Ajker Patrika

ফেসবুক পেজের রিচ বাড়ানোর কৌশল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সহজ কিছু কৌশলের মাধ্যমে ফেসবুক পেজের রিচ বাড়ানো সম্ভব। ছবি: ইয়োক ডিজিটাল সার্ভিস
সহজ কিছু কৌশলের মাধ্যমে ফেসবুক পেজের রিচ বাড়ানো সম্ভব। ছবি: ইয়োক ডিজিটাল সার্ভিস

ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং বা ব্যবসায়িক প্রচারের ক্ষেত্রে ফেসবুক পেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে পেজ তৈরি করে বসে থাকলেই চলবে না, এর কনটেন্ট কতজন মানুষের কাছে পৌঁছেছে, সেটাই বড় বিষয়। এখানেই আসে ‘রিচ’ বা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে পোস্ট বা কনটেন্ট পৌঁছানোর পরিসরের গুরুত্ব।

বর্তমানের অ্যালগরিদম, বিজ্ঞাপন প্রতিযোগিতা ও অগণিত কনটেন্টের ভিড়ে ফেসবুকে রিচ ধরে রাখা কিংবা বাড়ানো সত্যিই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সহজ কিছু কৌশলের মাধ্যমে ফেসবুক পেজের রিচ বাড়ানো সম্ভব।

ফেসবুক রিচ কী

ফেসবুক রিচ একটি গুরুত্বপূর্ণ মেট্রিক, যা আমাদের পোস্ট বা পেজ কতজন ব্যবহারকারী দেখেছেন, তা নির্দেশ করে। এটি মূলত একটি কনটেন্টের ভিউয়ারদের সংখ্যা পরিমাপ করে এবং এখানে সেসব লোককে গণনা করা হয়, যাঁরা কোনো পোস্টে ইন্টারঅ্যাক্ট করেছেন বা কেবল দেখেছেন। ফেসবুক রিচ একটি নির্দিষ্ট সময়ে (যেমন ২৮ দিন) পরিমাপ করা হয় এবং এটি পোস্ট বা পেজের ক্ষেত্রে আলাদা হতে পারে।

ফেসবুক রিচের ধরন

ফেসবুক রিচ মূলত দুভাবে বিভক্ত—পোস্ট রিচ (নির্দিষ্ট একটি পোস্ট কতজন দেখেছেন) ও পেজ রিচ (একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পেজের সব কনটেন্ট কতজন দেখেছেন)।

এই দুই রিচ আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়—

অর্গানিক রিচ: বিজ্ঞাপন দেওয়া ছাড়াই আপনার পোস্ট কতজন দেখেছেন, তা বোঝায়। এটি অর্জন করা সবচেয়ে কঠিন, কারণ, আপনাকে পেইড কনটেন্ট ও অ্যালগরিদমের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়।

ভাইরাল রিচ: অন্য কেউ আপনার পোস্টে লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করার ফলে সেটি আরও লোকের নিউজফিডে গেলে যে রিচ তৈরি হয়, সেটিই ভাইরাল রিচ।

অ্যাড রিচ: ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পোস্ট কতজনের কাছে পৌঁছেছে, তা নির্দেশ করে। এটি মূলত বাজেট ও টার্গেটিংয়ের ওপর নির্ভরশীল।

ফেসবুক রিচ বাড়ানোর কৌশল

১. কনটেন্ট অপটিমাইজেশন: ফেসবুকের জন্য কনটেন্ট তৈরি করার সময় অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের কনটেন্ট কপি করা উচিত নয়। বিশেষ করে, কনটেন্টে আকর্ষণীয় ক্যাপশন ও সঠিক ফরম্যাট ব্যবহার করুন। ভিডিও কনটেন্ট ফেসবুকে অনেক ভালো পারফর্ম করে এবং লাইভ সেশনও রিচ বাড়াতে সাহায্য করে।

২. নিয়মিত পোস্ট করা: ফেসবুকে কনটেন্ট আপলোড করার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পোস্ট করার মাধ্যমে আপনি ফেসবুকের অ্যালগরিদমকে জানান দিতে পারেন যে আপনার পেজ সক্রিয়, যা রিচ বাড়াতে সহায়ক।

৩. সময়ের ওপর নজর দিন: কনটেন্ট পোস্ট করার সঠিক সময় নির্ধারণ করুন। গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক সময়ে পোস্ট করলে আপনার পোস্টের এনগেজমেন্ট ও রিচ বাড়ে। এ জন্য পেজের ইনসাইটস টুল ব্যবহার করতে পারেন। কোন সময় মানুষ কনটেন্ট দেখেন বা ফেসবুকে বেশি সক্রিয় থাকেন, সেগুলোর তথ্য পেজের ড্যাশবোর্ডের আওতায় থাকা ইনসাইটস টুলে পাওয়া যাবে।

৪. ফেসবুক বিজ্ঞাপন ব্যবহার করুন: অর্গানিক রিচের সীমাবদ্ধতা থাকলেও ফেসবুক অ্যাডস ব্যবহার করলে আপনি খুব সহজেই আপনার লক্ষ্যবস্তু শ্রোতার কাছে পৌঁছাতে পারবেন। এটি আপনার রিচ দ্রুত বাড়াতে সাহায্য করবে।

৫. গ্রুপ ও থার্ড পার্টি এনগেজমেন্ট: ফেসবুকে রিচ বাড়ানোর অন্যতম কার্যকর উপায় হলো গ্রুপ ও থার্ড পার্টি এনগেজমেন্ট ব্যবহার করা। শুধু নিজের পেজে পোস্ট করেই এখন আর কাঙ্ক্ষিতসংখ্যক দর্শকের কাছে পৌঁছানো সহজ নয়, এ জন্য প্রয়োজন কনটেন্টকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। রিচ বাড়ানোর জন্য অন্য বড় গ্রুপে বা পেজে নিজের পেজের প্রচারণা বা কনটেন্ট শেয়ার করতে পারেন।

ফেসবুক রিচ পরিমাপের উপায়

ফেসবুক রিচ পরিমাপ করতে মেটা বিজনেস স্যুটের ইনসাইটস ট্যাব ব্যবহার করতে পারেন। এখানে নিজের পেজ বা পোস্টের রিচ, এনগেজমেন্ট ও অন্যান্য মেট্রিক দেখতে পাবেন। এ ছাড়া আপনি এই ডেটা বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারবেন কোন ধরনের কনটেন্ট বেশি রিচ পাচ্ছে এবং সেটি কীভাবে আপনার ভবিষ্যতের কনটেন্ট পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে জাইমা রহমান। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে জাইমা রহমান। ছবি: সংগৃহীত

যে বয়সে মানুষ কৈশোরে পা রাখে ঠিক সেই বয়সেই, অর্থাৎ মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেশান্তরী হয়েছিলেন জাইমা রহমান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাতনি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একমাত্র কন্যা জাইমার কৈশোর কেটেছে লন্ডনে। সেখানেই স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে এখন ব্যারিস্টার তিনি।

তবে, জাইমা রহমানের শৈশবের পুরোটা সময় বাংলাদেশেই কেটেছে। প্রাথমিকে পড়াশোনা করেছেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকায় (আইএসডি)। এই স্কুলেরই ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, গোলকিপার হিসেবে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও সামাল দিয়েছেন। এমনকি জয় করেছেন মেডেলও।

সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরে আসাকে সামনে রেখে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে শৈশবের সেই অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণা করেন জাইমা। তিনি জানান, ফুটবল খেলে তিনি যে মেডেলটি পেয়েছিলেন, সেটি দাদিকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন দাদির অফিসেই।

সেই সময়টিতে জাইমা রহমানের দাদি বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। নাতনির মুখে মেডেল জয়ের গল্পটি তিনি বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন এবং এই গল্পটি তিনি অন্যদের সঙ্গেও খুব গর্ব করে বলতেন।

এ বিষয়ে জাইমা লিখেছেন—‘আমার বয়স তখন এগারো। আমাদের স্কুলের ফুটবল টিম একটা টুর্নামেন্ট জিতেছিল, আর আমি মেডেল পেয়েছিলাম। আম্মু আমাকে সরাসরি দাদুর অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন, আমি যেন নিজেই দাদুকে আমার বিজয়ের গল্পটা বলতে পারি; তাঁকে আমার বিজয়ের মেডেলটা দেখাতে পারি। আমি খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে গোলকিপার হিসেবে কী-কী করেছি, সেটা বলছিলাম; আর স্পষ্ট টের পাচ্ছিলাম, দাদু প্রচণ্ড মনোযোগ নিয়ে আমাকে শুনছেন। তিনি এতটাই গর্বিত হয়েছিলেন যে, পরে সেই গল্পটা তিনি অন্যদের কাছেও বলতেন।’

১৭ বছর পর বাবা-মায়ের সঙ্গে আবারও দেশে ফিরে আসা জাইমা রহমান এখন ৩০ বছরের পরিপূর্ণ এক ব্যক্তিত্ব। লন্ডনে গিয়ে তাঁর জীবন নতুনভাবে গড়ে ওঠে। শেকড় হারানোর বেদনার সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন সমাজ, নতুন ভাষা, নতুন লড়াই। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। লন্ডনের ম্যারিমাউন্ট গার্লস স্কুল থেকে তিনি ও-লেভেল পাস করেন। পরে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি থেকে। পরে তিনি লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী আইন প্রতিষ্ঠান ‘ইনার টেম্পল’ থেকে ‘বার-এট-ল’ কোর্স সম্পন্ন করে ব্যারিস্টার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনে কেন টার্কি খাওয়া হয়, প্রচলন হয়েছিল কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৫৪
ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে স্পেনীয় অভিযাত্রীদের মাধ্যমে টার্কি প্রথম ইউরোপে আসে। ছবি: সংগৃহীত
ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে স্পেনীয় অভিযাত্রীদের মাধ্যমে টার্কি প্রথম ইউরোপে আসে। ছবি: সংগৃহীত

বড়দিন বা ক্রিসমাস মানেই ডাইনিং টেবিলে সাজানো বড়সড় এক টার্কি রোস্ট। কিন্তু উত্তর আমেরিকার আদি নিবাসী এই পাখি কীভাবে ইউরোপীয়দের উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে উঠল, তা বেশ কৌতূহল উদ্দীপক। ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে স্পেনীয় অভিযাত্রীদের মাধ্যমে টার্কি প্রথম ইউরোপে আসে। তার আগে উৎসবের ভোজ বলতে ছিল ময়ূর বা রাজহাঁসের মাংস।

ইংল্যান্ডের রাজা হেনরি অষ্টম প্রথম ব্রিটিশ সম্রাট হিসেবে বড়দিনের ভোজে টার্কি খেয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তবে টার্কিকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেওয়ার মূল কৃতিত্ব ভিক্টোরিয়ান যুগের। রানি ভিক্টোরিয়া যখন তাঁর রাজকীয় ক্রিসমাস ভোজে টার্কি খাওয়া শুরু করেন, তখন থেকেই এটি আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।

ইংল্যান্ডের রাজা হেনরি অষ্টম প্রথম ব্রিটিশ সম্রাট হিসেবে বড়দিনের ভোজে টার্কি খেয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
ইংল্যান্ডের রাজা হেনরি অষ্টম প্রথম ব্রিটিশ সম্রাট হিসেবে বড়দিনের ভোজে টার্কি খেয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

রাজকীয় পছন্দের বাইরে সাধারণ মানুষের ঘরে টার্কিকে জনপ্রিয় করার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল লেখক চার্লস ডিকেন্সের। ১৮৪৩ সালে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘আ ক্রিসমাস ক্যারল’-এ দেখা যায়, একসময়ের কৃপণ ইবেনেজার স্ক্রুজ বড়দিনে ক্র্যাচিট পরিবারকে একটি বিশাল টার্কি উপহার পাঠাচ্ছেন। এই গল্প সাধারণ মানুষের মনে গেঁথে দেয় যে—বড়দিনের আদর্শ খাবার মানেই টার্কি।

কেন টার্কিই সেরা পছন্দ

টার্কি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে কিছু ব্যবহারিক কারণও রয়েছে। আকার ও উপযোগিতা—গরু দুধ দেয় আর মুরগি দেয় ডিম; কিন্তু টার্কির অন্য কোনো ব্যবহার নেই। এ ছাড়া একটি বড় টার্কি দিয়ে অনায়াসেই পুরো পরিবারের ভোজ সম্পন্ন করা যায়। অনেকগুলো ছোট পাখি রান্না করার চেয়ে একটি বড় পাখি রান্না করা অনেক বেশি সাশ্রয়ী।

হিমায়িত বা ফ্রোজেন টার্কি—রেফ্রিজারেশন বা ফ্রিজ আবিষ্কারের আগে টাটকা টার্কি কেনা ছিল বেশ ঝক্কির কাজ। কিন্তু ফ্রোজেন টার্কি বাজারে আসার পর মানুষ আগে থেকেই পরিকল্পনা করে এটি কিনতে শুরু করে, যা এর জনপ্রিয়তা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

রাজকীয় পছন্দের বাইরে সাধারণ মানুষের ঘরে টার্কিকে জনপ্রিয় করার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল লেখক চার্লস ডিকেন্সের। ছবি: সংগৃহীত
রাজকীয় পছন্দের বাইরে সাধারণ মানুষের ঘরে টার্কিকে জনপ্রিয় করার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল লেখক চার্লস ডিকেন্সের। ছবি: সংগৃহীত

পরদিনের চমৎকার নাশতা—বড়দিনের পরদিন অর্থাৎ ‘বক্সিং ডে’তে টার্কির বেঁচে যাওয়া মাংস (Leftovers) দিয়ে স্যান্ডউইচ, স্টু, কারি বা পাই তৈরি করা যায়। বিশেষ করে, টার্কি কারি এখন অনেক দেশেই বেশ জনপ্রিয়।

যুক্তরাজ্যে টার্কির একটি দীর্ঘ ঐতিহাসিক ঐতিহ্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আজও ক্রিসমাসে টার্কি খাওয়ার রীতি বজায় আছে।

যাঁরা বড় টার্কি রান্না করতে চান না বা ঝামেলা ছাড়াই উৎসবের খাবার উপভোগ করতে চান, তাঁদের জন্যও আজ নানা ধরনের প্রস্তুত টার্কি খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে—যা ক্রিসমাস উদ্‌যাপনকে আরও সহজ করে তুলেছে। বড়দিনের এই দীর্ঘ ঐতিহ্যের কারণে আজও বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ টার্কি ছাড়া উৎসবের কথা কল্পনাও করতে পারেন না। আপনিও কি এবার বড়দিনের আয়োজনে টার্কি রাখছেন?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কাজুবাদাম কেন খাবেন, কতটুকু খাবেন

ফিচার ডেস্ক
এতে আছে ম্যাগনেশিয়াম, কপার আর জিংক। ছবি: সংগৃহীত
এতে আছে ম্যাগনেশিয়াম, কপার আর জিংক। ছবি: সংগৃহীত

কাজুবাদামকে বলা হয় ‘পুষ্টির ছোট প্যাকেট’। এটি যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর। এ কারণে যে আপনি মুঠো মুঠো করে সব সময় এটি খেতেই থাকবেন, তা হবে না। নিয়মিত কাজুবাদাম পরিমিত খেতে হবে। এতে আপনি পেতে পারেন দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সুস্থতা। মূলত ব্রাজিলীয় বংশোদ্ভূত এই বৃক্ষজাত বীজ বর্তমানে বিশ্বজুড়ে তার স্বাস্থ্যগুণের জন্য সমাদৃত। হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে ওজন নিয়ন্ত্রণ—কাজুবাদামের আছে বহুমুখী উপকারিতা। এটি নিয়মিত খাওয়ার পেছনে অনেকগুলো স্বাস্থ্যগত কারণ আছে। আবার খাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে কিছু সতর্কতাও। তাই নিজের খাবারের তালিকায় কাজুবাদাম রাখার আগে ভালো ও খারাপ দিক জেনে রাখুন।

হৃদ্‌যন্ত্রের সুরক্ষা

কাজুবাদামে রয়েছে প্রচুর অসম্পৃক্ত চর্বি। এটি রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা এলডিএলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বাদাম খেলে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ২৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এ ছাড়া এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

কাজুবাদাম উচ্চ ক্যালরিযুক্ত হলেও এটি ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে। এর কারণ হলো, কাজুবাদামের সবটুকু ক্যালরি শরীর শোষণ করতে পারে না। এর ভেতরের আঁশ বা ফাইবার চর্বিকে আটকে ফেলে, যা হজমের সময় শরীরে পুরোপুরি শোষিত হয় না। ফলে এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং আজেবাজে খাওয়ার প্রবণতা কমায়।

ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী

টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য কাজুবাদাম খুবই উপকারী। এতে থাকা আঁশ রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া রোধ করে। এ ছাড়া এর ম্যাগনেশিয়াম ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক ক্যালরির ১০ শতাংশ কাজুবাদাম থেকে গ্রহণ করলে ইনসুলিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।

শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধক্ষমতা

কাজুবাদাম কপার ও জিঙ্কের চমৎকার উৎস। এই দুটি খনিজ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী রাখতে অপরিহার্য। এ ছাড়া এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (পলিফেনল ও ক্যারোটিনয়েড) শরীরের ভেতরের ব্যথা কমাতে এবং কোষের ক্ষতি রোধ করতে কাজ করে।

হাড় ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য

কাজুবাদামে আছে ভরপুর ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, ভিটামিন কে। এগুলো হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে। এর কপার উপাদান মস্তিষ্কের সুস্থ বিকাশ ও শক্তি উৎপাদনে সরাসরি সাহায্য করে।

কাঁচা কাজু নিরাপদ কি না

আমরা বাজারে যে কাজুবাদাম কাঁচা হিসেবে কিনি, তা আসলে পুরোপুরি কাঁচা নয়। গাছের তাজা কাজুবাদামের খোসায় ইউরুশিয়াল নামক বিষাক্ত উপাদান থাকে, যা ত্বকে অ্যালার্জি বা ফোসকা তৈরি করতে পারে। প্রক্রিয়াজাত করার সময় তাপ দিয়ে এই বিষাক্ত অংশ দূর করা হয়। তাই গাছ থেকে সরাসরি পেড়ে কাজু খাওয়া নিরাপদ নয়।

খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত করার সহজ উপায়

কাজুবাদাম খুব সহজে প্রতিদিনের খাবারে যোগ করা যায়। বিকেলের নাশতায় এক মুঠো ভাজা কাজু খেতে পারেন। সালাদ, স্যুপ বা স্ট্যুতে কাজুবাদাম ছড়িয়ে দিলে স্বাদ ও পুষ্টি—দুই-ই বেড়ে যায়। কাজুবাদাম ভিজিয়ে ব্লেন্ড করে দুধ মুক্ত ক্রিম বা পনির তৈরি করা সম্ভব। টোস্ট বা ওটমিলের সঙ্গে কাজু বাটার ব্যবহার করা যায়।

মনে রাখবেন

পরিমাণ: কাজুবাদাম অত্যন্ত পুষ্টিকর হলেও এতে ক্যালরি বেশি। তাই দিনে ২৮ গ্রাম বা প্রায় ১৮টি বাদাম খাওয়াই যথেষ্ট।

লবণ ও তেল: অতিরিক্ত লবণ বা তেলে ভাজা কাজুর চেয়ে শুকনো ভাজা বা আনসলটেড কাজু বেছে নেওয়া ভালো।

অ্যালার্জি: যাদের কাঠবাদাম বা পেস্তাবাদামে অ্যালার্জি আছে, তাদের কাজু খাওয়ার আগে সতর্ক হওয়া উচিত। শ্বাসকষ্ট বা চুলকানির মতো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সূত্র: হেলথ লাইন, ইভিএন এক্সপ্রেস, ওয়েব মেড

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গরম কড়াইয়ে কেন ঠান্ডা পানি ঢালবেন না

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কড়াইসহ যেকোনো ধাতব হাঁড়িপাতিল কেন বাঁকা হয়ে যায়, জানেন? এর উত্তর লুকিয়ে আছে ধাতব পাত্রে ঠান্ডা পানি ঢালার অভ্যাসের মধ্যে।

চুলা থেকে নামানো গরম কড়াইয়ে হঠাৎ ঠান্ডা পানি ঢাললে যে শব্দ হয়, অনেকের কাছে তা সাধারণ মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এটি একটি সতর্কবার্তা। আপনার কড়াইটি তখন থার্মাল শকের শিকার হচ্ছে, যা ধীরে ধীরে রান্নার পাত্রের আয়ু কমিয়ে দেয়। অনেক গৃহিণী ও রান্নাপ্রেমী মনে করেন, গরম কাড়াই সরাসরি সিঙ্কে নিয়ে ঠান্ডা পানি ঢাললে পোড়া খাবারের অংশ সহজে উঠে যায়। কিন্তু অল-ক্ল্যাড ও ক্যালফালনের মতো নামকরা কুকওয়্যার ব্রান্ড সতর্ক করে বলছে, এটি কড়াই নষ্ট হওয়ার বড় কারণগুলোর একটি।

থার্মাল শক কীভাবে ক্ষতি করে

ধাতু গরম হলে প্রসারিত হয় এবং ঠান্ডা হলে সংকুচিত হয়। এটি পদার্থবিজ্ঞানের সাধারণ নিয়ম। যখন প্রায় ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার একটি কড়াই হঠাৎ ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে আসে, তখন ধাতব অণুগুলো দ্রুত সংকুচিত হয়। এই হঠাৎ পরিবর্তনই সৃষ্টি করে থার্মাল শক, যা কড়াইয়ের গঠনকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

কড়াই বাঁকা হয়ে যাওয়া

থার্মাল শকের সবচেয়ে সাধারণ ফল হলো কড়াই বাঁকা হয়ে যাওয়া। হঠাৎ ঠান্ডায় কড়াইয়ের নিচের অংশ সংকুচিত হয়ে ভাঁজ হয়ে যায়। ফলে কড়াই চুলার ওপর ঠিকভাবে বসে না এবং তাপ সমানভাবে ছড়ায় না। এর ফল হিসেবে রান্নার সময় এক পাশে খাবার পুড়ে যায়, অন্য পাশে ঠিকমতো রান্না হয় না।

নন-স্টিক কড়াই বাড়তি ঝুঁকি

নন-স্টিক কড়াইয়ের ক্ষেত্রে থার্মাল শক আরও বেশি ক্ষতিকর। কারণ, প্যানের ধাতু ও নন-স্টিক কোটিংয়ের প্রসারণ ও সংকোচনের হার এক নয়। হঠাৎ ঠান্ডা হলে কোটিং ফেটে যেতে বা উঠে যেতে পারে। এতে প্যানের নন-স্টিক ক্ষমতা নষ্ট হয় এবং কোটিংয়ের ক্ষুদ্র কণা খাবারের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ক্ষতিগ্রস্ত নন-স্টিক কোটিং থেকে পিএফএএস জাতীয় ক্ষতিকর রাসায়নিক নির্গত হতে পারে। যেগুলো দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

ফাটল ধরার ঝুঁকি

কাস্ট আয়রন, স্টোনওয়্যার বা সিরামিক প্যানের ক্ষেত্রে থার্মাল শক কখনো কখনো তাৎক্ষণিক ফাটল ধরাতে পারে। এসব উপাদান স্টেইনলেস স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের তুলনায় বেশি ভঙ্গুর হওয়ায় হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন সহ্য করতে পারে না।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কড়াই রক্ষা করার নিয়ম

বিশেষজ্ঞদের মতে, কড়াই ভালো রাখার সহজ নিয়ম হলো ধৈর্য। এ ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে—

রান্না শেষ হলে কড়াইটি চুলার ওপর বা পাশে রেখে স্বাভাবিকভাবে ঠান্ডা হতে দিন।

পুরোপুরি ঠান্ডা হলে তারপর ধুয়ে ফেলুন।

তাড়াহুড়া থাকলে ঠান্ডা পানির বদলে গরম বা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন, যাতে তাপমাত্রার পার্থক্য কম থাকে।

আরও কিছু সাধারণ ভুল

বিশেষজ্ঞরা আরও কয়েকটি ভুলের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো—

ঠান্ডা পানিতে লবণ দিলে লবণের কণা তলায় জমে স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রে ক্ষুদ্র গর্ত তৈরি করতে পারে। তাই পানি ফুটে ওঠার পর লবণ যোগ করা ভালো।

নন-স্টিক প্যান একটির ওপর আরেকটি রাখলে ওপরের প্যানের তলা নিচের প্যানের কোটিংয়ে আঁচড় ফেলতে পারে।

নন-স্টিক প্যানে ধাতব স্ক্রাবার বা শক্ত ঘষামাজা একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত।

কাস্ট আয়রন প্যান পরিষ্কারে সাবান কম ব্যবহার করে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দ্রুত শুকিয়ে হালকা তেল মেখে রাখা ভালো, এতে মরিচা ধরবে না।

রান্নার পাত্রের যত্ন নেওয়া মানে শুধু খরচ বাঁচানো নয়; এটি খাবারের মান, স্বাদ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে। একটি ভালো পাত্র দীর্ঘদিন ভালো থাকলে সমানভাবে রান্না হয়। খাবার পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে এবং ক্ষতিকর পদার্থ খাবারের সঙ্গে মিশে যাওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। গরম প্যানে ঠান্ডা পানি ঢালার অভ্যাসটি ত্যাগ করলে কড়াইয়ের গঠন ও কোটিং অক্ষত এবং সেটি দীর্ঘদিন ব্যবহারের উপযোগী থাকবে।

সূত্র: হাফ পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত