আমজাদ ইউনুস
ইসলামের প্রথম যুগে আরবে ভারতীয় মুসলমানদের অবদান ও অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। খেলাফতে রাশেদার যুগে ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পূর্বাংশ ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিমপ্রধান অঞ্চলে পরিণত হয়। এ সময়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গভর্নর ও শাসক নিয়োগ করা হয়। আদালত প্রতিষ্ঠা, আরব মুসলমানদের বসতি স্থাপন এবং ভারতীয়দের মধ্যে ইসলাম প্রচারের প্রক্রিয়া তখন শুরু হয়েছিল।
চার খলিফার যুগে কিছু সৌভাগ্যবান ভারতীয় ইসলাম কবুল করার পর যথারীতি ভারতবর্ষেই বসবাস করেছিলেন এবং ইসলাম অনুযায়ী জীবন যাপন করেছিলেন। কিন্তু বিশুদ্ধ বর্ণনায় তাদের সংখ্যা, নাম ও অবস্থা জানা যায়নি। তবে সে যুগে কিছু ভারতীয় মুসলমান আরবে বসবাস করত। ইসলামের ইতিহাসের বিভিন্ন বইয়ে তাঁদের নাম ও জীবনী পাওয়া যায়। এ রকম তিন শ্রেণির ভারতীয় মানুষ আরবে ছিলেন—
১. যাঁরা যুদ্ধে বন্দী হয়ে আরবে গেছেন। সেখানে ইসলাম গ্রহণ করে আরব মুসলমানদের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করেছেন।
২. যাঁরা প্রথমে পারসিক যোদ্ধা ছিলেন। পরে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম যোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান।
৩. যাঁরা প্রাচীনকালে আরবের মরুভূমিতে থাকতেন, পরে তাঁরা মুসলমান হয়ে যান।
এসব ভারতীয় মুসলমান তাদের ধর্মভীরুতা, আমানতদারি, একনিষ্ঠতা ও কৃতিত্বের কারণে ইসলামি সভ্যতায় সম্মানের পাত্রে পরিণত হন। তাঁদের অধিকাংশ ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ দুই শহর কুফা ও বসরায় থাকতেন এবং অন্যান্য অঞ্চলেও বসবাস করতেন। তাঁদের কিছু গোত্র খেলাফতে রাশেদা, উমাইয়া ও আব্বাসি শাসনামলে প্রসিদ্ধি, খ্যাতি ও পরিচিতি লাভ করেন। তন্মধ্যে জাঠ সম্প্রদায়ের আধিক্য ছিল। এমন উল্লেখযোগ্য তিনজনের পরিচয় নিচে তুলে ধরা হলো—
আবু সালিমা জাঠি
আবু সালিমা জাঠি পুণ্যবান ও সৎ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি একজন তাবেয়ি। আলি (রা.)-এর শাসনামলে বসরার রাষ্ট্রীয় কোষাগারের রক্ষী হিসেবে ৪০ বা ৪০০ জন বিশিষ্ট মুসলমানের একটি দল মোতায়েন ছিল। তিনি তাদের প্রধান ছিলেন। আবু সালিমা জাঠি অত্যন্ত সৎ ও ধার্মিক ছিলেন। উষ্ট্রীর যুদ্ধের আগে ৩৬ হিজরিতে নিজের সঙ্গী ও অধীনস্তদের সঙ্গে শহীদ হন।
তবিব জাঠি মাদানি
ইহুদিরা জাদু ও হীন কর্মের মাধ্যমে মুসলমানদের তাদের মুঠোয় রাখত। তবে সেখানে জাদু ইত্যাদির চিকিৎসক থাকত। যেমন জাঠ সম্প্রদায়ের এক মুসলমান চিকিৎসক ও গভর্নর ছিলেন। তিনি একসময় উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.)-এর চিকিৎসা করেছিলেন। আয়েশা (রা.) নিজের এক দাসীকে একটি শর্তে মুক্ত করে দিলেন। এরপর হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এ অবস্থা দেখে তাঁর স্বীয় ভাতিজা এক জাঠ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন। তিনি জানালেন, তার ওপর নিজের দাসীই জাদু করেছে। আয়েশা (রা.) ৫৬ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। আর ঘটনাটি এর আগের।
হাওলা সিন্দিয়া হানাফিয়া
হাওলা সিন্দিয়া হজরত আলী (রা.)-এর দাসী ছিলেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিকের শাসনামলে ইয়ামামার যুদ্ধে বন্দী হয়ে মদিনায় আসেন। হজরত আলী (রা.)-এর মালিকানাধীন ছিলেন। তাঁর গর্ভ থেকে হজরত আলী (রা.) এর সাহেবজাদা মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়া জন্ম লাভ করেন। মুহাম্মদ ইবনে হাবিব বাগদাদি ‘কিতাবুল মিনমাক’-এ ‘আবনাউস সিন্দিয়াত’, অর্থাৎ ভারতীয় নারীদের সন্তানদের তালিকায় মুহাম্মদ ইবনে আলীকেও (যিনি ইবনুল হানাফিয়া নামে প্রসিদ্ধ) গণনা করেন। আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেন, ‘আমি মুহাম্মদ হানাফিয়ার মাকে দেখেছি। সে কালো এবং সিন্ধুর বাসিন্দা ছিল। সে ইয়ামামার গোত্র হানিফার বংশ থেকে নয়, বরং তাদের দাসী ছিল। খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) বনী হানিফার সঙ্গে দাস-দাসীর বিনিময়ে সন্ধি করেন। তবে অনেকেই হাওলা সিন্দিয়া হানাফিয়াকে বনী হানিফা থেকেই গণনা করেছেন।
সূত্র: কাজি আতহার মুবারকপুরী রচিত আহদে খেলাফতে রাশেদা কা হিন্দুস্তান।
ইসলামের প্রথম যুগে আরবে ভারতীয় মুসলমানদের অবদান ও অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। খেলাফতে রাশেদার যুগে ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পূর্বাংশ ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিমপ্রধান অঞ্চলে পরিণত হয়। এ সময়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গভর্নর ও শাসক নিয়োগ করা হয়। আদালত প্রতিষ্ঠা, আরব মুসলমানদের বসতি স্থাপন এবং ভারতীয়দের মধ্যে ইসলাম প্রচারের প্রক্রিয়া তখন শুরু হয়েছিল।
চার খলিফার যুগে কিছু সৌভাগ্যবান ভারতীয় ইসলাম কবুল করার পর যথারীতি ভারতবর্ষেই বসবাস করেছিলেন এবং ইসলাম অনুযায়ী জীবন যাপন করেছিলেন। কিন্তু বিশুদ্ধ বর্ণনায় তাদের সংখ্যা, নাম ও অবস্থা জানা যায়নি। তবে সে যুগে কিছু ভারতীয় মুসলমান আরবে বসবাস করত। ইসলামের ইতিহাসের বিভিন্ন বইয়ে তাঁদের নাম ও জীবনী পাওয়া যায়। এ রকম তিন শ্রেণির ভারতীয় মানুষ আরবে ছিলেন—
১. যাঁরা যুদ্ধে বন্দী হয়ে আরবে গেছেন। সেখানে ইসলাম গ্রহণ করে আরব মুসলমানদের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করেছেন।
২. যাঁরা প্রথমে পারসিক যোদ্ধা ছিলেন। পরে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম যোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান।
৩. যাঁরা প্রাচীনকালে আরবের মরুভূমিতে থাকতেন, পরে তাঁরা মুসলমান হয়ে যান।
এসব ভারতীয় মুসলমান তাদের ধর্মভীরুতা, আমানতদারি, একনিষ্ঠতা ও কৃতিত্বের কারণে ইসলামি সভ্যতায় সম্মানের পাত্রে পরিণত হন। তাঁদের অধিকাংশ ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ দুই শহর কুফা ও বসরায় থাকতেন এবং অন্যান্য অঞ্চলেও বসবাস করতেন। তাঁদের কিছু গোত্র খেলাফতে রাশেদা, উমাইয়া ও আব্বাসি শাসনামলে প্রসিদ্ধি, খ্যাতি ও পরিচিতি লাভ করেন। তন্মধ্যে জাঠ সম্প্রদায়ের আধিক্য ছিল। এমন উল্লেখযোগ্য তিনজনের পরিচয় নিচে তুলে ধরা হলো—
আবু সালিমা জাঠি
আবু সালিমা জাঠি পুণ্যবান ও সৎ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি একজন তাবেয়ি। আলি (রা.)-এর শাসনামলে বসরার রাষ্ট্রীয় কোষাগারের রক্ষী হিসেবে ৪০ বা ৪০০ জন বিশিষ্ট মুসলমানের একটি দল মোতায়েন ছিল। তিনি তাদের প্রধান ছিলেন। আবু সালিমা জাঠি অত্যন্ত সৎ ও ধার্মিক ছিলেন। উষ্ট্রীর যুদ্ধের আগে ৩৬ হিজরিতে নিজের সঙ্গী ও অধীনস্তদের সঙ্গে শহীদ হন।
তবিব জাঠি মাদানি
ইহুদিরা জাদু ও হীন কর্মের মাধ্যমে মুসলমানদের তাদের মুঠোয় রাখত। তবে সেখানে জাদু ইত্যাদির চিকিৎসক থাকত। যেমন জাঠ সম্প্রদায়ের এক মুসলমান চিকিৎসক ও গভর্নর ছিলেন। তিনি একসময় উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.)-এর চিকিৎসা করেছিলেন। আয়েশা (রা.) নিজের এক দাসীকে একটি শর্তে মুক্ত করে দিলেন। এরপর হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এ অবস্থা দেখে তাঁর স্বীয় ভাতিজা এক জাঠ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন। তিনি জানালেন, তার ওপর নিজের দাসীই জাদু করেছে। আয়েশা (রা.) ৫৬ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। আর ঘটনাটি এর আগের।
হাওলা সিন্দিয়া হানাফিয়া
হাওলা সিন্দিয়া হজরত আলী (রা.)-এর দাসী ছিলেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিকের শাসনামলে ইয়ামামার যুদ্ধে বন্দী হয়ে মদিনায় আসেন। হজরত আলী (রা.)-এর মালিকানাধীন ছিলেন। তাঁর গর্ভ থেকে হজরত আলী (রা.) এর সাহেবজাদা মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়া জন্ম লাভ করেন। মুহাম্মদ ইবনে হাবিব বাগদাদি ‘কিতাবুল মিনমাক’-এ ‘আবনাউস সিন্দিয়াত’, অর্থাৎ ভারতীয় নারীদের সন্তানদের তালিকায় মুহাম্মদ ইবনে আলীকেও (যিনি ইবনুল হানাফিয়া নামে প্রসিদ্ধ) গণনা করেন। আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেন, ‘আমি মুহাম্মদ হানাফিয়ার মাকে দেখেছি। সে কালো এবং সিন্ধুর বাসিন্দা ছিল। সে ইয়ামামার গোত্র হানিফার বংশ থেকে নয়, বরং তাদের দাসী ছিল। খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) বনী হানিফার সঙ্গে দাস-দাসীর বিনিময়ে সন্ধি করেন। তবে অনেকেই হাওলা সিন্দিয়া হানাফিয়াকে বনী হানিফা থেকেই গণনা করেছেন।
সূত্র: কাজি আতহার মুবারকপুরী রচিত আহদে খেলাফতে রাশেদা কা হিন্দুস্তান।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা এই পঙ্ক্তিগুলো শুধু কাব্যের সৌন্দর্য নয়, এগুলো একটি চেতনার ঘোষণা। কাজী নজরুল ইসলাম এই চার লাইনের মধ্যে তুলে ধরেছেন ইসলামের সর্বজনীনতা, সাম্যের দীক্ষা এবং মানবতাবাদের এক অভিন্ন বার্তা। কিন্তু আমরা যখন এই কবিতার আলোকে বর্তমান বাংলাদেশের দিকে তাকাই, তখন অনেক প্রশ্ন ভিড়...
১১ ঘণ্টা আগেমানুষ হিসেবে আমাদের একটি স্বভাবজাত চাহিদা হলো, আমরা নিজেদের প্রশংসা শুনতে খুব পছন্দ করি। প্রশংসা মিথ্যা হলেও বলতে বারণ করি না, শুনতেই থাকি। বরং আরও বেশি কামনা করি। এর বিপরীতে নিন্দা বা সমালোচনা একদমই সহ্য করতে পারি না। চরম বাস্তব ও সত্য হলেও সমালোচককে থামিয়ে দিই। ক্ষমতা থাকলে নিন্দুককে দমিয়ে দিই...
১৫ ঘণ্টা আগেসুখী সংসার গঠনে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হয়। বিশেষ করে স্বামীকে হতে হয় খুব সচেতন, দায়িত্ববান এবং চিন্তাশীল। ঘরে ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে তাকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করা সচেতন পুরুষের পরিচয়। এটি নবী করিম (সা.)-এর সুন্নত। এতে অত্যন্ত সওয়াবও পাওয়া যায়।
১৬ ঘণ্টা আগেবিশ্বাসভঙ্গের এক নির্মম রূপ বিশ্বাসঘাতকতা বা গাদ্দারি। এটি বিশ্বাসের বন্ধন ছিন্ন করে দেয়। বিশ্বাস মানুষের মনে-প্রাণে আস্থার দেয়াল গড়ে তোলে। আর বিশ্বাসঘাতকতা সেই দেয়ালে আঘাত করে ভেঙে ফেলে সবকিছু।
১ দিন আগে