Ajker Patrika

বিজেএস পরীক্ষা: ঐচ্ছিক আইনে সর্বোচ্চ নম্বর তোলার কৌশল

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
ছবি: মাহতাব হোসেন
ছবি: মাহতাব হোসেন

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষা খুব প্রতিযোগিতামূলক। এ পরীক্ষায় ভালো করতে চাইলে আবশ্যিক বিষয়ের পাশাপাশি ঐচ্ছিক আইনেও সমান মনোযোগ দিতে হবে। অনেক পরীক্ষার্থী আবশ্যিক বিষয়গুলোতে গভীর প্রস্তুতি নিলেও ঐচ্ছিক আইন নিয়ে প্রায়ই দ্বিধায় পড়েন। অথচ ঐচ্ছিক আইনে ঠিকঠাক প্রস্তুতি থাকলে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় এগিয়ে থাকা যায়। কীভাবে ঐচ্ছিক আইনে ভালো ফল করা সম্ভব, সেই অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ জানালেন মেধাক্রমে চতুর্থ স্থান অর্জনকারী সহকারী জজ (সুপারিশপ্রাপ্ত) তানজিলা আকতার। লিখেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার

বিজেএস পরীক্ষায় ৯টি আবশ্যিক বিষয়ের পাশাপাশি থাকে একটি ঐচ্ছিক বিষয়। আবেদন করার সময় পরীক্ষার্থীদের ঐচ্ছিক ১ বা ঐচ্ছিক ২, এ দুটির মধ্যে একটি বেছে নিতে হয়। প্রিলিমিনারিতে উভয় ঐচ্ছিকের সব আইন থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। তবে কেউ ঐচ্ছিক ১ বেছে নিলে তাঁকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর লিখিত পরীক্ষার সময় ঐচ্ছিক ১-এর আইনগুলোর ওপর লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার কৌশল

  • ছোট আকারের বিশেষ আইন (যেখানে ১০-১২টি ধারা রয়েছে) পুরোপুরি আত্মস্থ করতে হবে।
  • শুধু মুখস্থ নয়, আইনগুলোর দর্শন ও প্রেক্ষাপট বুঝে পড়তে হবে।
  • ঐচ্ছিক আইনে সংজ্ঞার ধারাগুলো মুখস্থ ও বোঝা জরুরি। কারণ, এখান থেকে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় বেশি প্রশ্ন আসে।
  • কোন আদালত বা ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে, তদন্তের সময়সীমা, আপিলের ফোরাম ও সময়সীমা—এসব তথ্য এক পৃষ্ঠার নোটে সাজিয়ে রাখুন।
  • পরীক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত বিশেষ আইনে ১০-এর মধ্যে ১০ নম্বর পাওয়া। সঠিক কৌশলে প্রস্তুতি নিলে তা সম্ভব।
  • প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বিশেষ আইনে ১০-এর মধ্যে ১০ পাওয়ার লক্ষ্য রাখতে হবে। সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিলে তা অবশ্যই সম্ভব।

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

প্রিলিতে পড়া বিষয়গুলো রিভিশনের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য অনুসন্ধান ও তদন্তের প্রক্রিয়া, আদালত বা ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি এবং বিচারের ধাপগুলো পড়া যেতে পারে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। নতুন কোনো সংশোধনী এলে তার কারণ, দর্শন ও উপকারিতা ভালোভাবে বুঝতে হবে এবং ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নোট করে রাখতে হবে।

লিখিত পরীক্ষার ভাষা

ঐচ্ছিক আইনগুলো মূলত বাংলায় লেখা থাকলেও ইংরেজিতেও পরীক্ষা দেওয়া যায়। ভাষানির্বিশেষে নম্বরপ্রাপ্তিতে কোনো পার্থক্য হয় না। যে ভাষাতেই লিখুন, উত্তর হতে হবে তথ্যসমৃদ্ধ এবং প্রশ্নের সব দিক স্পর্শ করতে হবে। প্রশ্নের মূল চাহিদা না মেনে অপ্রয়োজনীয় বিস্তারিত লিখলে নম্বর পাওয়া যায় না। তাই সময় নিয়ে প্রশ্ন বুঝে উত্তর দেওয়া জরুরি।

প্রবলেমেটিক, না ব্যাখ্যামূলক উত্তর

বিশেষ আইনে ১০ নম্বরের প্রবলেম প্রশ্নে অনেক ধারা উল্লেখ করতে হয়। যদি সব ধারা মনে না থাকে, তবে প্রবলেমেটিক উত্তর না দিয়ে ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন বেছে নেওয়া ভালো। স্মার্টভাবে লিখলে ব্যাখ্যামূলক উত্তরও আধা ভুল উত্তর থেকে অনেক বেশি নম্বর দেয়। তাই নোট ও ব্যাখ্যামূলক উত্তর দেওয়ায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব নেই।

নতুনদের জন্য পরামর্শ

যাঁরা প্রথমবার বিজেএস দেবেন, ছোট আকারের বিশেষ আইন দিয়ে শুরু করুন। যেমন ক্রিমিনাল ‘ল’ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৫৮। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং ভয় কমে যাবে। শুরু থেকে প্রিলিমিনারিভিত্তিক নোট করলে পরবর্তী সময়ে সুবিধা হবে।

  • ঐচ্ছিক ১ না ২ বাছাই: যদি আপনি বিজ্ঞানে ভালো হন, তাহলে ঐচ্ছিক ২ নিতে পারেন। এখানে আইনগুলো ছোট, পড়া সহজ। কিন্তু কিছুটা জটিল। ঐচ্ছিক ১ বড় আইনসমৃদ্ধ হলেও তুলনামূলক সহজ এবং অনেক আইন একাডেমিক পড়াশোনার সময় পড়া হয়ে যায়। অনেকে সুবিধার কারণে ঐচ্ছিক ১ পছন্দ করে, তবে ব্যক্তিগত পছন্দ অনুসারে ঐচ্ছিক ২ নিলেও আফসোস হয় না।
  • আইন বাদ দেওয়ার ঝুঁকি: অনেকে ভাবেন, কয়েকটি আইন না পড়লেও অন্যগুলো থেকে প্রশ্ন উত্তর করাই যথেষ্ট। কিন্তু পরীক্ষার হলে বাদ দেওয়া আইন থেকে প্রশ্ন এলে বিপাকে পড়তে হয়। তাই কোনো আইনই বাদ দেওয়া উচিত নয়।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত