ডা. আবু ইলিয়াস প্রধান
কেবল মুসলমানদের লাগিয়া আসেনি ক ইসলাম
সত্যে যে চায়, আল্লায় মানে, মুসলিম তারি নাম
আমির-ফকিরে ভেদ সবে সব ভাই এক সাথী
আমরা সেই সে জাতি।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা এই পঙ্ক্তিগুলো শুধু কাব্যের সৌন্দর্য নয়, এগুলো একটি চেতনার ঘোষণা। কাজী নজরুল ইসলাম এই চার লাইনের মধ্যে তুলে ধরেছেন ইসলামের সর্বজনীনতা, সাম্যের দীক্ষা এবং মানবতাবাদের এক অভিন্ন বার্তা। কিন্তু আমরা যখন এই কবিতার আলোকে বর্তমান বাংলাদেশের দিকে তাকাই, তখন অনেক প্রশ্ন ভিড় করে আসে—এই দেশের মানুষের মধ্যকার বিভাজন, ধর্মের অপব্যবহার, রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মীয় উগ্রতার উত্থান কি নজরুলের ওই ‘জাতি’র প্রতিনিধিত্ব করে?
নজরুল ইসলাম ছিলেন একাধারে বিদ্রোহী কবি, আবার ইসলামের প্রকৃত ভাবধারার এক অগ্রদূত। তিনি বলেছিলেন, ‘ইসলাম এসেছে মুক্তির বার্তা নিয়ে, এসেছে সাম্যের কথা বলতে, এসেছে বঞ্চিতের পাশে দাঁড়াতে।’ তার কাছে ইসলাম কেবল ধর্ম নয়, একটি নৈতিক ও মানবিক সভ্যতার প্রতীক। তার মতে, ‘সত্যে যে চায়, আল্লায় মানে’—অর্থাৎ ধর্মীয় আচার নয়, বরং ন্যায়, সত্য এবং মানবিক মূল্যবোধই মুসলমান পরিচয়ের প্রকৃত মাপকাঠি। আজ আমরা এই দৃষ্টিভঙ্গি কতটা ধারণ করতে পেরেছি?
আজকের বাংলাদেশে ধর্মকে কেন্দ্র করে যে বিভাজন, সে কখনো রাজনৈতিক, কখনো সামাজিক, আবার কখনো সাম্প্রদায়িক উগ্রতায় রূপ নিচ্ছে। এক শ্রেণির মানুষ ইসলামকে তাদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের হাতিয়ার বানিয়েছে। ধর্মের নামে হিংসা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। অথচ নজরুল আমাদের শিখিয়েছেন—‘আমির-ফকিরে ভেদ নাই সব ভাই এক সাথী।’
তিনি চেয়েছিলেন এমন এক সমাজ, যেখানে ধনী-গরিব, জাতি-ধর্ম, বর্ণ-উপবর্ণ নির্বিশেষে মানুষ এক কাতারে দাঁড়ায়। কিন্তু আজ বাংলাদেশে দরিদ্রের জন্য এক রকম আইন, প্রভাবশালীর জন্য অন্য রকম বিচার। দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং সামাজিক অন্যায় এখনো আমাদের সমাজের শিরায় শিরায় প্রবাহিত। তখন প্রশ্ন জাগে—আমরা কি সত্যিই নজরুলের সেই ‘জাতি?’
নজরুল এমন ইসলাম প্রচার করেননি, যা অন্যের প্রতি ঘৃণা ছড়ায়। বরং তিনি বলেছিলেন: ‘আমার ধর্ম ইসলাম—তা শান্তি, সহমর্মিতা, বিদ্রোহ, প্রেম ও মানবতার ধর্ম।’ কাজেই যারা ইসলামকে ঘৃণা ও উগ্রতার মাধ্যম বানায়, তারা নজরুলের ইসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত।
নজরুল বলেছিলেন, ‘আমরা সেই সে জাতি’, অর্থাৎ এমন এক জাতি যারা সকল বৈষম্য অতিক্রম করে, সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করায়। এটি ছিল কেবল কাব্যিক উচ্চারণ নয়—এই ছিল নজরুলের রাষ্ট্রদর্শনের ভিত্তি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ আমরা শিক্ষায়, পেশায়, লিঙ্গে, ধর্মে, এমনকি পোশাকেও মানুষকে বিচার করি। অদ্ভুত এক সংকীর্ণতা আমাদের জাতীয় চেতনায় প্রবেশ করেছে। তখন নজরুলের এই কবিতা হয়ে ওঠে এক প্রকার আয়না—যেখানে আমরা নিজের মুখ দেখতে পাই, কিন্তু নিজেকে চিনতে পারি না।
এই বিভাজনের সময়ে নজরুলকে আবার নতুন করে পড়া, নতুন করে বোঝা, এবং নতুন করে তুলে ধরার সময় এসেছে। তাঁকে শুধু বিদ্রোহী কবি বলে ভক্তিগীতি গেয়ে চুপ থাকা নয়—তাঁর সাম্যবাদী, মানবতাবাদী, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন বাণী আমাদের জাতীয় নীতিতে পরিণত করতে হবে। তিনি বলেছিলেন: ‘ধর্মকে নিয়ে যদি বর্ণ বা জাতির ঘৃণা জন্মায়, তবে সে ধর্ম নয়—তা শয়তানের ফাঁদ।’
বাংলাদেশের সংবিধান বলে, আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কিন্তু আমাদের নৈতিক ভিত্তি যদি নজরুলের মত মহান মানবতাবাদী ভাবনার ওপর দাঁড়ানো না হয়, তাহলে সংবিধানও কেবল একটি কাগজের দলিল হয়ে থাকবে।
কেবল মুসলমানদের লাগিয়া আসেনি ক ইসলাম
সত্যে যে চায়, আল্লায় মানে, মুসলিম তারি নাম
আমির-ফকিরে ভেদ সবে সব ভাই এক সাথী
আমরা সেই সে জাতি।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা এই পঙ্ক্তিগুলো শুধু কাব্যের সৌন্দর্য নয়, এগুলো একটি চেতনার ঘোষণা। কাজী নজরুল ইসলাম এই চার লাইনের মধ্যে তুলে ধরেছেন ইসলামের সর্বজনীনতা, সাম্যের দীক্ষা এবং মানবতাবাদের এক অভিন্ন বার্তা। কিন্তু আমরা যখন এই কবিতার আলোকে বর্তমান বাংলাদেশের দিকে তাকাই, তখন অনেক প্রশ্ন ভিড় করে আসে—এই দেশের মানুষের মধ্যকার বিভাজন, ধর্মের অপব্যবহার, রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মীয় উগ্রতার উত্থান কি নজরুলের ওই ‘জাতি’র প্রতিনিধিত্ব করে?
নজরুল ইসলাম ছিলেন একাধারে বিদ্রোহী কবি, আবার ইসলামের প্রকৃত ভাবধারার এক অগ্রদূত। তিনি বলেছিলেন, ‘ইসলাম এসেছে মুক্তির বার্তা নিয়ে, এসেছে সাম্যের কথা বলতে, এসেছে বঞ্চিতের পাশে দাঁড়াতে।’ তার কাছে ইসলাম কেবল ধর্ম নয়, একটি নৈতিক ও মানবিক সভ্যতার প্রতীক। তার মতে, ‘সত্যে যে চায়, আল্লায় মানে’—অর্থাৎ ধর্মীয় আচার নয়, বরং ন্যায়, সত্য এবং মানবিক মূল্যবোধই মুসলমান পরিচয়ের প্রকৃত মাপকাঠি। আজ আমরা এই দৃষ্টিভঙ্গি কতটা ধারণ করতে পেরেছি?
আজকের বাংলাদেশে ধর্মকে কেন্দ্র করে যে বিভাজন, সে কখনো রাজনৈতিক, কখনো সামাজিক, আবার কখনো সাম্প্রদায়িক উগ্রতায় রূপ নিচ্ছে। এক শ্রেণির মানুষ ইসলামকে তাদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের হাতিয়ার বানিয়েছে। ধর্মের নামে হিংসা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। অথচ নজরুল আমাদের শিখিয়েছেন—‘আমির-ফকিরে ভেদ নাই সব ভাই এক সাথী।’
তিনি চেয়েছিলেন এমন এক সমাজ, যেখানে ধনী-গরিব, জাতি-ধর্ম, বর্ণ-উপবর্ণ নির্বিশেষে মানুষ এক কাতারে দাঁড়ায়। কিন্তু আজ বাংলাদেশে দরিদ্রের জন্য এক রকম আইন, প্রভাবশালীর জন্য অন্য রকম বিচার। দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং সামাজিক অন্যায় এখনো আমাদের সমাজের শিরায় শিরায় প্রবাহিত। তখন প্রশ্ন জাগে—আমরা কি সত্যিই নজরুলের সেই ‘জাতি?’
নজরুল এমন ইসলাম প্রচার করেননি, যা অন্যের প্রতি ঘৃণা ছড়ায়। বরং তিনি বলেছিলেন: ‘আমার ধর্ম ইসলাম—তা শান্তি, সহমর্মিতা, বিদ্রোহ, প্রেম ও মানবতার ধর্ম।’ কাজেই যারা ইসলামকে ঘৃণা ও উগ্রতার মাধ্যম বানায়, তারা নজরুলের ইসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত।
নজরুল বলেছিলেন, ‘আমরা সেই সে জাতি’, অর্থাৎ এমন এক জাতি যারা সকল বৈষম্য অতিক্রম করে, সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করায়। এটি ছিল কেবল কাব্যিক উচ্চারণ নয়—এই ছিল নজরুলের রাষ্ট্রদর্শনের ভিত্তি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ আমরা শিক্ষায়, পেশায়, লিঙ্গে, ধর্মে, এমনকি পোশাকেও মানুষকে বিচার করি। অদ্ভুত এক সংকীর্ণতা আমাদের জাতীয় চেতনায় প্রবেশ করেছে। তখন নজরুলের এই কবিতা হয়ে ওঠে এক প্রকার আয়না—যেখানে আমরা নিজের মুখ দেখতে পাই, কিন্তু নিজেকে চিনতে পারি না।
এই বিভাজনের সময়ে নজরুলকে আবার নতুন করে পড়া, নতুন করে বোঝা, এবং নতুন করে তুলে ধরার সময় এসেছে। তাঁকে শুধু বিদ্রোহী কবি বলে ভক্তিগীতি গেয়ে চুপ থাকা নয়—তাঁর সাম্যবাদী, মানবতাবাদী, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন বাণী আমাদের জাতীয় নীতিতে পরিণত করতে হবে। তিনি বলেছিলেন: ‘ধর্মকে নিয়ে যদি বর্ণ বা জাতির ঘৃণা জন্মায়, তবে সে ধর্ম নয়—তা শয়তানের ফাঁদ।’
বাংলাদেশের সংবিধান বলে, আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কিন্তু আমাদের নৈতিক ভিত্তি যদি নজরুলের মত মহান মানবতাবাদী ভাবনার ওপর দাঁড়ানো না হয়, তাহলে সংবিধানও কেবল একটি কাগজের দলিল হয়ে থাকবে।
মানুষ হিসেবে আমাদের একটি স্বভাবজাত চাহিদা হলো, আমরা নিজেদের প্রশংসা শুনতে খুব পছন্দ করি। প্রশংসা মিথ্যা হলেও বলতে বারণ করি না, শুনতেই থাকি। বরং আরও বেশি কামনা করি। এর বিপরীতে নিন্দা বা সমালোচনা একদমই সহ্য করতে পারি না। চরম বাস্তব ও সত্য হলেও সমালোচককে থামিয়ে দিই। ক্ষমতা থাকলে নিন্দুককে দমিয়ে দিই...
১০ ঘণ্টা আগেসুখী সংসার গঠনে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হয়। বিশেষ করে স্বামীকে হতে হয় খুব সচেতন, দায়িত্ববান এবং চিন্তাশীল। ঘরে ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে তাকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করা সচেতন পুরুষের পরিচয়। এটি নবী করিম (সা.)-এর সুন্নত। এতে অত্যন্ত সওয়াবও পাওয়া যায়।
১১ ঘণ্টা আগেবিশ্বাসভঙ্গের এক নির্মম রূপ বিশ্বাসঘাতকতা বা গাদ্দারি। এটি বিশ্বাসের বন্ধন ছিন্ন করে দেয়। বিশ্বাস মানুষের মনে-প্রাণে আস্থার দেয়াল গড়ে তোলে। আর বিশ্বাসঘাতকতা সেই দেয়ালে আঘাত করে ভেঙে ফেলে সবকিছু।
১৮ ঘণ্টা আগেসময়ের এক গাঢ় দুপুরে, জ্ঞান ভুবনের দরজায় এক সন্ন্যাসী দাঁড়িয়ে ছিলেন—নীরব, দীপ্ত, অদ্ভুত নিরাসক্ত। তাঁর হাতে ছিল না কোনো তরবারি, ছিল কেবল এক কলম। তাঁর কণ্ঠে ছিল না কোনো উচ্চারণ, কিন্তু তাঁর লেখা যুগে যুগে উচ্চারিত হয়েছে পৃথিবীর সকল ভাষায়। তিনি ইবনে সিনা। মৃত্যু তাঁকে কেড়ে নেয় ১০৩৭ সালের ২২ জুন...
১ দিন আগে