পর্যটন খাতের উদ্বেগ
নতুন নিয়মটি ঘোষণার পর থাইল্যান্ডের পর্যটন ও বিনোদন খাতের উদ্যোক্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তাঁরা বলছেন, নিয়মটি করোনা-পরবর্তী পর্যটন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এক রেস্টুরেন্টের মালিক জানান, নতুন নিয়ম অনুযায়ী অনুমোদিত সময়ের বাইরে গ্রাহকেরা অ্যালকোহলের দোকানে বসে থাকলেও তাঁর জরিমানা হতে পারে। অর্থাৎ, বেলা ১১টা থেকে ২টা কিংবা বিকেল ৫টা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে মদ কেনা বৈধ হলেও যদি গ্রাহক সেই সময়ের বাইরে দোকানে মদ পান না করে বসে থাকলেও জরিমানা গুনতে হবে। রেস্টুরেন্ট মালিক ও পর্যটন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি পর্যটকদের জন্য অযৌক্তিক ও বিরক্তিকর। এমন নিয়ম পর্যটকেরা পছন্দ না-ও করতে পারেন। পর্যটন বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, শীতকালীন ছুটির মৌসুমে নতুন নিয়মের কারণে পর্যটক কমে যেতে পারে। পর্যটনশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
নতুন আইনটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক মাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেক বিদেশি সংবাদপত্র পর্যটকদের সতর্ক করেছে, যাতে তাঁরা থাইল্যান্ডে ভ্রমণের সময় নতুন নিয়ম সম্পর্কে সচেতন থাকেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পর্যটকেরা এই নিয়মকে অযৌক্তিক এবং পর্যটকবিরোধী বলে সমালোচনা করেছেন। তাঁরা লিখেছেন, এমন কঠোর নিয়মের কারণে পর্যটকেরা স্বচ্ছন্দে ঘুরতে পারবেন না এবং তাঁদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা খারাপ হতে পারে। এমনকি কিছু বিদেশি পর্যটক সরাসরি বলেছেন, তাঁরা এবার থাইল্যান্ডে যাবেন না। এর পরিবর্তে পাশের দেশগুলোতে ছুটি কাটাবেন, যেখানে অ্যালকোহলের বিধিনিষেধ তুলনামূলক কম এবং পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক। এই প্রতিক্রিয়াগুলো দেখে বোঝা যায়, নতুন আইনটি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের মধ্যে উদ্বেগ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এটি দীর্ঘ মেয়াদে থাইল্যান্ডের পর্যটনশিল্পকে প্রভাবিত করতে পারে।

সরকারের পদক্ষেপ
এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল নির্দেশ দিয়েছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন নিয়মে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে অঞ্চলভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা তুলে ফেলা, যাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অ্যালকোহল পানের সময় এক রকম হয়। এর সঙ্গে পরিবেশনের অনুমোদিত সময় রাত ৪টা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা। এ ছাড়া সরকার চাইছে, আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া জানুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে সম্পন্ন করা হোক। সরকার আশা করছে, অ্যালকোহল বিক্রির সময় বাড়ানো হলে পর্যটক বৃদ্ধি পাবে। রাতের সময়টা আরও জমজমাট হবে এবং এটি রাজস্ব বাড়াতে সাহায্য করবে।
পূর্ববর্তী বিধিনিষেধ
২০২৩ সালে ব্যাংকক, ফুকেট, চোনবুরি, চিয়াং মাই ও কো সমুই অঞ্চলের বিনোদনকেন্দ্রে রাত ৪টা পর্যন্ত অ্যালকোহল বিক্রির অনুমতি ছিল। তবে নিবন্ধন ও নিয়ম মানার প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী সমস্যায় পড়তেন।
মালিক ও পর্যটকের মন্তব্য
এক পর্যটন কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, নিয়মটি ঠিকমতো না সাজালে পর্যটকেরা আতঙ্কিত হতে পারে। পর্যটনশিল্প এখনো পুনরুদ্ধারের সময়ে রয়েছে। নতুন আইন যদি শিথিল না হয়, তাহলে শীতকালীন পর্যটন মৌসুম ক্ষতির মুখে পড়বে।
এক রেস্টুরেন্ট মালিক আরও জানান, এমন কঠোর নিয়ম পর্যটকদের আগ্রহ কমাবে। সাধারণ পর্যটকেরা থাইল্যান্ড ভ্রমণে আগ্রহ হারাবেন। এটি সরাসরি পর্যটনশিল্পে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১ হাজার বছর সময়কে মধ্যযুগ ধরা হয়। সেটা ছিল সাংস্কৃতিক বিবর্তন ও ধর্মীয় ক্ষমতা চর্চার সুবর্ণ সময়। বিশ্বজুড়ে তখন জনসংখ্যা বেড়ে চলছে, গড়ে উঠছে নতুন নতুন শহর। ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যাই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শাসক শ্রেণির জন্য উপকারী ক্ষমতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
২৫ মে ২০২৪
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি তুলে ধরার এই যুগে, প্রেম বা দাম্পত্য সম্পর্ককে প্রকাশ্যে আনা বা ‘হার্ড-লঞ্চ’ করার ক্ষেত্রে দ্বিধা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণী ও নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা অনেক বেশি। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই প্রবণতা এখন এতটাই প্রবল যে, ব্রিটিশ ভোগ ম্যাগাজিনও প্রশ্ন তুলেছে,
২ ঘণ্টা আগে
ফরসা রঙের মানুষদের একসময় সুন্দর বলা হতো; কিন্তু সৌন্দর্যের সেই ধারণা বর্তমানে বদলে গেছে। এখন সুন্দর বলতে বোঝায় দেহের সুন্দর গড়নকে। সেটিকে আমরা সুস্থতা না ধরে, ধরে নিয়েছি একটা নির্দিষ্ট মাপে, তা হলো ৩৬-২৪-৩৬। এটা যেন সব নারীর আরাধ্য ফিগার।
৮ ঘণ্টা আগে
শীত এলেই ত্বক টানটান লাগে। এ ছাড়া নাকের পাশ শুকিয়ে যায়, ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়, চুলেও রুক্ষ ভাব বাড়ে। আবহাওয়ার কারণে শরীরের আর্দ্রতা কমে যায় বলে এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এই মৌসুমে খুব ভালো কাজ করে অ্যালোভেরা জেল। এটি যেমন ত্বক আর্দ্র করে, তেমনি সার্বিক সুস্থতায়ও কাজে দেয়। দোকানে থাকা জেলে অনেক...
৮ ঘণ্টা আগেনাহিদা আহমেদ

ফরসা রঙের মানুষদের একসময় সুন্দর বলা হতো; কিন্তু সৌন্দর্যের সেই ধারণা বর্তমানে বদলে গেছে। এখন সুন্দর বলতে বোঝায় দেহের সুন্দর গড়নকে। সেটিকে আমরা সুস্থতা না ধরে, ধরে নিয়েছি একটা নির্দিষ্ট মাপে, তা হলো ৩৬-২৪-৩৬। এটা যেন সব নারীর আরাধ্য ফিগার। কিন্তু ফিগার বাগে আনতে কিংবা বাড়তি ওজন কমানোর দৌড়ে আমরা কত দূর যাচ্ছি, কীভাবে যাচ্ছি, আর এর ফলটাই-বা কী?
সম্প্রতি এক ইনফ্লুয়েন্সার ও মেকআপ আর্টিস্টের মৃত্যুর ঘটনায় হয়তো এসব প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে। মাত্র ৬ মাসে ১২২ কেজি থেকে ৪২ কেজি ওজন কমিয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অস্বাস্থ্যকর ওম্যাড ডায়েট কিংবা ওয়ান মিল আ ডে ডায়েটের ফলে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে তাঁকে হার মানতে হয়। অতিরিক্ত ওজন হওয়ার কারণে তিনি নানাভাবে বডিশেমিংয়ের শিকার হয়েছিলেন বলে বিভিন্ন সংবাদে উঠে এসেছে।
ওজন কমানোর ডায়েটে রয়েছে যে ধরনের ঝুঁকি
তিনি ওজন কমানোর জন্য বেছে নিয়েছিলেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ‘ট্রেন্ড ওম্যাড ডায়েট’। ইংরেজিতে যাকে বলে ওএমএডি (ওম্যাড) বা ওয়ান মিল আ ডে। ওম্যাড ডায়েট হলো, দিনে ২৩ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে নির্দিষ্ট সময়ে ১ ঘণ্টার মধ্যে সারা দিনের দরকারি খাবার খাওয়া। এই কঠিন ডায়েটের কারণে শরীরে ক্যালরির ঘাটতি হয়, ফলে দ্রুত ওজন কমে।
তবে এ পর্যন্ত যা জানা গেছে, তা হলো তিনি অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য নিজেই ওম্যাড ডায়েট শুরু করেছিলেন। এতে অনেকটা ওজন তাঁর কমেছিল ঠিকই; কিন্তু পরবর্তী সময়ে নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। এরপর হাসপাতালে তিনি ভর্তি হন; কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।
ওম্যাড ডায়েটের ফলে বিপাকক্রিয়ার হার এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। তা ছাড়া ডায়েটের ফলে দেহে ভিটামিনের ঘাটতি হয়। ফলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে যায়। চুল পড়ে যাওয়া বা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যাও দেখা যায়। পাশাপাশি শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস বা হৃদ্রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। সারা দিন না খেয়ে একসঙ্গে অনেক খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে বা কমে যেতে পারে, যা কখনো কখনো মারাত্মক জটিলতা কিংবা মৃত্যুঝুঁকি সৃষ্টি করে।

সৌন্দর্যের জন্য ওজন কমাতে যা জেনে রাখা জরুরি
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, দেহের চাহিদামতো সঠিক খাদ্যতালিকা মেনে চলা। তখন ওজন কমানোর জন্য কোনো একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। পুষ্টিবিদ রক্তে শর্করার মাত্রা, কোলেস্টেরলের মাত্রা, লিভার ও কিডনির সুস্থতা, রক্তচাপের গতি, হরমোন অসমতা ইত্যাদি বিবেচনা করে বডি মাস ইনডেক্স কত হওয়া উচিত, তা জানিয়ে খাদ্যতালিকা তৈরি করে দেবেন। প্রত্যেক মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্ট যেমন আলাদা, তেমনি তাঁদের মেটাবলিজম বডি টাইপও আলাদা। তাই যেকোনো ধরনের খাদ্যে পরিবর্তন আনতে হলে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া বা বিভিন্ন অ্যাপস দেখে ডায়েট করলে আপনি উপকৃত হবেন, তা কিন্তু নয়। সাময়িক ফল পেলেও দীর্ঘ মেয়াদে শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি পরবর্তী সময়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ডায়েট করার উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত
ডায়েটের উদ্দেশ্য হলো শরীর সুস্থ রাখা। না খেয়ে কিংবা ভুল খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার মাধ্যমে কখনোই সেটা হতে পারে না। তবে সমস্যা হলো, শুধু অনলাইন ডায়েট প্ল্যান কিংবা ইউটিউব দেখে যোগব্যায়াম করার মাধ্যমে সুস্থতা অর্জন করা সম্ভব নয়। ওয়েলনেস ইনফ্লুয়েন্সারদের ভিডিও দেখে সেই লাইফস্টাইল নিজের করে নেওয়ার মধ্যেও বিশাল সমস্যা রয়েছে। এতেও পরবর্তী সময়ে ভয়াবহ স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি যেতে পারে।
আবার ভুল খাবার বেছে নিচ্ছেন না তো
বাজারে এখন নানা ধরনের স্লিমিং টি বা জুস পাওয়া যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, এক মাসে ৭ থেকে ৯ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব হবে সেসব জুস পান করলে; বিশেষ করে নারীরা এসব স্লিমিং টি ও জুস পানে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কিন্তু এসবে গা ভাসিয়ে সুস্থতা ও সৌন্দর্য কোনোভাবেই পাওয়া যায় না। নিজের শরীর বুঝতে হবে। আপনার শরীর কী চায়, তা নানা পরীক্ষার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন।
লাল ও নীল বেরি জাতীয় ফল দিয়ে সাজানো ওট মিল, দামি কিনোয়া, অ্যাভোকাডো আর রঙিন সালাদসহ নামীদামি নানা খাবার রিলস কিংবা ভিডিওতে দেখতে সুন্দর লাগে। তবে আমাদের দেশে এগুলোর দাম আকাশছোঁয়া। তবে স্বীকার করতে হবে, এ ধরনের খাবার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত বাঙালি রান্নাঘরের জন্য খুবই বেমানান। আবার আবহাওয়া ও জলবায়ুর সঙ্গে এসব খাবার শরীরে কতটা উপযোগী, সেটাও প্রশ্ন।
তাই সোশ্যাল মিডিয়া দেখে ডায়েট করাটা ভীষণ বোকামি। ডায়েট যদি করতেই হয়, তাহলে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে দেশীয় সহজপ্রাপ্য ঘরের সাধারণ খাবার দিয়ে তালিকা বানিয়ে সেটা মেনে চলুন। ডায়েটকে এত কঠিন ও ব্যয়বহুল করার মানে নেই।
লেখক: পুষ্টিবিদ, ফরাজি হাসপাতাল, বারিধারা

ফরসা রঙের মানুষদের একসময় সুন্দর বলা হতো; কিন্তু সৌন্দর্যের সেই ধারণা বর্তমানে বদলে গেছে। এখন সুন্দর বলতে বোঝায় দেহের সুন্দর গড়নকে। সেটিকে আমরা সুস্থতা না ধরে, ধরে নিয়েছি একটা নির্দিষ্ট মাপে, তা হলো ৩৬-২৪-৩৬। এটা যেন সব নারীর আরাধ্য ফিগার। কিন্তু ফিগার বাগে আনতে কিংবা বাড়তি ওজন কমানোর দৌড়ে আমরা কত দূর যাচ্ছি, কীভাবে যাচ্ছি, আর এর ফলটাই-বা কী?
সম্প্রতি এক ইনফ্লুয়েন্সার ও মেকআপ আর্টিস্টের মৃত্যুর ঘটনায় হয়তো এসব প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে। মাত্র ৬ মাসে ১২২ কেজি থেকে ৪২ কেজি ওজন কমিয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অস্বাস্থ্যকর ওম্যাড ডায়েট কিংবা ওয়ান মিল আ ডে ডায়েটের ফলে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে তাঁকে হার মানতে হয়। অতিরিক্ত ওজন হওয়ার কারণে তিনি নানাভাবে বডিশেমিংয়ের শিকার হয়েছিলেন বলে বিভিন্ন সংবাদে উঠে এসেছে।
ওজন কমানোর ডায়েটে রয়েছে যে ধরনের ঝুঁকি
তিনি ওজন কমানোর জন্য বেছে নিয়েছিলেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ‘ট্রেন্ড ওম্যাড ডায়েট’। ইংরেজিতে যাকে বলে ওএমএডি (ওম্যাড) বা ওয়ান মিল আ ডে। ওম্যাড ডায়েট হলো, দিনে ২৩ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে নির্দিষ্ট সময়ে ১ ঘণ্টার মধ্যে সারা দিনের দরকারি খাবার খাওয়া। এই কঠিন ডায়েটের কারণে শরীরে ক্যালরির ঘাটতি হয়, ফলে দ্রুত ওজন কমে।
তবে এ পর্যন্ত যা জানা গেছে, তা হলো তিনি অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য নিজেই ওম্যাড ডায়েট শুরু করেছিলেন। এতে অনেকটা ওজন তাঁর কমেছিল ঠিকই; কিন্তু পরবর্তী সময়ে নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। এরপর হাসপাতালে তিনি ভর্তি হন; কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।
ওম্যাড ডায়েটের ফলে বিপাকক্রিয়ার হার এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। তা ছাড়া ডায়েটের ফলে দেহে ভিটামিনের ঘাটতি হয়। ফলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে যায়। চুল পড়ে যাওয়া বা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যাও দেখা যায়। পাশাপাশি শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস বা হৃদ্রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। সারা দিন না খেয়ে একসঙ্গে অনেক খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে বা কমে যেতে পারে, যা কখনো কখনো মারাত্মক জটিলতা কিংবা মৃত্যুঝুঁকি সৃষ্টি করে।

সৌন্দর্যের জন্য ওজন কমাতে যা জেনে রাখা জরুরি
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, দেহের চাহিদামতো সঠিক খাদ্যতালিকা মেনে চলা। তখন ওজন কমানোর জন্য কোনো একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। পুষ্টিবিদ রক্তে শর্করার মাত্রা, কোলেস্টেরলের মাত্রা, লিভার ও কিডনির সুস্থতা, রক্তচাপের গতি, হরমোন অসমতা ইত্যাদি বিবেচনা করে বডি মাস ইনডেক্স কত হওয়া উচিত, তা জানিয়ে খাদ্যতালিকা তৈরি করে দেবেন। প্রত্যেক মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্ট যেমন আলাদা, তেমনি তাঁদের মেটাবলিজম বডি টাইপও আলাদা। তাই যেকোনো ধরনের খাদ্যে পরিবর্তন আনতে হলে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া বা বিভিন্ন অ্যাপস দেখে ডায়েট করলে আপনি উপকৃত হবেন, তা কিন্তু নয়। সাময়িক ফল পেলেও দীর্ঘ মেয়াদে শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি পরবর্তী সময়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ডায়েট করার উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত
ডায়েটের উদ্দেশ্য হলো শরীর সুস্থ রাখা। না খেয়ে কিংবা ভুল খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার মাধ্যমে কখনোই সেটা হতে পারে না। তবে সমস্যা হলো, শুধু অনলাইন ডায়েট প্ল্যান কিংবা ইউটিউব দেখে যোগব্যায়াম করার মাধ্যমে সুস্থতা অর্জন করা সম্ভব নয়। ওয়েলনেস ইনফ্লুয়েন্সারদের ভিডিও দেখে সেই লাইফস্টাইল নিজের করে নেওয়ার মধ্যেও বিশাল সমস্যা রয়েছে। এতেও পরবর্তী সময়ে ভয়াবহ স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি যেতে পারে।
আবার ভুল খাবার বেছে নিচ্ছেন না তো
বাজারে এখন নানা ধরনের স্লিমিং টি বা জুস পাওয়া যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, এক মাসে ৭ থেকে ৯ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব হবে সেসব জুস পান করলে; বিশেষ করে নারীরা এসব স্লিমিং টি ও জুস পানে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কিন্তু এসবে গা ভাসিয়ে সুস্থতা ও সৌন্দর্য কোনোভাবেই পাওয়া যায় না। নিজের শরীর বুঝতে হবে। আপনার শরীর কী চায়, তা নানা পরীক্ষার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন।
লাল ও নীল বেরি জাতীয় ফল দিয়ে সাজানো ওট মিল, দামি কিনোয়া, অ্যাভোকাডো আর রঙিন সালাদসহ নামীদামি নানা খাবার রিলস কিংবা ভিডিওতে দেখতে সুন্দর লাগে। তবে আমাদের দেশে এগুলোর দাম আকাশছোঁয়া। তবে স্বীকার করতে হবে, এ ধরনের খাবার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত বাঙালি রান্নাঘরের জন্য খুবই বেমানান। আবার আবহাওয়া ও জলবায়ুর সঙ্গে এসব খাবার শরীরে কতটা উপযোগী, সেটাও প্রশ্ন।
তাই সোশ্যাল মিডিয়া দেখে ডায়েট করাটা ভীষণ বোকামি। ডায়েট যদি করতেই হয়, তাহলে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে দেশীয় সহজপ্রাপ্য ঘরের সাধারণ খাবার দিয়ে তালিকা বানিয়ে সেটা মেনে চলুন। ডায়েটকে এত কঠিন ও ব্যয়বহুল করার মানে নেই।
লেখক: পুষ্টিবিদ, ফরাজি হাসপাতাল, বারিধারা

পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১ হাজার বছর সময়কে মধ্যযুগ ধরা হয়। সেটা ছিল সাংস্কৃতিক বিবর্তন ও ধর্মীয় ক্ষমতা চর্চার সুবর্ণ সময়। বিশ্বজুড়ে তখন জনসংখ্যা বেড়ে চলছে, গড়ে উঠছে নতুন নতুন শহর। ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যাই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শাসক শ্রেণির জন্য উপকারী ক্ষমতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
২৫ মে ২০২৪
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি তুলে ধরার এই যুগে, প্রেম বা দাম্পত্য সম্পর্ককে প্রকাশ্যে আনা বা ‘হার্ড-লঞ্চ’ করার ক্ষেত্রে দ্বিধা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণী ও নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা অনেক বেশি। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই প্রবণতা এখন এতটাই প্রবল যে, ব্রিটিশ ভোগ ম্যাগাজিনও প্রশ্ন তুলেছে,
২ ঘণ্টা আগে
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য থাইল্যান্ড। নিয়মিত যাঁরা ভ্রমণ করেন, তাঁদের অনেকে দেশটিতে একাধিকবার গেছেন। এর অন্যতম কারণ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ। পর্যটকদের জন্য সব ধরনের আয়োজন রয়েছে দেশটিতে। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির সরকারের এক সিদ্ধান্ত পর্যটকদের কপালে ভাঁজ এনে দিয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগে
শীত এলেই ত্বক টানটান লাগে। এ ছাড়া নাকের পাশ শুকিয়ে যায়, ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়, চুলেও রুক্ষ ভাব বাড়ে। আবহাওয়ার কারণে শরীরের আর্দ্রতা কমে যায় বলে এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এই মৌসুমে খুব ভালো কাজ করে অ্যালোভেরা জেল। এটি যেমন ত্বক আর্দ্র করে, তেমনি সার্বিক সুস্থতায়ও কাজে দেয়। দোকানে থাকা জেলে অনেক...
৮ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

শীত এলেই ত্বক টানটান লাগে। এ ছাড়া নাকের পাশ শুকিয়ে যায়, ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়, চুলেও রুক্ষ ভাব বাড়ে। আবহাওয়ার কারণে শরীরের আর্দ্রতা কমে যায় বলে এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এই মৌসুমে খুব ভালো কাজ করে অ্যালোভেরা জেল। এটি যেমন ত্বক আর্দ্র করে, তেমনি সার্বিক সুস্থতায়ও কাজে দেয়। দোকানে থাকা জেলে অনেক সময় সুগন্ধি আর রাসায়নিক মেশানো থাকে। কিন্তু ঘরে বানালে জেল হয় একদম তাজা ও প্রাকৃতিক।
ঘরে অ্যালোভেরা জেল বানানোর ধাপ
সঠিক পাতা বেছে নিন
ভালো ফল পেতে মোটা, সবুজ ও পরিপক্ব অ্যালোভেরা পাতা নিন। পরিপক্ব পাতায় জেলের পরিমাণ বেশি থাকে এবং এর উপকারিতাও বেশি।
হলদে তরল বের হতে দিন
পাতা কাটলেই হলুদ রঙের আঠালো তরল বের হয়। এটিকে ল্যাটেক্স বলা হয়, যা অনেকের ত্বকে জ্বালাপোড়া বা অ্যালার্জি তৈরি করতে পারে। তাই পাতা নিচের দিকে ঝুলিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট রেখে দিন। হলদে অংশ গলে বের হয়ে গেলে পাতাটি পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিন।
পাতার খোসা ছাড়ান
পাতা ধোয়ার পর সেটি লম্বা করে মাঝ বরাবর রাখুন। দুই পাশে তীক্ষ্ণ কাঁটার মতো অংশ থাকে। সেগুলো প্রথমে ছুরি দিয়ে পাতলা করে কেটে ফেলে দিন। এবার পাতার এক পাশের শক্ত সবুজ খোসাটা ছুরি বা ভেজিটেবল পিলার দিয়ে তুলে ফেলুন। খোসা উঠতেই ভেতরের স্বচ্ছ, নরম জেল দেখা যাবে। চামচ দিয়ে জেল তুলে নিন।
জেল ব্লেন্ড করুন
জেল ব্লেন্ডারে দিন এবং ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড ব্লেন্ড করুন। এতে জেলটি খুবই নরম ও মসৃণ হবে, যা ত্বক ও চুলে ব্যবহার করতে পারবেন।

সংরক্ষণ করুন
এয়ারটাইট বয়ামে জেল ঢেলে নিন। ফ্রিজে রাখলে এটি এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে।
সংরক্ষণ করতে প্রিজারভেটিভ যোগ করুন
জেল যদি ১ থেকে ২ মাস ধরে ব্যবহার করতে চান, তাহলে ভিটামিন সি বা ভিটামিন ই মিশিয়ে নিন। প্রতি ১ কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ জেলে ৫০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি অথবা ৪০০ আইইউ ভিটামিন ই পাউডার যোগ করুন।
অ্যালোভেরার ৭টি প্রধান উপকারিতা
শুষ্ক ত্বক আর্দ্র রাখে
শীতে ত্বক দ্রুত আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। অ্যালোভেরা জেলের ৯৮ শতাংশই পানি, ফলে এটি ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এই জেল ব্যবহার করলে ত্বক নরম হয়।
রুক্ষ ও ফাটল ধরা ত্বক শান্ত করে
শীতে হাত-পা ফেটে যাওয়া খুব সাধারণ ঘটনা। অ্যালোভেরা জ্বালাপোড়া কমায় এবং দ্রুত ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে।
ব্রণ ও দাগ কমাতে সহায়ক
অ্যালোভেরার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যবহার করলে ব্রণের লাল ও ফোলা ভাব এবং দাগ কমে। তেলতেলে ত্বকের জন্য এটি আদর্শ প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার।
চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনে
শীতের বাতাসে চুল শুকনো হয়ে যায়। অ্যালোভেরা মাথার ত্বকে আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেয়, খুশকি কমায়, চুলের গোড়া শক্ত করে। আমলা, পেঁয়াজের রস বা নারকেল তেলের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক বানিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুল নরম হয় এবং ঝলমলে দেখায়।
ঠোঁট, কনুই, গোড়ালির রুক্ষতা দূর করে
যে জায়গাগুলো বেশি শুকায়; যেমন ঠোঁট, কনুই, গোড়ালি—এসব জায়গায় অ্যালোভেরা খুব ভালো কাজে দেয়। রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করলে পরদিন সকালে ভালো ফল মিলবে।
মুখের স্বাস্থ্যে উপকার
অ্যালোভেরার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ দাঁতের প্লাক কমাতে সাহায্য করে। মুখের ভেতরের জ্বালাপোড়াও কমাতে পারে।
হজমে উপকার
অ্যালোভেরা জুস অনেকের ক্ষেত্রে অম্বল, গ্যাস্ট্রিক কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণা বলছে, আইবিএসের মতো সমস্যা থাকলেও অ্যালোভেরা সাময়িক আরাম দিতে পারে। তবে হজমের জন্য নিয়মিত খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
ব্যবহারের আগে কিছু সতর্কতা
প্রথমবার ব্যবহার করার আগে শরীরের ছোট কোনো জায়গায় পরীক্ষা করে নিন।
গর্ভবতী হলে বা দীর্ঘমেয়াদি অসুখ থাকলে এটি ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
জেল সব সময় ফ্রিজে রাখুন।
খুব সংবেদনশীল ত্বকে হলে ভিটামিন ই একটু কম ব্যবহার করুন।
সূত্র: হেলথশট

শীত এলেই ত্বক টানটান লাগে। এ ছাড়া নাকের পাশ শুকিয়ে যায়, ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়, চুলেও রুক্ষ ভাব বাড়ে। আবহাওয়ার কারণে শরীরের আর্দ্রতা কমে যায় বলে এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এই মৌসুমে খুব ভালো কাজ করে অ্যালোভেরা জেল। এটি যেমন ত্বক আর্দ্র করে, তেমনি সার্বিক সুস্থতায়ও কাজে দেয়। দোকানে থাকা জেলে অনেক সময় সুগন্ধি আর রাসায়নিক মেশানো থাকে। কিন্তু ঘরে বানালে জেল হয় একদম তাজা ও প্রাকৃতিক।
ঘরে অ্যালোভেরা জেল বানানোর ধাপ
সঠিক পাতা বেছে নিন
ভালো ফল পেতে মোটা, সবুজ ও পরিপক্ব অ্যালোভেরা পাতা নিন। পরিপক্ব পাতায় জেলের পরিমাণ বেশি থাকে এবং এর উপকারিতাও বেশি।
হলদে তরল বের হতে দিন
পাতা কাটলেই হলুদ রঙের আঠালো তরল বের হয়। এটিকে ল্যাটেক্স বলা হয়, যা অনেকের ত্বকে জ্বালাপোড়া বা অ্যালার্জি তৈরি করতে পারে। তাই পাতা নিচের দিকে ঝুলিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট রেখে দিন। হলদে অংশ গলে বের হয়ে গেলে পাতাটি পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিন।
পাতার খোসা ছাড়ান
পাতা ধোয়ার পর সেটি লম্বা করে মাঝ বরাবর রাখুন। দুই পাশে তীক্ষ্ণ কাঁটার মতো অংশ থাকে। সেগুলো প্রথমে ছুরি দিয়ে পাতলা করে কেটে ফেলে দিন। এবার পাতার এক পাশের শক্ত সবুজ খোসাটা ছুরি বা ভেজিটেবল পিলার দিয়ে তুলে ফেলুন। খোসা উঠতেই ভেতরের স্বচ্ছ, নরম জেল দেখা যাবে। চামচ দিয়ে জেল তুলে নিন।
জেল ব্লেন্ড করুন
জেল ব্লেন্ডারে দিন এবং ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড ব্লেন্ড করুন। এতে জেলটি খুবই নরম ও মসৃণ হবে, যা ত্বক ও চুলে ব্যবহার করতে পারবেন।

সংরক্ষণ করুন
এয়ারটাইট বয়ামে জেল ঢেলে নিন। ফ্রিজে রাখলে এটি এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে।
সংরক্ষণ করতে প্রিজারভেটিভ যোগ করুন
জেল যদি ১ থেকে ২ মাস ধরে ব্যবহার করতে চান, তাহলে ভিটামিন সি বা ভিটামিন ই মিশিয়ে নিন। প্রতি ১ কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ জেলে ৫০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি অথবা ৪০০ আইইউ ভিটামিন ই পাউডার যোগ করুন।
অ্যালোভেরার ৭টি প্রধান উপকারিতা
শুষ্ক ত্বক আর্দ্র রাখে
শীতে ত্বক দ্রুত আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। অ্যালোভেরা জেলের ৯৮ শতাংশই পানি, ফলে এটি ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এই জেল ব্যবহার করলে ত্বক নরম হয়।
রুক্ষ ও ফাটল ধরা ত্বক শান্ত করে
শীতে হাত-পা ফেটে যাওয়া খুব সাধারণ ঘটনা। অ্যালোভেরা জ্বালাপোড়া কমায় এবং দ্রুত ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে।
ব্রণ ও দাগ কমাতে সহায়ক
অ্যালোভেরার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যবহার করলে ব্রণের লাল ও ফোলা ভাব এবং দাগ কমে। তেলতেলে ত্বকের জন্য এটি আদর্শ প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার।
চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনে
শীতের বাতাসে চুল শুকনো হয়ে যায়। অ্যালোভেরা মাথার ত্বকে আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেয়, খুশকি কমায়, চুলের গোড়া শক্ত করে। আমলা, পেঁয়াজের রস বা নারকেল তেলের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক বানিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুল নরম হয় এবং ঝলমলে দেখায়।
ঠোঁট, কনুই, গোড়ালির রুক্ষতা দূর করে
যে জায়গাগুলো বেশি শুকায়; যেমন ঠোঁট, কনুই, গোড়ালি—এসব জায়গায় অ্যালোভেরা খুব ভালো কাজে দেয়। রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করলে পরদিন সকালে ভালো ফল মিলবে।
মুখের স্বাস্থ্যে উপকার
অ্যালোভেরার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ দাঁতের প্লাক কমাতে সাহায্য করে। মুখের ভেতরের জ্বালাপোড়াও কমাতে পারে।
হজমে উপকার
অ্যালোভেরা জুস অনেকের ক্ষেত্রে অম্বল, গ্যাস্ট্রিক কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণা বলছে, আইবিএসের মতো সমস্যা থাকলেও অ্যালোভেরা সাময়িক আরাম দিতে পারে। তবে হজমের জন্য নিয়মিত খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
ব্যবহারের আগে কিছু সতর্কতা
প্রথমবার ব্যবহার করার আগে শরীরের ছোট কোনো জায়গায় পরীক্ষা করে নিন।
গর্ভবতী হলে বা দীর্ঘমেয়াদি অসুখ থাকলে এটি ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
জেল সব সময় ফ্রিজে রাখুন।
খুব সংবেদনশীল ত্বকে হলে ভিটামিন ই একটু কম ব্যবহার করুন।
সূত্র: হেলথশট

পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১ হাজার বছর সময়কে মধ্যযুগ ধরা হয়। সেটা ছিল সাংস্কৃতিক বিবর্তন ও ধর্মীয় ক্ষমতা চর্চার সুবর্ণ সময়। বিশ্বজুড়ে তখন জনসংখ্যা বেড়ে চলছে, গড়ে উঠছে নতুন নতুন শহর। ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যাই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শাসক শ্রেণির জন্য উপকারী ক্ষমতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
২৫ মে ২০২৪
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি তুলে ধরার এই যুগে, প্রেম বা দাম্পত্য সম্পর্ককে প্রকাশ্যে আনা বা ‘হার্ড-লঞ্চ’ করার ক্ষেত্রে দ্বিধা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণী ও নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা অনেক বেশি। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই প্রবণতা এখন এতটাই প্রবল যে, ব্রিটিশ ভোগ ম্যাগাজিনও প্রশ্ন তুলেছে,
২ ঘণ্টা আগে
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য থাইল্যান্ড। নিয়মিত যাঁরা ভ্রমণ করেন, তাঁদের অনেকে দেশটিতে একাধিকবার গেছেন। এর অন্যতম কারণ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ। পর্যটকদের জন্য সব ধরনের আয়োজন রয়েছে দেশটিতে। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির সরকারের এক সিদ্ধান্ত পর্যটকদের কপালে ভাঁজ এনে দিয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগে
ফরসা রঙের মানুষদের একসময় সুন্দর বলা হতো; কিন্তু সৌন্দর্যের সেই ধারণা বর্তমানে বদলে গেছে। এখন সুন্দর বলতে বোঝায় দেহের সুন্দর গড়নকে। সেটিকে আমরা সুস্থতা না ধরে, ধরে নিয়েছি একটা নির্দিষ্ট মাপে, তা হলো ৩৬-২৪-৩৬। এটা যেন সব নারীর আরাধ্য ফিগার।
৮ ঘণ্টা আগে