Ajker Patrika

বিজেএস পরীক্ষা: দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন প্রস্তুতি কৌশল

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
ছবি: মাহতাব হোসেন
ছবি: মাহতাব হোসেন

বিচারক হতে চাইলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে যে দুটি আইন, তা হলো দেওয়ানি আইন ও ফৌজদারি আইন। এই দুটি আইন কেবল পরীক্ষার জন্য নয়, বাস্তব জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেও পথপ্রদর্শক। সামনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১৮তম বিচার বিভাগীয় (বিজেএস) পরীক্ষা। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পাবেন। এই সময়টাই দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন পুনরায় ঝালিয়ে নেওয়ার সেরা সুযোগ। ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত শান্ত দেব রায় অর্ণ তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। লিখেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার

কেন পড়া জরুরি

আইন কেবল একটি পেশাগত শিক্ষা নয়; এটি সমাজ পরিবর্তনের শক্তিশালী হাতিয়ার। একজন আইন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া থেকে আদালতের মঞ্চে নিজের অবস্থান তৈরি করার প্রতিটি ধাপে সবচেয়ে বেশি মুখোমুখি হন দেওয়ানি আইন ও ফৌজদারি আইনের। দেওয়ানি আইন শেখায় জমি, চুক্তি এবং সম্পত্তিসংক্রান্ত জটিলতার সমাধান। ফৌজদারি আইন নির্দেশ করে অপরাধ ও তার শাস্তির কাঠামো। এই দুই আইন একজন আইনজীবী, বিচারক বা আইন-সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীর সারা জীবনের সহযাত্রী। বাংলাদেশে বিচার বিভাগীয় পরীক্ষা এবং বার কাউন্সিল পরীক্ষায় এই দুই আইনের গুরুত্ব অপরিসীম।

মান বণ্টন

জুডিশিয়ারি প্রিলিমিনারি: দেওয়ানি আইন ১০ নম্বর, ফৌজদারি আইন ১০ নম্বর

লিখিত পরীক্ষা: দেওয়ানি আইন ১০০ নম্বর, ফৌজদারি আইন ১০০ নম্বর (মোট ২০০ নম্বর)

ভালো করার কার্যকর টিপস

আইনের শিক্ষার্থীদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো বিপুল পরিমাণ আইন মুখস্থ রাখা এবং সময়মতো মনে রাখা। এর জন্য দরকার সুসংগঠিত অধ্যয়ন পদ্ধতি:

১. একাডেমিক কোর্সে গুরুত্ব দিন

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিন। যারা বিজেএস বা বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের জন্য বেয়ার অ্যাক্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ধারা ও অনুচ্ছেদ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। পাশাপাশি একটি ভালো গাইড বই বিষয়গুলো বোঝার সহায়ক হবে।

২. পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন সমাধান করুন

পুরোনো প্রশ্নপত্র অধ্যয়ন অত্যন্ত জরুরি। এতে বোঝা যায়, কোন ধারা থেকে কীভাবে প্রশ্ন আসতে পারে। প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে আইনগুলোর গঠন ও মূল উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়।

৩. বারবার রিভিশন দিন

একবার পড়ে রাখা সহজে ভুলে যাওয়া যায়। নিয়মিত পুনরাবৃত্তি করলে তথ্য স্মৃতিতে স্থায়ী হয়। প্রতিদিন অল্প করে পড়া ও কয়েক দিন বিরতির পর পুনরায় রিভিশন করা কার্যকর।

৪. নিজের হাতে নোট তৈরি করুন

নিজের লেখা নোট পরীক্ষার সময় সবচেয়ে বড় সহায়ক। এতে বিষয়গুলো স্পষ্ট থাকে এবং আত্মবিশ্বাসও বাড়ে। নোট করার আগে অবশ্যই বিষয়টি ভালোভাবে বোঝা প্রয়োজন। একাধিক বই থেকে তুলনামূলকভাবে পড়লে বোঝাপড়া আরও গভীর হয়।

শান্ত যেভাবে পড়তেন

শান্তর কাছে রুটিন একটি বড় শক্তি। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা শুধু দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন পড়তেন। একটানা না পড়ে, অল্প অল্প করে মনোযোগ দিয়ে পড়তেন। কঠিন অংশ বা মনে না রাখা অংশ স্টিকি নোটে লিখে টেবিলের সামনে রাখতেন, ফলে প্রতিদিন চোখে পড়ে স্মৃতিতে গেঁথে যেত।

দেওয়ানি আইন অধ্যয়নের পদ্ধতি

  • Civil Procedure Code (CPC): ৫ দিনে শেষ; প্রথম ২ দিন ধারাগুলো, পরের ৩ দিন অর্ডার।
  • pecific Relief Act: ২–৩ দিনে ভাগ করে পড়া।
  • Limitation Act: একদিনে শেষ।
  • এক সপ্তাহে দেওয়ানি আইনের বড় অংশ শেষ করা যেত।

ফৌজদারি আইন অধ্যয়নের পদ্ধতি

  • Criminal Procedure Code (CrPC): ৫ দিনে
  • Evidence Act: ২–৩ দিনে
  • Penal Code: ৩–৪ দিনে শেষ শাস্তিসংক্রান্ত ধারা মনে রাখার জন্য একটি ছোট নোটবই রাখা। এতে পরীক্ষার আগে দ্রুত রিভিশন সম্ভব।

অন্যান্য পরামর্শ

শান্ত শিক্ষার্থীদের বলেন, আইনের পথচলা সহজ নয়। প্রচুর পরিশ্রম, ধৈর্য ও আত্মত্যাগ প্রয়োজন। কখনো মনে হবে এত আইন মুখস্থ করা অসম্ভব, কখনো মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন। তবে অধ্যবসায়ে অবিচল থাকলেই সাফল্য আসে। মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা অপরিহার্য। সুস্থ দেহে সুস্থ মন নিয়ে পড়াশোনা করলে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। সবশেষে, সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রাখুন এবং এগিয়ে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিগত সরকারের সমর্থকদের পক্ষে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে প্রায় সব দল: ডিআইজি হাবীব

চীনের বেলুন সহ্য হয়নি, এখন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে কাতারকে বিমানঘাঁটি দিচ্ছেন ট্রাম্প

চট্টগ্রামে কনসার্টে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের জেরে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৩

ট্রাইব্যুনালের পরোয়ানার পর লাপাত্তা মেজর জেনারেল কবীর, সন্ধানে তৎপরতা জানাল সেনাসদর

জুলাই জাতীয় সনদ: গণভোটের সময়ে অনড় জামায়াত-এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত