Ajker Patrika

চুমুকে চর্চিত চা

রজত কান্তি রায়, ঢাকা
আপডেট : ০৪ জুন ২০২২, ১২: ৪৩
চুমুকে চর্চিত চা

কাজী নজরুল ইসলাম এসেছেন ফরিদপুরে কবি জসীমউদ্‌দীনের বাড়িতে। জসীমউদ্‌দীন কলকাতা থেকে আসার সময় সঙ্গে নিয়ে আসেন চা-পাতা। বাড়িতে এসেই তিনি অন্দরমহলে চায়ের রেসিপি জানিয়ে বলে গেলেন, কাজীদাকে সময়মতো চা দিতে হবে। অনেকক্ষণ গল্প হওয়ার পর অন্দরমহল থেকে চা এল। নজরুল ইসলাম চায়ে চুমুক দিলেন। জসীমউদ্‌দীন ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলেন, চা কেমন হয়েছে? নজরুল ইসলাম জানালেন, ভালোই হয়েছে, তবে লবণ আর ঝালটা একটু চড়া।

বিশ শতকের শুরুতে বাঙালির চা পানের গল্প এমনই। তবে ওই সময় থেকে বাঙালি চায়ে চুমুক দেওয়া শুরু করে সকাল, বিকেল, সন্ধ্যা কিংবা রাতে। এর পেছনে ‘গভীর ষড়যন্ত্রের হাত’ ছিল ব্রিটিশদের। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ব্রিটিশরা বাঙালিদের সেই যে চা খাওয়ানো শেখাল, তারপর আর বাঙালি পেছন ফিরে তাকায়নি। এখন বাংলাদেশের মানুষ বছরে গড়ে ৭৮-৮০ হাজার টন চা পান করে বলে জানিয়েছে ‘দি ইকোনমিস্ট’–এর ওয়ার্ল্ড ইন ফিগার। চা এখন বাঙালি সংস্কৃতির অংশ এবং এই অংশ বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে।

ব্রিটিশরা ভারতে তাদের বিশাল কলোনির বিভিন্ন জায়গায় চা চাষের উদ্যোগ নেয় এবং সফল হয় বিশ শতকের আগেই। চা চাষের এই সফলতাকে কেন্দ্র করে তারা চীনাদের চায়ের বাজারে ভাগ বসিয়েছিল পৃথিবীজুড়ে। বিশ শতকের শুরু থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে চা সংস্কৃতি জোরদার হয়। ধীরে ধীরে চা এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করে যে বাঙালি ‘খাবে’ নাকি ‘পান করবে’—  এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুগতে ভুগতে সামাজিকতার অন্য নাম দিয়ে ফেলে চা। ‘চা খেতে আসবেন’ বা ‘বাড়িতে চা খেয়ে যাবেন’ অথবা ‘চলুন, চা খেয়ে আসি’—এ রকম কথা শোনা যায় কান পাতলেই। বাড়ি থেকে শুরু করে অফিসপাড়া, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, খেয়াঘাট, হাট-বাজার, শপিং মল, গলির মোড়ে—  কোথায় চায়ের আয়োজন নেই, সেটাই প্রশ্ন।

আমাদের দেশে মূলত দুধ চা ও দুধ ছাড়া লাল চা বা র চা খাওয়ার প্রবণতা বেশি। সম্প্রতি এতে যোগ হয়েছে টি ব্যাগ। আছে হরেক রকম গ্রিন ও হারবাল টি। অতি সাম্প্রতিক সময়ে শহুরে চা সংস্কৃতিতে যোগ হয়েছে আইস টি। আর টং দোকানের অর্থোডক্স ব্ল্যাক টি তো আছেই বাঙালি চা সংস্কৃতির প্রত্নপ্রমাণ হিসেবে। আর রেসিপি? তার যথাযথ হিসাব কেউ দিতে পারবে বলে মনে হয় না। এক দুধ চায়েরই কত রেসিপি আছে! তার ওপর এখন মানুষ মালাই চা-ও বানায়। আর এই ঘোর কলিকালে ট্রেন্ড চলছে ক্যারামেল চায়ের। এত দিন দেখে এসেছি, ক্যারামেল পুডিং বানাতেই কাজে লাগে। এখন চা বানাতেও।

কোন খাবারটি কতটা জনপ্রিয় তা বোঝার ভালো উপায় তার বৈচিত্র্যময় রেসিপি। চায়ের যে রাশি রাশি রেসিপি পাওয়া যায় আমাদের রান্নাঘর থেকে শুরু করে টং দোকান হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, তাতেই বোঝা যায় এ দেশের মানুষ চা ফ্রিক। আজ থেকে ১২২ বছর আগে শ্রী গিরিশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘চা প্রস্তুত শিক্ষাপ্রণালী’ নামে একখানি পুস্তিকা লিখেছিলেন, কীভাবে চা তৈরি করতে হবে তার ওপর। ১২২ বছরের মাথায় বাঙালি যে চায়ের রেসিপি তৈরিতে পৃথিবীর সব জাতিকে ছাড়িয়ে যাবে, সেটা কি তিনি জানতে পেরেছিলেন কোনোভাবে?  
সে যাই হোক, সাম্প্রতিক ট্রেন্ড হিসেবে চলছে ক্যারামেল চায়ের রমরমা। আপনাদের সেই চায়ের রেসিপি দিয়ে যাই। ট্রেন্ডি থেকে চুমুকে চুমুকে চায়ের চর্চা করুন।

ক্যারমেল চায়ের রেসিপিক্যারামেল চা

উপকরণ
চিনি ৬ চা-চামচ, পানি ৩ কাপ, গুঁড়ো দুধ ৪ টেবিল চামচ, চা-পাতা ৪ চা-চামচ। এই উপকরণ ২ কাপ চায়ের জন্য।

প্রণালি
প্যানে ৩ চা-চামচ চিনি ক্যারামেল করতে হবে। বেশি গাঢ় করা যাবে না। এরপর ৩ কাপ পানি দিয়ে ভালোভাবে মেশাতে হবে। এবার আধা কাপ পানিতে ৪ টেবিল চামচ গুঁড়ো দুধ মিশিয়ে চুলায় ওই ক্যারামেল পানিতে দিয়ে নাড়তে হবে। এরপর ৪ চা-চামচ চা-পাতা দিয়ে চুলার হিট একবার বাড়াতে হবে, আরেকবার কমাতে হবে। এভাবে দুই-তিনবার বলগ এলে নামিয়ে আরও ৩ চা-চামচ চিনি দিয়ে নেড়ে কাপের অনেকটা ওপর থেকে চা ঢালতে হবে। এতে করে অনেকটা ফেনা 
ফেনা দেখাবে।

 চায়ের ভালোমন্দ

  • সকালের নাশতার অন্তত আধা ঘণ্টা পরে চা পান করা ভালো। বেড টি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়।
  • লিকার চা বা ব্ল্যাক টি  ও গ্রিন টি-এর উপকারিতা বেশি।
  • দুধ ছাড়া লাল চা হজমশক্তি বাড়ায়, চুলের পুষ্টি জোগাতে ও ত্বক মসৃণ রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।
  • লাল চায়ে থাকা ট্যানিন শরীরে ফ্লু, ঠান্ডা, ইনফ্লুয়েঞ্জার আক্রমণ ও অন্ত্রের প্রদাহ প্রতিরোধ করে।
  • চা শরীরের ভিটামিন বি শোষণ রোধ করে, ফলে বেরিবেরি রোগ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
  • অতিরিক্ত চা পানে প্রোস্টেট ক্যানসারের আশঙ্কা আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত