Ajker Patrika

জুমার নামাজের গুরুত্বপূর্ণ ৭ বিধান

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
জুমার নামাজের গুরুত্বপূর্ণ ৭ বিধান

জুমার দিন মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। ঈদের নামাজের মতোই আনন্দ-উৎসবে ছোট-বড় সবাই জুমার নামাজ আদায়ে মসজিদে সমবেত হয়। জুমার নামাজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতীক হিসেবে মুসলিম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। এ নামাজ আদায় অন্যতম একটি ফরজ ইবাদত। নানাবিধ বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ জুমার নামাজ। এখানে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ বিধান তুলে ধরা হলো—

যাদের ওপর জুমা ফরজ
স্বাধীন, সুস্থ ব্যক্তি যে স্বাভাবিকভাবে মসজিদে যেতে পারে, প্রাপ্তবয়স্ক, পুরুষ, নিজ ঘরে অবস্থানকারী ও বিবেকবান ব্যক্তির ওপর জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ। বন্দী, দাস-দাসী, নারী, মুসাফির, অসুস্থ, নাবালেগ ও পাগলের ওপর জুমার নামাজ ফরজ নয়। তারিক ইবনে শিহাব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘জুমার নামাজ প্রত্যেক মুসলমানের ওপর জামাতের সঙ্গে আদায় করা ফরজ। তবে চার শ্রেণির ব্যক্তির ওপর জুমা ফরজ নয়। তারা হলো, পরাধীন দাস, নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তি।’ (আবু দাউদ: ১০৬৯) 

জুমার দিনে পরিচ্ছন্নতা
সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো পুরুষ যদি জুমার দিন গোসল করে, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে অথবা ঘরে যে সুগন্ধি আছে তা ব্যবহার করে জুমার নামাজে যায় এবং (মসজিদে) বসার জন্য দুজনকে আলাদা করে না তথা ভিড় ঠেলে সামনে যায় না, এরপর যথাসাধ্য নামাজ আদায় করে এবং ইমাম যখন কথা বলে তখন চুপ থাকে, তাহলে তার জন্য এই জুমা ও আগামী জুমা পর্যন্ত গুনাহ মাফ করা হয়।’ (বুখারি: ৮৩৪) 

উত্তম পোশাক পরিধান
আবু সাইদ খুদরি (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, উত্তম পোশাক পরিধান করে এবং সুগন্ধি থাকলে ব্যবহার করে জুমার জন্য বের হয়, এরপর মুসল্লিদের ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করে প্রয়োজনীয় নামাজ আদায় করে, এরপর ইমাম যখন বের হন তখন চুপ থাকে যতক্ষণ না নামাজ শেষ হয়, তাহলে তার এ জুমা ও আগের জুমার মধ্যে কৃত গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ (আবু দাউদ: ৩৪৩) 

আগে-পরের সুন্নাত নামাজ
জুমার আগে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা—যা রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে প্রমাণিত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করবে সে যেন এরপর চার রাকাত আদায় করে।’ (মুসলিম: ২০৭৫; তিরমিজি: ৫২৩) 

নামাজের আগে খুতবা
জুমার নামাজের আগে আরবি ভাষায় দুইটি খুতবা প্রদান করতে হয়। কোরআন, হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের আমলে কোথাও আরবি ছাড়া অন্য ভাষায় জুমা ও ঈদের খুতবা দেওয়ার প্রমাণ নেই। বরং সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর সময়ে অনেক এলাকার কিছু অথবা সব শ্রোতাই অনারব ছিল। তারপরও তারা আরবি ছাড়া অন্য ভাষায় কোনো খুতবা দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেননি। তবে জুমার নামাজে যেহেতু অনেক মুসল্লির সমাগম হয়, তাই দাওয়াতের উদ্দেশ্যে খুতবার আগে খতিবগণ মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। ইমাম মিম্বারের ওপর দাঁড়িয়ে ও মুসল্লিদের দিকে মুখ করে খুতবা দেবেন। মুসল্লিরা মনোযোগসহ খুতবা শ্রবণ করবেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। তারপর বসতেন। আবার দাঁড়াতেন যেমন তোমরা করে থাকো।’ (বুখারি: ৮৭৮; মুসলিম: ২০৩১) 

Jama_Masjid,_Delhi_-_IMGL5610দুই আজান এক ইকামত
জুমার দিন দুইবার আজান দিতে হয়। জুমার সময় হওয়ার পর প্রথম আজান এমন সময় দেওয়া উচিত যেন মুসল্লিগণ মসজিদে এসে স্থিতিশীলতার সঙ্গে সুন্নত নামাজ আদায় করতে পারেন। আর দ্বিতীয় আজান ইমাম মিম্বারে বসার পর খুতবার পূর্ব-মুহুর্তে মসজিদের ভেতর ইমামের সামনে দিতে হয়। আর জামাত শুরুর আগে ইকামত দেওয়া হয়। সায়েব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.), আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.)-এর যুগে জুমার প্রথম আজান ইমাম মিম্বারে বসার পর দেওয়া হতো। ওসমান (রা.)-এর খেলাফতকালে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তিনি আরেকটি আজান দেওয়ার হুকুম দিলেন। এই আজান উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে দেওয়া হতো।’ (বুখারি: ৮৭৯; তিরমিজি: ৫১৬; ইবনে মাজাহ: ১১৩৫) এর পর থেকে এই আমল চালু   হয়। সব সাহাবিই এই আমলের ওপর ঐকমত্য পোষণ করেন। 

কোন সুরা পাঠ করবেন
জুমার নামাজের প্রথম রাকাতে সুরা আলা ও দ্বিতীয় রাকাতে সুরা গাশিয়াহ অথবা প্রথম রাকাতে সুরা জুমা দ্বিতীয় রাকাতে সুরা মুনাফিকুন পাঠ করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার নামাজে এসব সুরা পাঠ করতেন। নুমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) দুই ঈদ ও জুমার নামাজে সুরা আলা ও সুরা গাশিয়াহ পাঠ করতেন। (মুসলিম: ২০৬৫) অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, ইবনে আবু রাফে বলেন, খলিফা মারওয়ান আবু হুরায়রা (রা.)-কে মদিনার দায়িত্ব দিয়ে মক্কায় গেলেন। আবু হুরায়রা (রা.) আমাদের জুমার নামাজ পড়ালেন। নামাজের প্রথম রাকাতে সুরা জুমা দ্বিতীয় রাকাতে সুরা মুনাফিকুন পাঠ করলেন। ইবনে আবু রাফে বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললাম, আপনি এই দুই সুরা পাঠ করলেন, যা আলি (রা.) কুফায় পাঠ করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জুমার দিনে এই দুই সুরা পাঠ করতে শুনেছি। (মুসলিম: ২০৬৩; তিরমিজি: ৫১৯; আবু দাউদ: ১১২৬) 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

গুলিবিদ্ধ হাদি ও নির্বাচন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে যে আমল

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২৪
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ইসলামে দান-সদকা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি আমল। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এর অসংখ্য ফজিলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সদকা কেবল দরিদ্রের প্রয়োজনই মেটায় না, বরং এটি বান্দা ও তার প্রতিপালকের মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করে। মহানবী (সা.) সদকার এমন কিছু অসামান্য ফজিলত বর্ণনা করেছেন, যা আমাদের জীবনে এর গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।

সদকার এক অন্যতম ফজিলত হলো, এটি আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে। হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘দান-সদকা আল্লাহর ক্রোধ কমায় এবং মানুষকে অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে।’ (জামে তিরমিজি)

মানুষ জীবনে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় নানা পাপ করে আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়, ফলে সে আল্লাহর বিরাগভাজন হয়। এমতাবস্থায় আল্লাহর রাগ কমানোর জন্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি ফিরে পাওয়ার জন্য সদকা এক ফলপ্রসূ আমল। সদকার বরকতে আল্লাহ সেই রাগ দূর করে দেন। এ ছাড়া, এই হাদিসের মাধ্যমে জানা যায়, সদকার কারণে আল্লাহ তাআলা দানশীল ব্যক্তিকে অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করেন এবং তাকে ইমানের সঙ্গে মৃত্যু দান করেন।

দান-সদকা যে শুধু পরকালে সওয়াব বৃদ্ধি করে তা নয়; বরং এর বরকতে আল্লাহ দুনিয়ার সম্পদও বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। এক হাদিসে আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, আবু জর (রা.) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, সদকা কী?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘কয়েক গুণ। (অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি যে পরিমাণ আল্লাহর জন্য দান করবে, তার কয়েক গুণ বেশি সওয়াব সে পাবে)। আর আল্লাহ তাআলা বিপুল ভান্ডারের অধিকারী।’ (মুসনাদে আহমাদ)

অনেক হাদিসবিশারদ এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, সদকার বরকতে আল্লাহ দুনিয়ায়ও সম্পদ বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। আর পরকালে যে প্রতিদান সে পাবে, তা হবে এর চেয়েও বহুগুণ বেশি। বাস্তবেও দেখা যায়, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে দান করেন, তাঁর সম্পদ অদ্ভুতভাবে বেড়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

গুলিবিদ্ধ হাদি ও নির্বাচন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বাংলা, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১১ মিনিট
ফজর০৫: ১২ মিনিট০৬: ৩১ মিনিট
জোহর১১: ৫৪ মিনিট০৩: ৩৭ মিনিট
আসর০৩: ৩৮ মিনিট০৫: ১২ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৪ মিনিট০৬: ৩৩ মিনিট
এশা০৬: ৩৪ মিনিট০৫: ১১ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

গুলিবিদ্ধ হাদি ও নির্বাচন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যেভাবে অন্যদের ভুল শুধরে দিতেন নবীজি

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভুল করা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। জীবন চলার পথে ছোট-বড় ভুল সবারই হয়। কিন্তু সে ভুলকে কীভাবে সংশোধন করতে হবে, তা মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ হজরত মুহাম্মদ (সা.) শিখিয়ে গেছেন। তিনি ভুলকে লজ্জা বা অপমানের কারণ হিসেবে দেখেননি; বরং এটিকে ইতিবাচক পরিবর্তনের একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। মহানবী (সা.) কঠোরতা নয়, বরং ভদ্রতা, কোমলতা, সহানুভূতি এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে মানুষের ভুলত্রুটি শুধরেছেন।

ভুল সংশোধনে তাঁর প্রথম কৌশল ছিল কৌশলগত নীরবতা এবং ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ। তিনি সরাসরি সমালোচনা না করে এমনভাবে আচরণ করতেন, যেন ভুলকারী নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পারে। একবার সাহাবিদের কোনো কাজে ভুল দেখতে পেলে তিনি তাঁদের ছেড়ে অন্য পথে হেঁটেছেন, যা দেখে তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। আবার কখনো কখনো, বিশেষ করে যখন ভুলটি গুরুতর হতো, তখন তিনি কথার পুনরাবৃত্তি করে এর গুরুত্ব বোঝাতেন। তাঁর আরেকটি অসাধারণ পদ্ধতি ছিল দুর্বল ও অসহায়দের প্রতি কোমল আচরণ। একইভাবে, তিনি মানুষকে আল্লাহর ক্ষমতা ও করুণার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভুল থেকে ফিরিয়ে আনতেন।

মানুষের মর্যাদা রক্ষা ছিল তাঁর ভুল সংশোধনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। তিনি কখনো জনসমক্ষে কাউকে লজ্জা দিতেন না। তাই অনেক সময় তিনি বলতেন, ‘লোকদের কী হয়েছে যে তারা এমন এমন কাজ করছে!’ এভাবে তিনি ব্যক্তির পরিচয় গোপন রেখে সাধারণ ভুলকারীদের সতর্ক করতেন। এমনকি যারা বারবার একই ভুল করত, তাদেরও তিনি তিরস্কারের পরিবর্তে ভালোবাসা ও দোয়া করতেন। তাঁর এই সহানুভূতিশীল পদ্ধতি প্রমাণ করে, ভুল শুধরানোর মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিকে পরিশুদ্ধ করা, অপমান করা নয়।

রাসুল (সা.)-এর এ কৌশলগুলো আমাদের শেখায়, ভুল সংশোধন একটি শিল্প, যেখানে ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং সম্মানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু একটি ত্রুটি দূর করার বিষয় নয়; বরং ব্যক্তির অন্তরকে আলোকময় করে তোলার এক মহৎ প্রক্রিয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

গুলিবিদ্ধ হাদি ও নির্বাচন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বাংলা, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১০ মিনিট
ফজর০৫: ১১ মিনিট০৬: ৩০ মিনিট
জোহর১১: ৫৩ মিনিট০৩: ৩৬ মিনিট
আসর০৩: ৩৭ মিনিট০৫: ১২ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৪ মিনিট০৬: ৩৩ মিনিট
এশা০৬: ৩৪ মিনিট০৫: ১০ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

গুলিবিদ্ধ হাদি ও নির্বাচন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত