Ajker Patrika

পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকা প্রাচীন মনাস্ট্রি

ফিচার ডেস্ক
পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকা প্রাচীন মনাস্ট্রি

তুরস্কের পূর্বাঞ্চলের ব্ল্যাক সি উপকূল থেকে প্রায় এক ঘণ্টার পথ ঘুরে পন্টিক পর্বতমালার ওপরে পৌঁছালে চোখে পড়ে এক অসাধারণ দৃশ্য—পাহাড়ের প্রাচীরের ওপর ঝুলন্ত সুমেলা মনাস্ট্রি।

মনাস্ট্রির স্থাপনা দেখলে মনে হবে কোনো বিখ্যাত শিল্পী তাঁর ক্যানভাসে ছবি এঁকে রেখেছেন। চ্যাপেল, প্রাঙ্গণ, লাইব্রেরি, সন্ন্যাসীদের কক্ষ, ঘণ্টাঘর ও পাথরে ঘেরা পবিত্র উৎস, সবই ঝুলে আছে পাহাড়ের গায়ে—প্রায় ৩০০ মিটার বা ১ হাজার ফুট ওপরে। এর নিচে ঘন বন ও নদী। ওপর থেকে দেখলে সবকিছুই হালকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা মনে হয়।

মনাস্ট্রির ইতিহাস

মনাস্ট্রিটি চতুর্থ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত বলে ধারণা করা হয়। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, বারনাবাস ও সোফ্রোনিওস নামে দুই গ্রিক সন্ন্যাসী এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই সময়। স্বপ্নে মেরি তাঁদের জানান, পন্টিক পর্বতমালায় লুকানো আছে লুক দ্য অ্যাপোস্টল আঁকা একটি পবিত্র ছবি। বারনাবাস ও সোফ্রোনিওস সেই ছবি খুঁজে পেয়ে নাম দেন ‘প্যানাগিয়া সুমেলা’।

তেরো শ শতাব্দীতে মনাস্ট্রিটি বর্তমান আকার পায়। এই প্রাচীন প্রাচীরের মধ্যে রোমান সাম্রাজ্য থেকে বাইজেন্টাইন, ওসমানি শাসন এবং পরবর্তী সময়ে তুরস্কের স্বাধীনতাসংগ্রামের মতো অনেক ইতিহাস সাক্ষী হয়েছে।

ওসমানি শাসনকালে মুসলিম শাসকেরা খ্রিষ্টানদের ওপর আক্রমণ না করে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থানগুলো রক্ষা করত। কখনো কখনো তারা ছোট ছোট দান বা জমি দিয়ে মনাস্ট্রির সন্ন্যাসীদের সাহায্যও করত। ফলে সুমেলা শুধু একটি ধর্মীয় স্থানই নয়, ভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সহনশীলতার নিদর্শন হিসেবেও পরিচিত।

স্থাপত্য ও ফ্রেস্কো

সুমেলা মনাস্ট্রি শুধু ইতিহাস নয়। এখানকার চিত্রশিল্প ও স্থাপত্য পর্যটকদের আরও চমকপ্রদ করে তোলে। মনাস্ট্রির বাইরের অংশে চোখে পড়ে বিশাল চিত্রকলা। সেখানে যিশু, মেরি ও দেবদূতদের ছবি আঁকা আছে। প্রতিটি ছবি যেন একেকটি গল্প, যা দর্শকের চোখে ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলে।

গুহার ভেতরে তেরো শ শতাব্দীতে আঁকা আরও রহস্যময় চিত্রশিল্প আছে। তবে জানিয়ে রাখা ভালো, এই মনাস্ট্রিতে শুধু সৌন্দর্য নয়, রোমান যুগের সিংহদের হাতে মানুষ মারা যাওয়ার মতো ভয়ংকর দৃশ্যের ছবিও দেখা যায়।

Sümela_manastır-photo-wiki-2

রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্নির্মাণ

মনাস্ট্রির রক্ষণাবেক্ষণ চলমান। সেখানে ফ্রেস্কো পুনরুদ্ধারের কাজ অত্যন্ত যত্নসহকারে করা হচ্ছে। শিল্পী সেনল আক্তাশ জানান, তাঁরা মূল রং ও শৈলীর সঙ্গে মিল রেখে ফ্রেস্কোগুলো পুনরায় সাজাচ্ছেন। এখানে পর্যটকেরা গোপন চ্যাপেল ও ছোট ছোট কক্ষগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। রক্ষণাবেক্ষণ চলাকালীন অপ্রত্যাশিত অনেক কিছু আবিষ্কারও হয়েছে সে মনাস্ট্রিতে। তার মধ্যে আছে একটি গোপন সুড়ঙ্গ। তার ভেতরেও কিছু চমকপ্রদ ফ্রেস্কো পাওয়া গেছে। সেসব ফ্রেস্কতে ফুটে উঠেছে ইতিহাসের অনেক গল্প।

ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

সুমেলা মনাস্ট্রি একসময় ছিল গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ। ওসমানি সাম্রাজ্যের পতনের পর তুরস্কের স্থানীয় গ্রিকরা গ্রিসে চলে যায়। ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট ৮৮ বছরে প্রথমবারের মতো পুনরায় অর্থোডক্স উপাসনার আয়োজন হয়েছিল। এখন অবশ্য প্রতিবছর একই দিনে অর্থোডক্স উপাসনার আয়োজন করা হয়।

দর্শক ও ভ্রমণ তথ্য

তুরস্কের আলতিন্দেরে ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত এ মনাস্ট্রি। ব্ল্যাক সি উপকূলের ট্রাবজোন শহর থেকে প্রায় এক ঘণ্টার পথ পারি দিয়ে যেতে হয় সেখানে।

পরিবহন: পার্কিং লট থেকে শাটল বা সিঁড়িপথ দিয়ে ধাপে ধাপে মনাস্ট্রিতে পৌঁছানো।

ব্যয়: ২০ ইউরো।

খোলা থাকার সময়: সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা।

ভ্রমণকাল: সাধারণত ১ থেকে ২ ঘণ্টা।

শীতকালে তুষার ও গ্রীষ্মে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। তাই শক্ত জুতা ও আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পরা প্রয়োজন সেখানে যেতে চাইলে।

আশপাশে থাকার ব্যবস্থা

সেখানে কোসানদেরে গ্রামে তিন তারকা মানের সুমেলা হলিডে হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া ট্রাবজোন শহরে রামাদা প্লাজা ও র‍্যাডিসন ব্লুর মতো বড় হোটেল আছে।

সুমেলা মনাস্ট্রি শুধু প্রাচীন স্থাপত্যের জন্যই নয়, এটি ভ্রমণ, ইতিহাস, শিল্প ও আধ্যাত্মিকতার মিলনকেন্দ্র হিসেবেও বিখ্যাত। পাহাড়ের প্রাচীরের সঙ্গে ঝুলে থাকা, চোখধাঁধানো ফ্রেস্কো আর সমৃদ্ধ ইতিহাস এই জায়গাকে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

সূত্র: সিএনএন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অগোচরে থাকা খাদ্য অ্যালার্জি নিয়ে সচেতন থাকুন

ফিচার ডেস্ক
অ্যালার্জিক খাবারগুলো বারবার খেলে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। ছবিঃ পেক্সেলস
অ্যালার্জিক খাবারগুলো বারবার খেলে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। ছবিঃ পেক্সেলস

কম শক্তি, পেট ফাঁপা কিংবা ত্বকের সমস্যার মতো উপসর্গগুলোকে অনেকে ব্যস্ত জীবন বা ভুল খাদ্যাভ্যাসের ফল বলে মনে করেন। এর জন্য তাঁরা ব্যস্ত জীবন বা বাজে খাদ্যাভ্যাসকে দায়ী করেন। ফলে এই বিষয়গুলো উপেক্ষা করা হয়। কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে খাদ্য অ্যালার্জি বা অসহিষ্ণুতা। আমাদের পরিবর্তিত খাদ্য, প্রক্রিয়াজাত খাবারের অত্যধিক ব্যবহার এবং অন্যান্য পরিবেশগত কারণে বিশ্বজুড়ে এই সমস্যাগুলো আরও সাধারণ হয়ে উঠছে। দুঃখজনকভাবে, অনেক মানুষ সাহায্য ছাড়াই কষ্ট পান। কারণ, তাদের উপসর্গগুলো অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার মতো হওয়ায় অনেক সময় মানুষ বুঝতে ভুল করেন। এভাবেই সেগুলো উপেক্ষা করা হয়।

খাদ্য অ্যালার্জি পরীক্ষা কেন করাবেন

পুষ্টির ক্ষেত্রে ‘একই মাপ সবার জন্য’ নীতিটি খাটে না। দুগ্ধজাত পণ্য, বাদাম বা ডিমের মতো খাবারগুলোকে অনেকে স্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে এসব অসুস্থতার কারণ হতে পারে। খাদ্য অ্যালার্জি পরীক্ষা বিশেষভাবে চিহ্নিত করতে পারে, কী আপনাকে প্রভাবিত করছে। এটি আপনাকে সাধারণ পরামর্শ অনুসরণ না করে, প্রয়োজনের সঙ্গে মানানসই একটি সুষম খাদ্য পরিকল্পনা তৈরিতে সাহায্য করে।

কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি বা বারবার মাথাব্যথা হতে পারে। ছবিঃ পেক্সেলস
কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি বা বারবার মাথাব্যথা হতে পারে। ছবিঃ পেক্সেলস

দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ প্রতিরোধ

কিছু খাবার খাওয়ার পরে কি আপনার কখনো শরীর খারাপ লেগেছে? অ্যালার্জিক খাবারগুলো বারবার খেলে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। এটি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, একজিমা, মাইগ্রেন এবং ক্লান্তির মতো সমস্যার জন্ম দিতে পারে। এই ধরনের খাবারগুলো চিহ্নিত করে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিলে শরীর ভালো রাখা সম্ভব। এভাবে প্রদাহজনিত রোগের ঝুঁকি কমাতে পারেন।

অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে সমর্থন

হজম এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতায় আপনার অন্ত্র একটি মূল ভূমিকা পালন করে। যে খাবারগুলো শরীর সামলাতে পারে না, সেগুলো খেলে পেট ফাঁপা, গ্যাস বা পেটে ব্যথার মতো অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। আপাতদৃষ্টে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরেও এমন হতে পারে। অ্যালার্জি পরীক্ষা আপনাকে খুঁজে বের করতে সাহায্য করতে পারে, কোন খাবারগুলো আপনাকে জ্বালাতন করছে। এটি অন্ত্রের নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে এবং উন্নত হজম ও শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করতে পারে।

শক্তি এবং মনোযোগ বৃদ্ধি

দুপুরের খাবারের পরে কি আপনার ক্লান্ত এবং মনোযোগহীন মনে হয়? এর কারণ হতে পারে খাদ্যের মধ্যে থাকা লুকানো সংবেদনশীলতা। এই খাবারগুলো শক্তি কমিয়ে দিতে পারে। আপনি যদি সেগুলো খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেন, তবে আপনি শক্তির মাত্রা এবং মনোযোগে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ করতে পারেন। এই পরিবর্তন আপনার উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে, পরিষ্কার চিন্তার মাধ্যমে কম সময়ে বেশি কাজ করতে সাহায্য করতে পারে।

খাদ্য অ্যালার্জির ৫টি উপসর্গ

যদি খাদ্য অ্যালার্জি পরীক্ষা করার কথা ভাবেন, তবে এই লক্ষণগুলো মনে রাখুন—

১। ঘন ঘন পেট ফাঁপা বা অ্যাসিডিটি। এমনকি আপাতদৃষ্টে স্বাস্থ্যকর খাবারের পরেও এমন সমস্যা হলে।

২। অকারণ ত্বকের সমস্যা, যেমন র‍্যাশ, ব্রণ বা একজিমা।

৩। কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি বা বারবার মাথাব্যথা।

৪। মৌসুমি অ্যালার্জি বা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার পরে বেড়ে যায়।

৫। খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মেজাজের পরিবর্তন বা ব্রেন ফগ অনুভব করা।

সূত্র: হেলথ শর্টস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আঠালো খুশকি থেকে মুক্তি পেতে জেনে নিন ৬ উপায়

ফিচার ডেস্ক
আঠালো খুশকি থেকে মুক্তি পেতে জেনে নিন ৬ উপায়

খুশকি নিয়ে সমস্যায় ভোগেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারও মাথায় সাদা গুঁড়ার মতো খুশকি উড়ে বেড়ায়, কারও আবার চুল সব সময় ভারী ও আঠালো লাগে। অনেক সময় মানুষ ধরে নেয়, এটি শুধু চুলে তেল জমে থাকার কারণে হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে, তেলতেলে এবং আঠালো খুশকি একধরনের সমস্যা। এর যত্ন আলাদা ও নিয়মিত নিতে হয়।

ভারতে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও কসমেটোলজিস্ট অমিত ভাসিন বলেন, তেলতেলে খুশকি আসলে মাথার অতিরিক্ত তেল আর একধরনের ছত্রাকের মিশ্র ফল। এই অবস্থায় মাথার ত্বকে ঠিকভাবে অক্সিজেন পৌঁছায় না। ফলে চুলও দুর্বল হয়ে যায়।

তেলতেলে ও আঠালো খুশকি আসলে কী

খুশকির মূল কারণ হলো মাথার ত্বকে থাকা একধরনের ছত্রাক। সাধারণ অবস্থায় এটি ক্ষতিকর নয়। কিন্তু মাথার ত্বক যদি অতিরিক্ত তেল উৎপন্ন করে, তখনই এই ছত্রাক দ্রুত বাড়তে থাকে। ফলাফল—চুলকানি, আঠালো সাদা খুশকি, মাথার ত্বকে অস্বস্তি, এমনকি চুল পড়াও। এই ধরনের খুশকি শুধু চুলের সৌন্দর্য নষ্ট করে না, বরং আত্মবিশ্বাসেও প্রভাব ফেলে। তাই সময়মতো সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি।

ডিপ ক্লিনিং অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন

সাধারণ শ্যাম্পু নয়, এমন শ্যাম্পু বেছে নিন, যা বিশেষভাবে তেলতেলে খুশকি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। শ্যাম্পুতে নিচের উপাদান দুটি থাকলে তা সবচেয়ে কার্যকর—

পাইরোকটন ওলামিন: এটি ছত্রাকনাশক উপাদান, যা খুশকির মূল কারণ মালাসেজিয়াকে দমন করে।

অ্যাকটিভেটেড চারকোল: এটি মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তেল ও ময়লা টেনে নেয়, কিন্তু প্রাকৃতিক আর্দ্রতা নষ্ট করে না।

আর্দ্রতা বা গরমে চুল ধোয়ার ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ান

আর্দ্র আবহাওয়ায় ঘাম, ধুলো ও তেল মিশে খুশকি দ্রুত বাড়ায়। তাই—

– সপ্তাহে কমপক্ষে তিনবার চুল ধোয়া উচিত।

– ব্যায়াম অথবা বাইরে থেকে ফেরার পর মাথা ধুয়ে ফেলুন।

– খুব গরম পানিতে নয়, কুসুম গরম বা ঠান্ডা পানিতে চুল ধোয়া ভালো।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিষ্কার মাথার ত্বকই খুশকি নিয়ন্ত্রণের প্রথম শর্ত।

শ্যাম্পু করার সময় ‘ডাবল রিন্স’ পদ্ধতি অনুসরণ করুন

অনেক সময় শ্যাম্পুর অবশিষ্টাংশই মাথায় খুশকি বাড়ায়। তাই চুল ধোয়ার সময় দুই ধাপে পরিষ্কার করুন—

– প্রথম ধাপে হালকা শ্যাম্পু করে ময়লা ও তেল তুলুন।

– দ্বিতীয় ধাপে অল্প শ্যাম্পু নিয়ে ভালোভাবে ঘষে ধুয়ে ফেলুন।

এতে ত্বক গভীরভাবে পরিষ্কার হয় এবং আঠালো খুশকি জমার সুযোগ কমে যায়।

তেল ও সেরাম ব্যবহার কমান

অনেকে মনে করেন, চুলে নিয়মিত তেল দিলে খুশকি কমে। কিন্তু তেলতেলে খুশকির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো। অতিরিক্ত তেল ছত্রাকের বৃদ্ধি বাড়ায়। তাই—

– সপ্তাহে একবার হালকা তেল দিন।

– রাতভর তেল রেখে ঘুমাবেন না।

তেল দেওয়ার পর পরদিন সকালে ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ফেলুন।

ভারী ওয়্যাক্স, জেল বা হেয়ার ক্রিম এড়িয়ে চলুন

চুল সাজাতে ব্যবহার করা ভারী জেল বা ওয়্যাক্স মাথার ত্বক বন্ধ করে দেয়। এতে তেল ও মৃত ত্বককোষ আটকে গিয়ে খুশকি বাড়ে। এর পরিবর্তে—

– হালকা হেয়ার সেরাম বা অয়েল ফ্রি স্প্রে ব্যবহার করুন।

– স্টাইলিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে একই দিন চুল ধুয়ে ফেলুন।

খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক চাপের যত্ন নিন

মাথার ত্বকও শরীরের অংশ। তাই অভ্যন্তরীণ যত্নও জরুরি।

খাবারে পরিবর্তন আনুন: চিনি, ভাজাপোড়া ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে ফল, সবজি ও পূর্ণ শস্য বাড়ান।

পানি পান করুন: শরীর হাইড্রেটেড রাখলে ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণে থাকে।

মানসিক চাপ কমান: নিয়মিত ব্যায়াম, যোগব্যায়াম বা ধ্যান চুল ও ত্বক—দুটোই সুস্থ রাখে।

অতিরিক্ত কিছু ঘরোয়া টিপস

শ্যাম্পুর আগে লেবুর রস বা আপেল সিডার ভিনেগার পানির সঙ্গে মিশিয়ে মাথায় লাগালে ত্বক পরিষ্কার হয়।

