মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম
প্রতিটি ঋতুর একটি করে টপ রেটিং বিষয় থাকে। শীতে ভ্রমণ রেটিংয়ের টপে থাকে হলুদ ফুলের সরিষাখেত। বাঙালির জন্য এটি মোটামুটি বাই ডিফল্ট। এর জন্য যে আপনাকে অনেক টাকা-পয়সা ব্যয় করে দূর-দূরান্তে যেতে হবে, তা নয়। নিজের গ্রামেই একবার ঘুরে দেখতে পারেন। তবে ঢাকার লোকজনের একটুখানি বাইরে তো যেতেই হবে শীত আর সরিষাখেত দেখতে। শীত শেষ হওয়ার আগেই তাই ঘুরে এলাম।
বহুবার গিয়েছি নিছক আড্ডা জমাতে সাভার নামাবাজার নতুন ব্রিজ পার হয়ে ফোর্ড নগরে। অথচ খড়ারচর, ফড়িঙ্গা থেকে আরেকটু এগিয়ে কাংশা যাওয়া হয়নি। কিন্তু সেটার সুযোগ হয়ে গেল। বন্ধুরা মিলে বেশ কয়েকটি বাইকে সাতসকালে ছুটে গেলাম খড়ারচর গ্রামে। সাভারের পাশে হলেও এলাকাটা ধামরাই উপজেলার মধ্যে পড়েছে।
স্থানীয় জনৈক ব্যক্তিকে সঙ্গে করে ঘুরতে বের হই আশপাশে। খড়ারচরের মায়াবী পথে ঘুরতে ঘুরতে চলে যাই মানিকগঞ্জ উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর তীরের গ্রাম কাংশায়।
আশ্চর্য হই, ঢাকার এত পাশে অথচ এখনো সেই আদি ও অকৃত্রিম গ্রামের স্বাদ পাওয়া যায় এখানে। কাংশার প্রকৃতি দেখলে বিশ্বাসই হবে না যে আপনি ঢাকা শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৩৭ কিলোমিটার দূরে আছেন।
কাংশা ব্রিজের ওপর থেকে শান্ত ধলেশ্বরীর রূপ দেখি। একটা সময় আর লোভ সামলাতে না পেরে ঝাঁপিয়ে পড়ি নদীর বুকে। চলে ইচ্ছেমতো জলকেলি। পানির নিচের কাদা সারা শরীর মেখে হারিয়ে যাই শৈশবের স্মৃতিতে। নদীর পাড়ে বসে থেকে মাঝবয়সীদের এমন শিশুতোষ পাগলামি উপভোগ করেন আরেক মাঝবয়সী স্থানীয় মাজের আলী।
তাঁকে জিজ্ঞেস করি, ‘ও ভাই, কী দেহেন?’ তিনি উত্তর দেন, ‘পাগলামি দেহি।’
আজানের ধ্বনি শুনে পানি থেকে উঠে আসি সবাই। নয়া আমদানি মাজের পাগলও আমাদের সঙ্গী হন। নামাজ শেষে গ্রামটা ঘুরে দেখি। পেট এবার চোঁ-চোঁ করছে। দুপুরের খাবারের জন্য চলে যাই পূর্বপরিচিত খড়ারচর মাদ্রাসার বালাখানায়। বেশ আয়েশ করে উদোরপূর্তি চলে। খাওয়াদাওয়া শেষে যাই ফড়িঙ্গা গ্রামে।
বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এক পুরোনো বটবৃক্ষ। খানিকটা সময় চলে সেখানে আড্ডা। তারপর চলে যাই বংশী নদীর তীরে কাজিয়ালকুণ্ডু গ্রামে। এর বুক চিরে ঝকঝকে নতুন সড়ক চলে গেছে আরিচা মহাসড়কের ঢুলিভিটার দিকে। পথের দুপাশে সৃজন করা হয়েছে বন। চমৎকার নিরিবিলি পরিবেশ। সড়কের পাশেই বিরাট বিল। জেলেরা আপন মনে মাছ ধরছেন। সেই সব মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দেখতে ছুটি চৌঠাইল গ্রামের দিকে। মাঝে রূপনগরের রূপে মজে ক্ষণিকের জন্য ব্রেক।
পড়ন্ত বিকেলে গ্রামের পিচঢালা সরু পথে, মোটরবাইকে চড়ে বেড়ানোর মজাই আলাদা। বাইকার আর সাইক্লিস্টদের রাইডের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় পথ এগুলো। অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যাই চৌঠাইল।
এপাশটায় ধলেশ্বরী সরু খালের রূপ ধারণ করেছে। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখনো অসাধারণ। সবুজ ফসলের খেত, বাঁশবাগানে নানা পাখির কিচিরমিচির, দিগন্তজোড়া সরিষাখেত। যত দূর চোখ যায় শুধু হলদে ফুল! সরিষা ফুলের ঘ্রাণে মন করবে আনচান। পুরো পৌষ আর মাঘের অর্ধেক সময়জুড়ে আবহমান বাংলার অধিকাংশ জেলার মাঠ এ রকম হলুদ হয়ে থাকে।
পড়ন্ত বিকেলে পাখির কুহু কুহু ডাক, বিভিন্ন ধরনের সবজিখেত, জমির পর জমিতে সরিষা ফুল, গরুর দুধের চা—সব মিলিয়ে এক অসাধারণ সময় কাটবে এখানে। গুটি গুটি পায়ে হেঁটে চলে যাই সরিষাখেতের আল ধরে দূরে, অনেক দূরে।
ঘুরে ঘুরে সব মিলিয়ে ভ্রমণের নির্যাস নিতে নিতে একসময় দেখি বিকেল গড়িয়ে সূর্য ডুবে যাওয়ার তাল করছে। দেরি না করে বন্ধুদের দু-একজন ধলেশ্বরীর তীরে তাঁবু টানাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। কেউ বারবিকিউর জন্য মুরগির খোঁজে ছুটল বাজারে। আর আমি বান্দা অলস, শুধু চেয়ে চেয়ে ওদের দৌড়ঝাঁপ দেখি। সন্ধ্যার পর ভরা জোছনায় মুরগি পোড়ানো শুরু হলো। হিম হিম বাতাসে তপ্ত আগুনে ঝলসানো মুরগির সঙ্গে ভরা পূর্ণিমার চাঁদটাকে মনে হতে লাগল সদ্য ভাজা নানরুটি!
যেভাবে যাবেন
গুলিস্তান বা গাবতলী অথবা অন্য কোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে আরিচা বা সাভারগামী বাসে যেতে হবে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে রিকশা বা অটোতে নামাবাজার নদীর পাড়। ব্রিজের সামনে থেকে ভাড়ায় চালিত মোটরবাইক অথবা অটোতে রূপনগর, চৌঠাইল, খড়ারচর, কাংশাসহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে আসতে পারবেন।
সড়কপথ ভালো। নিরাপত্তাও রয়েছে যথেষ্ট। চাইলে পরিবারের সব বয়সী সদস্যদের নিয়েও ঘুরে আসা যাবে। শিশুদের বিনোদনের জন্য এই এলাকায় আলাদিন ও বাবুল নামে দুটো পার্ক রয়েছে। ফোর্ড নগর ও নামাবাজার ব্রিজ আঞ্চলিক ভাষায় ফুটনগর নামেও পরিচিত।
খরচপাতি
সারা দিনের জন্য জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তবে বিষয়টি নিজেদের পছন্দ ও আয়োজনের ওপর নির্ভর করবে।
প্রতিটি ঋতুর একটি করে টপ রেটিং বিষয় থাকে। শীতে ভ্রমণ রেটিংয়ের টপে থাকে হলুদ ফুলের সরিষাখেত। বাঙালির জন্য এটি মোটামুটি বাই ডিফল্ট। এর জন্য যে আপনাকে অনেক টাকা-পয়সা ব্যয় করে দূর-দূরান্তে যেতে হবে, তা নয়। নিজের গ্রামেই একবার ঘুরে দেখতে পারেন। তবে ঢাকার লোকজনের একটুখানি বাইরে তো যেতেই হবে শীত আর সরিষাখেত দেখতে। শীত শেষ হওয়ার আগেই তাই ঘুরে এলাম।
বহুবার গিয়েছি নিছক আড্ডা জমাতে সাভার নামাবাজার নতুন ব্রিজ পার হয়ে ফোর্ড নগরে। অথচ খড়ারচর, ফড়িঙ্গা থেকে আরেকটু এগিয়ে কাংশা যাওয়া হয়নি। কিন্তু সেটার সুযোগ হয়ে গেল। বন্ধুরা মিলে বেশ কয়েকটি বাইকে সাতসকালে ছুটে গেলাম খড়ারচর গ্রামে। সাভারের পাশে হলেও এলাকাটা ধামরাই উপজেলার মধ্যে পড়েছে।
স্থানীয় জনৈক ব্যক্তিকে সঙ্গে করে ঘুরতে বের হই আশপাশে। খড়ারচরের মায়াবী পথে ঘুরতে ঘুরতে চলে যাই মানিকগঞ্জ উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর তীরের গ্রাম কাংশায়।
আশ্চর্য হই, ঢাকার এত পাশে অথচ এখনো সেই আদি ও অকৃত্রিম গ্রামের স্বাদ পাওয়া যায় এখানে। কাংশার প্রকৃতি দেখলে বিশ্বাসই হবে না যে আপনি ঢাকা শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৩৭ কিলোমিটার দূরে আছেন।
কাংশা ব্রিজের ওপর থেকে শান্ত ধলেশ্বরীর রূপ দেখি। একটা সময় আর লোভ সামলাতে না পেরে ঝাঁপিয়ে পড়ি নদীর বুকে। চলে ইচ্ছেমতো জলকেলি। পানির নিচের কাদা সারা শরীর মেখে হারিয়ে যাই শৈশবের স্মৃতিতে। নদীর পাড়ে বসে থেকে মাঝবয়সীদের এমন শিশুতোষ পাগলামি উপভোগ করেন আরেক মাঝবয়সী স্থানীয় মাজের আলী।
তাঁকে জিজ্ঞেস করি, ‘ও ভাই, কী দেহেন?’ তিনি উত্তর দেন, ‘পাগলামি দেহি।’
আজানের ধ্বনি শুনে পানি থেকে উঠে আসি সবাই। নয়া আমদানি মাজের পাগলও আমাদের সঙ্গী হন। নামাজ শেষে গ্রামটা ঘুরে দেখি। পেট এবার চোঁ-চোঁ করছে। দুপুরের খাবারের জন্য চলে যাই পূর্বপরিচিত খড়ারচর মাদ্রাসার বালাখানায়। বেশ আয়েশ করে উদোরপূর্তি চলে। খাওয়াদাওয়া শেষে যাই ফড়িঙ্গা গ্রামে।
বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এক পুরোনো বটবৃক্ষ। খানিকটা সময় চলে সেখানে আড্ডা। তারপর চলে যাই বংশী নদীর তীরে কাজিয়ালকুণ্ডু গ্রামে। এর বুক চিরে ঝকঝকে নতুন সড়ক চলে গেছে আরিচা মহাসড়কের ঢুলিভিটার দিকে। পথের দুপাশে সৃজন করা হয়েছে বন। চমৎকার নিরিবিলি পরিবেশ। সড়কের পাশেই বিরাট বিল। জেলেরা আপন মনে মাছ ধরছেন। সেই সব মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দেখতে ছুটি চৌঠাইল গ্রামের দিকে। মাঝে রূপনগরের রূপে মজে ক্ষণিকের জন্য ব্রেক।
পড়ন্ত বিকেলে গ্রামের পিচঢালা সরু পথে, মোটরবাইকে চড়ে বেড়ানোর মজাই আলাদা। বাইকার আর সাইক্লিস্টদের রাইডের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় পথ এগুলো। অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যাই চৌঠাইল।
এপাশটায় ধলেশ্বরী সরু খালের রূপ ধারণ করেছে। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখনো অসাধারণ। সবুজ ফসলের খেত, বাঁশবাগানে নানা পাখির কিচিরমিচির, দিগন্তজোড়া সরিষাখেত। যত দূর চোখ যায় শুধু হলদে ফুল! সরিষা ফুলের ঘ্রাণে মন করবে আনচান। পুরো পৌষ আর মাঘের অর্ধেক সময়জুড়ে আবহমান বাংলার অধিকাংশ জেলার মাঠ এ রকম হলুদ হয়ে থাকে।
পড়ন্ত বিকেলে পাখির কুহু কুহু ডাক, বিভিন্ন ধরনের সবজিখেত, জমির পর জমিতে সরিষা ফুল, গরুর দুধের চা—সব মিলিয়ে এক অসাধারণ সময় কাটবে এখানে। গুটি গুটি পায়ে হেঁটে চলে যাই সরিষাখেতের আল ধরে দূরে, অনেক দূরে।
ঘুরে ঘুরে সব মিলিয়ে ভ্রমণের নির্যাস নিতে নিতে একসময় দেখি বিকেল গড়িয়ে সূর্য ডুবে যাওয়ার তাল করছে। দেরি না করে বন্ধুদের দু-একজন ধলেশ্বরীর তীরে তাঁবু টানাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। কেউ বারবিকিউর জন্য মুরগির খোঁজে ছুটল বাজারে। আর আমি বান্দা অলস, শুধু চেয়ে চেয়ে ওদের দৌড়ঝাঁপ দেখি। সন্ধ্যার পর ভরা জোছনায় মুরগি পোড়ানো শুরু হলো। হিম হিম বাতাসে তপ্ত আগুনে ঝলসানো মুরগির সঙ্গে ভরা পূর্ণিমার চাঁদটাকে মনে হতে লাগল সদ্য ভাজা নানরুটি!
যেভাবে যাবেন
গুলিস্তান বা গাবতলী অথবা অন্য কোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে আরিচা বা সাভারগামী বাসে যেতে হবে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে রিকশা বা অটোতে নামাবাজার নদীর পাড়। ব্রিজের সামনে থেকে ভাড়ায় চালিত মোটরবাইক অথবা অটোতে রূপনগর, চৌঠাইল, খড়ারচর, কাংশাসহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে আসতে পারবেন।
সড়কপথ ভালো। নিরাপত্তাও রয়েছে যথেষ্ট। চাইলে পরিবারের সব বয়সী সদস্যদের নিয়েও ঘুরে আসা যাবে। শিশুদের বিনোদনের জন্য এই এলাকায় আলাদিন ও বাবুল নামে দুটো পার্ক রয়েছে। ফোর্ড নগর ও নামাবাজার ব্রিজ আঞ্চলিক ভাষায় ফুটনগর নামেও পরিচিত।
খরচপাতি
সারা দিনের জন্য জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তবে বিষয়টি নিজেদের পছন্দ ও আয়োজনের ওপর নির্ভর করবে।
আজ ৪ মে, কিংবদন্তি তারকা অড্রে হেপবার্নের জন্মদিন। অড্রে কেবল একজন চলচ্চিত্র তারকাই নন, তিনি ছিলেন সৌন্দর্য ও শৈলীর জীবন্ত প্রতিমা। তাঁর চপলতা, কোমলতা ও সহজাত সৌন্দর্য আজও সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে। এই সৌন্দর্যের জন্য কী করতেন তিনি? খুব বেশি কিছু নয়, বেশ কয়েকটি ভালো অভ্যাসই তাঁকে এত
২ ঘণ্টা আগেএই একুশ শতকে কোনো এলাকায় মোটরগাড়ি চলে না, এটা বিশ্বাস করা যায়! অবিশ্বাস্য হলেও খোদ যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি দ্বীপ আছে, যেখানে মোটরগাড়ি নেই। নেই যুক্তরাষ্ট্রের আভিজাত্যের প্রতীক গলফ কোর্টও। কিন্তু সেই দ্বীপের বাসিন্দাদের সবার জন্য আছে একটি করে ঘোড়া। সেই সব ঘোড়ায় চলাফেরা করে তারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
১ দিন আগেসেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়ানোর ক্ষেত্রে দুই সমস্যা খুবই সাধারণ। একটি হলো, খোসার সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ লেগে থাকা; অন্যটি হলো, খোসা ছাড়ানোর পরও ডিমের ওপর পাতলা আবরণ লেগে থাকা। ইন্টারনেটে এসব সমস্যা সমাধানের নানা ‘হ্যাক’ বা কৌশল পাওয়া যায়। ডিমের খোসা ছাড়ানো কঠিন হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
১ দিন আগেঅফিসের পরিবেশ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। অনেকে অফিসে যাওয়ার কথা ভাবতেই হতাশ হয়ে পড়েন। এর কারণ হয়তো খিটখিটে বস, অতিরিক্ত কাজের চাপ কিংবা সহকর্মীদের খারাপ ব্যবহার। এতে দেখা দিতে পারে মানসিক চাপ, ঘুমের সমস্যা, এমনকি বিষণ্নতাও।
১ দিন আগে