Ajker Patrika

চাকরির পেছনের গল্প: ক্যারিয়ারে সফল দম্পতি

আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২: ২২
চাকরির পেছনের গল্প: ক্যারিয়ারে সফল দম্পতি

মো. তন্ময় ইসলামডা. অদিতি হাসান দম্পতি দুজনেই বিসিএস ক্যাডার। মো. তন্ময় ইসলাম ৪০তম বিসিএস তথ্য ক্যাডারে কর্মরত এবং ৪১তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে ষষ্ঠ হয়েছেন। আর ডা. অদিতি হাসান বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন। তিনি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। এই দম্পতি বিসিএস ক্যাডার হওয়ার আগেই ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। মো. তন্ময় ইসলামের কাছে তাঁদের সম্পর্ক, বিয়ে ও বিসিএস যাত্রার গল্প শুনেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

২০১৪ সালে আমি ভর্তি হলাম রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর অদিতি ভর্তি হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজে। দুজনের ঠিকানা দেশের দুই প্রান্তে হলেও পড়াশোনার জায়গা কাছাকাছি হওয়ায় পরিচয় হয় আমাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, ল্যাব, সেমিস্টার ফাইনাল আর মেডিকেলের কার্ড, টার্ম, প্রফ পরীক্ষার ব্যস্ততার মধ্যে পথচলা। দুজনেই স্বপ্ন দেখেছিলাম দেশের মানুষের জন্য কাজ করার। তাই বিসিএসই ছিল আমাদের প্রথম পছন্দ। প্রায় ৫ বছর পর ২০১৮ সালের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি শেষ হলো।

স্নাতকের পরপরই অদিতির বাসা থেকে বিয়ের প্রস্তাব এল। তখনো আমি বেকার, বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তার কয়েক মাস পরেই আমার চাকরি হলো বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (বাউয়েট) প্রভাষক হিসেবে। ২০১৯ সালের আগস্টে আমাদের বিয়ে হয়। প্রথম সংসার শুরু রাজশাহীতে। নাটোরের কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্টে চাকরি হওয়ায় আমি সেখান থেকে রাজশাহীতে যাতায়াত করতাম।  এমবিবিএস শেষ হওয়ায় অদিতি তখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নি করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরি খুব উপভোগ করছিলাম; কিন্তু মনের মধ্যে বিসিএসের স্বপ্নই ছিল। তাই চাকরিরত অবস্থায় জীবনে প্রথম ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারিতে অংশগ্রহণ করি। প্রিলিমিনারি পাস করে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু হয়। নতুন চাকরি, নতুন সংসারের মধ্যে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া ছিল চ্যালেঞ্জিং। সকালে একসঙ্গে রিকশায় করে বের হয়ে আমি যাই পরীক্ষা কেন্দ্রে আর অদিতি হাসপাতালে ডিউটিতে। তারপর পরীক্ষার মাঝের বিরতিতে দুপুরের খাবার নিয়ে অপেক্ষা করে সে। এভাবে কোনো রকমে লিখিত পরীক্ষা শেষ করি। তারপর হঠাৎ করোনাভাইরাসের জন্য সবকিছু স্থবির হয়ে যায়। আমি চাকরির পাশাপাশি ৪১তম বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। অদিতিরও ইন্টার্নশিপ শেষ হয়। দুজন মিলে চলে আসি নাটোরের দয়ারামপুরে, যেখানে আমার কর্মস্থল। আবার নতুনভাবে সংসার শুরু। অদিতি তখন পুরোদস্তুর গৃহিণী। বাজার করা থেকে শুরু করে বাসার যাবতীয় কাজ সামলানো আর আমি চাকরি ও বিসিএস প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। এর মধ্যে ৪২তম বিশেষ বিসিএসের সার্কুলার হয়। অদিতি ঢাকার হলিক্রস কলেজে পড়াশোনা করেছে।

ইংরেজি আর বিজ্ঞানে সে বরাবরই ভালো। অন্য বিষয়গুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে আমার বিসিএসের নোটগুলো ওর কাজে আসে। অদিতি বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য খুব কম সময় পেয়েছিল। কিন্তু একসঙ্গে প্রস্তুতি নেওয়ার ফলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যায়। তা ছাড়া অনুবাদ, ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং চেক করা, ভাইভার প্রস্তুতি নেওয়া, নোট তৈরি করা—সবকিছুতেই সে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে। খুব অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে ৪২তম বিসিএস পরীক্ষায় অদিতি অংশগ্রহণ করে। আমার জন্য সে সময় চাকরি করে বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। ৪০তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা মনের মতো না হওয়ায় ৪১তম বিসিএসে ভালো করার জন্য সংকল্পবদ্ধ ছিলাম। তাই বিসিএস প্রস্তুতির জন্য চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। তখনো করোনা মহামারির জন্য চারদিকে অনিশ্চয়তা থাকায় চাকরি ছাড়ার বিষয়ে অনেকের দ্বিধা থাকলেও আমার স্ত্রীর ছিল পূর্ণ সমর্থন ও আমার লক্ষ্যের প্রতি অবিচল আস্থা। ৪২তম বিসিএস ভাইভাতে আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমি ও আমার শ্বশুর যাই পিএসসিতে।

অদিতি বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়। আমি তখনো বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছি।

অদিতি বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়। আমি তখনো বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছি। বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় আমার স্ত্রী সঙ্গে যেত, আর সঙ্গে থাকত লাগেজ ভর্তি করা বই। ৪২তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার নিয়োগ প্রক্রিয়া খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়। আমার স্ত্রী ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চাকরিতে যোগদান করে। আমাদের নতুন সংসার শুরু হয় অদিতির কর্মস্থল চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। অদিতির চাকরিতে যোগদানের জন্য সংসারের খরচ নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি। মাসখানেক পরেই ৪০তম বিসিএসের ফল প্রকাশিত হয়। আমি বিসিএস তথ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। ২০২২ সালে আমরা দুজনই বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে প্রবেশ করি। যদিও আমার লক্ষ্য ছিল বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি করা; তাই বিসিএসের প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে থাকি। নানান সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমার স্ত্রী চিকিৎসক হিসেবে মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য অবিচল থাকে।

তার এই কষ্টসহিষ্ণুতা ও নিজ পেশার প্রতি দায়িত্বশীলতা আমাকে মুগ্ধ করে। এর মধ্যেই আমি বিপিএটিসিতে ৬ মাসের বনিয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হই। তখন আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। এদিকে সন্তান হওয়ার কাছাকাছি সময়ে আমার ৪১তম বিসিএস ভাইভার তারিখও প্রকাশিত হয়। এত কিছুর মধ্যেও সে একাই সব সামলেছে ও আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছে। আর এই পুরো যাত্রায় আমার শ্বশুর-শাশুড়ির সাপোর্ট ছিল অপরিসীম। ২২ মে ভাইভায় অংশগ্রহণ করি ও ২৭ মে আমার ছেলে অমিয়র জন্ম হয়। ২০২৩ সালের আগস্টে ৪১তম বিসিএসের ফল প্রকাশিত হয়। এবার বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। এভাবেই আমাদের দুজনের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা সফল হয় ও দেশের মানুষকে সেবা দেওয়ার সুযোগ পাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

গুলিবিদ্ধ হাদি ও নির্বাচন

এলাকার খবর
Loading...