Ajker Patrika

লোকদেখানো নয়, কোরবানি হোক একমাত্র আল্লাহর জন্য

ইসলাম ডেস্ক 
কোরবানির পশু নিয়ে মেতে উঠেছে শিশুরা। ছবি: সংগৃহীত
কোরবানির পশু নিয়ে মেতে উঠেছে শিশুরা। ছবি: সংগৃহীত

কোরবানির মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি, সান্নিধ্য, নৈকট্য ও তাকওয়া অর্জন। কেননা সামাজিক নিয়ম হলো, যার জন্য উপহার দেওয়া হয়, তিনি সেটা ভোগ করেন। কিন্তু কোরবানি ও আল্লাহর ওয়াস্তে সকল উৎসর্গের ক্ষেত্রে অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে যার জন্য উৎসর্গ করা হয় তিনি ছুঁয়েও দেখেন না।

বরং কোরবানিদাতা নিজেই তা খেয়ে থাকেন এবং আত্মীয়-স্বজন ও গরিবদের মাঝে বণ্টন করে থাকেন। আর সে বণ্টনও হয়ে থাকে ইসলামের বিধানমতে। সুতরাং কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো—আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও নৈকট্য লাভ করা।

তাকওয়া অর্জনের জন্য কায়মনোবাক্যে, একাগ্রতার সঙ্গে, খাঁটি মনে, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের জন্য হতে হবে কোরবানি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, কখনোই পৌঁছাবে না আল্লাহর নিকট পশুর গোশত ও রক্ত, তবে পৌঁছাবে, তাকওয়া বা পরহেজগারি। (সুরা হজ: ৩৭)

বর্তমান সমাজে একটি চলমান বিষয় রয়েছে। তা হলো মানুষে কি বলবে, আমাদের সন্তান কোথায় যাবে, লোকজন গোশত খাবে আর আমাদের সন্তানেরা চেয়ে চেয়ে দেখবে—এটা হতে পারে না। এ জন্য অনেকে কোরবানি দিয়ে থাকেন।

বর্তমানে অনুষ্ঠান সর্বস্ব, লৌকিকতা ও প্রদর্শনের ইচ্ছা সমাজের ওপর জেঁকে বসেছে। অথচ ইসলাম এমন লৌকিকতা শিরক বলে ঘোষণা দিয়েছে। যেমন রাসুল (সা.) বলেন, ছোট থেকে ছোট লৌকিকতাও শিরক। তাই লৌকিকতাকে বর্জন করা একান্ত জরুরি।

যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব
কোরবানি ইসলামের বিভিন্ন আহকাম থেকে একটি হুকুম বা আল্লাহর নির্দেশ। যেমন আল্লাহ বলেন, সুতরাং তুমি নিজ প্রতিপালকের (সন্তুষ্টি অর্জনের) জন্য নামাজ পড় ও কোরবানি দাও। (সুরা কাউসার: ৩)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি না করে, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩১২৩)

তবে এই কোরবানি সবার ওপর ওয়াজিব নয়। যে ব্যক্তির মাঝে নিম্নলিখিত পাঁচটি শর্ত বা গুণাবলি পাওয়া যাবে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে—

  • ১. ব্যক্তিকে মুসলিম হতে হবে। অমুসলিমের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়।
  • ২. ব্যক্তিকে বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। কেননা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর কোরবানিসহ ইসলামের কোনো হুকুম ফরজ বা ওয়াজিব নয়।
  • ৩. আকেল বা সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে। কেননা বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী বা পাগলের ওপর কোনো হুকুমই ফরজ বা ওয়াজিব নয়।
  • ৪. ঈদুল আজহার দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় অর্থ ব্যতীত নেসাব পরিমাণ মাল থাকতে হবে। যার নিকট ওই দিন নেসাব পরিমাণ মাল না থাকবে, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না।
  • ৫. মুকিম বা নিজ এলাকায় অবস্থানকারী হতে হবে। কেননা মুসাফিরের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয় না।

কোরবানিদাতার জন্য করণীয়

কোরবানিদাতার জন্য আরও কিছু করণীয় বিষয় রয়েছে। যা তার জন্য সওয়াব ও লাভজনক হবে। আর তা হলো ঈদুল আজহার চাঁদ ওঠার পর থেকে কোরবানির পশু জবেহ করার পূর্ব পর্যন্ত চুল ও নখ কাটা যাবে না।

উম্মে সুলাইম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যার জন্য কোরবানির পশু থাকবে যা সে কোরবানি দেবে—জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর কোরবানির পশু জবেহ করার পূর্ব পর্যন্ত সে যেন চুল ও নখ না কাটে। (সুনানে আবু দাউদ: ২৭৯১)

কোন কোন প্রাণী কোরবানি দেওয়া যায়

আল্লাহর জমিনে অগণিত জলজ ও স্থলজ প্রাণী রয়েছে। এর মাঝে বড় থেকে বড় এবং ছোট থেকে ছোট প্রাণীও বিদ্যমান। এর মধ্যে আল্লাহ তাআলা নিম্নলিখিত ছয় প্রকারের প্রাণী কোরবানির জন্য মনোনীত করেছেন—

  • ১. ছাগল
  • ২. ভেড়া
  • ৩. দুম্বা

উল্লিখিত ছোট তিন জাতের পশু কোরবানি দেওয়া যাবে। তবে শর্ত হলো যে—এদের বয়স কমপক্ষে এক বছর পূর্ণ হতে হবে। এর চেয়ে কম বয়সী হলে কোরবানি বৈধ হবে না। তবে ভেড়ার ক্ষেত্রে যদি ছয় মাস বয়সী ভেড়া, এক বছর বয়সী ভেড়ার মতো মোটাতাজা দেখায়—তাহলে তার দ্বারা কোরবানি গ্রহণযোগ্য হবে।

  • ৪. গরু
  • ৫. মহিষ

উল্লিখিত মাঝারি দুই জাতের পশু কোরবানি দেওয়া যাবে। তবে শর্ত হলো—এদের বয়স কমপক্ষে দুই বছর পূর্ণ হতে হবে। এর চেয়ে কম বয়সী গরু মহিষ দ্বারা কোরবানি বৈধ হবে না।

  • ৬. উট

অগণিত বড় প্রাণীসমূহ থেকে আল্লাহ তায়ালা উটকে কোরবানির জন্য বৈধতা দিয়েছেন। তাই বলে যেকোনো উট কোরবানি দেওয়া যাবে না। যে উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর বা তার চেয়ে বেশি হবে তার দ্বারা কোরবানি দেওয়া যাবে।

শরিকানা কোরবানির বিধান
আল্লাহ তায়ালা ইসলামি বিধিবিধান সহজ করে দিয়েছেন—যাতে করে মানুষ সাধ্যমতো আমল করতে পারে। কোরবানির বিষয়টিও আল্লাহ তেমনি সহজ করে দিয়েছেন। কেউ বড় পশু (উট) কোরবানি দিতে না পারলে মাঝারি পশু (গরু/মহিষ) কোরবানি দেবে। মাঝারি পশু দিতে না পারলে, ছোট পশু (ছাগল/ভেড়া/দুম্বা) কোরবানি দেবে।

কারও যদি মন চায় যে, সে বড় বা মাঝারি পশু কোরবানি দেবে, কিন্তু সাধ অনুযায়ী সাধ্য নেই। তাহলে সাত ব্যক্তি শরিকানা হিসেবে বড় বা মাঝারি একটি পশু কোরবানি দিতে পারবে।

জাবের (রা.) বলেন, আমরা হুদায়বিয়া নামক স্থানে নবী করিম (সা.) এর সঙ্গে একটি উট সাতজনের পক্ষ থেকে এবং একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করেছি। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩১৩২)

কোরবানি পশুর শারীরিক শর্তাবলি
কোরবানির জন্য নির্বাচিত পশুর মাঝে কিছু গুণাবলি থাকতে হবে এবং কিছু ত্রুটিমুক্ত হতে হবে।

  • ১. প্রাণী সুস্থ সবল হতে হবে। যাতে জবেহ এর স্থান পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যেতে পারে। অতিরিক্ত দুর্বল ও কঙ্কালসার হওয়া যাবে না।
  • ২. দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন হতে হবে। দুই চোখ বা এক চোখ সম্পূর্ণরূপে অন্ধ হলে চলবে না।
  • ৩. চলাফেরায় সক্ষম হতে হবে। অক্ষম হলে বা ল্যাংড়া হলে চলবে না।
  • ৪. দাঁত সুস্থ সবল থাকতে হবে। দাঁতের অর্ধেক বা তার বেশি বা সম্পূর্ণরূপে না থাকলে চলবে না।
  • ৫. কোরবানির পশুর কান, লেজ, সুস্থ থাকতে হবে। যদি কান-লেজের এক-তৃতীয়াংশ বা তার বেশি কাটা থাকে তাহলে কোরবানি চলবে না।
  • ৬. পশুটি পোষা বা পালিত হতে হবে। জংলি বা পোষা নয়, এমন প্রাণী কোরবানির জন্য বৈধ হবে না।

উল্লেখ থাকে যে, কোরবানির পশু পুরুষ বা স্ত্রী—যে কোনোটি হতে পারে। ষাঁড় বা বলদ, পাঁঠা বা খাসি হলে কোনো দোষ নেই।

কোরবানির গোশত বণ্টন

ইসলামি বিধি-বিধান মতে কোরবানির সমুদয় গোশত কোরবানিদাতা খেতে পারবে। আবার ইচ্ছা করলে সমুদয় গোশত দান করেও দিতে পারবে। এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে উত্তম হলো গোশত তিন ভাগে ভাগ করা।

  • ১. এক ভাগ নিজের জন্য।
  • ২. আর এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের জন্য।
  • ৩. আরেক ভাগ গরিব ও অসহায়দের মাঝে বিতরণ করবে।

তবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—কোরবানির গোশত বিক্রি করা বৈধ নয়। তবে কেউ যদি বিক্রি করেন তাহলে তার মূল্য ফিতরার মতো অসহায়দের মাঝে বণ্টন করতে হবে। তবে গোশত যাদের মাঝে বিতরণ করা হয় তারা বিক্রি করলে দোষ নেই।

আরও একটি বিষয় হলো—কোরবানির গোশত যেন কোনোভাবেই বিনিময় বা পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া না হয়। যেমন, যারা কোরবানির গোশত কাটবে তাদের যেন বিনিময়ে গোশত দেওয়া না হয়। যদি দিতেই হয় তাহলে বিনিময়ে টাকা দেবে।

এ ক্ষেত্রে আমরা আরও একটি ভুল করে থাকি তা হলো, আমরা শ্রমিককে অর্থ ও খাবার বিনিময়ে কাজে নিয়ে থাকি। এ ক্ষেত্রে তাকে কোরবানির গোশত খেতে দিলে সঙ্গে অন্য তরকারি কিংবা অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। অন্যথায় শ্রমের বিনিময়ে তাকে গোশত খাওয়ানো হবে যা বৈধ হবে না।

কোরবানির পশুর চামড়ার বিধান

কোরবানির পশুর চামড়া সম্পর্কে ইসলামের বিধান হলো—এ চামড়া দাবাগাত বা প্রক্রিয়াজাত করে পাক করে নিয়ে নিজে ব্যবহার করতে পারবে। উত্তম হলো চামড়া বা তার মূল্য গরিবদের দিয়ে দেওয়া।

আরও উত্তম হলো, যে সমস্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনাথ, এতিম, অসহায় ও গরিব শিক্ষার্থীদের ফ্রি খাওয়ানো হয়—সেখানে দান করা। এতে একদিকে দানের সওয়াব অপরদিকে সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব বা দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যাবে।

লৌকিকতা বর্জন করে কোরবানি থেকে যেন আমরা প্রকৃত তাকওয়া অর্জন করতে পারি এটাই হোক প্রত্যাশা।

লেখক: মাহমুদুল হাসান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মানবসেবায় নিহিত জীবনের প্রকৃত সফলতা

ইসলাম ডেস্ক 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আমরা আল্লাহ তাআলার দয়ায় বাঁচি। তাঁর দয়াতেই হাঁটি-চলি, সুখের ভেলায় জীবন ভাসাই। তাঁর দয়া ছাড়া এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা যদি আল্লাহর দয়া পেতে চাই, তাহলে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দয়ার নজর দিতে হবে। যারা অসহায়, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

যারা অনাহারী তাদের মুখে খাদ্য তুলে দিতে হবে। দয়ার নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘দয়াশীলদের প্রতি করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের দয়া করবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৪১)

মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করে। তবে সমাজের সবাই সমান ভাগ্যবান নয়—কেউ কেউ আর্থিক, শারীরিক বা মানসিক দিক থেকে অসহায় অবস্থায় দিন কাটান। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো অনেক বড় সওয়াবের কাজ। এ ছাড়া মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অসহায়ের সাহায্যে এগিয়ে আসা অত্যন্ত মহৎ কাজ। ইসলামে এ বিষয়টিতে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিমে মুখ ফেরানোটাই সৎকর্ম নয়, বরং প্রকৃত সৎকর্মশীল ওই ব্যক্তি, যে বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতা, আল্লাহর কিতাব ও নবীদের ওপর এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সম্পদ ব্যয় করে নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, প্রার্থী ও দাস মুক্তির জন্য।’ (সুরা বাকারা: ১৭৭)

মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘যারা নিজের সম্পদ দিনে বা রাতে, প্রকাশ্যে অথবা গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে; তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে। তাদের কোনো ভয় নেই। তাদের কোনো চিন্তাও নেই।’ (সুরা বাকারা: ২৭৪)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অন্যের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৬)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ০৪ নভেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১৯ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৪: ৪৮ মিনিট
ফজর০৪: ৪৯ মিনিট০৬: ০৫ মিনিট
জোহর১১: ৪৩ মিনিট০৩: ৪১ মিনিট
আসর০৩: ৪২ মিনিট০৫: ১৭ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৯ মিনিট০৬: ৩৪ মিনিট
এশা০৬: ৩৫ মিনিট০৪: ৪৮ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামের ৫ দিকনির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দ্রুত পরিবর্তনশীল জীবনের নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জগুলো মানুষের মনে চাপ ও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। হতাশা, দুশ্চিন্তা এবং মানসিক অস্থিরতা এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম তাই আত্মার পরিশুদ্ধির পাশাপাশি মনের সুরক্ষার জন্যও কার্যকরী দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।

কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার কিছু বিষয় নিচে আলোচনা করা হলো:

১. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও স্মরণ: মানসিক প্রশান্তির মূল ভিত্তি হলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। যখন মানুষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে জীবনের সব ভালো-মন্দ আল্লাহর হাতে, তখন সে জাগতিক ভয় ও চাপ থেকে মুক্তি পায়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ (সুরা রাদ: ২৮)

তাই নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম।

২. ধৈর্য ও শোকর: ইসলাম মানুষকে শিখিয়েছে, কষ্টকে বোঝা হিসেবে না দেখে, ইমানের পরীক্ষা হিসেবে দেখা উচিত এবং এসময় ধৈর্যধারণ করা উচিত। কারণ, ধৈর্য এবং কৃতজ্ঞতা (শোকর) মানসিক স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তি যদি নিয়ামত লাভ করে, তবে সে শুকরিয়া আদায় করে...। আর যদি সে কোনো সংকটে পতিত হয়, তবে ধৈর্য ধারণ করে। আর তা তার জন্য কল্যাণকর।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৯৯৯)

এছাড়া কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, ‘নিশ্চয় কষ্টের সাথেই স্বস্তি রয়েছে।’ (সুরা ইনশিরাহ: ৫)

৩. নামাজের মাধ্যমে প্রশান্তি: দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কেবল একটি ফরজ ইবাদত নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিরতি। এটি জাগতিক ব্যস্ততা থেকে আমাদের মনোযোগ সরিয়ে নিয়ে মনকে শান্ত ও স্থির করে।

হাদিসে এসেছে, যখনই রাসুল (সা.) কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতেন, তখন তিনি বিলাল (রা.)-কে বলতেন—‘হে বিলাল, নামাজের ব্যবস্থা করো। এর মাধ্যমে আমি স্বস্তি লাভ করি।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৮৫)

৪. সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা: মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নিঃসঙ্গতা ক্ষতিকর। এজন্য ইসলাম আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনেও উৎসাহিত করা হয়েছে।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমার শরীরেরও তোমার ওপর অধিকার রয়েছে।’ (সহিহ্ বুখারি: ১৯৬৮)

পর্যাপ্ত ঘুম, পরিমিত খাদ্য এবং শারীরিক ব্যায়াম মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, এখানে শারীরিক ব্যায়ামটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমেই সম্পাদিত হয়ে যায়।

৫. প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণ: মানসিক অসুস্থতাও শারীরিক অসুস্থতার মতোই একটি রোগ। এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া তাওয়াক্কুলের (আল্লাহর ওপর ভরসা) পরিপন্থী নয়।

কারণ, নবীজি (সা.) বলেন, আল্লাহ এমন কোনো রোগ দেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। (সহিহ্ বুখারি: ৫৬৭৮)

সুতরাং, দুশ্চিন্তা বা হতাশা তীব্র হলে চিকিৎসা গ্রহণ করা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ এবং কাম্য।

ইসলামি জীবনধারা মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতি শেখায়। আল্লাহর স্মরণ, বিপদে ধৈর্যধারণ করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিকার গ্রহণ করার মাধ্যমেই একজন মুমিন এই দ্রুত পরিবর্তনশীল জীবনে মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে।

লেখক: মির্জা রিজওয়ান আলম, প্রাবন্ধিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দান-সদকা যেন আত্মপ্রদর্শনীর মাধ্যম না হয়

ইসলাম ডেস্ক 
দান-সদকা যেন আত্মপ্রদর্শনীর মাধ্যম না হয়

দান—হৃদয়ের এক অনুপম ভাষা। এমন এক ভাষা, যা কোনো শব্দ ছাড়াই মানবতার অন্তরে গভীর রেখাপাত করে। দান কখনো সম্পদের হ্রাস নয়; বরং তা আত্মার প্রশান্তি, হৃদয়ের প্রশস্ততা ও প্রকৃত সমৃদ্ধির দুয়ার। দান মানুষের অন্তরের সেই বন্ধ দরজাটি খুলে দেয়, যেখানে বাস করে ভালোবাসা, করুণা আর সহানুভূতি।

দানের মাধ্যমে মানুষ আপন স্বার্থের সীমানা ছাড়িয়ে অপরের সুখ-দুঃখে একাকার হয়ে যায়। ধনী-গরিবের মাঝে গড়ে ওঠে আত্মিক মেলবন্ধন। কখনো একটি ছোট দান কারও জীবনে বড় কল্যাণের কারণ হয়ে ওঠে, কখনো হয় কারও মুখে হাসির উৎস। দানের সৌন্দর্য এখানেই—দানকারী হয়তো ভুলে যায়, কিন্তু প্রাপক তা জীবনভর মনে রাখে।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আজকের সমাজে দানের এ মহান সৌন্দর্যে দাগ লেগেছে। কিছু মানুষ দানের মুখোশ পরে মানুষের হৃদয়ে আঘাত করে, করুণার নামে ফাঁদ পাতে, দানের আগে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে। তারা মানুষকে এমন পরীক্ষার মুখে দাঁড় করায়, যেন দয়া পাওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য দরিদ্রকে তাদের কঠিন মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হবে। এটি ইসলামের শিক্ষা নয়। এটি মানবতারও শিক্ষা নয়।

রাসুল (সা.) স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন: ‘তোমরা সহজ করো, কঠিন করো না। সুসংবাদ দাও, মানুষকে বিমুখ করো না।’ (সহিহ্ বুখারি: ৬৯৩৮; সহিহ্ মুসলিম: ১৭৩৪)

যারা দানের আগে মানুষকে প্রশ্নের বেড়াজালে আবদ্ধ করে, তারা তো কাজটিকে কঠিনই করে তুলেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি সুস্পষ্ট অন্যায়। মানুষের গোপন দোষ খোঁজা কিংবা তাকে অপমান করার কোনো অধিকার কারও নেই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের পার্থিব কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার আখিরাতের কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। যে ব্যক্তি অন্যের কষ্ট সহজ করে দেবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার কষ্ট সহজ করে দেবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকবে, আল্লাহও ততক্ষণ তাকে সাহায্যের চাদরে ঢেকে রাখবেন।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৬৯৯)

আজ আমরা দেখতে পাই, কিছু মানুষ দানের নাম করে দানগ্রহীতাকে প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তার দুঃখ-ব্যথার গভীরতা যাচাই করতে চায়। এ যেন দানের আড়ালে অপমানের নির্মম খেলা। এটি কি সত্যিই দান? এটি কি করুণা, না নির্মমতার মুখোশ? হাদিসে এসেছে: ‘কেয়ামতের দিন জাহান্নামিদের মধ্যে প্রথম বিচার হবে তিনজনের। তাদের একজন হলো সেই ব্যক্তি, যে দান করেছিল শুধু লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে। তার এই দান তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।’ (তিরমিজি: ২৩৮২)

তাদের প্রশ্ন কি সত্যিই দরিদ্রের উপকারের জন্য, না নিজেদের খ্যাতি ও বাহবা অর্জনের জন্য? দান যদি মানুষের সম্মানহানি ঘটায়, তবে তা বাহ্যিক দান বই কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে তা এক আত্মগর্বিত প্রদর্শনী মাত্র। এ যেন করুণার মশালের নিচে আঁধারের ছায়া।

দান করতে গিয়ে কখনো মানুষকে হেয় করা যাবে না, এমনকি এমন আচরণও করা যাবে না, যাতে অন্য কারও জন্য তাকে হেয় করার আশঙ্কা তৈরি হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা একে অপরকে হেয় করো না। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ভাইয়ের ওপর জুলুম করবে না, তাকে অপমান করবে না, তাকে হেয় করবে না।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৬৪৩৫)

দান হলো গোপন ইবাদত: আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো, (যদি লোকদেখানোর জন্য না হয়), তবে তাও ভালো। আর যদি গোপনে দান করো এবং গরিবদের দাও, তবে এটি তোমাদের জন্য অধিক উত্তম।’ (সুরা বাকারা: ২৭১)

ইসলামে গোপনে দান করাই সর্বোচ্চ মহত্ত্বের কাজ। তাই দানের আগে প্রাপককে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা, পরীক্ষা করা কিংবা তার আত্মসম্মানে আঘাত হানার মতো কোনো কাজ করা ইসলামের শিক্ষা নয়। দান কখনো কারও আত্মমর্যাদা ভাঙার বাহানা হতে পারে না। দান হলো করুণা, দান হলো সহানুভূতি, দান হলো হৃদয়ের নিঃশব্দ ভালোবাসা।

যারা দানের আড়ালে মানুষের আত্মাকে পিষে ফেলে, যারা করুণার প্রদীপের নিচে আঁধারের ছায়া সৃষ্টি করে—তাদের দান আসলে দান নয়, তা তো এক ঘৃণ্য আত্মপ্রদর্শনী মাত্র।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে এমন দানের তৌফিক দিন, যা মানুষের সম্মান বাঁচায়, যা আল্লাহর কাছে কবুল হয় এবং যা আমাদের জান্নাতের পথে এগিয়ে দেয়।

লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, শিক্ষক, জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত