Ajker Patrika

কফি পানে যকৃৎ ভালো থাকে, জেনে নিন স্বাস্থ্যকর কফি পানের নিয়ম

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
দিনে মাত্র দুই কাপ কফি পান করলে সিরোসিসের ঝুঁকি ৪৪ শতাংশ কমে যায়। ছবি: পেক্সেলস
দিনে মাত্র দুই কাপ কফি পান করলে সিরোসিসের ঝুঁকি ৪৪ শতাংশ কমে যায়। ছবি: পেক্সেলস

নিয়মিত কফি পান করলে যকৃতের স্বাস্থ্যের বেশ কিছু উপকার হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ওয়েব এমডির রিপোর্ট অনুসারে, দেখা গেছে যে কফি পানকারীদের যকৃতের রোগ, যেমন লিভার ক্যানসার, ফাইব্রোসিস অর্থাৎ যকৃতে দাগ বা ক্ষত টিস্যু ও নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার অর্থাৎ যকৃতে চর্বি জমার আশঙ্কা কম। ফাইব্রোসিসের একটি গুরুতর পর্যায় সিরোসিস। এই পর্যায়ে যকৃৎ আর সঠিকভাবে কাজ করে না। এমন জটিল রোগেরও ঝুঁকি কমায় কফি।

‘এলিমেন্টার ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিস্টস’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে মাত্র দুই কাপ কফি পান করলে সিরোসিসের ঝুঁকি ৪৪ শতাংশ কমে যায়। তা ছাড়া মিশিগান মেডিসিন ও হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের যকৃৎ বিশেষজ্ঞদের একটি দল আবিষ্কার করেছে, জীবনযাত্রার অন্য কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে দিনে তিন কাপের বেশি কফি পান করলে যকৃতের কাঠিন্য হ্রাস পায়। যাদের ইতিমধ্যে যকৃতের সমস্যা রয়েছে, তারা সাধারণত দিনে এক থেকে তিন কাপ কফি পান করতে পারবে। এই পরিমাণ কফি ফাইব্রোসিস, সিরোসিস, হেপাটাইটিস বি ও সি এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগের প্রকোপ ধীর করতে সাহায্য করতে পারে।

উপকারের কারণ

কফিতে থাকে এক হাজারের বেশি রাসায়নিক যৌগ থাকে। এই যৌগগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর যকৃতের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। কফির উপকারিতা পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। ফিল্টার্ড, ইনস্ট্যান্ট বা এসপ্রেসো—যেকোনোভাবে তৈরি কফি কাজ করে শরীরের জন্য। কফিকে সামগ্রিক সুস্থ জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

কফির উপকারিতা পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। ছবি: পেক্সেলস
কফির উপকারিতা পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। ছবি: পেক্সেলস

কফির উপকারী উপাদান

প্যারাজ্যান্থাইন: এটি ক্যাফেইন হজম হওয়ার সময় উৎপন্ন একটি রাসায়নিক যৌগ। এটি যকৃতে দাগ তৈরিকারী টিস্যুর বিকাশ ধীর করে দিতে পারে; যা লিভার ক্যানসার, সিরোসিস ও হেপাটাইটিস সি-এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।

কাহওয়েল ও ক্যাফেস্টল: কফিতে পাওয়া এই দুটি রাসায়নিকের ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করার বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে বলে অনুমান করা হয়। যদিও সে গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। অল্প পরিমাণে চিনিবিহীন কফি পান লিভার ক্যানসারের চিকিৎসার পরিপূরক হতে পারে।

কফিতে থাকা অ্যাসিড হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডিক্যাফিনেটেড কফিও একই ধরনের সুবিধা দিতে পারে।

স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনায় রাখুন

  • কফি অতিরিক্ত পান করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন সেবন উদ্বেগ বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যাদের উদ্বেগজনিত সমস্যা আছে। এটি নার্ভাসনেস ও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
  • ‘জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল স্লিপ মেডিসিনে’র গবেষণামতে, ক্যাফেইন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে। ঘুমানোর ৬ ঘণ্টা আগেও কফি পান করলে তা ঘুমের মোট সময় উল্লেখযোগ্যভাবে প্রায় ৪১ মিনিট কমিয়ে দিতে পারে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
  • ঘুমের মান ঠিক রাখতে দিনের শেষের দিকে কফি পান এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণে মাথাব্যথা হতে পারে।

স্বাস্থ্যকর উপায়ে কফি পানের পদ্ধতি

কফির স্বাস্থ্যকর সুবিধাগুলো পুরোপুরি পেতে এবং ঝুঁকি কমাতে কফি পানের পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবে পান করতে পারেন—

  • কালো বা ব্ল্যাক কফি: সহজ স্বাস্থ্যকর উপায় হলো চিনি, অতিরিক্ত ক্রিম বা কৃত্রিম ফ্লেভার যোগ না করে কালো কফি পান করা। এতে শরীরে ক্যালরি বা অস্বাস্থ্যকর চর্বি যোগ হয় না। কফিতে অতিরিক্ত চিনি, সিরাপ বা ক্রিম যোগ করলে তা চর্বি ও ক্যালরিযুক্ত একটি পানীয়তে পরিণত হতে পারে। এতে কফির উপকারিতা কমে যাবে। মিষ্টির প্রয়োজন হলে সামান্য প্রাকৃতিক সুইটেনার, যেমন স্টেভিয়া বা খুব সামান্য মধু ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ফিল্টার কফি তৈরি করুন: কফি তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা ফিল্টার পেপার ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এটি কফিতে থাকা ডাইটারপেনেস নামক যৌগগুলোকে ছেঁকে ফেলে। এই যৌগগুলো রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে।
  • সঠিক সময়ে কফি পান: সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে কফি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী হতে পারে। দিনের এই সময়কে প্রদাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য সহায়ক হিসেবে ধরা হয়। সাধারণত বেলা ২টা বা ৩টার পর কফি পান করা এড়িয়ে যেতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এতে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে না।
  • পরিমিত মাত্রায় পান: অধিকাংশ সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ৪০০ মিলিগ্রাম বা প্রায় ৪ কাপ কফি পান নিরাপদ বলে মনে করা হয়। তবে ব্যক্তিভেদে সহনশীলতা ভিন্ন হতে পারে।
  • অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উপাদান যোগ: চিনির পরিবর্তে দারুচিনি, জায়ফল বা হলুদের মতো মসলা যোগ করা যেতে পারে কফিতে। এই মসলাগুলোয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অতিরিক্ত স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকতে পারে।

সূত্র: মায়ো ক্লিনিক, ওয়েব এমডি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত