Ajker Patrika

কিলাকারাই জুমা মসজিদ: স্থাপত্যে সম্প্রীতির বার্তা

ইজাজুল হক, ঢাকা
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০: ১৭
কিলাকারাই জুমা মসজিদ: স্থাপত্যে সম্প্রীতির বার্তা

হাজার বছরের ইসলামি স্থাপত্যে স্থান-কাল-পাত্রভেদে নানা বৈচিত্র্য দেখা যায়। এর প্রধান কারণ, পৃথিবীর যে প্রান্তেই ইসলাম প্রচারিত হয়েছে, সেখানে ইসলামের মৌলিক শিক্ষাবিরোধী নয় এমন সব সংস্কৃতিকে কখনোই নিরুৎসাহিত করা হয়নি; বরং মুসলমানেরা সেগুলোকে নিজেদের করে নিয়েছে। তাই দেখা যায়, বিভিন্ন জাতির ইতিবাচক অনেক সংস্কৃতি মুসলমানেরা আত্মস্থ করেছে। ইসলামি 
স্থাপনাও এর ব্যতিক্রম নয়।

ভারত উপমহাদেশে ইসলামের আগমনের পর প্রথম যে কয়টি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়, এর মধ্যে তামিলনাড়ুর কিলাকারাই জুমা মসজিদ একটি। এই মসজিদের বর্তমান যে অবকাঠামো ও স্থাপত্যশৈলী, তা সতেরো শতকের শেষের দিকে নির্মিত। মসজিদটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এর স্থাপত্যকৌশলে দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যধারার অনুসরণ করা হয়েছে।

দক্ষিণ ভারতের প্রায় সব মন্দিরে সাধারণত এ ধারাটিই অনুসরণ করা হয়। অবশ্য মসজিদটির নকশায় মন্দিরের মতো সামনের সুউচ্চ গোপুরোম রাখা হয়নি। দেয়াল ও স্তম্ভগুলোতেও প্রতিমার চিত্রায়ণ করা হয়নি। এর পরিবর্তে ইসলামি বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণহীন বস্তুর ছবি অঙ্কন করা হয়েছে।

চেন্নাই থেকে প্রায় ৫৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভারতের পূর্ব উপকূল ঘেঁষে অবস্থিত ছোট্ট শহর কিলাকারাই। আরব, তামিল, মালয় ও সিংহল জাতির মিশ্রণে সৃষ্ট ভারতীয় মুর জাতিই প্রধানত এখানে বাস করে। এই অখ্যাত শহরের রয়েছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস। তবে বর্তমানে দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যে নির্মিত কিলাকারাই মসজিদই এই শহরের আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে।

একসময় এই অঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা ছিল মুক্তা, শামুক ও অন্যান্য সামুদ্রিক পণ্যের ব্যবসা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ী, নাবিক ও ভ্রমণকারীদের প্রিয় গন্তব্য ছিল ছোট এই শহর। চৌদ্দ শতকের বিশ্বখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতাও এই শহরের ধুলা পায়ে মেখেছেন।

শহরের চমৎকার আবহাওয়ায় মুগ্ধ হয়ে আগন্তুকদের অনেকেই এখানে স্থায়ী হয়েছেন। তেমনই একজন ধনাঢ্য মুসলিম বণিক শেখ আবদুল কাদির। তিনিই এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তাঁর জীবন সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। স্থানীয় মানুষের কাছে তিনি সিদি কাদির নামে পরিচিত।

 কিলাকারাইয়ের ইতিহাস গবেষক ড. কাদির বখশ মাখদুমির মতে, সতেরো শতকের শেষের দিকে সিদি কাদিরই মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় কিংবদন্তি থেকে জানা যায়, এর আগে এখানে হাজার বছরের পুরোনো একটি মসজিদ ছিল। কেউ কেউ একে ভারতের প্রথম চারটি মসজিদের একটি বলে মত দিয়েছেন।

ড. মাখদুমি আরও জানান, সিদি কাদির মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে বাংলা অঞ্চলের একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। কিলাকারাইয়ে আসার পর তিনি এই মসজিদ ছাড়া বেশ কয়েকটি ধর্মীয় ও জনকল্যাণমূলক স্থাপনা গড়ে তোলেন। এই অঞ্চলের সেকালের রাজা সেতুপতির জন্য রামনাথপুরমে একটি সুরম্য প্রাসাদও নির্মাণ করেছিলেন তিনি। বিনিময়ে রাজা তাঁর দক্ষ কর্মী বাহিনী দিয়ে কিলাকারাই জুমা মসজিদ নির্মাণ করতে সহযোগিতা করেন।

ড. মাখদুমির মতে, সিদি কাদির কিলাকারাইয়েই মারা যান এবং মসজিদ প্রাঙ্গণে যে কবরটি রয়েছে, তা তাঁরই। সব ধর্মের মানুষই তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসে। একে তারা আশীর্বাদের মাধ্যম মনে করে।

স্থাপত্যকৌশল বিচারে কিলাকারাই জুমা মসজিদকে ভারতের সাংস্কৃতিক মিলনের চমৎকার উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। কারণ এটি রামেশ্বরমের কাছে অবস্থিত বিখ্যাত রামানাথস্বামী মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী থেকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত। স্থানীয় স্থাপত্যকৌশলের সঙ্গে বিশ্বাসের উপাদান যুক্ত হয়ে তা মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়।

হিংসা ও সাম্প্রদায়িকতা চর্চার এই সময়ে কালিকারাই জুমা মসজিদের ইতিহাস ও স্থাপত্যকৌশল থেকে শেখার বিকল্প নেই; যা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে শেখাচ্ছে, বিভাজন নয়, সম্প্রীতি ও একতাই গড়তে পারে সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত ভবিষ্যৎ। 

সূত্র: গালফ নিউজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোমবার যে কারণে রোজা রাখতেন নবীজি (সা.)

ইসলাম ডেস্ক 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ইসলামের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত রোজা। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দেবেন। এ ছাড়া জান্নাতে রোজাদারদের জন্য থাকবে বিশেষ প্রবেশপথ, যা দিয়ে একমাত্র তারাই প্রবেশ করবে।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোজাদাররা প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাদের প্রবেশের পরই সেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে, যেন এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে না পারে।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৯৬)। প্রিয় নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘যে রোজা অবস্থায় ইন্তেকাল করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। (সহিহ আল জামে: ৬২২৪)

নবী করিম (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতে বলতেন। নিজেও বছরের নানা দিনে নফল রোজা রাখতেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) যেসব দিন নফল রোজা রাখতেন, তার মধ্যে অন্যতম সোমবার। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সোম ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখাকে প্রাধান্য দিতেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ১০২৭)

আবু কাতাদাহ আনসারি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে একবার সোমবারে রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম এবং এই দিনেই আমাকে নবুওয়াত দেওয়া হয়েছিল। অথবা, এই দিনে আমার ওপর (কোরআন) নাজিল করা হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

হাফসা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখতেন। (মাসের প্রথম সপ্তাহের) সোম ও বৃহস্পতিবার এবং (দ্বিতীয় সপ্তাহের) সোমবার।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৪৫১)

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, রোজা তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম। সোমবারের রোজা আমাদের জন্য হতে পারে তাকওয়া অর্জনের অপার সুযোগ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১০ নভেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৪: ৫১ মিনিট
ফজর০৪: ৫২ মিনিট০৬: ০৯ মিনিট
জোহর১১: ৪৩ মিনিট০৩: ৩৮ মিনিট
আসর০৩: ৩৯ মিনিট০৫: ১৪ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৬ মিনিট০৬: ৩১ মিনিট
এশা০৬: ৩২ মিনিট০৪: ৫১ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সালাম: সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনার সহজ উপায়

ইসলাম ডেস্ক 
পরস্পর সাক্ষাতের আদব। ছবি: সংগৃহীত
পরস্পর সাক্ষাতের আদব। ছবি: সংগৃহীত

আদব ও আন্তরিকতার সঙ্গে সালাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শান্তি, কল্যাণ ও নিরাপত্তার বার্তা বহন করে, যা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করে। দুঃখজনকভাবে, সমাজে এই মহান সুন্নাহর চর্চা কমে আসছে।

সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ দূর হয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সালামের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম জানানো হয়, তখন তার চেয়েও উত্তমভাবে জবাব দাও অথবা অন্তত সেভাবে জবাব দাও।’ (সুরা নিসা: ৮৬)

নবীজি (সা.) সালামের মাধ্যমে জান্নাতের পথ সহজ করার শিক্ষা দিয়েছেন। হাদিস অনুসারে, সালামের পূর্ণ বাক্য বিনিময়ে ৩০ নেকি লাভ হয়। (সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৫)

রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাসবে। আর তা হলো পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন করা।’ (সহিহ মুসলিম: ৫৪)

সালামের এত গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও অবহেলা, মনোযোগের অভাব, সালামকে স্রেফ সৌজন্য মনে করার কারণে এর চর্চা কমছে। অপরিচিত বা কম পরিচিত ব্যক্তিকে সালাম দিতে দ্বিধা করা হয়, অথচ হাদিস অনুযায়ী এতেই বেশি সওয়াব। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সালামের চর্চা উল্লেখযোগ্য হারে কমছে।

সালাম কেবল একটি সুন্নাহ নয়, এটি সামাজিক নিরাপত্তা ও আত্মিক শান্তির প্রতীক। যিনি প্রথমে সালাম দেন, তিনি আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় এবং উত্তম। আমরা এই মহান সুন্নাহর ব্যাপক অনুশীলনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও ভালোবাসা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারি।

লেখক: মির্জা রিজওয়ান আলম, প্রাবন্ধিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিয়া বিনিময়ে উৎসাহ দিয়েছেন নবী (সা.)

সাকী মাহবুব
দুজন বন্ধু। ছবি: সংগৃহীত
দুজন বন্ধু। ছবি: সংগৃহীত

মানবসমাজে পারস্পরিক ভালোবাসা, সদ্ভাব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা ইসলামের অন্যতম প্রধান শিক্ষা। এই লক্ষ্য অর্জনে হাদিয়া বা উপহার আদান-প্রদান একটি অত্যন্ত কার্যকরী ও পরীক্ষিত পদ্ধতি।

হাদিয়া শুধু একটি বস্তুগত বিনিময় নয়, এটি হৃদয়ের অনুভূতি, ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছার এক শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। ইসলামে এই আমলটিকে অত্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, এর মাধ্যমে পাষাণ হৃদয়ও নরম হয়ে যায় এবং তিক্ত সম্পর্কও মধুর হয়ে ওঠে। হাদিয়া আদান-প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মাঝে আন্তরিকতা সৃষ্টি করা। এটি মানুষের মন থেকে রাগ, বিদ্বেষ ও শত্রুতার ভাব দূর করে ভালোবাসার বীজ বপন করে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর উপহার আদান-প্রদান করো, তাহলে তোমাদের মাঝে ভালোবাসা বৃদ্ধি হবে।’ (জামে তিরমিজি)

অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি বা তিক্ততা সৃষ্টি হয়, যা থেকে শত্রুতার জন্ম নেয়। হাদিয়া এ ক্ষেত্রে জাদুকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। আন্তরিকভাবে দেওয়া একটি উপহার কঠিন হৃদয়ের দেয়াল ভেঙে দিতে সক্ষম।

হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা পরস্পর হাদিয়া আদান-প্রদান করো। কেননা, হাদিয়া অন্তর থেকে বিদ্বেষ দূর করে দেয়।’ (জামে তিরমিজি)। আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলাও, তাহলে তোমাদের বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে; আর তোমরা পরস্পরকে উপহার দাও, তাহলে শত্রুতা দূর হয়ে যাবে।’ (মুআত্তা ইমাম মালেক, আল-আদাবুল মুফরাদ)

বাস্তব জীবনে দেখা যায়, একজন তিক্ততা পোষণকারী আত্মীয় বা প্রতিবেশীকে আন্তরিকতার সঙ্গে একটি উপহার দিলে তার পাষাণ হৃদয়ে পরিবর্তন আসে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এটি প্রমাণ করে যে হাদিয়া মানুষের ভেতরের নেতিবাচক অনুভূতিকে ইতিবাচক রূপে রূপান্তরিত করতে পারে।

হাদিয়া গ্রহণ ও প্রদান করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি প্রিয় অভ্যাস ছিল। তিনি উপহার গ্রহণ করতেন এবং বিনিময়ে কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করতেন। এটি ছিল তাঁর উচ্চ নৈতিকতার প্রমাণ।

আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং এর প্রতিদান দিতেন।’ (সহিহ্ বুখারি)

সামান্য ও নগণ্য হাদিয়াও তিনি ফিরিয়ে দিতেন না। এর মাধ্যমে তিনি উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন যে উপহারের মূল্য নয়, বরং আন্তরিকতাই আসল। হাদিয়া আদান-প্রদান শুধু একটি সামাজিক প্রথা নয়, এটি একটি ইবাদত এবং নবুওয়াতের শিক্ষা। এটি এমন এক মানবিক কৌশল, যা মানুষের হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করে বিদ্বেষ দূর করে ভালোবাসা ও সদ্ভাব প্রতিষ্ঠা করে।

আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সম্পর্কগুলোকে সুন্দর ও মজবুত করার জন্য হাদিয়ার এই ঐশী মাধ্যমটিকে গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য। হাদিয়ার মূল্য নয়, বরং এর পেছনে থাকা আন্তরিকতাই পারে যেকোনো মানুষের অন্তর পরিবর্তন করে সম্পর্ককে স্থায়ী ও মধুর করতে।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, কশবামাজাইল, পাংশা, রাজবাড়ী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত