Ajker Patrika

আইনে পড়ার ভবিষ্যৎ

ক্যারিয়ার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আইন একটি বহুমুখী ক্যারিয়ারের দ্বার। এটি এমন একটি বিষয়, যা সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি—সবখানেই গভীরভাবে জড়িত। অনেকে এখনো মনে করেন, আইন বিষয়ে পড়লে কেবল উকিল হওয়াই একমাত্র পথ; কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আইন এমন এক বিষয়, যার প্রয়োগ জীবনের সব ক্ষেত্রে। প্রতিটি ব্যাংক, কোম্পানি, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, এমনকি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানেও একজন লিগ্যাল অফিসার বা কমপ্লায়েন্স এক্সপার্ট অপরিহার্য। একটি প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণ, চুক্তি প্রণয়ন, কর্মীদের অধিকার, ট্যাক্স ব্যবস্থা, কিংবা ব্যবসায়িক দায়বদ্ধতা, সব ক্ষেত্রেই আইনের ভূমিকা অপরিসীম।

কর্মক্ষেত্রের বিস্তৃত সম্ভাবনা

আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনের পর কর্মজীবনের সম্ভাবনা বহুমুখী। সবচেয়ে প্রচলিত পথ হলো, আইনজীবী হিসেবে আদালতে চর্চা করা, যেখানে একজন আইনজীবী সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নিজের পেশাগত স্বপ্নও পূরণ করতে পারেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আইনের শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রশাসন, পররাষ্ট্র, পুলিশ, ট্যাক্স বা কাস্টমসসহ বিভিন্ন ক্যাডারে কাজ করতে পারেন। এ ছাড়া যাঁরা বিচার বিভাগে যেতে চান, তাঁদের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস), যা দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পেশা। শুধু আইনের শিক্ষার্থীরাই এ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকেন। করপোরেট দুনিয়ায়ও আইনের দক্ষতা এখন সাফল্যের চাবিকাঠি। প্রতিটি ব্যাংক, বিমা, টেলিকম বা উৎপাদন কোম্পানিতে রয়েছে লিগ্যাল অ্যাডভাইজর পদের বিশাল চাহিদা। এ ছাড়া এনজিও, মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজের ক্ষেত্রও আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। সামাজিক উন্নয়ন, নারী ও শিশু অধিকার বা পরিবেশ রক্ষার মতো খাতে কাজ করতে চাইলে আইন জানা এক বিশাল বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে গণ্য হয়।

শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ

আইনে স্নাতক সম্পন্ন করার পর উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রও বিস্তৃত। দেশ-বিদেশে এলএলএম, পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে, যেখানে মানবাধিকার, করপোরেট, সাইবার বা পরিবেশ আইন নিয়ে বিশেষায়িত পড়াশোনা করা যায়। শিক্ষাক্ষেত্রে আগ্রহীরা বিশ্ববিদ্যালয় বা ল কলেজে শিক্ষকতা, গবেষণা বা একাডেমিক পরামর্শক হিসেবেও যুক্ত হতে পারেন। তা ছাড়া অনেক তরুণ আইনজীবী এখন ল কোচিং সেন্টার বা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তুলছেন, যেখানে শিক্ষার্থীদের বিজেএস, বিসিএস ও বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে সহযোগিতা করা হয়। ফলে আইন শুধু চাকরির নয়, বরং উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

আধুনিক বিশ্বে আইনের প্রভাব

ডিজিটাল যুগে আইনের ভূমিকা আরও বিস্তৃত। আজকের পৃথিবীতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, তথ্য নিরাপত্তা, কপিরাইট, ই-কমার্স বা সাইবার অপরাধের মতো নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আইনজ্ঞান অপরিহার্য। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সাইবার ল, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ল, মিডিয়া ল বা ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ল’র মতো আধুনিক কোর্স চালু হয়েছে।

এ ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষ আইনবিদেরা শুধু দেশে নন, বিদেশেও উচ্চ মর্যাদা অর্জন করছেন। পরিশেষে বলা যায়, আইনে পড়া মানে শুধু ধারা-উপধারা মুখস্থ করা নয়; বরং এটি চিন্তা, যুক্তি ও দায়িত্ববোধের এক লাইফস্টাইল। এ বিষয়ে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে একজন মানুষ যেমন সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তেমনি নিজের ক্যারিয়ারকেও স্থিতিশীল ও সম্মানজনক করে তুলতে পারেন। চাকরি, ব্যবসা, গবেষণা, শিক্ষা—যে ক্ষেত্রেই যাওয়া হোক না কেন, আইন জ্ঞানের প্রয়োগ সর্বত্র। আইনে পড়ার ভবিষ্যৎ শুধু উজ্জ্বল নয়, এটি বহুমুখী, বাস্তবমুখী এবং সম্ভাবনাময়। যে তরুণ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে, সমাজে নেতৃত্ব দিতে চায়, তার জন্য আইনে পড়াশোনাই হতে পারে সেই আলোর পথ।

মেহেদী হাসান অনিক, প্রভাষক, আইন বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...