Ajker Patrika

৯৭টি পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার ফি মওকুফ করছে নেপাল সরকার

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
নেপালের সুদূর পশ্চিম প্রদেশের মহাকালী খোলা পাহাড়। ছবি: উইকিপিডিয়া
নেপালের সুদূর পশ্চিম প্রদেশের মহাকালী খোলা পাহাড়। ছবি: উইকিপিডিয়া

যদি আপনি পাহাড়প্রেমী হন, নিশ্চয় এভারেস্টের নাম শুনলে আপনার চোখ জ্বলজ্বল করবে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখর হওয়ায় এটি বিশ্বের অভিযাত্রীদের জন্য এক অবিস্মরণীয় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এবার নেপাল সরকার সবার জন্য নতুন এক বার্তা দিয়েছে। দেশটির সরকার পর্বতারোহীদের সব সময় এভারেস্টের পেছনে না ছুটে তাদের অজানা পাহাড়গুলোও দেখার আহ্বান জানিয়েছে। সম্প্রতি নেপাল সরকার ঘোষণা করেছে, দেশের দূরবর্তী পশ্চিমাঞ্চলের ৯৭টি পাহাড়ে চূড়ায় ওঠার ফি আগামী দুই বছরের জন্য সম্পূর্ণ মওকুফ থাকবে।

পর্বতারোহীদের আকৃষ্ট করার উপায় হিসেবে এটি করেছে নেপাল সরকার। এসব অঞ্চলের পাহাড়ে অভিযান করার এই উৎসাহ দেওয়াটা খুব আশাব্যঞ্জক কিছু বয়ে আনবে বলে মনে হয় না। যে অঞ্চলের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো বেশ দূরে এবং দুর্গম। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে যোগাযোগের দিক থেকেও নাজুক অবস্থানে আছে ওই অঞ্চলের পর্বতগুলো। ফলে অভিযান করার যে সুযোগ-সুবিধা পর্বতারোহীরা আশা করে থাকে, ওই সব অঞ্চলে সেগুলো পাওয়া কষ্টকর হবে। আমার ব্যক্তিগত মত হলো, রসদ পৌঁছানো কিংবা অবকাঠামোগত সুবিধার ক্ষেত্রে বেগ পেতে হবে পর্বতারোহীদের। তবে পাহাড়ে অভিযানের অবকাঠামো তৈরি এবং সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো গেলে ভিন্ন কথা। বাবর আলী, বাংলাদেশি পর্বতারোহী

এই ৯৭টি পাহাড়ের মধ্যে ২০টি নেপালের একেবারে সুদূর পশ্চিম প্রদেশে এবং ৭৭টি কার্নালি প্রদেশে অবস্থিত। এই অঞ্চলগুলোকে নেপালের কম উন্নত ও দরিদ্র এলাকা হিসেবে ধরা হয়। এই পাহাড়গুলোর উচ্চতা ৫ হাজার ৯৭০ থেকে ৭ হাজার ১৩২ মিটার পর্যন্ত। অনেক অভিযাত্রী এই পাহাড়গুলোকে এভারেস্ট বা মানাসলুর মতো বিখ্যাত শিখরের সঙ্গে তুলনা করে এড়িয়ে যান। কিন্তু প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এই পাহাড়গুলোও কম চ্যালেঞ্জিং নয়। বরফে ঢাকা চূড়া, পাহাড়ি নদী, সবুজ বনাঞ্চল এবং নেপালের গ্রামীণ জীবন—সবকিছুই একসঙ্গে পাওয়া যায় এসব পাহাড়ে।

কেন এই উদ্যোগ

কর্নালি নদী, কর্নালি, নেপাল। ছবি: উইকিপিডিয়া
কর্নালি নদী, কর্নালি, নেপাল। ছবি: উইকিপিডিয়া

নেপালের সরকারের লক্ষ্য দুটি। প্রথমত, এভারেস্টের ওপর চাপ কমানো। প্রতিবছর হাজার হাজার অভিযাত্রী এভারেস্টে ওঠার চেষ্টা করেন। এতে ট্রাফিক জ্যাম হয়, নিরাপত্তাঝুঁকি বেড়ে যায় এবং পরিবেশদূষণ বাড়ে। দ্বিতীয়ত, দেশের দরিদ্র পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতি উন্নয়ন। এই অঞ্চলে পর্যটন বাড়লে হোটেল, হোমস্টে, গাইডিং, খাবারের ব্যবসা—সব ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এভারেস্ট অভিযাত্রা আরও নিরাপদ করতে সরকার এরই মধ্যে কিছু নতুন নিয়ম চালু করেছে। এগুলোর মধ্যে আছে সব অভিযাত্রীর ট্র্যাকিং ডিভাইস পরিধান বাধ্যতামূলক, ৮ হাজার মিটার উচ্চতার শিখরে সিঙ্গেল ক্লাইম্বার নিষিদ্ধ এবং শীর্ষ মৌসুমে ফি ১১ হাজার থেকে ১৫ হাজার ডলার বাড়ানো হয়েছে।

এ ছাড়া একটি নতুন প্রস্তাবও বিবেচনা করছে দেশটির সরকার। সেটি হলো, যাঁরা এভারেস্টে উঠতে চান, তাঁদের আগে কমপক্ষে একটি ৭ হাজার মিটার উচ্চতার নেপালি শিখর জয় করতে হবে। যদিও এটি নিয়ে বেশ সমালোচনা রয়েছে।

পাহাড়ের আকর্ষণ ও সুবিধা

সুদূর পশ্চিম ও কার্নালি প্রদেশের পাহাড়গুলো জনসংখ্যা ও পর্যটক কম থাকার কারণে নিরাপদ। স্থানীয় গাইড ও হোমস্টে পরিষেবার মানও ভালো। পাহাড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অভিযাত্রীরা স্থানীয় গ্রামের জীবনধারা, পাহাড়ি খাবার, হোমস্টে অভিজ্ঞতা ও ছোট ছোট উৎসবও উপভোগ করতে পারবেন। এটি শুধু অভিযাত্রার চ্যালেঞ্জ নয়, বরং নেপালের প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে সরাসরি সংযোগের সুযোগ।

ফোকসুন্দো হ্রদ, কর্নালি, নেপাল। ছবি: উইকিপিডিয়া
ফোকসুন্দো হ্রদ, কর্নালি, নেপাল। ছবি: উইকিপিডিয়া

বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিকোণ

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই উদ্যোগ নেপালের পর্বতারোহণ সংস্কৃতিতে বৈচিত্র্য আনার এক বড় পদক্ষেপ। এটি শুধু পর্যটন নয়, বরং নেপালের অজানা পাহাড়গুলোকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করার সুযোগ। অনেক অভিযাত্রী সাধারণত এভারেস্ট বা মানাসলুর মতো পরিচিত শিখরগুলোতে যাওয়াকে প্রাধান্য দেয়। এখন এই ৯৭টি পাহাড় তাদের সামনে নতুন এক সম্ভাবনার পথ খুলে দিয়েছে।

পর্বতারোহণের নতুন গন্তব্য

যাঁরা এভারেস্টের ব্যস্ততা, উচ্চ ব্যয় এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়িয়ে নিরাপদ ও চ্যালেঞ্জিং অভিযাত্রা চান, তাঁদের জন্য সুদূর পশ্চিম ও কার্নালির পাহাড়গুলো এখন নতুন সুযোগ। এখানে পাহাড়ি ঝরনা, বরফে ঢাকা চূড়া, সবুজ বন ও গ্রামীণ জীবন একসঙ্গে উপভোগ করা যায়। ছোট ছোট পাহাড় জয় করে ধাপে ধাপে বড় শিখরের চূড়ায় অভিযাত্রীরা নিজেদের তৈরি করতে পারবে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণের জন্য।

সানজা ভ্যালি, কর্নালি, নেপাল। ছবি: উইকিপিডিয়া
সানজা ভ্যালি, কর্নালি, নেপাল। ছবি: উইকিপিডিয়া

পর্যটন ও অর্থনীতিতে প্রভাব

স্থানীয় ব্যবসা সম্প্রসারণ, হোটেল ও হোমস্টে খোলা, পর্যটকদের জন্য স্থানীয় গাইড এবং খাদ্যসেবা—সবই এই উদ্যোগ থেকে উপকৃত হবে। দীর্ঘ মেয়াদে এটি শুধু পর্যটন নয়, দেশের দরিদ্র পশ্চিমাঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

এই উদ্যোগ কেবল অভিযাত্রীদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা নয়, এটি নেপালের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও পর্যটন ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। যারা প্রকৃতির কাছাকাছি গিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে চায়, তাদের জন্য এই ৯৭টি পাহাড় হয়ে উঠবে এক অনন্য গন্তব্য।

সূত্র: টাইম আউট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