– অ্যালোভেরা জেল খুশকি কমাতে এবং চুল ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

– টি ট্রি অয়েলের কয়েক ফোঁটা শ্যাম্পুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ছত্রাকনাশক কাজ করে।

তবে এসব ঘরোয়া উপায় সবার ত্বকে মানিয়ে না-ও নিতে পারে। তাই নতুন কিছু ব্যবহার করার আগে অল্প জায়গায় পরীক্ষা করে নিন।

সূত্র: হেলথশট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: প্রেমের সম্পর্কে গভীরতা বাড়বে, পকেটে আসবে টাকা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৫৬
আজকের রাশিফল: প্রেমের সম্পর্কে গভীরতা বাড়বে, পকেটে আসবে টাকা

আজ শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫। গ্রহ-নক্ষত্রের উত্থান-পতন তো চলতেই থাকবে, কিন্তু দিনের শেষে আপনি কী করছেন, সেটাই আসল। তাই সাহস দেখান, ধৈর্য ধরুন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—ফোনটা রেখে কাজে লেগে পড়ুন। ভালো কিছু ঘটলে সেটা আপনার ক্রেডিট, আর খারাপ হলে ‘রাশিফল ভালো ছিল না’ বলে চালিয়ে দিন! আসলে দোষটা আর কারও নয়, শুধু আপনার অলসতা।

মেষ

কর্মক্ষেত্রে আজ আপনার নিজেকে ‘একমাত্র বুদ্ধিমান ব্যক্তি’ বলে মনে হবে। বাকিরা সব মুরগি...মানে, সহকর্মী! টাকা ধার দেওয়ার আগে এটিএম কার্ডের পিন নম্বরটা বেমালুম ভুলে যান। কারণ, সেই টাকা ফেরত আসার সম্ভাবনা, আপনার পুরোনো ডায়েট প্ল্যান সফল হওয়ার মতোই ক্ষীণ। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ফল নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না; চিন্তা করে তো আর নম্বর বাড়বে না! অন্তত লাইব্রেরিতে বসে পড়ার ভান করুন।

বৃষ

বসকে খুশি করতে চাইলে আজ তেল মারুন, কিন্তু মাথায় রাখবেন—মাত্রা ছাড়ালে চাটুকার মনে হবে। জিহ্বায় নিয়ন্ত্রণ রাখুন। কারণ, আপনার মুখের কথাতেই দাম্পত্য জীবনে ‘সুখী’ শব্দটি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। সম্পত্তি বা গাড়ি কেনার যোগ আছে—কিন্তু কেনার পর পকেট যে ফাঁকা হবে, সেই দুঃখ ভুলতে পারবেন তো? বাজেট মেনে চলবেন, কারণ আপনার ওয়ালেট আজ আপনার দিকে কটমট করে তাকাচ্ছে।

মিথুন

আজ আপনার জীবনসঙ্গী বা বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিন। কাজে মন না লাগলে ঘুরতে যান, কারণ ব্যবসায়িক যাত্রা আজ সফল হবে। তবে সময়মতো জায়গামতো পৌঁছাতে হবে। শ্বশুরবাড়ি থেকে আসা কোনো আর্থিক ‘উপহার’ বা চাপ আপনার কপালে ভাঁজ ফেলতে পারে। আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্য খারাপ হলে, দয়া করে ডাক্তার চ্যাটজিপিটিকে বিশ্বাস করে চিকিৎসা করবেন না!

কর্কট

আজ পকেটে টাকা ঢুকতে পারে, কিন্তু অনলাইনে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা বন্ধ করুন। সঞ্চয়ে মন দিন, না হলে মাসের শেষে আপনাকে ডাল-ভাত খেয়ে থাকতে হবে। পুরোনো পারিবারিক বিবাদ মিটবে—এই সুযোগে শান্তিতে একটু নাক ডেকে ঘুম দিয়ে নিন। আর সন্তানের জন্য চিন্তা? চিন্তা করবেন না, তারা বড় হলে আরও বেশি চিন্তা দেবে—তাই এখন থেকেই অভ্যাস করুন!

সিংহ

আজ আপনি পরিবারের সঙ্গে গুণগত সময় কাটাবেন (যদি না তারা আপনাকে ফোন ঘাটাঘাটি করতে দেখে)। আপনার ব্যক্তিত্বে সবাই মুগ্ধ হবে—অতিরিক্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে লোকে ভাববে আপনি ভোটে দাঁড়াচ্ছেন! বাবার সঙ্গে মতবিরোধ হলে তর্ক করবেন না, কারণ বাবা সবসময় ঠিক (যদিও আপনি জানেন যে আপনিই ঠিক)। স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা থাকলে মনে রাখবেন, সুস্থ থাকতে হলে জিম শুধু লোক দেখানোর জন্য নয়।

কন্যা

অতিরিক্ত উদারতা দেখিয়ে অন্যের উপকার করলে আপনার নিজের কাজের ক্ষতি হতে পারে। আজই আপনার ‘না’ বলা শেখার দিন। হঠাৎ করে চাকরির সুযোগ এলে অবাক হবেন না—তবে কাজ করতে হবে, সেকথা মনে রাখবেন। অতীতের কোনো ভালো কাজের ফল আজ পেতে পারেন, যা আপনাকে কিছুক্ষণ মানসিক শান্তি দেবে (যতক্ষণ না আপনার বস আবার ফোন করছে)।

তুলা

প্রেমের সম্পর্কে আজ গভীরতা বাড়বে, এতটাই গভীর যে আপনি ডুব দিতে পারেন। ব্যবসায় লাভের মুখ দেখবেন, বিশেষত পার্টনারশিপে (তবে পার্টনারকে বিশ্বাস করার আগে একবার টিপে দেখে নেবেন)। সম্পর্কের ভুল-বোঝাবুঝি হলে ধৈর্য ধরুন অথবা একটা দামি উপহার কিনে দিন। আজ বেশি তেল-ঝাল মসলা খাবেন না, লিভার বা হজমের সমস্যা হলে আপনার রসিকতা করার মুড থাকবে না।

বৃশ্চিক

আজ আপনার আত্মবিশ্বাস এতটাই তুঙ্গে থাকবে যে আপনি আপনার নিজের সেলফি দেখে নিজেই মুগ্ধ হবেন। আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে, মনে হবে যেন লটারি জিতেছেন (যদিও জেতেননি, তবে অনুভূতিটা একই)। আপনার সৃজনশীলতা আজ আপনার ওপর এতটাই ভর করবে যে আপনি অফিসের প্রেজেন্টেশনকে কবিতা বানিয়ে ফেলবেন। প্রেমের বন্ধন মজবুত হবে, তাই প্রিয়জনের কাছে একটু নাটকীয় প্রশংসা প্রত্যাশিত।

ধনু

ভাগ্য আজ আপনাকে এমন সাহায্য করবে যেন আপনি তার প্রিয় সন্তান। টাকা বাড়তে পারে, তাই বাজেটটা একটু বাড়িয়ে নিন। অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে কাজের প্রতি মন বসবে না, তাই একটু ‘ধর্মীয়’ বা ‘বিনোদনের’ অজুহাতে ভ্রমণ করে আসতে পারেন। উচ্চশিক্ষার কাজে সফল হবেন, বিশেষত যদি আপনি ফেসবুক স্ক্রল করা বাদ দিয়ে সত্যিই বই খোলেন।

মকর

অবিবাহিতরা আজ বিশেষ কারও আগমন আশা করতে পারেন—হতে পারে সেটা কোনো ডেলিভারি বয়, আবার হতে পারে আপনার স্বপ্নের মানুষ! কর্মক্ষেত্রে আপনার এনার্জি দেখে বস খুশি হবে, তাই প্রমোশনের কথা মনে করিয়ে দিন। তবে সঙ্গী যদি কোনো গোপন কথা লুকিয়ে রাখে, তাহলে মাথা ঠান্ডা রাখুন। গুপ্তচরবৃত্তি করে জানতে যাবেন না, তাহলে সুখের সংসারে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ শুরু হতে পারে।

কুম্ভ

যৌথ কাজে আজ আপনার কপাল খুলবে। লাভের টাকা এলে পার্টনারকে না দিয়ে পকেটে ভরবেন না, তাহলে ফল ভালো হবে না। অপ্রত্যাশিত আর্থিক লাভ আপনার ওয়ালেটকে শক্তিশালী করবে। সম্পর্কের গভীর বন্ধন আপনাকে শান্তি দেবে, যতক্ষণ না আপনার জীবনসঙ্গী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। কারণ, তাঁকে খুশি রাখাটাও একটা বড় প্রকল্প।

মীন

আজ স্ত্রীর সঙ্গে কেনাকাটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে—আপনার বাজেট নিয়ে নয়, শুধু কেনার তালিকা নিয়ে। শত্রুর সঙ্গে মিটমাট হলেও সাবধানে থাকুন। কারণ, তারা যেকোনো সময় আবার বন্ধুত্বের মুখোশ খুলে ফেলতে পারে। শারীরিক দুর্বলতা বোধ করলে বিশ্রাম নিন। তবে আজ আপনার অতিরিক্ত কথা বলার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করুন, না হলে আপনার মুখের কথাতেই ঝামেলা বাঁধবে—কম বলুন, বেশি শুনুন!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশ্বজুড়ে বিয়েতে অনীহা, সর্বনিম্ন হার যেসব দেশে

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৪৬
বিয়ের সিদ্ধান্তে থাকা উচিত বিবেচনাবোধ। ছবি: ফ্রিপিক
বিয়ের সিদ্ধান্তে থাকা উচিত বিবেচনাবোধ। ছবি: ফ্রিপিক

বিশ্বজুড়ে বিয়ের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে। দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে বিয়ের ধারণা। অর্থনৈতিক বাস্তবতা, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিবর্তন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতি গভীর মনোযোগের কারণে অনেক দেশে প্রথাগত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা কমছে।

তরুণেরা এখন কর্মজীবন, শিক্ষা, ভ্রমণ এবং ব্যক্তিগত উন্নতিকে বিয়ের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। বিশেষত ইতালির মতো ইউরোপীয় দেশগুলোতে এই প্রবণতা উল্লেখযোগ্য। মানুষ এখন আর প্রথাগত বিবাহবন্ধনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

দ্য ইকোনমিস্টের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১ হাজার জনে বার্ষিক বিয়ের সংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বের সর্বনিম্ন বিয়ের হারের দেশগুলোকে চিহ্নিত করা যায়। যেখানে দেখা যায় কোন দেশে বিবাহের হার এখন তলানিতে।

পশ্চিম গোলার্ধের বেশ কয়েকটি দেশ বিবাহের বাঁধন থেকে সরে আসছে। ছবি: পেক্সেলস
পশ্চিম গোলার্ধের বেশ কয়েকটি দেশ বিবাহের বাঁধন থেকে সরে আসছে। ছবি: পেক্সেলস

উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার চিত্র: লিভটুগেদারই যেখানে নতুন রীতি

পশ্চিম গোলার্ধের বেশ কয়েকটি দেশ বিয়ের বাঁধন থেকে সরে আসছে। এই প্রবণতা শুরু হয়েছে কোস্টারিকা থেকে। সেখানে বিয়ের হার হাজারে ৩ দশমিক ৮। দেশটিতে বিরাজমান অর্থনৈতিক উদ্বেগ এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বিয়ের চেয়ে লিভটুগেদারের পথকে প্রশস্ত করেছে। এর কিছুটা নিচে রয়েছে পানামা (৩ দশমিক ৩) এবং মেক্সিকো (৩ দশমিক ৩)। যেখানে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সম্পর্কের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন লক্ষণীয়। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে চিলিতেও (৩ দশমিক ৩) জীবনযাত্রার খরচ বাড়ায় এবং লৈঙ্গিক ভূমিকার পরিবর্তনের কারণে বিয়ে দেরিতে হচ্ছে।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সুরিনাম (৩ দশমিক ৪) লিভটুগেদারকে আনুষ্ঠানিক বিয়ের চেয়ে বেশি সমর্থন করে। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং আইনি বিয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জনগণের সংশয়ের কারণে আর্জেন্টিনার (২ দশমিক ৯) স্থানও তালিকার নিচের দিকে। উরুগুয়ে (২ দশমিক ৮) এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে ফরাসি অঞ্চলের মার্তিনিক (২ দশমিক ৮) ও গুয়াডেলুপ (২ দশমিক ৮) বিকল্প সম্পর্কের দিকে ঝোঁক দেখাচ্ছে।

অর্থনৈতিক অস্থিরতার চরম প্রভাব পড়েছে ভেনেজুয়েলা (২ দশমিক ৬) এবং পেরুতে (২ দশমিক ৫), যেখানে আর্থিক নিরাপত্তার তাগিদে বিয়ে এখন অগ্রাধিকার তালিকার একেবারে তলানিতে। ফরাসি গায়ানা (২ দশমিক ৪)-এর তরুণ জনসংখ্যা অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ককে প্রাধান্য দেয়।

এই পরিসংখ্যান কেবল বিবাহের হার কমে যাওয়া নয় বরং বিশ্বজুড়ে সম্পর্কের ধারণা বদলে দেয়। ছবি: পেক্সেলস
এই পরিসংখ্যান কেবল বিবাহের হার কমে যাওয়া নয় বরং বিশ্বজুড়ে সম্পর্কের ধারণা বদলে দেয়। ছবি: পেক্সেলস

ইউরোপের সমাজ: সিভিল পার্টনারশিপের উত্থান

ইউরোপ মহাদেশে বিবাহবিমুখতার কারণ কিছুটা ভিন্ন। এখানে বহু মানুষ প্রথাগত বিয়ের পরিবর্তে সিভিল পার্টনারশিপ বা আইনি সুরক্ষার মধ্যে লিভটুগেদারকে বেছে নিচ্ছে। এই তালিকায় ইউরোপের প্রথম দেশ নরওয়ে (৩ দশমিক ৬), যেখানে দেরিতে বিয়ের সংস্কৃতি বিদ্যমান। এরপরই রয়েছে নেদারল্যান্ডস (৩ দশমিক ৫), লুক্সেমবার্গ (৩ দশমিক ৫), গ্রিস (৩ দশমিক ৫) ও বুলগেরিয়া (৩ দশমিক ৫); বিশেষত গ্রিস ও বুলগেরিয়ায় আর্থিক অস্থিরতা অনেক জুটিকে বিয়ে বিলম্বিত করতে বাধ্য করছে।

ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ বেলজিয়াম (৩ দশমিক ৪) লিভটুগেদারের প্রতি ঝুঁকেছে। ইতালি (৩ দশমিক ২) এবং স্লোভেনিয়ায় (৩ দশমিক ২) তরুণ প্রজন্ম কর্মজীবন এবং আর্থিক স্থিতিশীলতাকে বিয়ের আগে প্রাধান্য দিচ্ছে। একেবারে নিচের দিকে রয়েছে স্পেন (৩ দশমিক ১), মাল্টা (৩ দশমিক ১) এবং বিশেষভাবে ফ্রান্স (৩ দশমিক ১)। ফ্রান্সে বিয়ের হার কম হওয়ার মূল কারণ হলো প্যাক্সের মতো আইনি চুক্তির ব্যাপক জনপ্রিয়তা, যা বিয়ে ছাড়াই আইনি সুবিধা নিশ্চিত করে। পর্তুগালের (২ দশমিক ৯) ক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক চাপ এবং লিভটুগেদারের প্রবণতা মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিবাহের হার ৩.৭। ছবি: পেক্সেলস
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিবাহের হার ৩.৭। ছবি: পেক্সেলস

এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ওশেনিয়ার ব্যতিক্রমী হার

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া (৩ দশমিক ৭) এই তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়, তীব্র কাজের চাপ এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের দ্রুত পরিবর্তন এখানকার কম বিয়ের মূল কারণ।

অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের রক্ষণশীল সংস্কৃতি থাকা সত্ত্বেও বিয়ের উচ্চ ব্যয় এবং তরুণদের পরিবর্তিত প্রত্যাশার কারণে কুয়েতের (৩ দশমিক ৫) হার কম। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর হার দেখা যায় কাতারে (১ দশমিক ৪) । যেখানে বিপুলসংখ্যক একক প্রবাসী শ্রমিক এবং কাতারি নাগরিকদের মধ্যে উচ্চ ব্যয়ের কারণে বিয়ে বিলম্বিত হয়, আর এ কারণে বিয়ের হারও সর্বনিম্ন।

ওশেনিয়া অঞ্চলে নিউজিল্যান্ড (৩ দশমিক ৬) এবং অস্ট্রেলিয়াতেও (৩ দশমিক ৫) দেরিতে বিয়ে এবং বিকল্প সম্পর্কের কাঠামো জনপ্রিয় হচ্ছে। আফ্রিকার ফরাসি অঞ্চল রেউনিওঁতেও (৩.৩) লিভটুগেদারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

এই পরিসংখ্যানগুলো কেবল বিয়ের হার কমে যাওয়া নির্দেশ করে না; বরং দেখায় যে বিশ্বজুড়ে সম্পর্কের ধারণাটিই বদলে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং আত্ম-উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা মানুষকে প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের প্রতি কম আগ্রহী করে তুলছে, যেখানে আইনি বন্ধন ছাড়াই আস্থা ও স্থিতিশীলতাকে অনেকে নতুন সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।

কোথাও জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়, ঋণের বোঝা এবং আর্থিক অস্থিতিশীলতার কারণে তরুণ প্রজন্ম বিয়ে বিলম্বিত করছে বা এড়িয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও প্রথাগত বিয়ের গুরুত্ব কমে আসছে। লিভটুগেদার, সিভিল পার্টনারশিপ (যেমন ফ্রান্সের প্যাক্স) এবং আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছাড়াই দীর্ঘমেয়াদি বন্ধন এখন বেশি গ্রহণযোগ্য।

সূত্র: স্টাটিস্টা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত