Ajker Patrika

বর্ষায়ও ঘোরা যায়

সুমন্ত গুপ্ত 
আপডেট : ১৬ জুন ২০২১, ১০: ৪৪
বর্ষায়ও ঘোরা যায়

ঢাকা : বর্ষায় প্রকৃতি তার রূপ খোলে অন্যরূপে। বর্ষা এলেই প্রাণ ফিরে পায় সবুজে ঘেরা স্থানগুলো। কাঙ্ক্ষিত দিন এলো এবার। সকাল থেকেই হাতের কাজ শেষ করার তাগাদা দেওয়া শুরু করলাম ভ্রমণসঙ্গীদের। সময় বেঁধে দিলাম দুপুর ১টার মধ্যে তৈরি হয়ে নিতে হবে। আমাদের গন্তব্য সিলেট শহর থেকে খানিক দূরে বাইশ টিলা।
নির্ধারিত সময়ের কিছু পরেই বের হতে হলো আমাদের কুটির থেকে। জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা পেরিয়ে চলেছি আমরা তিনজন। আকাশের মন এই ভালো তো একটু পরেই হচ্ছে খারাপ। এর মাঝেই চলছি এগিয়ে। আম্বরখানা পেরিয়ে যেই লাক্কাতুরা চা–বাগানের দিকে ধাবিত হলাম আমরা, নতুন চা–পাতার অসাধারণ রূপ চোখে পড়ল। বর্ষায় চা–গাছগুলো নতুন যৌবন পেয়েছে।

আমরা চলেছি গন্তব্যপানে সবুজের সমারোহের ভেতর দিয়ে। অবশেষে দেখা পেলাম একটি দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা বাইশ টিলা, সিলেট। বুঝতে আর বাকি রইলো না, আমারা উপস্থিত হয়েছি বাইশ টিলায়। এদিকে বৃষ্টিও কমে এসেছে। বাতাস বইছে, বর্ষার জন্য ধানখেতও নবীনা জলে টইটম্বুর। দেখতে পেলাম নৌকার মাঝি অপেক্ষায় রত যাত্রীর জন্য।

পদব্রজে ঘুরে দেখতে লাগলাম চারপাশ। দেখলাম সদ্য মাছ ধরে আনা হয়েছে হাওর থেকে। সবাই মিলে ঠিক করলাম নৌকায় ঘুরে বেড়াব। আমাদের নৌকা দুলে দুলে চলছে এগিয়ে। সূর্যদেবের প্রখরতা নেই বললেই চলে। আর সঙ্গে মৃদুমন্দ বাতাস ভালোই লাগছিল। আমাদের মতো অনেকেই নৌকা নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছেন। দেখতে পেলাম জেলে মাছ ধরছেন। হঠাৎ মাথার ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ উড়ে গেল। কাছেই এয়ারপোর্ট, তাই উড়োজাহাজের নিত্য যাওয়া–আসা। প্রায় আধা ঘণ্টা হাওরের জলে ভেসে বেড়ালাম আমরা। ঘড়ির কাঁটা চলছে ছুটে, তাই ঘাঁটে ফেরা প্রয়োজন। নৌকা থেকে নেমে দেখলাম বেশ কয়েকজন মাছবিক্রেতা উপস্থিত সদ্য ধরে আনা মাছ বিক্রির জন্য। শুরু করে দিলাম দরদাম। এক খাঁচার মাছ বেশ পছন্দ হলো। বিভিন্ন ধরনের মাছ আছে। ছোট মাছ থেকে শুরু করে বড় মাছ বোয়াল, সরপুঁটি, চাপিলা—সব মাছের নামও জানি না।

 মনের ভেতরে আবার শঙ্কাও ছিল—খারাপ মাছ নিলে মায়ের বকুনি খেতে হবে। আমার মায়ের ধারণা, আমরা বাজার করতে পারি না। যদিও করি, তা বেশি দাম দিয়ে বুঝি কিনি, তাই তিনি আমাদের বাজারই করতে দেন না। 

যাই হোক, ঐ খাঁচার মাছের দাম বিক্রেতা চাইলেন বার শ টাকা। ছোটবেলায় বাবা বাজারে নিয়ে গেলে বলতেন, মাছের বাজারে দাম করতে হলে বিক্রেতা যে দাম বলবে, তার অর্ধেক দাম বলে দামাদামি শুরু করতে হবে, তাহলেই লাভবান হওয়া যায়। আমি সেই বুদ্ধি কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম।

আমি বললাম ছয় শ টাকা। বিক্রেতা রাজি হলেন না, পরে আরো এক শ টাকা দাম বারাতেই রাজি হয়ে গেলেন মাছ বিক্রির জন্য। যাই হোক, মনে মনে খুশিই হলাম আমি।

যেভাবে যাবেন
ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, রাজারবাগ ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রিনলাইন, শ্যামলী, এনা, হানিফ বা বিআরটিসি বাসে অথবা ট্রেনে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকালে আন্তনগর পারাবাত, দুপুরে জয়ন্তিকা ও কালনী এবং রাতে উপবন সিলেটের পথে ভাড়া ৩২০ থেকে ১২০০ টাকা। সিলেট শহরের বন্দরবাজার থেকে সিএনজিতে অটোরিকশায় চলে যান সিলেট এয়ারপোর্টের পেছনে বাইশ টিলায়। রিজার্ভে যাওয়া–আসায় পড়বে পাঁচ শ টাকা। আর নৌকাভ্রমণ করতে পারবেন ঘণ্টা দুই শ টাকায়। পরিবহনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৯২৯৪১৭৪৪১ নম্বরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত