Ajker Patrika

ঈদের পর বেড়াতে যাবেন যেখানে

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৪, ১৩: ৪৮
ঈদের পর বেড়াতে যাবেন যেখানে

ঈদটা সাধারণত বাড়িতেই কাটাতে পছন্দ করেন বেশির ভাগ মানুষ। তবে ঈদের পর পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা থাকে অনেকেরই। আর এই ভ্রমণপ্রেমীদের কথা মাথায় রেখে দেশের কিছু চোখজুড়ানো জায়গার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি আজ। তালিকাটি করতে গিয়ে পাহাড়-অরণ্যপ্রেমীদের পাশাপাশি পাহাড়ের জনগোষ্ঠীদের বৈসাবি উৎসব দেখতে যাঁরা আগ্রহী, তাঁদের কথাও মাথায় রাখা হয়েছে। 

জল ও অরণ্যের কাপ্তাই
রাঙামাটির একটি উপজেলা কাপ্তাই। বান্দরবানে উত্তেজনা চালায় পাহাড়প্রেমীরা কাপ্তাইয়ে গিয়ে অনায়াসে মনের খোরাক মেটাতে পারবেন। কাপ্তাই এমন এক জায়গা, যেখানে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য মোটামুটি সবকিছুই আছে। অসাধারণ সুন্দর কাপ্তাই হ্রদ কিংবা খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীতে ভ্রমণ করতে পারবেন। জঙ্গল চাইলে ঘুরে বেড়াতে পারবেন কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে। যদি পাহাড়প্রেমী হন, তবে উঠতে পারেন রাম পাহাড় বা সীতা পাহাড়ে। 

কাপ্তাই থেকে রাঙামাটি যাওয়ার সংক্ষিপ্ত রাস্তাটিতে ভ্রমণ করাটাও অবশ্য কর্তব্য। একপাশে হ্রদ, আরেক পাশে পাহাড় মিলিয়ে এমন সুন্দর পথ আছে কমই। পথের পাশে চমৎকার কিছু রেস্তোরাঁয় পাবেন বেম্বু চিকেনসহ পাহাড়ি-বাঙালি নানা পদের খাবার। 

কাপ্তাই মারমা অধ্যুষিত এলাকা। তাই এখানে পাহাড়িদের বৈসাবি উৎসবের মধ্যে সাংগ্রাইয়ের প্রভাব বেশি। সাংগ্রাইয়ের পানিখেলা বা জলকেলি উৎসব দেখার জন্য চমৎকার জায়গা কর্ণফুলী নদী পেরিয়ে চিৎমরম। বৌদ্ধদের চমৎকার কিছু মন্দিরও দেখতে পাবেন সেখানে। এ সময় চিৎমরমে সাংগ্রাই উপলক্ষে বড় মেলা হয়। 

কাম্পানীগঞ্জের সাদা পাথরে পৌঁছার আগে নৌকাভ্রমণটাও মুগ্ধ করবে। ছবি: লেখককীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন
ঢাকা থেকে শ্যামলী, এস আলমসহ আরও বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাসে অনায়াসে চলে যেতে পারবেন কাপ্তাইয়ে। 

কাপ্তাই-রাঙামাটি সড়কে কয়েকটি চমৎকার রিসোর্ট আছে রাত কাটানোর জন্য। এ ছাড়া শিলছড়ি, নেভি ক্যাম্পসহ কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় সুন্দর সুন্দর কিছু রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। 

জাফলংয়ের দিক থেকে ভারতের ওপাশটা ভারি সুন্দর লাগে। ছবি: লেখকগোয়াইনঘাটের নদী, অরণ্য, পাহাড় আর ঝরনা
সিলেটের দর্শনীয় জায়গার অভাব নেই। তবে সিলেট জেলার মধ্যে উপজেলা বিচার করলে মনে হয় সবচেয়ে বেশি দর্শনীয় জায়গা আছে গোয়াইনঘাটে। পিয়াইন নদীর তীরে ভারতের সীমন্তবর্তী জনপদ জাফলং সব সময়ই পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকে আছে। পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জল, ওপাশে ভারতের ডাউকির পাহাড়, সুন্দর এক সেতু আর মায়াবী ঝরনা মুগ্ধ করবে আপনাকে। নদী পেরিয়ে খাসিয়া পল্লি কিংবা সুন্দর এক চা-বাগানও আরাম দেবে দৃষ্টিকে। 

তেমনি গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি নদী, পাথর ও সীমান্তের ওপারের পাহাড় মিলিয়ে আকর্ষণ করবে আপনাকে। পানি একটু বেশি থাকলে চলে যেতে পারবেন একেবারে পান্থুমাই পর্যন্ত। পান্থুমাইয়ের মতো সুন্দর গ্রাম খুব বেশি চোখে পড়ে না। পাহাড়-নদীর আশ্চর্য মিতালি এখানে। গ্রামে ঘুরে অনেকটা সময় কাটাতে পারবেন। তবে সবচেয়ে আকর্ষণ করবে পান্থুমাই বা বড়হিল ঝরনাটা। এদিক থেকে সীমান্তের ওপাশের ঝরনা, রাস্তা দিয়ে চলা গাড়ি এবং পাহাড়ে সুপারিগাছের সারি আর বিশাল সব পাথর দেখবেন মুগ্ধ দুই নয়নে। 

এ ছাড়া গোয়াইনঘাটের মধ্যেই পড়েছে জলের বন রাতারগুল। নৌকায় করে মিঠাপানির এই অরণ্যে ঘুরতে বেশ লাগবে। গোয়াইনঘাটের সীমানায় না পড়লেও জাফলং ঘুরতে গেলে একই সঙ্গে লালাখালের জন্য হাতে বেশ কিছু সময় রাখবেন। নৌকা নিয়ে চলে যেতে পারবেন জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত। তেমনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সাদা পাথরও দেখে আসতে পারেন একই ভ্রমণে। 

কাজেই শুধু গোয়াইনঘাট উপজেলার এবং এর আশপাশের চমৎকার সব জায়গা দেখার জন্যই অন্তত দুটি রাত কাটাতে হবে আপনাকে। 

পাহাড় আর মেঘ কোনোটিরই কমতি নেই সাজেকে। ছবি: সুমাইয়া নাজিফাকীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন
সিলেটে যেতে পারবেন বাস, ট্রেন কিংবা প্লেনে। সেখান থেকে গাড়ি বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে চলে যেতে পারবেন ওপরে উল্লেখ করা জায়গাগুলোতে। আবার বাসেও যেতে পারবেন। তবে শেষ পর্যন্ত অবশ্য এসব জায়গায় ঘোরাঘুরিতে নৌকা লাগবেই। 

থাকার জন্য জাফলং এবং এর কাছের জৈয়ন্তিয়ায় কিছু সুন্দর রিসোর্ট আছে। তেমনি লালাখাল ও রাতারগুলের পাশেও রিসোর্ট আছে। তবে সাদা পাথর কিংবা বিছনাকান্দি যেতে হলে থাকতে হবে শহরেই। 

জুড়ির লাঠিটিলার জঙ্গলে যাওয়ার পথে এমন চমৎকার কিছু চা-বাগানের দেখা মেলে। ছবি: লেখকপানছড়ির লেক আর বাঘাইছড়ির পাহাড়
খাগড়াছড়ি শহর কিংবা দীঘিনালাকে মানুষ যতটা চেনে, সে তুলনায় পানছড়ির সঙ্গে পরিচয় কম। পানছড়ির বড় আকর্ষণ অরণ্যকুটির। খাগড়াছড়ি শহর থেকে দূরত্ব কমবেশি ২৫ কিলোমিটার। সেখানে পৌঁছার আগেই ভারি সুন্দর একটা পথ পাবেন। সরু পিচঢালাই রাস্তাটা এঁকেবেঁকে চলে গেছে। ডান পাশে যত দূর চোখ যায়, শুধু ধানখেত। বাঁয়েও কিছুদূর পর্যন্ত ধানখেত। তারপর হঠাৎ করেই পাহাড়সারির শুরু। ধানখেত আর পাহাড়ের এই মিতালি দেখতে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। ছবি তুললাম। গাড়ি ছাড়ার পর কিছুদূর আসতেই আবার থামতে হলো। সামনেই চেঙ্গির ওপর ব্রিজ। নিচে তাকাতেই চোখে পড়বে সুন্দর একটা রাবার ডেম। রাবার ফুলিয়ে পানি ধরে রাখার জন্য নদীর ওপর বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ডান দিকে থইথই পানি। রাবার ডেম উপচে এপাশে পড়ছে পানির একটা ধারা। 

তারপর মিনিট দশেকের মধ্যে পৌঁছে যাবেন অরণ্যকুটিরের সামনে। বেশ বড় এলাকা নিয়ে বৌদ্ধদের এই তীর্থস্থান। ইন্টারনেট ঘেঁটে জেনেছি, পুরো জায়গাটা ৬৫ একর। মূল আকর্ষণ বিশাল বৌদ্ধ মূর্তিটা। ৫০ ফুট উচ্চতার বসে থাকা বৌদ্ধ মূর্তিটা তৈরি হয়েছে ২০০৯ সালে। সোনালি রঙের বুদ্ধ সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে অনেক বৌদ্ধ মূর্তি চোখে পড়বে। তবে এটার মতো বিশাল, আর সুন্দর আছে কমই। কয়েকটা ছোট মন্দির আছে পাশেই। মেহগনি, আগর, তেজপাতাসহ নানা ধরনের হাজারো গাছে ভর্তি জায়গাটা। ডান পাশে বড় মাঠ। এখানেই অনুষ্ঠান হয়। বিশেষ করে কঠিন চীবর দান উৎসবের সময় নাকি গোটা অরণ্য কুটির এলাকা মানুষে গম গম করে। নিচে পাহাড়ি ছড়ার ওপর একটা সেতু নজর কাড়বে। 

আদমপুরের গহিনে। ছবি: লেখকঅরণ্যকুটির থেকে আধা ঘণ্টা লাগল মায়াবিনী লেকে পৌঁছাতে। পানছড়ির লতিবান ইউনিয়নের কংচাইরীপাড়ায় এর অবস্থান। প্রচুর পর্যটক আসেন হ্রদটিতে। শুনেছি, মোট ৪০ একর জায়গা নিয়ে লেকটা। লেকের এখানে-সেখানে ছোট ছোট দ্বীপের মতো। আবার লেক পেরোনোর জন্য কাঠ-বাঁশের সেতুগুলোও ভারি সুন্দর। কায়াকিংয়ের ভালো ব্যবস্থা আছে। 

রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলির একটি। তবে ঈদের ঠিক পর পর সাজেকে ভিড়-বাট্টা একটু বেশি থাকবে। তাই একটা সপ্তাহ দেরি করে সেখানে যেতে পারেন। আমার মতে শুক্র-শনিবার এড়িয়ে সাজেক যেতে পারলে এখানকার প্রকৃতিকে উপভোগ করার সুযোগটা থাকবে বেশি। 

অবশ্য আপনি যে রিসোর্টে উঠবেন সেটায় যদি একটা খোলা ব্যালকনি থাকে তবে এখানে বসে পাহাড় আর মেঘের খেলা দেখতে দেখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারবেন। আবার পাহাড়ের কোনো একটি ট্রেইল ধরেও বেরিয়ে পড়তে পারেন। জুমঘর, গাছপালা এসব দেখতে দেখতে হাঁটাটা যে বেশ আনন্দময় হবে সন্দেহ নেই। 

আরেকটা কথা এখন পাহাড়ের বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায়ের উৎসব চলছে। বৈসাবির বৈসু, সাংগ্রাই আর বিজু—সবগুলি উপভোগ করতে পারবেন পানছড়িতে। মারমাদের সাংগ্রাইয়ের বড় আকর্ষণ জলকেলি। পানছড়িতে জলকেলি হবে ১৫ এপ্রিল। খাগড়াছড়ি শহরের জলকেলি উৎসবও উপভোগ করতে পারেন। 

কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন
ঢাকা থেকে শ্যামলী, এস আলম, ইউনিক, হানিফ কিংবা শান্তি পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি যেতে পারেন। আছে এসি বাস সেন্ট মার্টিন পরিবহন। খাগড়াছড়ি শহর থেকে অটোরিকশা কিংবা চাঁদের গাড়িতে শান্তিকুটির আর মায়াবিনী লেক চলে যেতে পারবেন। খাগড়াছড়ি শহর ও আশপাশে পর্যটন মোটেলসহ বেশ কিছু হোটেল-রিসোর্ট আছে। এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য বেশ ভালো সিস্টেম রেস্তোরাঁ। সাজেক গেলে আগে থেকে কথা বলে দরদাম করে ও পেজে ছবি দেখে রিসোর্ট বুকিং দেবেন। 

সিলেট বিভাগের সবচেয়ে সুন্দর বনগুলোর একটি লাঠিটিলা। ছবি: লেখকজুড়ী আর কমলগঞ্জে চা বাগানে, অরণ্যে
মৌলভীবাজারের দুই উপজেলা কমলগঞ্জ আর জুড়ী। এর মধ্যে কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গলে পর্যটকদের বেশ যাতায়াত থাকলেও জুড়ি তুলনামূলক অচেনা পর্যটকদের কাছে। চা-বাগানের জন্য কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গলের নাম থাকলেও জুড়ীতেও চোখ জুড়িয়ে দেওয়া কিছু চা-বাগান আছে। এগুলোর মধ্যে সাগরনাল, ফুলতলা, দিলকুশা, রাজকী উল্লেখযোগ্য। 

অরণ্যপ্রেমীদের জন্য জুড়ী হওয়া উচিত অটো চয়েজ। আমার মতে, সিলেট বিভাগের সবচেয়ে সুন্দর বনগুলোর একটি লাঠিটিলা। এটিও পড়েছে জুড়ীতে। লাঠিটিলা যাওয়ার পথে পাহাড় আর চা-বাগানের মনোরম দৃশ্যও মুগ্ধ করবে আপনাকে। ঘুরে আসতে পারেন সাগরনাল কিংবা রাগনার জঙ্গলেও। 

কমলগঞ্জের মাধবপুর লেক আর চা-বাগান রাজ্য সব সময়ই মুগ্ধ করে পর্যটকদের। যেমন আকৃষ্ট করে লাউয়াছড়ার অরণ্য। তবে লাউয়াছড়ায় মানুষের ভিড় বেশি থাকায় অরণ্যপ্রেমীদের জন্য আদর্শ হতে পারে রাজকান্দি রেঞ্জের আদমপুর কিংবা কুরমার জঙ্গল। কুরমা বিটেই বিখ্যাত হামহাম জলপ্রপাতের অবস্থান। আবার কমলগঞ্জ থেকে শ্রীমঙ্গলে এসে তারপর পাহাড়-জঙ্গল মাঝের পথ দিয়ে চলে যেতে পারেন চুনারুঘাটের কালেঙ্গার জঙ্গলেও। 

কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন
শ্যামলী, হানিফসহ নামী সব পরিবহন সার্ভিসের বাস যায় মৌলভীবাজার। পথে শ্রীমঙ্গলে নেমে সেখান থেকে কমলগঞ্জ যেতে পারবেন অনায়াসে। আবার কুলাউড়া বাসে গিয়ে সেখান থেকে যেতে পারবেন জুড়ীতে। ট্রেনে গেলে কমলগঞ্জের জন্য ভানুগাছ আর জুড়ীর জন্য কুলাউড়া স্টেশনে নামাটাই ভালো। 

কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য চমৎকার কিছু হোটেল-রিসোর্ট আছে। জুড়ীতে থাকার জন্য সেরকম ভালো রিসোর্ট-হোটেলের সংখ্যা কম। কুলাউড়ার কোনো হোটেলে রাত কাটাতে পারেন। অবশ্য পরিচিত থাকলে জুড়ীর কোনো চা-বাগানে থাকতে পারলে সেটা হবে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোশ্যাল মিডিয়ায় বয়ফ্রেন্ডকে আড়ালে রাখছেন তরুণীরা, এই প্রবণতার মানে কী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৫
সোশ্যাল মিডিয়ায় তরুণীরা এখন বিভিন্নভাবে বয়ফ্রেন্ডকে আড়াল করছেন। ছবি: প্রতীকী
সোশ্যাল মিডিয়ায় তরুণীরা এখন বিভিন্নভাবে বয়ফ্রেন্ডকে আড়াল করছেন। ছবি: প্রতীকী

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি তুলে ধরার এই যুগে, প্রেম বা দাম্পত্য সম্পর্ককে প্রকাশ্যে আনা বা ‘হার্ড-লঞ্চ’ করার ক্ষেত্রে দ্বিধা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণী ও নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা অনেক বেশি। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই প্রবণতা এখন এতটাই প্রবল যে, ব্রিটিশ ভোগ ম্যাগাজিনও প্রশ্ন তুলেছে, ‘প্রেমিক থাকা কি এখন লজ্জার ব্যাপার?’

ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকে এখন অনেকেই সঙ্গীর মুখ আড়াল করে ছবি দিচ্ছেন, শুধু হাত বা পানীয়ের গ্লাস ঠোকাঠুকির মতো ইঙ্গিতপূর্ণ ‘সফট লঞ্চ’ করছেন। এর পেছনে রয়েছে ব্র্যান্ডিং, আত্মনির্ভরতার বার্তা দেওয়া এবং ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষার মতো একাধিক কারণ। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টান্ত হিসেবে ইনফ্লুয়েন্সার তাওয়ানা মুসভাবুরির কথা উল্লেখ করেছে বিবিসি। তাওয়ানার ৩৩ হাজার ফলোয়ার রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করে প্রেমিকের চেহারা আড়াল করে রাখেন। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী বলেন, তিনি এমন একটি ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন যেখানে তাঁর প্রেমিকের কোনো অংশ নেই।

তিনি বিবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমি নিজেকে একজন শক্তিশালী নারী হিসেবে তুলে ধরতে চাই, যেন মনে হয় আমার সবটা আমার নিয়ন্ত্রণে। আপনি চান না যে, লোকজনের মনে হোক যে এটি কোনো অংশ একজন পুরুষের সহায়তায় গড়ে উঠেছে। যখন আমি বলি, আমি এটি নিজেই করেছি, তখন সেটা আমাকে আরও বেশি তৃপ্তি দেয়।’

তাওয়ানার মতে, এমনকি যদি তিনি বাগদান বা বিয়েও করেন, তাহলেও সেই সম্পর্ক প্রকাশ্যে আনার জন্য শুধু একটি আংটিই যথেষ্ট নয়।

ভোগ ম্যাগাজিনের ভাইরাল হওয়া নিবন্ধে লেখক শঁতে জোসেফ উল্লেখ করেন, বিষমকামী নারীরা এখন তাঁদের সম্পর্ক অনলাইনে যেভাবে তুলে ধরছেন, তাতে একটি বড়সড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নারীরা এখন সঙ্গী থাকার ‘সামাজিক সুবিধা’ উপভোগ করতে চাইলেও, একই সঙ্গে ‘বয়ফ্রেন্ড-পাগল’ হিসেবে পরিচিত হতে চান না।

জোসেফের মতে, ঘন ঘন সঙ্গীর ছবি পোস্ট করাকে অনেকে ‘বিরক্তিকর’ বা ‘সাংস্কৃতিক দিক থেকে ব্যর্থতার লক্ষণ’ বলে মনে করেন। আরও গুরুতর যে বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছেন সেটি হলো, প্রেমিক থাকা এখন আর ‘কোনো অর্জন’ হিসেবে বিবেচিত হয় না। তিনি মনে করেন, নারীরা এখন পিতৃতান্ত্রিক সমাজের ‘দমিয়ে রাখার’ প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সম্পর্ক আড়াল করছেন।

ইনফ্লুয়েন্সারদের ক্ষেত্রে এটি কেবল সামাজিক ধারণা নয়, বরং উপার্জনের প্রশ্নও বটে। দক্ষিণ লন্ডনের কনটেন্ট ক্রিয়েটর স্টেফানি ইয়েবোয়াহ ভোগ ম্যাগাজিনকে জানান, একবার তাঁর প্রেমিকের ছবি পোস্ট করার পর তাঁর খুব অনুশোচনা হয়েছে।

তিনি বিবিসিকে বলেন, তাঁর ইনবক্সে বার্তা আসতে শুরু করে যে লোকেরা তাঁকে আর অনুসরণ করতে পারছে না। কারণ তাঁর কনটেন্টে এখন প্রেমিক যুক্ত হয়ে গেছেন। ইয়েবোয়াহ স্মরণ করেন, ‘সেই দিন প্রায় ১ হাজার মানুষ আমাকে আনফলো করেছিল।’

কিং’স কলেজ লন্ডনের ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ ড. জিলিয়ান ব্রুকস বলেন, ইনফ্লুয়েন্সাররা একটি স্বতন্ত্র রুচি বা নান্দনিকতা বিক্রি করেন। তাঁদের দর্শকদের জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড তৈরি করা হয়। যদি তাঁরা সেই ব্র্যান্ডের বাইরে চলে যান, তবে শ্রোতাদের বিভ্রান্ত করেন এবং এতে তাঁদের ফলোয়ার কমে যেতে পারে।

যারা ইনফ্লুয়েন্সার নন, তাঁদেরও সম্পর্ক আড়াল করার নিজস্ব অনেক কারণ আছে। যেমন: নির্ভরশীলতা এড়ানো—মিল্লি নামের ২৫ বছর বয়সী এক তরুণী বলেন, তিনি তাঁর বাগদত্তের ছবি দিতে দ্বিধা বোধ করেন। তিনি চান না যে তাঁকে সঙ্গীর ওপর ‘নির্ভরশীল’ বা এমন কেউ বলে মনে করা হোক যার ‘পুরো ব্যক্তিত্ব’টাই এই সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল।

গোপনীয়তা রক্ষাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০ বছর বয়সী শার্লট বিশ্বাস করেন, বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ককে ‘আরও বেশি ব্যক্তিগত’ রাখা উচিত। তিনি মনে করেন, ছবি পোস্ট করা মানেই লোককে বলা, ‘দেখো আমার কত গভীর নিখুঁত সম্পর্ক’—বাস্তবে এটি সত্য নয়।

কু-নজরের ভয়! প্রথম পাঠে খটকা লাগলেও অনেকে ক্ষেত্রে এটি সত্য। ২১ বছর বয়সী আথেরা জানান, তাঁর অনেক বন্ধু সম্পর্কের গোপনীয়তা রাখতে চান কু-নজর বা ‘ইভিল আই’-এর ভয়ে। প্রায় সব সংস্কৃতিতেই কু-নজর বলতে এমন একটি বিশ্বাস বা সংস্কার যে, ঈর্ষা বা বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টির পড়লে ক্ষতি হতে পারে।

মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাজ মনোবিজ্ঞানী ড. গোয়েনডোলিন সাইডম্যান মনে করেন, ব্যক্তিগত জীবনের এত বড় অংশ অনলাইনে শেয়ার করার সঙ্গে এক ধরনের উদ্বেগ জড়িত। এই উদ্বেগ মূলত অনলাইনে তথ্যের স্থায়িত্বের ভয় থেকে আসে। মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে যে একবার কিছু অনলাইনে পোস্ট হলে তা মুছে ফেলা কঠিন। তাই তারা এখন আরও সতর্ক থাকতে চাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থাইল্যান্ড যে কারণে ৩০০ ডলার জরিমানা করতে পারে পর্যটকদের

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ২২
দিনের বেলা নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অ্যালকোহল পান গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে থাইল্যান্ডে। ছবি: ফ্রিপিক
দিনের বেলা নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অ্যালকোহল পান গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে থাইল্যান্ডে। ছবি: ফ্রিপিক

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য থাইল্যান্ড। নিয়মিত যাঁরা ভ্রমণ করেন, তাঁদের অনেকে দেশটিতে একাধিকবার গেছেন। এর অন্যতম কারণ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ। পর্যটকদের জন্য সব ধরনের আয়োজন রয়েছে দেশটিতে। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির সরকারের এক সিদ্ধান্ত পর্যটকদের কপালে ভাঁজ এনে দিয়েছে।

৮ নভেম্বর থেকে থাইল্যান্ডে দিনের বেলা নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অ্যালকোহল পান গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে থাইল্যান্ডে। এই অপরাধ করলে প্রায় ৩০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী শুধু বিক্রেতা নয়, গ্রাহকেরাও এই জরিমানার আওতায় আসবেন।

নতুন নিয়ম

বিক্রির অনুমোদিত সময়ের বাইরে রেস্টুরেন্ট বা বিনোদনের স্থানে বসে অ্যালকোহল পান করা নিষেধ। ধরা পড়লে এই জরিমানা প্রযোজ্য হবে। অ্যালকোহল কেনার অনুমোদিত সময় হলো—

  • বেলা ১১টা থেকে ২টা
  • বিকেল ৫টা থেকে মধ্যরাত

পর্যটন খাতের উদ্বেগ

নতুন নিয়মটি ঘোষণার পর থাইল্যান্ডের পর্যটন ও বিনোদন খাতের উদ্যোক্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তাঁরা বলছেন, নিয়মটি করোনা-পরবর্তী পর্যটন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এক রেস্টুরেন্টের মালিক জানান, নতুন নিয়ম অনুযায়ী অনুমোদিত সময়ের বাইরে গ্রাহকেরা অ্যালকোহলের দোকানে বসে থাকলেও তাঁর জরিমানা হতে পারে। অর্থাৎ, বেলা ১১টা থেকে ২টা কিংবা বিকেল ৫টা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে মদ কেনা বৈধ হলেও যদি গ্রাহক সেই সময়ের বাইরে দোকানে মদ পান না করে বসে থাকলেও জরিমানা গুনতে হবে। রেস্টুরেন্ট মালিক ও পর্যটন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি পর্যটকদের জন্য অযৌক্তিক ও বিরক্তিকর। এমন নিয়ম পর্যটকেরা পছন্দ না-ও করতে পারেন। পর্যটন বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, শীতকালীন ছুটির মৌসুমে নতুন নিয়মের কারণে পর্যটক কমে যেতে পারে। পর্যটনশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

নতুন আইনটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক মাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেক বিদেশি সংবাদপত্র পর্যটকদের সতর্ক করেছে, যাতে তাঁরা থাইল্যান্ডে ভ্রমণের সময় নতুন নিয়ম সম্পর্কে সচেতন থাকেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পর্যটকেরা এই নিয়মকে অযৌক্তিক এবং পর্যটকবিরোধী বলে সমালোচনা করেছেন। তাঁরা লিখেছেন, এমন কঠোর নিয়মের কারণে পর্যটকেরা স্বচ্ছন্দে ঘুরতে পারবেন না এবং তাঁদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা খারাপ হতে পারে। এমনকি কিছু বিদেশি পর্যটক সরাসরি বলেছেন, তাঁরা এবার থাইল্যান্ডে যাবেন না। এর পরিবর্তে পাশের দেশগুলোতে ছুটি কাটাবেন, যেখানে অ্যালকোহলের বিধিনিষেধ তুলনামূলক কম এবং পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক। এই প্রতিক্রিয়াগুলো দেখে বোঝা যায়, নতুন আইনটি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের মধ্যে উদ্বেগ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এটি দীর্ঘ মেয়াদে থাইল্যান্ডের পর্যটনশিল্পকে প্রভাবিত করতে পারে।

নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে বারগুলোতে বসে থাকলে বার মালিকদের গুনতে হতে পারে জরিমানা। ছবি: ফ্রিপিক
নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে বারগুলোতে বসে থাকলে বার মালিকদের গুনতে হতে পারে জরিমানা। ছবি: ফ্রিপিক

সরকারের পদক্ষেপ

এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল নির্দেশ দিয়েছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন নিয়মে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে অঞ্চলভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা তুলে ফেলা, যাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অ্যালকোহল পানের সময় এক রকম হয়। এর সঙ্গে পরিবেশনের অনুমোদিত সময় রাত ৪টা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা। এ ছাড়া সরকার চাইছে, আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া জানুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে সম্পন্ন করা হোক। সরকার আশা করছে, অ্যালকোহল বিক্রির সময় বাড়ানো হলে পর্যটক বৃদ্ধি পাবে। রাতের সময়টা আরও জমজমাট হবে এবং এটি রাজস্ব বাড়াতে সাহায্য করবে।

পূর্ববর্তী বিধিনিষেধ

২০২৩ সালে ব্যাংকক, ফুকেট, চোনবুরি, চিয়াং মাই ও কো সমুই অঞ্চলের বিনোদনকেন্দ্রে রাত ৪টা পর্যন্ত অ্যালকোহল বিক্রির অনুমতি ছিল। তবে নিবন্ধন ও নিয়ম মানার প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী সমস্যায় পড়তেন।

মালিক ও পর্যটকের মন্তব্য

এক পর্যটন কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, নিয়মটি ঠিকমতো না সাজালে পর্যটকেরা আতঙ্কিত হতে পারে। পর্যটনশিল্প এখনো পুনরুদ্ধারের সময়ে রয়েছে। নতুন আইন যদি শিথিল না হয়, তাহলে শীতকালীন পর্যটন মৌসুম ক্ষতির মুখে পড়বে।

এক রেস্টুরেন্ট মালিক আরও জানান, এমন কঠোর নিয়ম পর্যটকদের আগ্রহ কমাবে। সাধারণ পর্যটকেরা থাইল্যান্ড ভ্রমণে আগ্রহ হারাবেন। এটি সরাসরি পর্যটনশিল্পে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুন্দর ফিগার তৈরির ডায়েট যখন মরণফাঁদ

নাহিদা আহমেদ 
মডেল: জুনি
মডেল: জুনি

ফরসা রঙের মানুষদের একসময় সুন্দর বলা হতো; কিন্তু সৌন্দর্যের সেই ধারণা বর্তমানে বদলে গেছে। এখন সুন্দর বলতে বোঝায় দেহের সুন্দর গড়নকে। সেটিকে আমরা সুস্থতা না ধরে, ধরে নিয়েছি একটা নির্দিষ্ট মাপে, তা হলো ৩৬-২৪-৩৬। এটা যেন সব নারীর আরাধ্য ফিগার। কিন্তু ফিগার বাগে আনতে কিংবা বাড়তি ওজন কমানোর দৌড়ে আমরা কত দূর যাচ্ছি, কীভাবে যাচ্ছি, আর এর ফলটাই-বা কী?

সম্প্রতি এক ইনফ্লুয়েন্সার ও মেকআপ আর্টিস্টের মৃত্যুর ঘটনায় হয়তো এসব প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে। মাত্র ৬ মাসে ১২২ কেজি থেকে ৪২ কেজি ওজন কমিয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অস্বাস্থ্যকর ওম্যাড ডায়েট কিংবা ওয়ান মিল আ ডে ডায়েটের ফলে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে তাঁকে হার মানতে হয়। অতিরিক্ত ওজন হওয়ার কারণে তিনি নানাভাবে বডিশেমিংয়ের শিকার হয়েছিলেন বলে বিভিন্ন সংবাদে উঠে এসেছে।

ওজন কমানোর ডায়েটে রয়েছে যে ধরনের ঝুঁকি

তিনি ওজন কমানোর জন্য বেছে নিয়েছিলেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ‘ট্রেন্ড ওম্যাড ডায়েট’। ইংরেজিতে যাকে বলে ওএমএডি (ওম্যাড) বা ওয়ান মিল আ ডে। ওম্যাড ডায়েট হলো, দিনে ২৩ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে নির্দিষ্ট সময়ে ১ ঘণ্টার মধ্যে সারা দিনের দরকারি খাবার খাওয়া। এই কঠিন ডায়েটের কারণে শরীরে ক্যালরির ঘাটতি হয়, ফলে দ্রুত ওজন কমে।

তবে এ পর্যন্ত যা জানা গেছে, তা হলো তিনি অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য নিজেই ওম্যাড ডায়েট শুরু করেছিলেন। এতে অনেকটা ওজন তাঁর কমেছিল ঠিকই; কিন্তু পরবর্তী সময়ে নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। এরপর হাসপাতালে তিনি ভর্তি হন; কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।

ওম্যাড ডায়েটের ফলে বিপাকক্রিয়ার হার এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। তা ছাড়া ডায়েটের ফলে দেহে ভিটামিনের ঘাটতি হয়। ফলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে যায়। চুল পড়ে যাওয়া বা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যাও দেখা যায়। পাশাপাশি শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস বা হৃদ্‌রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। সারা দিন না খেয়ে একসঙ্গে অনেক খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে বা কমে যেতে পারে, যা কখনো কখনো মারাত্মক জটিলতা কিংবা মৃত্যুঝুঁকি সৃষ্টি করে।

মডেল: সূর্য । ছবি: মঞ্জু আলম
মডেল: সূর্য । ছবি: মঞ্জু আলম

সৌন্দর্যের জন্য ওজন কমাতে যা জেনে রাখা জরুরি

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, দেহের চাহিদামতো সঠিক খাদ্যতালিকা মেনে চলা। তখন ওজন কমানোর জন্য কোনো একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। পুষ্টিবিদ রক্তে শর্করার মাত্রা, কোলেস্টেরলের মাত্রা, লিভার ও কিডনির সুস্থতা, রক্তচাপের গতি, হরমোন অসমতা ইত্যাদি বিবেচনা করে বডি মাস ইনডেক্স কত হওয়া উচিত, তা জানিয়ে খাদ্যতালিকা তৈরি করে দেবেন। প্রত্যেক মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্ট যেমন আলাদা, তেমনি তাঁদের মেটাবলিজম বডি টাইপও আলাদা। তাই যেকোনো ধরনের খাদ্যে পরিবর্তন আনতে হলে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া বা বিভিন্ন অ্যাপস দেখে ডায়েট করলে আপনি উপকৃত হবেন, তা কিন্তু নয়। সাময়িক ফল পেলেও দীর্ঘ মেয়াদে শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি পরবর্তী সময়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

ডায়েট করার উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত

ডায়েটের উদ্দেশ্য হলো শরীর সুস্থ রাখা। না খেয়ে কিংবা ভুল খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার মাধ্যমে কখনোই সেটা হতে পারে না। তবে সমস্যা হলো, শুধু অনলাইন ডায়েট প্ল্যান কিংবা ইউটিউব দেখে যোগব্যায়াম করার মাধ্যমে সুস্থতা অর্জন করা সম্ভব নয়। ওয়েলনেস ইনফ্লুয়েন্সারদের ভিডিও দেখে সেই লাইফস্টাইল নিজের করে নেওয়ার মধ্যেও বিশাল সমস্যা রয়েছে। এতেও পরবর্তী সময়ে ভয়াবহ স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি যেতে পারে।

আবার ভুল খাবার বেছে নিচ্ছেন না তো

বাজারে এখন নানা ধরনের স্লিমিং টি বা জুস পাওয়া যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, এক মাসে ৭ থেকে ৯ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব হবে সেসব জুস পান করলে; বিশেষ করে নারীরা এসব স্লিমিং টি ও জুস পানে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কিন্তু এসবে গা ভাসিয়ে সুস্থতা ও সৌন্দর্য কোনোভাবেই পাওয়া যায় না। নিজের শরীর বুঝতে হবে। আপনার শরীর কী চায়, তা নানা পরীক্ষার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন।

লাল ও নীল বেরি জাতীয় ফল দিয়ে সাজানো ওট মিল, দামি কিনোয়া, অ্যাভোকাডো আর রঙিন সালাদসহ নামীদামি নানা খাবার রিলস কিংবা ভিডিওতে দেখতে সুন্দর লাগে। তবে আমাদের দেশে এগুলোর দাম আকাশছোঁয়া। তবে স্বীকার করতে হবে, এ ধরনের খাবার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত বাঙালি রান্নাঘরের জন্য খুবই বেমানান। আবার আবহাওয়া ও জলবায়ুর সঙ্গে এসব খাবার শরীরে কতটা উপযোগী, সেটাও প্রশ্ন।

তাই সোশ্যাল মিডিয়া দেখে ডায়েট করাটা ভীষণ বোকামি। ডায়েট যদি করতেই হয়, তাহলে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে দেশীয় সহজপ্রাপ্য ঘরের সাধারণ খাবার দিয়ে তালিকা বানিয়ে সেটা মেনে চলুন। ডায়েটকে এত কঠিন ও ব্যয়বহুল করার মানে নেই।

লেখক: পুষ্টিবিদ, ফরাজি হাসপাতাল, বারিধারা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘরোয়া উপায়ে যেভাবে অ্যালোভেরা জেল তৈরি করবেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
অ্যালোভেরা ত্বক আর্দ্র করে, সার্বিক সুস্থতায় কাজে দেয়। ছবি: ফ্রিপিক
অ্যালোভেরা ত্বক আর্দ্র করে, সার্বিক সুস্থতায় কাজে দেয়। ছবি: ফ্রিপিক

শীত এলেই ত্বক টানটান লাগে। এ ছাড়া নাকের পাশ শুকিয়ে যায়, ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়, চুলেও রুক্ষ ভাব বাড়ে। আবহাওয়ার কারণে শরীরের আর্দ্রতা কমে যায় বলে এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এই মৌসুমে খুব ভালো কাজ করে অ্যালোভেরা জেল। এটি যেমন ত্বক আর্দ্র করে, তেমনি সার্বিক সুস্থতায়ও কাজে দেয়। দোকানে থাকা জেলে অনেক সময় সুগন্ধি আর রাসায়নিক মেশানো থাকে। কিন্তু ঘরে বানালে জেল হয় একদম তাজা ও প্রাকৃতিক।

ঘরে অ্যালোভেরা জেল বানানোর ধাপ

সঠিক পাতা বেছে নিন

ভালো ফল পেতে মোটা, সবুজ ও পরিপক্ব অ্যালোভেরা পাতা নিন। পরিপক্ব পাতায় জেলের পরিমাণ বেশি থাকে এবং এর উপকারিতাও বেশি।

হলদে তরল বের হতে দিন

পাতা কাটলেই হলুদ রঙের আঠালো তরল বের হয়। এটিকে ল্যাটেক্স বলা হয়, যা অনেকের ত্বকে জ্বালাপোড়া বা অ্যালার্জি তৈরি করতে পারে। তাই পাতা নিচের দিকে ঝুলিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট রেখে দিন। হলদে অংশ গলে বের হয়ে গেলে পাতাটি পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিন।

পাতার খোসা ছাড়ান

পাতা ধোয়ার পর সেটি লম্বা করে মাঝ বরাবর রাখুন। দুই পাশে তীক্ষ্ণ কাঁটার মতো অংশ থাকে। সেগুলো প্রথমে ছুরি দিয়ে পাতলা করে কেটে ফেলে দিন। এবার পাতার এক পাশের শক্ত সবুজ খোসাটা ছুরি বা ভেজিটেবল পিলার দিয়ে তুলে ফেলুন। খোসা উঠতেই ভেতরের স্বচ্ছ, নরম জেল দেখা যাবে। চামচ দিয়ে জেল তুলে নিন।

জেল ব্লেন্ড করুন

জেল ব্লেন্ডারে দিন এবং ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড ব্লেন্ড করুন। এতে জেলটি খুবই নরম ও মসৃণ হবে, যা ত্বক ও চুলে ব্যবহার করতে পারবেন।

অ্যালোভেরা জেলের ৯৮ শতাংশই পানি, ফলে এটি শীতকালে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। ছবি: ফ্রিপিক
অ্যালোভেরা জেলের ৯৮ শতাংশই পানি, ফলে এটি শীতকালে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। ছবি: ফ্রিপিক

সংরক্ষণ করুন

এয়ারটাইট বয়ামে জেল ঢেলে নিন। ফ্রিজে রাখলে এটি এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে।

সংরক্ষণ করতে প্রিজারভেটিভ যোগ করুন

জেল যদি ১ থেকে ২ মাস ধরে ব্যবহার করতে চান, তাহলে ভিটামিন সি বা ভিটামিন ই মিশিয়ে নিন। প্রতি ১ কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ জেলে ৫০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি অথবা ৪০০ আইইউ ভিটামিন ই পাউডার যোগ করুন।

অ্যালোভেরার ৭টি প্রধান উপকারিতা

শুষ্ক ত্বক আর্দ্র রাখে

শীতে ত্বক দ্রুত আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। অ্যালোভেরা জেলের ৯৮ শতাংশই পানি, ফলে এটি ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এই জেল ব্যবহার করলে ত্বক নরম হয়।

রুক্ষ ও ফাটল ধরা ত্বক শান্ত করে

শীতে হাত-পা ফেটে যাওয়া খুব সাধারণ ঘটনা। অ্যালোভেরা জ্বালাপোড়া কমায় এবং দ্রুত ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে।

ব্রণ ও দাগ কমাতে সহায়ক

অ্যালোভেরার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যবহার করলে ব্রণের লাল ও ফোলা ভাব এবং দাগ কমে। তেলতেলে ত্বকের জন্য এটি আদর্শ প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার।

চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনে

শীতের বাতাসে চুল শুকনো হয়ে যায়। অ্যালোভেরা মাথার ত্বকে আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেয়, খুশকি কমায়, চুলের গোড়া শক্ত করে। আমলা, পেঁয়াজের রস বা নারকেল তেলের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক বানিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুল নরম হয় এবং ঝলমলে দেখায়।

ঠোঁট, কনুই, গোড়ালির রুক্ষতা দূর করে

যে জায়গাগুলো বেশি শুকায়; যেমন ঠোঁট, কনুই, গোড়ালি—এসব জায়গায় অ্যালোভেরা খুব ভালো কাজে দেয়। রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করলে পরদিন সকালে ভালো ফল মিলবে।

মুখের স্বাস্থ্যে উপকার

অ্যালোভেরার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ দাঁতের প্লাক কমাতে সাহায্য করে। মুখের ভেতরের জ্বালাপোড়াও কমাতে পারে।

হজমে উপকার

অ্যালোভেরা জুস অনেকের ক্ষেত্রে অম্বল, গ্যাস্ট্রিক কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণা বলছে, আইবিএসের মতো সমস্যা থাকলেও অ্যালোভেরা সাময়িক আরাম দিতে পারে। তবে হজমের জন্য নিয়মিত খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।

ব্যবহারের আগে কিছু সতর্কতা

প্রথমবার ব্যবহার করার আগে শরীরের ছোট কোনো জায়গায় পরীক্ষা করে নিন।

গর্ভবতী হলে বা দীর্ঘমেয়াদি অসুখ থাকলে এটি ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

জেল সব সময় ফ্রিজে রাখুন।

খুব সংবেদনশীল ত্বকে হলে ভিটামিন ই একটু কম ব্যবহার করুন।

সূত্র: হেলথশট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত