Ajker Patrika

মায়ের অনন্য মর্যাদার কথা

মুফতি আবু দারদা
আপডেট : ১৩ মে ২০২৩, ১২: ৫৬
মায়ের অনন্য মর্যাদার কথা

পবিত্র কোরআনে বারবার মা-বাবার যথাযথ যত্ন নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে সুন্দর ও মার্জিত আচরণ করা, তাঁদের আনুগত্য করা এবং বিশেষ করে বার্ধক্যে তাঁদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখার জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই যেন তাঁরা কষ্টে দিনাতিপাত না করেন, সেই নিশ্চয়তা সন্তানকে দিতেই হবে। অন্যথায় পরকালে কঠিন শাস্তির মুখে পড়তে হবে। এই বিধানে মা-বাবা সমানভাবে অন্তর্ভুক্ত। তবে মায়ের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে কোরআন-হাদিসে তাঁকে বাবার চেয়ে বেশি মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

কোরআনে মায়ের অনন্য মর্যাদা
দীর্ঘ ৯ মাসের গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তান প্রসব, দুধ পান করানো, ধীরে ধীরে তাকে বড় করে তোলা এবং আদর-যত্ন দিয়ে তার মধ্যে মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটানোর যে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একজন মা যান, তার কোনো তুলনা পৃথিবীতে নেই। এ ক্ষেত্রে মায়ের তুলনা মা-ই। 

এত কষ্ট, এত যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতা অন্য কারও নেই। এ কারণেই মা অনন্য। এটিই তাঁর অতুলনীয় মর্যাদার প্রধান কারণ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা একাধিকবার মায়ের এসব ত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার মা-বাবার প্রতি সদয় আচরণের। তার মা নিদারুণ কষ্টে তাকে গর্ভে ধারণ করেন এবং নিদারুণ কষ্ট সহ্য করে তাকে প্রসব করেন। তাকে গর্ভে ধারণ করতে এবং দুধপান ছাড়াতে সময় লাগে ৩০ মাস। অবশেষে সে যখন পূর্ণ শক্তি লাভ করে এবং ৪০ বছরে পৌঁছে যায়, তখন সে বলে—হে আমার প্রতিপালক, আপনি আমাকে আর আমার মা-বাবাকে যে নিয়ামত দিয়েছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার শক্তি আমাকে দান করুন...।’ (সুরা আহকাফ: ১৫) 

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমরা মানুষকে তার মা-বাবার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করেন, আর তার দুধপান ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। আমারই কাছে তো ফিরতে হবে।’ (সুরা লোকমান: ১৪) 

হাদিসে মায়ের মর্যাদার কথা
এ কারণেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মায়ের অনন্য মর্যাদার ঘোষণা দিয়েছেন। গর্ভাবস্থায় কোনো মায়ের মৃত্যু হলে তাঁকে শহীদ আখ্যা দিয়েছেন। (আবু দাউদ: ৩১১১) অন্য হাদিসে বলেছেন, ‘মায়েদের পদতলেই সন্তানদের জান্নাত।’ (নাসায়ি: ৩১০৪)

মায়ের মর্যাদা এতই বেশি যে মহান আল্লাহ তাঁর নবীদেরও মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইসা (আ.)-এর বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে এরশাদ হয়েছে, ‘আর আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আমি যেন আমার মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করি। আমাকে করা হয়নি উদ্ধত-অবাধ্য ও দুর্ভাগা-হতভাগ্য।’ (সুরা মারইয়াম: ৩০-৩২) 

শুধু এটুকুই নয়, মহানবী (সা.) হাদিসে স্পষ্ট করে মাকে বাবার চেয়ে তিন গুণ বেশি মর্যাদাবান ঘোষণা করেছেন। এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার?’ তিনি বললেন ‘তোমার মা।’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা।’ সে আবারও বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বলেন, ‘তোমার মা।’ সে পুনরায় বলল, ‘এরপর কে?’ তিনি বলেন, ‘তোমার বাবা।’ (বুখারি: ৫৯৭১) 

মায়ের সেবার পুরস্কার
উয়াইস আল কারনি নামের এক বিখ্যাত তাবেয়ি মহানবী (সা.)-এর যুগের মানুষ হয়েও মায়ের সেবা করার জন্য তাঁর সাক্ষাৎ পেতে আসেননি। মহানবী (সা.) তাঁর এমন কাজকে সমর্থন করে বলেছেন, ‘ইয়েমেন থেকে উয়াইস নামে এক ব্যক্তি (আমার মৃত্যুর পর) তোমাদের কাছে আসবে। ইয়েমেনে মা ছাড়া তার আর কেউ নেই। তার শ্বেত রোগ ছিল। সে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ তার রোগ ভালো করে দেন। কিন্তু তার শরীরের একটি স্থানে এক দিনার অথবা এক দিরহাম পরিমাণ স্থান সাদাই থেকে যায়। তোমাদের কেউ যদি তার সাক্ষাৎ পায়, সে যেন তাকে নিজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলে।’ (মুসলিম: ২৫৪২) 

মায়ের অবাধ্যতার পরিণাম
কেয়ামতের দিন মায়ের অবাধ্য হওয়া অনেক বেশি শাস্তির কারণ হবে। মহানবী (সা.) পৃথকভাবে মায়ের প্রতি অবহেলা করা এবং তাঁর অবাধ্য হওয়াকে হারাম ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা মায়ের অবাধ্য হওয়াকে তোমাদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’ (মুসলিম: ৪৫৮০)

মা যদি কষ্ট পেয়ে কখনো সন্তানের জন্য বদদোয়া করেন, আল্লাহ তা সঙ্গে সঙ্গেই কবুল করে নেন। এমন একটি ঘটনার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মহানবী (সা.) বলেন, (আগের যুগে) জুরাইজ নামের এক ইবাদত গুজার ব্যক্তি কোনো এক গির্জায় ইবাদত করতেন। একবার তাঁর মা গির্জায় এসে তাঁকে ডাকতে লাগলেন। বললেন, ‘হে জুরাইজ, আমি তোমার মা। আমার সঙ্গে কথা বলো।’ মা তাকে নামাজ পড়তে দেখলেন। জুরাইজ তাঁর ডাকে সাড়া না দিয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহ, আমার মা ও আমার নামাজ।’ এ কথা বলেই তিনি নামাজে রত থাকলেন। 

এভাবে মা তিন দিন তাঁকে ডাকলেন এবং প্রতিদিনই তাঁর সঙ্গে একই আচরণ দেখালেন জুরাইজ। তৃতীয় দিন মা তাঁকে এই বলে বদদোয়া করলেন যে ‘হে আল্লাহ, আপনি আমার ছেলের মৃত্যু দেবেন না—যতক্ষণ না সে কোনো বেশ্যা নারীর চেহারা দেখে।’ আল্লাহ তাআলা মায়ের বদদোয়া কবুল করলেন এবং জুরাইজ এক বেশ্যার মিথ্যা অপবাদের মুখে পড়ে নিজের মান-সম্মান হারান। অবশ্য পরে এক শিশুর অলৌকিক সাক্ষ্যের কারণে তিনি বেঁচে যান। (মুসলিম: ২৫৫০)

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত