Ajker Patrika

বন্যার এই সময়ে

সুমন আহসানুল ইসলাম
বন্যার এই সময়ে

প্রতিবছর বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি থেকে আশ্বিনের মাঝামাঝি, অর্থাৎ এপ্রিল মাসের শেষ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার খবর গণমাধ্যমে আসতে থাকে। বাংলাদেশের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবন যাপনে বন্যার রয়েছে ব্যাপক প্রভাব। প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট মাত্রার বন্যা না হলে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাটির  ওপরে উর্বরা শক্তি বাড়াতে এবং মাটির নিচে পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে বন্যা প্রয়োজন।

তবে সমস্যা হয় যখন বন্যা তার সীমিত বা প্রয়োজনীয় রূপ ছেড়ে মানুষের সহনশীলতার মাত্রাকে ছাড়িয়ে যায়। দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতায় কয়েক দশক ধরে বিশেষজ্ঞরা একমত যে বন্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে তার সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে। 

দুর্যোগকালের প্রস্তুতি

পূর্বাভাস জানা 
নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও বন্যার পূর্বাভাস জানতে হবে নিয়মিত। বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (এফএফডব্লিউসি) ওয়েবসাইট থেকে বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। এখান থেকে এমনকি ১৫ দিন আগে পূর্বাভাস পাওয়া যায়। এ ছাড়া যেকোনো মোবাইল ফোন থেকে টোল ফ্রি ১০৯০ নম্বরে ডায়াল করে ৫ চাপলে দেশের বন্যাসহ  বিভিন্ন নদ-নদীর পানি হ্রাস-বৃদ্ধির তথ্য জানা যাবে।

খাবার জমিয়ে রাখা
চিড়া, মুড়ি, চাল ইত্যাদির মতো শুকনো খাবার জমিয়ে রাখতে হবে আগে থেকেই। বন্যাকালীন ভিটামিনের উৎস হিসেবে শুকনো কাঁঠালের বিচি, মিষ্টিকুমড়া অথবা তার বিচি এগুলো রাখা যায়। 

জ্বালানি সংগ্রহ করে রাখা
সহজে রান্না করা যায় তেমন শুকনো জ্বালানি সংগ্রহ করে রাখতে হবে আগে থেকেই। আগুনের উৎস হিসেবে দেশলাই বা গ্যাসলাইটার রাখতে হবে। সেই সঙ্গে রাখতে হবে বহনযোগ্য চুলা; যাতে প্রয়োজনে সেটি স্থানান্তর করা যায় সহজে। চার্জার লাইট বা টর্চলাইট রাখতে হবে সম্ভব হলে। সব জিনিসপত্র শুকনো রাখার জন্য শিকা ব্যবহার করা ভালো।

নৌকা বা ভেলার ব্যবস্থা করা
বাড়ির পাশে নদী-খাল-বিল থাকলে নৌকা বা ভেলার ব্যবস্থা রাখতে হবে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌকা বা ভেলা যাতে ব্যবহার করা যায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

ওষুধপত্র সংগ্রহে রাখা
বাড়ির কোনো সদস্য যদি নিয়মিত ওষুধ খান, সেগুলো যত্ন করে রাখতে হবে। এ ছাড়া খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধ করার ওষুধ, ডায়রিয়া, জ্বর, পাতলা পায়খানার ওষুধ সঙ্গে রাখতে। এই করোনার সময় অবশ্যই সঙ্গে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।

প্রয়োজনীয় ডিভাইস রাখতে হবে
মোবাইল ফোন, ব্যাটারির চার্জার, চার্জার লাইট ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ডিভাইস সঙ্গে রাখার চেষ্টা করতে হবে।

প্রশাসনিক যোগাযোগ
বন্যার সময় রাস্তাঘাট কিংবা বাঁধ ভেঙে যেতে পারে, বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে কিংবা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কোথাও কারও জীবন বিপন্ন হতে পারে। এগুলোর জন্য বিশেষ ধরনের সহায়তা প্রয়োজন। সে জন্য ইউনিয়ন ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা প্রয়োজন।

সম্ভব হলে আগে থেকেই এলাকার পরিস্থিতি যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানাতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে। এতে চলমান বন্যায় জীবন ও সম্পদের ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব হবে।

নারী, শিশু ও বয়স্কদের জন্য
বন্যায় বেশি নাজুক আর ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। পানিতে শিশুদের ডুবে যাওয়া প্রায় নিয়মিত খবর। তাই শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে। এ ছাড়া বন্যার দূষিত পানির কারণে শিশু-কিশোরেরা ডায়রিয়া, আমাশয় ছাড়াও নানা ধরনের পানিবাহিত রোগের শিকার হয়। নারীরা, বিশেষ করে ঋতুমতী নারীদের জন্য এ সময় বিশেষ সাহায্য প্রয়োজন। তাঁদের জন্য সম্ভব হলে স্যানিটারি প্যাড ও প্রয়োজনীয় ওষুধ আগে থেকেই সংগ্রহে রাখতে হবে। বন্যায় অন্য যাঁদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাহায্য দরকার তাঁরা হলেন গর্ভবতী, দুগ্ধবতী মা, বয়োবৃদ্ধ মানুষ। সম্মিলিতভাবে অথবা পারিবারিকভাবে তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আগে থেকেই সংগ্রহে রাখতে হবে। 
 
লেখক: জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চন্দ্রগ্রহণের সময় মুমিনের করণীয় আমল

চন্দ্রগ্রহণ চলছে, ব্লাড মুন দেখা যাবে রাত সাড়ে ১১টায়

বেতন চাইলে গৃহকর্মীদের পিস্তল দেখান সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শামসুদ্দোহা, ৯৯৯-এ কল পেয়ে গ্রেপ্তার

শেখ হাসিনার শত্রু ছিলাম, তাঁকে বের করেছি, তাঁর ভাগনির চাকরি খেয়েছি: ববি হাজ্জাজ

তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং: বিমানের সঙ্গে থাকবে বিদেশি কোম্পানি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত