Ajker Patrika

চল্লিশের পর যেভাবে যত্ন নিলে ত্বক থাকবে সুস্থ ও সুন্দর

শারমিন কচি, রূপ বিশেষজ্ঞ
চল্লিশ বছর বয়সের পর ত্বকের বাড়তি যত্ন জরুরি। ছবি: ফ্রিপিক
চল্লিশ বছর বয়সের পর ত্বকের বাড়তি যত্ন জরুরি। ছবি: ফ্রিপিক

মন নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাঁদের মতে, চল্লিশ বছরের পর কমবেশি সবারই একটা পরিবর্তন আসে। ভাবনা-চিন্তা থেকে শুরু করে জীবনবোধের এই পরিবর্তন চলার পথকে চেনায় নতুন করে। আবার বয়স ৪০ হলে একদিকে যেমন ক্যারিয়ারে স্থিতিশীলতা আসে, ব্যক্তিজীবনেও থাকে সন্তানসন্ততি নিয়ে ভরা সংসারের গল্প। এসবের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ত্বকও পরিপক্ব হতে থাকে।

এ সময় চোখের নিচে বলিরেখা দেখা, ত্বকের অনুজ্জ্বল ভাব আরও স্পষ্ট হতে শুরু করে। হাত ও পায়ের দিকে তাকালেই বোধগম্য হয়, বয়সটা দিন দিন বাড়ছে। তবে জেনে রাখুন, বয়স যতই হোক, বাঁচাটা সুন্দর হওয়া চাই। প্রতিদিন আয়নায় নিজেকে দেখে যেন বাঁচার ইচ্ছাটা একটু করে বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ফলে যত ব্যস্তই থাকুন না কেন, দিনের একটু সময় নিজের জন্য বরাদ্দ রাখুন, নিজের যত্ন নিন। খাদ্যতালিকায় শরীর ও ত্বকের উপযোগী খাবারকে প্রাধান্য দিন। দিনে অন্তত এক ঘণ্টা সময় বের করুন ত্বকের যত্ন নিতে। তবেই ত্বক হাসবে নতুন করে।

খাদ্যতালিকায় নজর দিন

ত্বক স্বাস্থ্য়োজ্জ্বল রাখতে কোলাজেন খুব জরুরি। যেসব খাবার কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে, সেগুলো খাদ্যতালিকায় রাখার চেষ্টা করুন।

ত্বক স্বাস্থ্য়োজ্জ্বল রাখতে কোলাজেন জরুরি। তাই চল্লিশ বছরের পর কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার বেশি রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। ছবি: পেক্সেলস
ত্বক স্বাস্থ্য়োজ্জ্বল রাখতে কোলাজেন জরুরি। তাই চল্লিশ বছরের পর কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার বেশি রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। ছবি: পেক্সেলস

গাজর: গাজরে প্রচুর ভিটামিন এ থাকে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকে কোলাজেন পুনরুৎপাদন করে। এর পাশাপাশি মিষ্টিআলু, অ্যাপ্রিকট, খরমুজ ও আম খাওয়া যেতে পারে।

টমেটো: এতে প্রচুর লাইকোপিন থাকে। এটি সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ত্বকের কোলাজেন ভেঙে দেয়। ফলে বলিরেখা পড়ে। টমেটো তা প্রতিরোধে সহায়তা করে।

কাঠবাদাম: এতে প্রচুর ভিটামিন ই, সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ভিটামিন ই ভিটামিন সির সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোলাজেন তৈরি করে। তাই ৩০ বছর বয়সের পর নিয়মিত পাঁচ-ছয়টি করে কাঠবাদাম খাদ্যতালিকায় রাখুন।

আখরোট: আখরোটে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে, টক্সিনের ছাপ পড়তে দেয় না ত্বকে।

গাঢ় সবুজ শাকসবজি: গাঢ় সবুজ শাকসবজিতে আছে প্রচুর খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন এ, সি, ই। এগুলো কোলাজেন তৈরির জন্য দরকারি। খাদ্যতালিকায় পালংশাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শালগম ও শিম রাখুন।

সামুদ্রিক মাছ: সামুদ্রিক মাছে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি ভিটামিন ডি-এর সঙ্গে মিলে ত্বক কোমল ও হাড় মজবুত রাখে। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন সামুদ্রিক মাছ খাওয়া দরকার।

রসুন ও কাঁচা হলুদ: রসুন উচ্চ সালফারযুক্ত মসলা। এটি কোলাজেন ভেঙে যাওয়া রোধ করে। হলুদকে বলা হয় পাওয়ার হাউস বা শক্তি ঘর। প্রতিদিন সকালে দু-একটি কোয়া কাঁচা রসুন ও খালি পেটে পানির সঙ্গে মিশিয়ে হলুদ খেলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে, ত্বকও মসৃণ থাকে।

লেবু: ত্বকের বলিরেখা ও ক্ষত দূর করতে লেবুর জুড়ি নেই। রোজ সকালে চিনি ছাড়া এক গ্লাস লেবুর রস খেলে ত্বক সজীব থাকে।

বিটরুট: বিটরুটে ভিটামিন এ, সি, পটাশিয়াম ও সুপার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এগুলো মৃত কোষ দূর করে ত্বক পরিষ্কার রাখে, ত্বকের পোর বা বড় হয়ে যাওয়া ছিদ্র মেরামত করে। প্রতিদিন ৫০০ মিলিলিটার বিটরুটের জুস পান করলে কিংবা সালাদ হিসেবে বিটরুট খেলে ত্বক ভালো থাকে।

ত্বকের যত্নে রূপচর্চায় যা ব্যবহার করবেন

কাঁচা হলুদ: ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে এবং উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে কাঁচা হলুদ প্রসিদ্ধ একটি উপাদান। ত্বকের জন্য ঘরোয়া প্যাক তৈরির সময় কাঁচা হলুদবাটাও যোগ করে নিন। এর নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। নিজেই টের পাবেন সেই জেল্লা। বলিরেখা দূর করতে এক চিমটি হলুদ এবং কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে সেই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। তবে অবশ্যই প্যাকেটজাত তরকারি রান্নার মসলা ব্যবহার করবেন না। বাজার থেকে হলুদের শুট কিনে তা ভাঙিয়ে সেই হলুদ ব্যবহার করুন।

নারকেল তেল: এটি ত্বক সুস্থ ও তারুণ্যদীপ্ত রাখতে দারুণ সহায়ক। সম্ভব হলে প্রতিদিন রাতে নারকেল তেল লাগিয়ে রাখুন মুখে। পরদিন সকালে ভালো ক্লিনজার দিয়ে ধুয়ে নিন। ত্বকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলিরেখা ঠেকাতে এর জুড়ি নেই। এ ছাড়া এক টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার, চার থেকে পাঁচ ফোঁটা নারকেল তেল এবং এক চামচ পানি মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ সারা মুখে লাগিয়ে শুকিয়ে নিন। এবার সারা মুখে খানিকটা নারকেল তেল আলাদা করে ম্যাসাজ করুন। সকালে উঠে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। যেকোনো অ্যান্টি এজিং ক্রিমের তুলনায় ত্বকের বয়স ঠেকাতে বেশি কাজে আসবে এই মিশ্রণ।

জলপাই তেল: জলপাই তেল ত্বকের প্রদাহ কমাতে দারুণ কার্যকর। পাশাপাশি রোদে পোড়া দাগ দূর করতেও এর জুড়ি নেই। এটি ঠেকাবে সানবার্ন। যাঁরা নিয়মিত জলপাই তেল ত্বকে ব্যবহার করেন, তাঁদের ত্বক বেশি দিন ভালো থাকে।

প্রসাধনী ব্যবহারে মনে রাখুন

দাম বেশি হলেও ত্বকের জন্য উন্নত মানের প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে। ছবি: পেক্সেলস
দাম বেশি হলেও ত্বকের জন্য উন্নত মানের প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে। ছবি: পেক্সেলস

ত্বকের জন্য ভালো মানের প্রসাধনী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় মনে রাখতে হবে—

  • ভিটামিন সি যুক্ত প্রসাধনী কিনুন। কারণ, ভিটামিন সি ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড এক্সফোলিয়েটর মৃত কোষ সরিয়ে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।
  • রোদে যেন ত্বকে সানট্যান না পড়ে, সে জন্য ভালো মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। একবার ত্বক বুড়িয়ে গেলে তা ঠিক করে তোলা কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য শুরু থেকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
  • পাউডার-বেসড ফাউন্ডেশন ব্যবহার বন্ধ করুন। ঝলমলে ত্বকের জন্য লাইট টু মিডিয়াম কভারেজ ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন।

এসবের বাইরে শরীর ও ত্বককে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে। তাই রাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। এতে আপনার ত্বকের ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও মামলা প্রত্যাহার

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

প্লট–ফ্ল্যাট বরাদ্দে সচিব, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ যাঁদের কোটা বাতিল

জর্ডান-মিসরকে নিয়ে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করতে চান নেতানিয়াহু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত