Ajker Patrika

জোনস বিচের ডাক

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২১, ১৪: ১০
জোনস বিচের ডাক

পরিকল্পনা করেছিল সনকা আর শৌনক। দিনের পর দিন অবরুদ্ধ জীবনের পর একটু বুক ভরে নিশ্বাস নিতে চেয়েছিল ওরা। ভেবেছিল, সুযোগ পেলে ঘুরে আসবে সমুদ্র থেকে।

আটলান্টিক মহাসাগরের কোল ঘেঁষে নিউইয়র্ক। তাই সমুদ্রের স্বাদ পাওয়া কঠিন কিছু নয়। চাইলেই চলে যাওয়া যায় সমুদ্রতটে। কিন্তু সবকিছুর ওপরে করোনা। করোনা জানিয়ে দিয়েছিল, ‘রোসো বৎস’। এত চঞ্চল হয়ো না। তোমাদের ঘরে বসিয়ে রাখার আরও অনেক অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে আমার।

কিন্তু দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার পর সাহস বেড়েছে মানুষের। ভীত, সন্ত্রস্ত মানুষের জায়গায় এখন দেখা যাচ্ছে সাহসী মানুষ। মুখে মাস্ক না দিয়েই কেউ কেউ হাঁটছে। তবে বলে রাখা ভালো, নিউইয়র্কের পথেঘাটে হাঁটতে গেলে কদাচিৎই পদযাত্রীর দেখা মেলে। তাই রাস্তায় বেরিয়ে সংক্রমণের ভয় নেই বললেই চলে।

আমরা দূরের কোনো সৈকতের কথা ভাবিনি। এফ ট্রেনে উঠে শেষ স্টপেজটাই হলো কোনি আইল্যান্ড। সবাই মিলে সেটায় চড়ে বসলেই সোজা সৈকতে চলে যাওয়া যায়। এখানে রয়েছে একটি নয়নাভিরাম অ্যাকোরিয়াম। বছর দু-এক আগে সেটা দেখেছি। সমুদ্রতটটাও ভালো। বহু দূর পর্যন্ত বালি। তারপর লোনা জল।

শুরুতে ভেবেছিলাম, আমরা পরিবারের চারজন কোনো একদিন বেরিয়ে পড়ব পথে। কিন্তু বৃহত্তর পরিবারের কাছে কথাচ্ছলে তা জানালে পরিবর্তিত হয়ে গেল পরিকল্পনা। বদ্ধ সময়কে জয় করার জন্য ভাবা হলো একটু দূরের কোনো সৈকতে গেলে কেমন হয়। এর আগে মোজেস সৈকতে গিয়েছিলাম আমরা। এবার মনে হলো জোনস পার্কের সৈকতে যাওয়া যেতে পারে। নিউইয়র্কের পাঁচটি বোরোর মধ্যে কুইন্স–লাগোয়া যে লং আইল্যান্ড, তারই মধ্যে জোনস বিচ।

একটা গাড়ি আর একটা স্মার্টফোন থাকলে এখন যেকোনো গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া ডাল–ভাত হয়ে গেছে। গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে জিপিএস খুলে দিলেই এক যান্ত্রিক নারী–কণ্ঠ সময়মতো জানিয়ে দেবে—কোন পথ ধরে পৌঁছাতে হবে গন্তব্যে। কোনো রাস্তায় যানজট থাকলে সে আপনাআপনি অন্য সহজ পথে নিয়ে যাবে।

আমরা রওনা হয়েছিলাম দুই গাড়িতে দশজন। একটি গাড়িতে জিপিএস ছিল, অন্যটা চলছিল সামনের গাড়ির পেছন পেছন। কিন্তু কুইন্সের লোকাল পথ দিয়ে চলতে চলতেই একসময় সামনের গাড়িটি দৃষ্টিপথ থেকে হারিয়ে গেল। অর্থাৎ, দুচোখে অন্ধকার নিয়ে দ্বিতীয় গাড়িটি পড়ল অকুল পাথারে। তখনই চালু করা হলো জিপিএস এবং এক যন্ত্রমানবী জানিয়ে দিলেন—সামনেই ডানদিকে মোড় নিতে হবে। তারপর ছুটতে হবে ঘোড়ার মতো। সময়মতো তিনি জানিয়ে দেবেন ডান–বাম করতে হবে কিনা।

আমরা জানতাম, নিউইয়র্কের কুইন্স ভিলেজ থেকে ২৬ মাইল গেলে পাওয়া যাবে সমুদ্রের জল।

বাইরে এসে মাস্ক ছাড়া প্রায় দুই ঘণ্টা থাকা হয়নি অনেক দিন; এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।নিউইয়র্কের মধ্যেই পথচলার জন্য রয়েছে লোকাল ও হাইওয়ে বলে দুধরনের রাস্তা। লোকাল রাস্তায় ঘন ঘন লালবাতি। হাইওয়েতে কোনো লালবাতি নেই। ভোঁ করে চালিয়ে নির্দিষ্ট এক্সিট দিয়ে বেরিয়ে নিজের বাড়ি বা অফিস খুঁজে নেওয়া যায়। একবার পথ হারিয়ে ফেললে সে পথে ফিরে আসতে বেশ হ্যাপা পোহাতে হয়। ঘুরতে ঘুরতে যখন পথ খুঁজে পাওয়া যায়, ততক্ষণে সময় নষ্ট হয় অনেক।

নিউইয়র্ক শহরে এখন ঘণ্টায় ২৫ মাইল বেগে চলতে হয়। হাইওয়েতে তা ৫৫ মাইল। কিছুদিন আগেও রাস্তায় গাড়িঘোড়ার সংখ্যা ছিল কম, এখন প্রতিদিনই বাড়ছে। খুব শিগগিরই আগের জনকোলাহলপূর্ণ শহরটি পুনরুজ্জীবিত হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

সোজা রাস্তাটা দিয়ে ১৩ মাইল যাওয়ার আগে আমরা যেখানে এক্সিট নিয়েছিলাম, সেখান থেকেই টের পাচ্ছিলাম বাতাসটা ভেজা ভেজা। গাড়ির জানালা খুলে দিতেই এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া এসে বুঝিয়ে দিল সমুদ্র অদূরেই।

ভেজা বাতাস আমাদের স্নান করিয়ে দিচ্ছিল। সৈকতের কাছাকাছি এসে যন্ত্রমানবীর নির্দেশনায় গোলমাল দেখা দিল। আসলে দোষটা তার নয়। সে চেষ্টা করে যাচ্ছে সৈকতের পার্কিং লটে আমাদের জায়গা করে দেওয়ার জন্য, অথচ তা বন্ধ। অগত্যা একটু পরেই সে সন্ধান দিচ্ছে সামনের আরও কোনো ঢোকার রাস্তার। এভাবে কিছু দূর অতিক্রম করার পরই কেবল আমরা ঢুকতে পারলাম পার্কে। তখনো আমাদের সবার মুখে মাস্ক। বিশাল পার্কিং প্লেসে গাড়ি রেখে প্রথমেই আমরা স্যান্ডেল খুলে হাতে নিয়ে নিল কেউ, কেউ ভরে ফেলি ব্যাগে। এই বিশাল বালুকাবেলায় স্যান্ডেল পায়ে দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।

প্রচণ্ড বাতাস। সেই যে বহু দূর থেকে ভেজা বাতাস আমাদের শরীর করে তুলছিল শীতার্ত, সেই বাতাস এখন আসছে সমুদ্রের ভিতর থেকে। একটু আগেই সমুদ্রস্নানের স্বপ্ন দেখছিলাম যারা, তারা সে স্বপ্নকে পাঠিয়ে দিল কবরের নির্জনতায়।

এ কথা বোঝানো শক্ত, মাস্কে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া মানুষের কাছে হঠাৎ মাস্ক থেকে মুক্তি কতটা আনন্দ দিতে পারে। সমুদ্রের ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে বালুকাবেলা, আছড়ে পড়া ঢেউয়ের সঙ্গে জলের গভীর থেকে কখনো তীরে আসছে ঝিনুক।

জোনস বিচ বালুর সৈকত। অনেকটা কক্সবাজারের মতো। এর আগে মোজেস বিচে গিয়েছিলাম। সেখানে পাথরের সংখ্যা ছিল বেশি। হঠাৎ করে অলক্ষ্যে পাথরে আঘাত লেগে কেটে যেতে পারে পা। কিন্তু এখানে সেই হাঙ্গামা নেই।

শহুরে মানুষ নিজেকে প্রায়ই একটা প্রশ্ন করে—কোথায় ভালো লাগে বেশি? সমুদ্রে নাকি পাহাড়ে? এর উত্তর ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। কিন্তু পছন্দের এই ছোট তালিকায় টিকচিহ্ন দিতে বেশির ভাগ মানুষই ইতস্তত করে। আসলে দুটোতেই মানুষ স্বচ্ছন্দ। দুটোর সৌন্দর্য দুরকম। এক জায়গায় তাদের মিল—বড়ত্বের জায়গায়। এরা মানুষের তুলনায় এত বেশি বড় যে, শুরুতেই পরাজয় মেনে নিয়ে ওদের সঙ্গে বাতচিৎ করতে হয়। ওদের বিশালত্বই মানুষকে বুঝিয়ে দেয়, মানুষ কত ক্ষুদ্র।

জোনস বিচে স্নান করা আর হলো না। কেউই সাহস করে সমুদ্রস্নানে নামেনি। অনেকেই এসেছেন স্বল্প পোশাকে। কিন্তু পা ভেজানোর বেশি শৌর্য দেখানোর চেষ্টা করছে না কেউ। সমুদ্রপাড়ে বসে কেউ কেউ রৌদ্রস্নান করছেন। তবে তাদের সংখ্যা বেশি নয়।

বহু দূরের দুটো দৃশ্য দেখে ভালো লাগল। রোদ গায়ে মেখে বই পড়ছেন একজন। অন্য একজন আঁকছেন ছবি। এ মুহূর্তে জগতের আর সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা নিমগ্ন রয়েছেন নিজ নিজ কাজে। আমার মনে পড়ে যাচ্ছে বত্রিশ বছর আগের কথা। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রাসনাদার শহরে ছিল আমার আবাস। একদিন বিকেলে বিষণ্ন মনে কুবান নদীর ধারে বসে ছিলাম। একা। ওপরে নীল আকাশ, নিচে নদী। আশপাশে কেউ নেই। সন্ধ্যা হয় হয়। এ সময় হঠাৎ একজন মানুষকে দেখতে পেলাম; হাতে বই। তিনি নদীর কিনারায় দাঁড়িয়ে বইটা পড়ছিলেন, আর মাঝে মাঝে অপস্রিয়মাণ সূর্যের দিকে তাকাচ্ছিলেন। সূর্য যখন অস্ত গেল, তখন তিনি বন্ধ করলেন তাঁর বই। কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আপনি সূর্যাস্তের সময় বই পড়ছিলেন কেন?’

ভদ্রলোক হেসে বলেছিলেন, ‘বইয়ের বর্ণনার সঙ্গে প্রকৃতিকে মিলিয়ে দেখছিলাম।’

‘মানে?’

‘মানে হলো, লেখক যেভাবে সূর্যাস্তর বর্ণনা দিয়েছেন, আদতেই সেভাবে সূর্যাস্ত হয় কিনা, দেখলাম! অদ্ভুত মিল!’

আমার মন ভালো হয়ে গিয়েছিল। এ রকম একটা বিষয় কোনো মানুষের মনে দোলা দিতে পারে, সেটাই আনন্দের উৎস। এবারও জোনস বিচে পড়ুয়া মানুষটিকে দেখে সে রকমই ভালো লাগল।

আমরা অনেক দিন পর প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে পারছিলাম। বাইরে এসে মাস্ক ছাড়া প্রায় দুই ঘণ্টা থাকিনি অনেক দিন। এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। দেশে ভারত থেকে আসা নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত, আর নিউইয়র্কের মানুষ করোনাকে বিদায় জানানোর জন্য প্রস্তুত হয়েছে। এ জন্য বিশেষ কিছু করতে হয়নি, মাস্ক পরাকে করা হয়েছে বাধ্যতামূলক, হাত ধোয়া বা হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহারকে করা হয়েছে বাধ্যতামূলক, আর একে অন্যের কাছ থেকে অন্তত ৬ ফুট দূরত্ব মানার অঙ্গীকার করতে হয়েছে। এর পর ফল মিলেছে। গত বছর ঠিক এ রকম সময় নিউইয়র্ক ছিল মৃত্যুপুরী। শুনেছি, অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ ছিল শ্বাস–প্রশ্বাসের মতো। এক মিনিট সাইরেনের আওয়াজ না থাকলেই মনে হতো, কানে শুনতে পাচ্ছি তো, নাকি কান নষ্ট হয়ে গেছে? সেই নিউইয়র্ক এখন করোনাকে ভয় দেখাতে প্রস্তুত।

সমুদ্রের বাতাস পেটে খিদের জন্ম দেয়। সমুদ্র থেকে উঠে আসা একেকটি মানুষ পরিণত হয় খুদে রাক্ষসে। তিন বাড়ি থেকেই হালকা খাবার নিয়ে আসা হয়েছিল। সে খাওয়া উড়ে গেল এক ফুৎকারে। মাংসের চপ, চিপস, কেক, চা। চেরি খাওয়া হলো গপগপ করে। তারপর এল আলস্য।

এর আগে যা হয়েছিল, সে কথাও বলে রাখা দরকার। সমুদ্র থেকে তটে ফেরা হলে সেখানে দেখা যাবে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা রেস্টরুম। সবখানেই পর্যাপ্ত পরিমাণ টিস্যু পেপার আছে। পানি রয়েছে। আর রয়েছে তরল সাবান। এখানে এসে ফ্রেশ হয়ে তারপর তো খাওয়া–দাওয়া!

যদি ভেবে থাকেন, এর পর বাড়ি ফেরার পথে একমাত্র চালক ছাড়া সবাই ঘুমাতে শুরু করল, তাহলে ভুল করবেন। নিউইয়র্ক এমন এক জায়গা, যেখানে গোটা শহরটাই দিন–রাত ২৪ ঘণ্টা জেগে থাকে। সে কথা মেনে নিয়েই আমরা পরবর্তী পরিকল্পনা ঠিক করতে থাকি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংস

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংস
বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংস

গরুর মাংস তো নানাভাবে খেয়েছেন। বাঁধাকপির এই মৌসুমে সেটি দিয়েই রেঁধে দেখুন। স্বাদ তো বদলাবেই, একটু অন্য রকম খাবারও খাওয়া হবে। আপনাদের জন্য বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংসের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা

উপকরণ

হাড়সহ গরুর মাংস এক কেজি, বাঁধাকপি একটা, এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা ২ থেকে ৩ পিস করে, আদা ও রসুনবাটা এক টেবিল চামচ করে, হলুদ, মরিচ ও ধনেগুঁড়া এক টেবিল চামচ করে, জিরাগুঁড়া এক চা-চামচ, গরমমসলার গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি আধা চা-চামচ, সয়াবিন তেল আধা কাপ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ এবং ৫ থেকে ৬টা কাঁচা মরিচ ফালি।

প্রণালি

গরুর মাংস ধুয়ে রাখুন। বাঁধাকপি চিকন করে ভাজির মতো কেটে ধুয়ে নিন। কড়াইতে সয়াবিন তেল দিয়ে গরম করুন। তেল গরম হলে তাতে পেঁয়াজকুচি দিয়ে লালচে করে ভেজে তাতে এলাচি, দারুচিনি ও তেজপাতা দিন। এবার আদা ও রসুনবাটা দিয়ে সামান্য নেড়ে নিন। অল্প পানি দিয়ে হলুদ, মরিচ, ধনেগুঁড়া ও লবণ দিয়ে কষিয়ে নিন। পরে মাংস দিয়ে ঢেকে রান্না করুন কম আঁচে। সেদ্ধ হলে বাঁধাকপি দিয়ে আবারও ঢেকে রান্না করুন। এবার হয়ে এলে জিরা ও গরমমসলার গুঁড়া এবং কাঁচা মরিচের ফালি দিয়ে নেড়েচেড়ে রান্না করুন। তারপর লবণ দেখে নামিয়ে নিন। রেডি হয়ে গেল বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গৃহকর্মী নিয়োগের আগে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে পারেন

ফিচার ডেস্ক
গৃহকর্মী নিয়োগের আগে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে পারেন

সম্প্রতি একটি ঘটনা মোটামুটি সবাইকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। গত সোমবার সকালে মোহাম্মদপুরে একটি বাড়িতে মা-মেয়ে খুন হন গৃহকর্মীর হাতে। শুধু এমন ঘটনা নয়, গৃহকর্মী খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে পালানোর ঘটনাও প্রায়ই শোনা যায়।

শহরের ব্যস্ত জীবনে দৈনন্দিন কাজের সাহায্যের জন্য অনেকে গৃহকর্মীর ওপর নির্ভরশীল। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বাড়ির জিনিসপত্রের নিরাপত্তা অনেকটা নির্ভর করে কেমন গৃহকর্মী আপনি নিয়োগ দিয়েছেন, তার ওপর। গৃহকর্মী নিয়োগের আগে তার সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেছেন কিনা, সেটার ওপরও আপনার নিরাপত্তা অনেকটাই নির্ভর করে। কারণ, তাদের নিয়োগে সামান্য অসতর্কতাও বড় বিপদের কারণ হতে পারে।

গৃহকর্মী নিয়োগের আগে যেমন কাজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে নেওয়া হয়, তেমনি তাদের ছোটখাটো একটা ইন্টারভিউ নেওয়া থেকে শুরু করে জরুরি কিছু কাগজপত্রও সংগ্রহ করা উচিত।

নিরাপত্তার স্বার্থে গৃহকর্মী নিয়োগের আগে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে পারেন—

জরুরি নথি সংগ্রহে রাখুন

কোনো চাকরিতে নিয়োগের আগে অফিসে যেমন সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তেমনি গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও এমন কিছু কাগজ তাদের কাছ থেকে চেয়ে নিন।

গৃহকর্মী নিয়োগের আগে অন্তত দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি রাখুন। অবশ্যই চেহারার সঙ্গে ছবি মিলিয়ে নেবেন। স্থায়ী গৃহকর্মী রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাম্প্রতিককালে তোলা ছবি চেয়ে নেবেন বা তুলে নেবেন।

জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করুন। জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে থাকলে প্রয়োজনে আইনগতভাবে ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সহজ হয়। এটি দিতে না চাইলে সেই গৃহকর্মীকে নিয়োগ না দেওয়াই নিরাপদ।

বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা যাচাই করে নিন

গৃহকর্মীর বর্তমান ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর নিন। সঙ্গে পরিবারের আরও দু-একজনের নম্বর রাখতে পারলে ভালো হয়। স্থায়ী গৃহকর্মী রাখার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় নিজের গ্রামের বাড়ি থেকে খোঁজ করে নিয়োগ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিজে বা পরিচিত কাউকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে ঠিকানা যাচাই করে নিন। এ ছাড়া বর্তমানে তিনি যেখানে থাকেন, সেখানকার আশপাশ সম্পর্কেও খোঁজ নিতে পারেন।

কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সেটা বুঝে নিন

সাধারণত শহরের বাড়িগুলোয় দেখা যায়, একজন গৃহকর্মী একই ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে কাজ করে, আশপাশের বিভিন্ন ভবনেও কাজ করে এরা। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ তাদের বাসা সাধারণত পাশাপাশি এলাকাতেই হয়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট এলাকার মধ্য়ে তারা কাজ নেয়। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম।

কিন্তু নির্দিষ্ট কারও মাধ্যমে এমন কোনো গৃহকর্মী যদি নিয়োগ দেন, যিনি এলাকার নন, সে ক্ষেত্রে যার মাধ্যমে নিয়োগ দিচ্ছেন তার নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বরও সংগ্রহে রাখুন। গৃহকর্মী আগে কোথায় কাজ করেছে, কত দিন করেছে, সে সম্পর্কেও তথ্য নিন।

নতুন এলাকায় বসবাসের ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা, কেয়ারটেকার বা পরিচিত প্রতিবেশীর সুপারিশে গৃহকর্মী নেওয়া যেতে পারে। তবে সেখানেও ছবি, পরিচয়পত্র ও শনাক্তকারী ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ জরুরি।

কাজের ধরন, সময় ও বেতন স্পষ্টভাবে ঠিক করুন

কী কাজ করবেন, কত সময় কাজ করবেন, এ বিষয়গুলো শুরুতেই পরিষ্কার না করলে পরে ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হয়। অতিরিক্ত কাজ চাপানোর প্রবণতা দ্বন্দ্ব বাড়ায়। মাসিক বেতন, বেতন দেওয়ার তারিখ ও ছুটির বিষয়টি আগেই ঠিক করে নেওয়া জরুরি। অস্পষ্টতা থাকলে কর্মী ও নিয়োগকর্তা—উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ব্যক্তিগত আলমারি নিজেই পরিষ্কার করুন

গৃহকর্মী নিয়োগের সময় স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বলুন কোন কোন জিনিস আপনি নিজেই রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। এতে একটা স্বাস্থ্যকর সীমারেখা বজায় থাকবে। ব্যক্তিগত ও দামি জিনিসপত্র রয়েছে এমন ড্রয়ার বা আলমারি নিজ হাতে গোছান ও পরিষ্কার করুন। এতে অনেকটাই চিন্তামুক্ত থাকা যাবে।

সূত্র: বুমার্স ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতে পানিশূন্যতা দূর করবেন যেভাবে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
শীতেও সহজ কিছু অভ্যাসে শরীরে পানির ভারসাম্য রাখা সম্ভব। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
শীতেও সহজ কিছু অভ্যাসে শরীরে পানির ভারসাম্য রাখা সম্ভব। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

শীত এলে অনেকের পানি পানের পরিমাণ কমে যায়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় তৃষ্ণা কম অনুভূত হওয়ায় আমরা বুঝতেই পারি না, শরীর ধীরে ধীরে পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। অথচ শুষ্ক শীতের বাতাস শরীর থেকে পানি আরও বেশি বের করে নেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়, শক্তি কমে যায় এবং হজমেও সমস্যা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি পান শীতে বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর সুস্থ রাখে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, শীতেও সহজ কিছু অভ্যাসে শরীরে পানির ভারসাম্য রাখা সম্ভব।

গরম লেবুপানি দিয়ে দিন শুরু

শীতের সকালে ঠান্ডা পানি পান অনেকের কাছে অস্বস্তিকর। এর বদলে দিন শুরু করুন এক কাপ গরম লেবুপানি দিয়ে। পুষ্টিবিদ পূজা কেডিয়ার মতে, এতে শরীর ধীরে সতেজ হয়ে ওঠে এবং দিনের শুরুতে পানি পানের অভ্যাস তৈরি হয়। লেবুপানি হজমে সহায়তা করে, শরীরে ভিটামিন সি জোগায় এবং মনও ভালো রাখে। গরম পানি গলাও আরাম দেয়।

এর সহজ রেসিপি হলো, পানি ফুটিয়ে অর্ধেক লেবুর রস মেশান, চাইলে সামান্য মধু যোগ করতে পারেন। এতে সকালেই প্রায় আধা লিটার পানি শরীরে যায়।

চায়ের কাপেও থাকুক হাইড্রেশন

প্রতি কাপ হারবাল চা থেকে শরীর পায় বাড়তি তরল, যা শীতে বিশেষভাবে উপকারী। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
প্রতি কাপ হারবাল চা থেকে শরীর পায় বাড়তি তরল, যা শীতে বিশেষভাবে উপকারী। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

শীতে চা শুধু তৃষ্ণা মেটানোর পানীয় নয়, অনেকের কাছে এটি আনন্দের সঙ্গী। তবে এই সময়ে অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত চা বারবার পান করলে শরীরে পানির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাই সাধারণ দুধ-চা বা মসলা চায়ের বদলে হারবাল চা বেছে নেওয়া বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। পুদিনা, ক্যামোমাইল কিংবা তুলসী অথবা আদা চা শরীরে পানির ভারসাম্য রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উষ্ণতাও দেয়। প্রতিটি কাপ হারবাল চা থেকে শরীর পায় বাড়তি তরল, যা শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় বিশেষভাবে উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যামোমাইল চা মানসিক প্রশান্তি আনে এবং ভালো ঘুমে সহায়তা করে, যা শীতকালে অনেকের অনিদ্রা কমাতে সহায়ক। অন্যদিকে আদা ও তুলসী শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর, বিশেষ করে ঠান্ডা ও ফ্লুর মৌসুমে।

স্যুপ ও মৌসুমি ফল খান

শীতকাল স্যুপ খাওয়ার সেরা সময়। টমেটো স্যুপ, সবজি বা চিকেন স্যুপ শরীর উষ্ণ রাখার পাশাপাশি পানির ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতের খাবারের সঙ্গে হালকা স্যুপ যোগ করলে আলাদা করে বেশি পানি পান করতে হয় না। এতে হজমেও সুবিধা হয় এবং শীতের সময় ভারী খাবার খাওয়ার ফলে যে অস্বস্তি তৈরি হয়, তা কমে।

স্যুপ ও মৌসুমি ফল খান। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
স্যুপ ও মৌসুমি ফল খান। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

পানিশূন্যতা এড়াতে শীতকালে মৌসুমি ফল খাওয়ার দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। কমলা, মৌসুমি লেবু ও লাল গাজরের মতো রসাল ফল স্বাভাবিকভাবে শরীরে পানি জোগায় এবং একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করে। এসব ফল খেলে একদিকে যেমন শরীরে পানির ভারসাম্য থাকে, অন্যদিকে তেমনই অপ্রয়োজনীয় ক্ষুধা কমে এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে ওঠে।

ইলেকট্রোলাইটের দিকেও নজর দিন

শুধু পানি পান করাই যথেষ্ট নয়, শরীরে তরলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে দরকার সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইট। শীতে আমরা অনেক সময় বিষয়টি ভুলে যাই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রয়োজনে ইলেকট্রোলাইট পাউডার বা ট্যাবলেট পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে ক্লান্তি কমে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে।

পানির জন্য রিমাইন্ডার সেট করুন

কাজের চাপ, ছুটির ব্যস্ততা বা সপ্তাহের অলস ছুটির দিন পানি পান ভুলে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনে রিমাইন্ডার বা অ্যালার্ম সেট করা বেশ কাজে দেয়। পুষ্টিবিদ পূজা কেডিয়া বলেন, মজার নাম দিয়ে অ্যালার্ম সেট করলে সেটি মনে করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মনও ভালো করে। দিনে নির্দিষ্ট সময়ে অ্যালার্ম দিলে অজান্তেই পানি পানের লক্ষ্য পূরণ হয়ে যায়।

শীতের ঠান্ডায় তৃষ্ণা কম লাগলেও শরীরের পানির প্রয়োজন কমে না। গরম পানীয়, স্যুপ, ফল আর সামান্য সচেতনতার মাধ্যমেই শীতজুড়ে সুস্থ ও সতেজ থাকা সম্ভব।

সূত্র: হেলথশট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিশ্ব স্বাদের মঞ্চে সেরা ১০০ রন্ধনশৈলী, বাংলাদেশের স্থান কততম

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা 
টেস্ট অ্যাটলাসের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলীর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষাটতম। এই তালিকায় ‘মাস্ট ট্রাই’ খাবারের তকমা পেয়েছে চমচম। ছবি: উইকিপিডিয়া
টেস্ট অ্যাটলাসের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলীর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষাটতম। এই তালিকায় ‘মাস্ট ট্রাই’ খাবারের তকমা পেয়েছে চমচম। ছবি: উইকিপিডিয়া

পরোটা-কিমা কিংবা সন্ধ্যাবেলার চায়ের সঙ্গী গরম-গরম বাকরখানি। কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার প্রতিদিন খাওয়া এই খাবারগুলো বৈশ্বিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে? টেস্ট অ্যাটলাসের ‘বিশ্বের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলী ২০২৫-২০২৬’ এর র‍্যাঙ্কিং সেই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। র‍্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বজুড়ে খাদ্যরসিকদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রন্ধনশৈলী।

টেস্ট অ্যাটলাসের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলীর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষাটতম। এই তালিকা শুধু একটি র‍্যাঙ্কিং নয়, এটি একটি দেশের প্রাচীন, মসলাদার এবং আবেগঘন খাবারের গল্প। যে গল্পগুলো এশিয়া মহাদেশের ভারত থেকে জাপান হয়ে ভিয়েতনাম পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে এই গল্পের একটি বিশেষ অংশজুড়ে আছে আমাদের নিজস্ব খাদ্যসংস্কৃতি, যা বহুকালের ইতিহাস ও বৈচিত্র্য বহন করে। আন্তর্জাতিক সমালোচকদের চোখে কেমন ছিল আমাদের এই স্বাদের যাত্রা এবং কোন কোন খাবার পেল ‘মাস্ট ট্রাই’ তকমা? চারটি খাবারকে মাস্ট ট্রাই তকমা দেওয়া হয়েছে। তালিকার প্রথমে আছে চমচম, এরপর কিমা, তারপর টিক্কা, আরও আছে পরোটা এবং শেষে বাকরখানি।

টেস্ট অ্যাটলাসের সেরা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ঢাকার বাকরখানি। ছবি: আজকের পত্রিকা
টেস্ট অ্যাটলাসের সেরা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ঢাকার বাকরখানি। ছবি: আজকের পত্রিকা

তালিকায় পুরো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাবারের নাম ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ্য করা হয়েছে। সেখানে স্থান পেয়েছে এশিয়া মহাদেশের ২১টি দেশের খাবার। বাংলাদেশসহ তালিকায় স্থান পাওয়া দেশগুলো হলো জাপান, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, লেবানন, ফিলিপাইন, ইরাক, ফিলিস্তিন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া, সিরিয়া, জর্জিয়া, কাতার, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান।

পূর্ব এশীয়র জাদু

চীনের খাবার ঝেংজিয়াও। ছবি: টেস্ট অ্যাটলাস
চীনের খাবার ঝেংজিয়াও। ছবি: টেস্ট অ্যাটলাস

এই অঞ্চলে সুস্বাদু ‘উমামি’ ফ্লেভার এবং ভাত-নুডলসের ব্যবহার প্রধান। জাপান ও চীনের রন্ধনশৈলী বিশ্বজুড়ে খাদ্যপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত। তালিকায় প্রথম এশীয় দেশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে জাপানিজ রন্ধনশৈলী। তালিকায় তাদের অবস্থান ষষ্ঠ। স্বাদের সূক্ষ্মতা এবং উপকরণের বিশুদ্ধতা জাপানি খাবারের মূল আকর্ষণ। দেশটির ‘মাস্ট ট্রাই’ খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ওয়াগিউ, আকামি টুনা, হামামাৎসু গিয়োজা, নেগিতোরোডন ও ওতোরো নিগিরি সুশি। বিস্তৃত বৈচিত্র্য এবং আঞ্চলিক বিশেষত্বের জন্য পরিচিত চীনা রন্ধনশৈলীর স্থান অষ্টম। তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো হলো ঝেংজিয়াও, লানঝো লামিয়ান, শেং চৌ, ইয়ুশিয়ং ও সিউ মেই। গাঁজানো বা ফার্মেন্টেড খাবার, মসলাদার সস এবং গ্রিলড মাংসের জন্য কোরিয়ান খাবার পরিচিত। উনিশতম অবস্থানে থাকা এই দেশের রন্ধনশৈলীতে বিখ্যাত পদগুলো হলো গেজাং, চিকেন, বানচান, গালবি ও ইয়ুকহো।

কারি, ডাল এবং রুটিনির্ভর দক্ষিণ এশীয়

এই অঞ্চলের খাবারগুলো মসলার জটিল মিশ্রণ ও গভীর স্বাদের জন্য বিখ্যাত। তালিকায় ১৩তম অবস্থানে থাকা ভারতীয় রন্ধনশৈলীর অঞ্চলভেদে বৈচিত্র্য থাকলেও তাদের মূল বৈশিষ্ট্য হলো সুগন্ধি মসলার ব্যবহার। দেশটির মাস্ট ট্রাই খাবারের তালিকায় রয়েছে বাটার গার্লিক নান, অমৃতসরি কুলচা, গরমমসলা, পরোটা ও মুথিয়া। ৬২তম স্থানে থাকা শ্রীলঙ্কার রন্ধনশৈলী নারকেল দুধ, সামুদ্রিক খাবার এবং শ্রীলঙ্কার নিজস্ব মসলার জন্য জনপ্রিয়। তাদের সেরা পদগুলোর মধ্যে রয়েছে সিলন সিনামন, বাত কুলু বাধো, কার্ড অ্যান্ড ট্রেকেল, কারি লিভস (বা কারি পাতা) ও কুকুল মাস কারি। ৭৩তম স্থানে থাকা পাকিস্তানি রন্ধনশৈলী ভারী গ্রিলড মাংস, রুটি এবং সুগন্ধি বিরিয়ানির জন্য পরিচিত। মাস্ট ট্রাই খাবার হলো কিমা, মুরগ কারাহি, বাসমতী, পরোটা ও চাপলি কাবাব।

দক্ষিণ-পূর্ব এশীয়

এই অঞ্চলের রন্ধনশৈলীতে তাজা গুল্ম, লেমন গ্রাস এবং টক-মিষ্টি-ঝাল স্বাদের একটি নিখুঁত ভারসাম্য দেখা যায়। তালিকায় দশম স্থানে আছে ইন্দোনেশিয়ান রন্ধনশৈলী। দেশটির বিভিন্ন দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম নাসি পাডাং, বাওয়াং গোরেং, সাতে কাম্বিং, সিওমাই ও সতো বেতাউই। এদিকে টাটকা উপকরণ এবং হালকা স্বাদের জন্য ভিয়েতনামের খাবার জনপ্রিয়। ১৬তম স্থানে থাকা এই দেশের সেরা পদগুলো হলো বো নুং জ্যাম, বান মি, চা কা লা ভং, মি কোয়াং ও থিত খো টাউ।

ভিয়েতনামের খাবার বান মি। ছবি: টেস্ট অ্যাটলাস
ভিয়েতনামের খাবার বান মি। ছবি: টেস্ট অ্যাটলাস

তালিকার ২৪তম স্থানে আছে থাই রন্ধনশৈলী। এর পরেই আছে ফিলিপাইন। এরপর ২৯তম স্থানে আছে মালয়েশিয়া, ৯০তম স্থানে সিঙ্গাপুর ও ৯৬তম স্থানে আছে লাওসের খাবার। থাই খাবারের মূল আকর্ষণ হলো এর সুষম স্বাদের মিশ্রণ। টক ও নোনতা স্বাদের প্রাধান্য দেখা যায় ফিলিপাইনের খাবারে। মালয়, চীনা ও ভারতীয় স্বাদের মিশ্রণ পাওয়া যায় মালয়েশিয়ান রন্ধনশৈলীতে। সিঙ্গাপুরের রন্ধনশৈলীতে বহুজাতিক প্রভাব স্পষ্ট। লাওসের খাবার প্রধানত স্টিকি রাইস, তাজা ভেষজ এবং লাব নামক মাংসের সালাদের জন্য পরিচিত।

মধ্যপ্রাচ্য ও লেভান্টাইন

কাবাব, রুটি, দই এবং বিশেষ মসলার মিশ্রণের জন্য এই অঞ্চলের খাবার বিখ্যাত। তালিকায় ৩৭তম স্থানে আছে ফিলিস্তিন রন্ধনশৈলী। যেখানে প্রায়শই দানাশস্য, জলপাই তেল এবং স্থানীয় মসলার ব্যবহার দেখা যায়। তালিকায় ৪২তম স্থানে থাকা ইরানি রন্ধনশৈলীর মূল বৈশিষ্ট্য ভাত—বিশেষত জাফরান দেওয়া চেলো, মাংসের স্টু এবং শুকনো ফলের ব্যবহার। লেভান্টাইন স্বাদের এক চমৎকার উদাহরণ সিরিয়ান খাবার। তালিকায় তাদের স্থান ৪৫তম। ৭১তম স্থানে থাকা ইরাকি রন্ধনশৈলী প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতার উত্তরাধিকার বহনকারী ভারী ও পুষ্টিকর খাবার। মধ্য এশীয় এবং ভারতীয় প্রভাবের মিশ্রণ আছে আফগান রন্ধনশৈলীতে। তালিকায় তাদের স্থান ৭৪তম। তালিকার ৯৯তম দেশটির নাম কাতার।

মধ্য এশিয়া ও ককেশাস

ঐতিহ্যবাহী গ্রিলড খাবার, ডাম্পলিং এবং দুধ দিয়ে তৈরি খাবারের ব্যবহার এই অঞ্চলের রন্ধনশৈলীতে গুরুত্বপূর্ণ। তালিকায় ৮৭তম স্থানে আছে আর্মেনিয়ান রন্ধনশৈলী। ককেশাস অঞ্চলের প্রাচীন এই রন্ধনশৈলীতে রুটি, কাবাব এবং ডাম্পলিং উল্লেখযোগ্য। ৯৮তম স্থানে আছে কাজাখস্তানি রন্ধনশৈলী। মধ্য এশীয় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার মাংস, দুধ দিয়ে তৈরি খাবার এবং মাংসের পদ দেশটির প্রধান আকর্ষণ। তাদের সেরা পদগুলোর মধ্যে রয়েছে সামসা, শুজিক, লাগমান, কেসপে ও বাউরসাক।

সূত্র: টেস্ট অ্যাটলাস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত