জাহীদ রেজা নূর
নিউইয়র্কে এখন চনমনে আবহাওয়া। শুধু একটা শার্ট গায়েই বেরিয়ে পড়া যায় রাস্তায়। রাস্তায় মানুষও কম, তাই হাঁটাচলায় মনে হয় না, এই বুঝি কোভিডের জীবাণু নিয়ে ঘুরছে কেউ আশপাশে।
গতবারও এখানে এসেছিলাম কোভিডের মধ্যেই। অক্টোবর মাসে। তখন অবশ্য ভয়টা বেশি ছিল। ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তখনো সুড়ঙ্গের অন্য মুখ অনেক দূরে। এর মধ্যে মার্কিন দেশে নির্বাচন হয়েছে; হয়েছে ক্ষমতাবদল। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের বদলে এখন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জায়গা করে নিয়েছেন হোয়াইট হাউসে। সাদা দালানের নতুন ভাড়াটে বিশ্ব রাজনীতিতে আবার যুদ্ধের আমদানি করবেন কি না, সে সংশয় রয়েছে বিশ্বব্যাপী। কিন্তু মার্কিন দেশ থেকে কোভিড হটানোর ব্যাপারে বাইডেন যে খুবই সজাগ, সে বিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। তাই ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম এখানে চলছে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে।
এখানে ভ্যাকসিন এখন সহজলভ্য। রাস্তাঘাটেই বেশ কিছু ফার্মেসির নামে ঝুলতে দেখলাম বিজ্ঞাপন। যেকোনো লোকালয়েই যে কেউ নিজেকে সুরক্ষিত করে তুলতে পারেন ভ্যাকসিন দিয়ে। বয়সের বাধাটাও উঠে গেছে। যেকোনো বয়সী মানুষ এখন ভ্যাকসিন দিয়ে নিতে পারেন। তার চেয়ে বড় কথা, যারা দু ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তারা যদি মাস্ক না পরেন, তাহলেও আর সমস্যা নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সমস্যা একটাই—কারা দু–ডোজ দিয়েছেন, সেটা জানা যাবে কীভাবে? এ নিয়েই এখন কাজ হচ্ছে। নিউইয়র্কের গভর্নরের বেশ কিছু ঘোষণায় বোঝা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসার আয়োজন শুরু হয়েছে। শহর পর্যায়ের নির্বাচনও এসে গেছে। দেড় শ মানুষ একত্রিত হতে পারবেন বলে বলা হচ্ছে। ধীরে ধীরে বন্ধ অনেক কিছুই খুলে যাচ্ছে।
গাড়িতে আর পদযাত্রায় দেখলাম, মানুষ এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। রাষ্ট্রীয় আর ব্যক্তিগত অর্থনীতিতে যে বিশাল শূন্যতা এসেছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসার নানা আয়োজন চলছে এই দেশের সর্বত্রই। হোম অফিস বদলে গিয়ে আবার স্বাভাবিক অফিস–আদালতের আহ্বান এসেছে। আরও বড় একটা সুসংবাদ—খুলে যাচ্ছে ব্রডওয়ে! ম্যানহাটনের নাটকপাড়ায় আবার জমবে মেলা। দিনের পর দিন এই পাড়ার সংস্কৃতির লোকেরা বুভুক্ষু ছিল শিল্পতৃষ্ণায়! সেপ্টেম্বর মাস থেকে জমজমাট হয়ে উঠবে ব্রডওয়ে। আগাম টিকিট বিক্রিও শুরু হয়ে গেছে।
অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, গত বছরের ১২ মার্চ নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ঘোষণা করেছিলেন—২০২১ সালের আগ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ব্রডওয়ে শো। যারা ২০১৯ সাল থেকেই টিকিট কিনেছিলেন নানা নাটকের, তারা খুব হতাশ হয়েছিলেন সে সময়। টিকিটের টাকা ফেরত পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ঘটনা তো অর্থপ্রাপ্তির নয়। শিল্প–ক্ষুধা নিবারণের পথ গিয়েছিল বন্ধ হয়ে। এর পর বেশ কয়েকবার ব্রডওয়ে খুলে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে, কিন্তু কোভিড তাতে বাধা দিয়েছে।
অতিমারি ব্রডওয়ের বিশাল অঙ্কের আর্থিক লেনদেন ধ্বংস করে দিয়েছে। ‘হ্যামিলটন’, ‘কিং লিয়র’–এর মতো শোগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লাখ লাখ ডলারের ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমরা সে সময়েই শুনেছি, ব্রডওয়ে শোয়ের সঙ্গে যুক্ত ৫১ হাজার শিল্পী ও ম্যানেজারের মধ্যে ১১০০ জন সে সময়েই চাকরি হারিয়েছেন। শুধু কি তাই? ব্রডওয়েজুড়ে যাদের জীবনযাত্রা নির্ভরশীল, তারাও তো পড়েছেন সংকটে। শুধু শিল্পী আর ম্যানেজারেরাই তো ব্রডওয়ে বাঁচিয়ে রাখেন না। ব্রডওয়েজুড়ে যে দোকানদারেরা আছেন, ট্যাক্সিচালকেরা আছেন, রেস্তোরাঁর মালিকেরা আছেন, তাঁদের বাঁচিয়ে রাখবে কে?
ব্রডওয়ে বন্ধ থাকলে নিউইয়র্ক আরও অনেকভাবেই সংকটে পড়ে। হাজার হাজার পর্যটক আসেন এখানে, যারা একবারের জন্য হলেও ব্রডওয়ে শো দেখতে চান। অতিমারি সেই পর্যটকের স্রোত মন্থর করে দিয়েছে। ফলে ব্রডওয়ে শো, রেস্তোরাঁ, হোটেল, ট্যাক্সি সবই হোঁচট খেয়েছে।
এখানে একটিমাত্র ঘটনা বলে রাখি, তাতেই বোঝা যাবে ব্রডওয়েহীন নিউইয়র্কের আর্তনাদ। মিশিগানের হেনরি পিঙ্কনি ২৫ বছর ধরে নিয়ম করে পরিবার–পরিজনসহ ব্রডওয়ে শো দেখতে আসতেন। এখন তাঁর বয়স ৬৮ বছর। তিনি অন্তত আটটি ব্রডওয়ে শোয়ের আগাম টিকিট কিনেছিলেন। অতিমারির কারণে ব্রডওয়ে বন্ধ হলে ফেরত পেয়েছেন টাকা। তাতে তাঁর মনের খিদে মেটেনি। টাকার চেয়ে তাঁর কাছে ব্রডওয়ে শো অনেক বড়।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান টাইমস স্কয়ার অ্যালায়েন্সের সভাপতি টিম টম্পকিনসের কথা শোনা যাক। তিনি বলেছেন, ‘ব্রডওয়ে হচ্ছে মধু, যা মৌমাছিদের টেনে আনে।’ আর টাইমস স্কয়ার? এই জায়গা নিয়ে আলাদা করে বলার আছে অনেক কিছু। মানুষবিহীন টাইমস স্কয়ার কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ে না। নিউইয়র্ক সারা রাত জেগে থাকে, ঘুমায় না—এ কথা বললে প্রথমেই টাইমস স্কয়ারের কথাই মনে আসে। হাঁটাহাঁটি, যন্ত্রযানে আসা, চারদিকে ছড়িয়ে থাকা ক্যানভাসারের দল ইত্যাদি না দেখলে টাইমস স্কয়ারকে বোঝাই যাবে না, যা অতিমারির এই সময়ে রীতিমতো যেন বিরান প্রান্তর।
এখনো যাইনি যদিও, কিন্তু বুঝতে পারছি একটু একটু করে জেগে উঠছে টাইমস স্কয়ার। এখনো যাইনি সেখানে। কিন্তু যাব। দেখে আসব, কীভাবে অতিমারির চোখ এড়িয়ে আবার জেগে উঠছে টাইমস স্কয়ার, আর ব্রডওয়ে।
ব্র্যাডক অ্যাভিনিউ
প্রতিদিনের হাঁটাহাঁটির মধ্যে একদিন গেলাম ব্র্যাডক স্ট্রিটের একটি পার্কে। এ এলাকায় ভারতীয়, বিশেষ করে শিখ সম্প্রদায়ের বসত। একটু বয়স্ক মানুষেরা বিকেলের দিকে বেঞ্চিগুলোয় বসে আলাপ করেন। প্রতিদিনের আড্ডা সেটা। দেশ থেকে বহু দূর দেশে এসেছেন। কিন্তু এখনো ভাষা নিজেরটাই, আলাপ নিজ গোত্রের মানুষের সঙ্গেই। জীবনের শেষ দিনগুলো বিদেশ–বিভুঁইয়ে কাটাচ্ছেন তাঁরা, অথচ অনেকেরই আর দেশে ফেরার উপায় নেই।
‘প্রীত’ নামে এখানে একটি ভারতীয়–আমেরিকান সুপারশপ আছে। মসলাপাতি থেকে শুরু করে নানা ধরনের খাবার পাওয়া যায়। আমাদের দেশের মানুষ দেশ থেকে এখানে আসার সময় নানা কিছু নিয়ে আসেন। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, চাইলে সবকিছুই এখানে পাওয়া যায়। আমরা যে উচ্ছে কিনলাম, কিংবা এ এলাকায় পটল না পেয়ে হিলসাইড অ্যাভিনিউতে গিয়ে কিনে আনলাম, সেটা কোনো দৈব ঘটনা নয়। চাইলে বাঘের চোখও মিলবে এখানে। পারসনস বুলেভার্ড, আর জ্যাকসন হাইটসের বাঙালি সমাচার তো আলাদাভাবেই দিতে হবে।
একটা অন্যরকম কথা বলি। খাবার দাবার কিংবা লন্ড্রির কাপড় টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ট্রলির প্রয়োজন, সে রকমই একটি ট্রলি পড়ে থাকতে দেখলাম ব্র্যাডক অ্যাভিনিউতে। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে কিংবা নতুন কিছু কেনা হলে পুরোনোটা ফেলে দেওয়াই এখানকার রীতি। প্রায় নতুন একটা জিনিস এমনিতেই ফেলে দেওয়া হয় নতুন কিছু কেনা হলে। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে সরকারি লোকজন সেগুলো বয়ে নিয়ে যায়, ফেলে দেয়। কত যে নয়নাভিরাম জিনিস ফেলে দেওয়া হয়!
একটা ট্রলি পড়ে ছিল রাস্তায়। যখন হাঁটতে হাঁটতে ব্র্যাডকের শেষ মাথায় চলে গেলাম, তখন যাওয়ার পথেই চোখে পড়েছিল ট্রলিটা। ফেরার পথে দেখি, সেভাবেই পড়ে আছে সেটা। একবার ইচ্ছে হলো, নিয়ে আসি। এটা তো ফেলেই দেওয়া হয়েছে। হয়তো নতুন আরও সুন্দর একটি ট্রলি কিনেছে কেউ, তাই পুরোনোটার এই দশা।
অনেকেই এসব বাড়িতে বয়ে নিয়ে যান। সেটা দোষের নয়। আমারও একবার ইচ্ছে হলো, নিয়ে যাই। কিন্তু পরক্ষণেই মধ্যবিত্ত বাঙালি সংস্কার এসে বাধা দিল। অন্যের জিনিস না বলে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের যে সংস্কার আছে, তা থেকে বের হতে পারলাম না। ফলে অনলাইনে একটি সুন্দর ট্রলি কিনে ফেলা হলো।
নিজেদের ট্রলি! মন ভালো করে দেওয়া ট্রলি। কুইন্স ভিলেজজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো ছড়ানো আছে যে লন্ড্রি শিল্প, তার সিংহভাগেরই মালিক চীনা–আমেরিকানেরা। কিছু ২৫ সেন্টের কয়েন নিয়ে তাদের লন্ড্রিতে গিয়ে কাপড় কেচে, শুকিয়ে নিয়ে আসার চল আছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি এখন।
নিউইয়র্কে এখন চনমনে আবহাওয়া। শুধু একটা শার্ট গায়েই বেরিয়ে পড়া যায় রাস্তায়। রাস্তায় মানুষও কম, তাই হাঁটাচলায় মনে হয় না, এই বুঝি কোভিডের জীবাণু নিয়ে ঘুরছে কেউ আশপাশে।
গতবারও এখানে এসেছিলাম কোভিডের মধ্যেই। অক্টোবর মাসে। তখন অবশ্য ভয়টা বেশি ছিল। ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তখনো সুড়ঙ্গের অন্য মুখ অনেক দূরে। এর মধ্যে মার্কিন দেশে নির্বাচন হয়েছে; হয়েছে ক্ষমতাবদল। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের বদলে এখন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জায়গা করে নিয়েছেন হোয়াইট হাউসে। সাদা দালানের নতুন ভাড়াটে বিশ্ব রাজনীতিতে আবার যুদ্ধের আমদানি করবেন কি না, সে সংশয় রয়েছে বিশ্বব্যাপী। কিন্তু মার্কিন দেশ থেকে কোভিড হটানোর ব্যাপারে বাইডেন যে খুবই সজাগ, সে বিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। তাই ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম এখানে চলছে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে।
এখানে ভ্যাকসিন এখন সহজলভ্য। রাস্তাঘাটেই বেশ কিছু ফার্মেসির নামে ঝুলতে দেখলাম বিজ্ঞাপন। যেকোনো লোকালয়েই যে কেউ নিজেকে সুরক্ষিত করে তুলতে পারেন ভ্যাকসিন দিয়ে। বয়সের বাধাটাও উঠে গেছে। যেকোনো বয়সী মানুষ এখন ভ্যাকসিন দিয়ে নিতে পারেন। তার চেয়ে বড় কথা, যারা দু ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তারা যদি মাস্ক না পরেন, তাহলেও আর সমস্যা নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সমস্যা একটাই—কারা দু–ডোজ দিয়েছেন, সেটা জানা যাবে কীভাবে? এ নিয়েই এখন কাজ হচ্ছে। নিউইয়র্কের গভর্নরের বেশ কিছু ঘোষণায় বোঝা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসার আয়োজন শুরু হয়েছে। শহর পর্যায়ের নির্বাচনও এসে গেছে। দেড় শ মানুষ একত্রিত হতে পারবেন বলে বলা হচ্ছে। ধীরে ধীরে বন্ধ অনেক কিছুই খুলে যাচ্ছে।
গাড়িতে আর পদযাত্রায় দেখলাম, মানুষ এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। রাষ্ট্রীয় আর ব্যক্তিগত অর্থনীতিতে যে বিশাল শূন্যতা এসেছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসার নানা আয়োজন চলছে এই দেশের সর্বত্রই। হোম অফিস বদলে গিয়ে আবার স্বাভাবিক অফিস–আদালতের আহ্বান এসেছে। আরও বড় একটা সুসংবাদ—খুলে যাচ্ছে ব্রডওয়ে! ম্যানহাটনের নাটকপাড়ায় আবার জমবে মেলা। দিনের পর দিন এই পাড়ার সংস্কৃতির লোকেরা বুভুক্ষু ছিল শিল্পতৃষ্ণায়! সেপ্টেম্বর মাস থেকে জমজমাট হয়ে উঠবে ব্রডওয়ে। আগাম টিকিট বিক্রিও শুরু হয়ে গেছে।
অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, গত বছরের ১২ মার্চ নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ঘোষণা করেছিলেন—২০২১ সালের আগ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ব্রডওয়ে শো। যারা ২০১৯ সাল থেকেই টিকিট কিনেছিলেন নানা নাটকের, তারা খুব হতাশ হয়েছিলেন সে সময়। টিকিটের টাকা ফেরত পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ঘটনা তো অর্থপ্রাপ্তির নয়। শিল্প–ক্ষুধা নিবারণের পথ গিয়েছিল বন্ধ হয়ে। এর পর বেশ কয়েকবার ব্রডওয়ে খুলে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে, কিন্তু কোভিড তাতে বাধা দিয়েছে।
অতিমারি ব্রডওয়ের বিশাল অঙ্কের আর্থিক লেনদেন ধ্বংস করে দিয়েছে। ‘হ্যামিলটন’, ‘কিং লিয়র’–এর মতো শোগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লাখ লাখ ডলারের ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমরা সে সময়েই শুনেছি, ব্রডওয়ে শোয়ের সঙ্গে যুক্ত ৫১ হাজার শিল্পী ও ম্যানেজারের মধ্যে ১১০০ জন সে সময়েই চাকরি হারিয়েছেন। শুধু কি তাই? ব্রডওয়েজুড়ে যাদের জীবনযাত্রা নির্ভরশীল, তারাও তো পড়েছেন সংকটে। শুধু শিল্পী আর ম্যানেজারেরাই তো ব্রডওয়ে বাঁচিয়ে রাখেন না। ব্রডওয়েজুড়ে যে দোকানদারেরা আছেন, ট্যাক্সিচালকেরা আছেন, রেস্তোরাঁর মালিকেরা আছেন, তাঁদের বাঁচিয়ে রাখবে কে?
ব্রডওয়ে বন্ধ থাকলে নিউইয়র্ক আরও অনেকভাবেই সংকটে পড়ে। হাজার হাজার পর্যটক আসেন এখানে, যারা একবারের জন্য হলেও ব্রডওয়ে শো দেখতে চান। অতিমারি সেই পর্যটকের স্রোত মন্থর করে দিয়েছে। ফলে ব্রডওয়ে শো, রেস্তোরাঁ, হোটেল, ট্যাক্সি সবই হোঁচট খেয়েছে।
এখানে একটিমাত্র ঘটনা বলে রাখি, তাতেই বোঝা যাবে ব্রডওয়েহীন নিউইয়র্কের আর্তনাদ। মিশিগানের হেনরি পিঙ্কনি ২৫ বছর ধরে নিয়ম করে পরিবার–পরিজনসহ ব্রডওয়ে শো দেখতে আসতেন। এখন তাঁর বয়স ৬৮ বছর। তিনি অন্তত আটটি ব্রডওয়ে শোয়ের আগাম টিকিট কিনেছিলেন। অতিমারির কারণে ব্রডওয়ে বন্ধ হলে ফেরত পেয়েছেন টাকা। তাতে তাঁর মনের খিদে মেটেনি। টাকার চেয়ে তাঁর কাছে ব্রডওয়ে শো অনেক বড়।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান টাইমস স্কয়ার অ্যালায়েন্সের সভাপতি টিম টম্পকিনসের কথা শোনা যাক। তিনি বলেছেন, ‘ব্রডওয়ে হচ্ছে মধু, যা মৌমাছিদের টেনে আনে।’ আর টাইমস স্কয়ার? এই জায়গা নিয়ে আলাদা করে বলার আছে অনেক কিছু। মানুষবিহীন টাইমস স্কয়ার কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ে না। নিউইয়র্ক সারা রাত জেগে থাকে, ঘুমায় না—এ কথা বললে প্রথমেই টাইমস স্কয়ারের কথাই মনে আসে। হাঁটাহাঁটি, যন্ত্রযানে আসা, চারদিকে ছড়িয়ে থাকা ক্যানভাসারের দল ইত্যাদি না দেখলে টাইমস স্কয়ারকে বোঝাই যাবে না, যা অতিমারির এই সময়ে রীতিমতো যেন বিরান প্রান্তর।
এখনো যাইনি যদিও, কিন্তু বুঝতে পারছি একটু একটু করে জেগে উঠছে টাইমস স্কয়ার। এখনো যাইনি সেখানে। কিন্তু যাব। দেখে আসব, কীভাবে অতিমারির চোখ এড়িয়ে আবার জেগে উঠছে টাইমস স্কয়ার, আর ব্রডওয়ে।
ব্র্যাডক অ্যাভিনিউ
প্রতিদিনের হাঁটাহাঁটির মধ্যে একদিন গেলাম ব্র্যাডক স্ট্রিটের একটি পার্কে। এ এলাকায় ভারতীয়, বিশেষ করে শিখ সম্প্রদায়ের বসত। একটু বয়স্ক মানুষেরা বিকেলের দিকে বেঞ্চিগুলোয় বসে আলাপ করেন। প্রতিদিনের আড্ডা সেটা। দেশ থেকে বহু দূর দেশে এসেছেন। কিন্তু এখনো ভাষা নিজেরটাই, আলাপ নিজ গোত্রের মানুষের সঙ্গেই। জীবনের শেষ দিনগুলো বিদেশ–বিভুঁইয়ে কাটাচ্ছেন তাঁরা, অথচ অনেকেরই আর দেশে ফেরার উপায় নেই।
‘প্রীত’ নামে এখানে একটি ভারতীয়–আমেরিকান সুপারশপ আছে। মসলাপাতি থেকে শুরু করে নানা ধরনের খাবার পাওয়া যায়। আমাদের দেশের মানুষ দেশ থেকে এখানে আসার সময় নানা কিছু নিয়ে আসেন। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, চাইলে সবকিছুই এখানে পাওয়া যায়। আমরা যে উচ্ছে কিনলাম, কিংবা এ এলাকায় পটল না পেয়ে হিলসাইড অ্যাভিনিউতে গিয়ে কিনে আনলাম, সেটা কোনো দৈব ঘটনা নয়। চাইলে বাঘের চোখও মিলবে এখানে। পারসনস বুলেভার্ড, আর জ্যাকসন হাইটসের বাঙালি সমাচার তো আলাদাভাবেই দিতে হবে।
একটা অন্যরকম কথা বলি। খাবার দাবার কিংবা লন্ড্রির কাপড় টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ট্রলির প্রয়োজন, সে রকমই একটি ট্রলি পড়ে থাকতে দেখলাম ব্র্যাডক অ্যাভিনিউতে। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে কিংবা নতুন কিছু কেনা হলে পুরোনোটা ফেলে দেওয়াই এখানকার রীতি। প্রায় নতুন একটা জিনিস এমনিতেই ফেলে দেওয়া হয় নতুন কিছু কেনা হলে। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে সরকারি লোকজন সেগুলো বয়ে নিয়ে যায়, ফেলে দেয়। কত যে নয়নাভিরাম জিনিস ফেলে দেওয়া হয়!
একটা ট্রলি পড়ে ছিল রাস্তায়। যখন হাঁটতে হাঁটতে ব্র্যাডকের শেষ মাথায় চলে গেলাম, তখন যাওয়ার পথেই চোখে পড়েছিল ট্রলিটা। ফেরার পথে দেখি, সেভাবেই পড়ে আছে সেটা। একবার ইচ্ছে হলো, নিয়ে আসি। এটা তো ফেলেই দেওয়া হয়েছে। হয়তো নতুন আরও সুন্দর একটি ট্রলি কিনেছে কেউ, তাই পুরোনোটার এই দশা।
অনেকেই এসব বাড়িতে বয়ে নিয়ে যান। সেটা দোষের নয়। আমারও একবার ইচ্ছে হলো, নিয়ে যাই। কিন্তু পরক্ষণেই মধ্যবিত্ত বাঙালি সংস্কার এসে বাধা দিল। অন্যের জিনিস না বলে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের যে সংস্কার আছে, তা থেকে বের হতে পারলাম না। ফলে অনলাইনে একটি সুন্দর ট্রলি কিনে ফেলা হলো।
নিজেদের ট্রলি! মন ভালো করে দেওয়া ট্রলি। কুইন্স ভিলেজজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো ছড়ানো আছে যে লন্ড্রি শিল্প, তার সিংহভাগেরই মালিক চীনা–আমেরিকানেরা। কিছু ২৫ সেন্টের কয়েন নিয়ে তাদের লন্ড্রিতে গিয়ে কাপড় কেচে, শুকিয়ে নিয়ে আসার চল আছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি এখন।
সিলেট মানেই যেন নিসর্গের হাতছানি! কোথাও টিলার গায়ে চা-গাছের সবুজ চাদর, কোথাও পাথরের মাঝে পানির শীতল পরশ, কোথাওবা জল-বৃক্ষের মিতালি। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বের এই জনপদে নানা রূপে, নানা রঙে ধরা দিয়েছে প্রকৃতি। এমনই এক রূপের ডালি বিছানো রয়েছে সিলেটের জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরে।
১ ঘণ্টা আগেসৌদি আরবের রুক্ষ মরুভূমি আর বিশাল পাথরের স্তূপের মধ্যে লুকিয়ে আছে অদ্ভুত সব গুহা। কোটি কোটি বছর ধরে তৈরি হওয়া এই গুহাগুলো শুধু প্রাকৃতিক বিস্ময় নয়, এগুলো বৈজ্ঞানিক এবং পর্যটনের জন্যও অমূল্য সম্পদ। সৌদি আরব এরই মধ্যে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিভিন্ন শহর ও স্থানকে নতুন...
২ ঘণ্টা আগেবিভিন্ন পাহাড়ে ঘুরে দিনের পর দিন কাটিয়ে দেন অনেকে। গহিন পাহাড়ে আধুনিক ব্যবস্থাপনা থাকে না বলে সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। যদিও এর উপায় হিসেবে তাঁবু টানিয়ে রাত কাটানো বেশ পরিচিত। তবে এই পাহাড়প্রেমীদের জন্য একটু ভিন্ন ধরনের ভাবনার বিষয়টি ভেবেছিল যুক্তরাজ্যের মাউন্টেন বোথি অ্যাসোসিয়েশন।
৩ ঘণ্টা আগেজনসংখ্যা কমে যাওয়া এবং বয়স্কদের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন পৃথিবীর অনেক দেশ। ইউরোপের কিছু দেশ বিশেষভাবে এই সমস্যার সম্মুখীন। সেখানে গ্রামীণ এলাকা ও ছোট শহরগুলো ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের অঞ্চলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং নতুন নাগরিক আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন দেশ আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে।
৩ ঘণ্টা আগে