Ajker Patrika

জাপানের বকশিশ সংস্কৃতি

ফিচার ডেস্ক
বকশিশ দেওয়ার সংস্কৃতি জাপানের নাগরিকেরা পছন্দ করেন না। ছবি ট্রিপ এডভাইজার
বকশিশ দেওয়ার সংস্কৃতি জাপানের নাগরিকেরা পছন্দ করেন না। ছবি ট্রিপ এডভাইজার

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাপানে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ২১.৫ মিলিয়নেরও বেশি বিদেশি পর্যটক জাপান ভ্রমণ করেছেন। সংখ্যাটি এভাবেই বাড়তে থাকলে পুরো বছরে ৪০ মিলিয়ন। বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিরক্তির সৃষ্টি করছে। এরফলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানুষ পারার পাশাপাশি কিছু পরিবর্তন আসছে। যা জাপানের নাগরিকদের কাছে কিছুটা বিরক্তিকর। এর মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হলো উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের পর্যটকদের বকশিশ দেওয়ার অভ্যাস। যা জাপানের নাগরিকেরা পছন্দ করেন না।

পর্যটকদের আগমন ও সাংস্কৃতিক সংঘাত

পর্যটকদের নিয়ে বেশ কিছু ঘটনা এবছর শিরোনামে এসেছিলেন। সেখানে খারাপ আচরণের জন্য স্থানীয়দের ক্রোধের কারণ হয়েছিলেন ভ্রমণকারীরা। অন্যদিকে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের ভালো আচরণ করা পর্যটকরাও জাপানের অনেক স্থানীয় মানুষের কাছে বিরক্তি বা বিভ্রান্তির কারণ হয়ে উঠেছিলেন। কারণ তারা বকশিশ দেওয়ার যে অভ্যাসটি দেখান, তা মোটেও জাপানি সংস্কৃতিসম্মত নয়। প্রথমবার আসা অনেক পর্যটক জাপানের প্রথা ও রীতিনীতি নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। জাপানের মানুষের বেশ কিছু বিশেষ অভ্যাস আছে। যেমন ঘরে প্রবেশের সময় জুতো খোলা, মাথা ঝুঁকিয়ে অভিবাদন জানানো, চপস্টিক ব্যবহার করা এবং অর্থ লেনদেনের অলিখিত নিয়ম। জাপানিরা সহজাতভাবেই জানে যে নগদ অর্থ উপহার হিসেবে দিতে হলে তা বিশেষ খামে দিতে হয়। তারা হাতে হাতে লেনদেন না করে সবসময় ট্রেতে রাখেন। বকশিশের বিষয়টি জাপানের অর্থ সংস্কৃতির এই রীতিনীতির ক্ষেত্রে আরেকটি বাধা।

কেন জাপানিরা বকশিশ চান না

জাপানের বেশিরভাগ মানুষ পশ্চিমী ধাঁচের এই বকশিশ প্রথা চালু হোক, তা চান না। এর পেছনে প্রধান কিছু কারণগুলো আছে। প্রথমত তারা মনে করেন ভালো পরিষেবা চাকরির অংশ। অর্থাৎ কর্মীদের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দরকার। হয় না। এমনকি কিছু রেস্তোরাঁর কর্মীরা টেবিলে বকশিশ হিসেবে রাখা টাকাও গ্রাহককে ফিরিয়ে দিতে তাদের পিছু নেয়। কানাগাওয়া প্রিফেকচারের লা ট্যুর রেস্তোরাঁর প্রাক্তন মালিক মারিকো শিগেনো বলেন, "আমার কাছে, ভালো পরিষেবা নিশ্চিত করা আমার কাজ এবং এর জন্য অতিরিক্ত অর্থ পাওয়ার দরকার নেই।" তিনি মনে করেন, ভালো পরিষেবা দেওয়া তার মৌলিক দায়িত্ব।

জাপানে বিদেশি পর্যটন বৃদ্ধির আংশিক কারণ হলো ইয়েনের দুর্বলতা। এর ফলে ভ্রমণকারীদের কাছে সবকিছু তুলনামূলকভাবে সস্তা মনে হয়। তখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ অল্প পরিমাণে বকশিশ দিতে চান।তাই অনেকেই মনে করে বকশিশ দেওয়া বিষয়টি সেই মানুষটিকে কিছুটা নিচু করে দেখাকে বোঝায়। ইয়োকোহামার একটি ওয়াইন বারের মালিক টাকু নাকামুরা মনে করেন, "আমার কাছে মনে হয় বকশিশ হলো একজন ব্যক্তির নিম্ন-স্তরের কাজ করা অন্য ব্যক্তিকে তার কত টাকা আছে, তা দেখানোর একটি ভঙ্গি।" তিনি আশা করেন, জাপানে বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করে যে কারও দান বা দাতব্যের প্রয়োজন না হয়েই জীবনধারণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করা উচিত।

তারা মনে করেন ভালো পরিষেবা চাকরির অংশ। ছবি: যাবিস্ট্রো
তারা মনে করেন ভালো পরিষেবা চাকরির অংশ। ছবি: যাবিস্ট্রো

জাপানে বকশিশের ভবিষ্যৎ

পর্যটন বিপণন বিশ্লেষক অ্যাশলে হার্ভে বিশ্বাস করেন যে বকশিশ দেওয়ার এই ধারণা জাপানিদের মধ্যে জনপ্রিয় হবে না। তিনি ব্যাখ্যা করেন, বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও, তাদের অধিকাংশই এশিয়ার অন্যান্য অংশ থেকে আসেন। যেমন যেমন চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ইত্যাদি। আর এই দেশগুলোতেও বকশিশের ঐতিহ্য নেই। তাই বকশিশ দেওয়ার চেষ্টা করা লোকজনের সংখ্যা খুবই কম। আর একটি জনপ্রিয় চেইন রেস্তোরাঁয় টিপ জার রাখার ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তুলেছিল। হার্ভে পরামর্শ দেন যে, যে রেস্তোরাঁগুলো এই সমস্যা এড়াতে চায়, তারা যেন একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয় যে বকশিশের প্রয়োজন নেই। তিনি এটাও নিশ্চিত করে বলেন যে, ওইসব জারে পর্যটকেরা অর্থ প্রদান করলেও জাপানিরা সেখানে অর্থ রাখছেন না।

সূত্র: ডয়েচেভেলে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৭৯৩ মণ্ডপে অসুরের মুখে দাড়ি, দায়ীদের শনাক্ত করা হচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড করল বিটকয়েন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ৫০০ টাকা, প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক

ইউরোপের সুন্দর দেশ এস্তোনিয়ায় স্থায়ী বসবাসের আবেদন করবেন যেভাবে

কোরআন অবমাননার অভিযোগে নর্থ সাউথে ছাত্রকে সহপাঠীদের পিটুনি, মধ্যরাতে উদ্ধার করল পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত