সাকিনা আশ শিহাবি
আবদুল আযীয কাসেমি
জ্ঞানসমুদ্রে ডুব দিয়ে চিরকুমারীত্ব বরণ করে পুরো জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন, এমন নারীর সংখ্যা পৃথিবীতে বিরল। তবে আজ এমন এক মহীয়সীর গল্প বলব, যিনি জীবনের ৭৫টি বসন্ত একান্ত জ্ঞানসাধনায় কাটিয়ে দিয়েছেন। তিনি খুব বেশি দিন আগের মানুষ নন, ২০০৬ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অনন্তকালের যাত্রী হয়েছেন। বলছি বিখ্যাত গবেষক ও ইসলামি পণ্ডিত সাকিনা আশ শিহাবির কথা।
বেড়ে ওঠা
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার বিখ্যাত আলেপ্পোর আল বাব শহরে ১৯৩৩ সালের ১২ আগস্ট আলী হামদান আশ শিহাবির ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেন সাকিনা। পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে এতিম হন। ফলে সংগ্রামী এক জীবনের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠেন সাকিনা। জ্ঞানচর্চার প্রতি ছিল তাঁর প্রচণ্ড ঝোঁক। ঘরে বসে পবিত্র কোরআন হিফজ করেন। লেখাপড়ায় নিজের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন। ১৯৬২ সালে দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স সম্পন্ন করেন। তিনি আল বাব শহরের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত নারী। অধ্যাপক সায়িদ আফগানী ও শুকরি ফয়সালের মতো বিখ্যাত অধ্যাপকেরা তাঁর শিক্ষক ছিলেন।
কর্মজীবন
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে সিরিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত টিচার সিলেক্ট কম্পিটিশনে অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন সাকিনা। এরপর টানা ১০ বছর আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে সিরিয়ার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কাজ করেন। এই এক দশকে সাকিনা লেবাননভিত্তিক ‘আল আদিব’ ম্যাগাজিনে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অসংখ্য মূল্যবান প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখেন। ১৯৭৩ সালে মায়ের মৃত্যুতে প্রচণ্ড আঘাত পান সাকিনা। এরপর তিনি তাঁর পূর্ণ মনোযোগ জ্ঞান-গবেষণায় নিয়োজিত করেন। ১৯৭৩ সালে সাকিনার শিক্ষক দামেস্কের আরবি ভাষা একাডেমির সেক্রেটারি জেনারেল শুকরি ফয়সাল তাঁকে একাডেমিতে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি ও সাহিত্যবিষয়ক গবেষক হিসেবে নিয়োগ দেন। প্রাচীন পাণ্ডুলিপি সম্পাদনার কাজে তিনি পারঙ্গমতার পরিচয় দেন।
সেরা কীর্তি
ইসলামের ইতিহাসের বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইমাম ইবনে আসাকির ‘তারিখে দিমাশক’ নামে ৮০ খণ্ডে বিস্তৃত এক ইতিহাস বিশ্বকোষ রচনা করেন। ইতিহাস শাস্ত্রে এত বড় রচনা কমই আছে। মূল্যবান রচনাটি পাণ্ডুলিপি আকারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল পৃথিবীর নানা গ্রন্থাগারে। একে সম্পাদনা করে আধুনিক সাজে সজ্জিত করে প্রকাশের উদ্যোগ নেয় দামেস্কের আরবি ভাষা একাডেমি। প্রফেসর শুকরি ফয়সালের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে সাকিনা ৩৯টি খণ্ডের সম্পাদনার কাজে যুক্ত ছিলেন। প্রথম ৩ খণ্ডে তিনি শুকরি ফয়সালের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করলেও বাকি কাজগুলো একাই সমাপ্ত করেন। এ কাজে তিনি রাত-দিন এক করে ফেলেন। বইটির সঙ্গে তাঁর আসক্তি এতটা গভীর হয়েছিল যে তিনি আশা করেছিলেন, জান্নাতে তিনি ইমাম ইবনে আসাকিরের স্ত্রী হবেন। তারিখে দিমাশক ছাড়াও তিনি ১৪টি প্রাচীন পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা করেন।
বরেণ্যদের চোখে
সিরিয়ান গবেষক মুহাম্মাদ মুতি আল হাফেজ বলেন, ‘১৯৭৩ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আমি সাকিনার সহকর্মী ছিলাম। আমার মতে, তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক, সময়ের প্রতি সচেতন, আত্মপ্রত্যয়ী, গুরুগম্ভীর, নিবেদিতপ্রাণ ও ধৈর্যশীল। শেষ বয়সে হজ করেছিলেন। চিরকুমারী ছিলেন।’
ইতিহাসবিদ ও অধ্যাপক আহমাদ আল আলাবিনার মতে, ‘আমার চেনাজানা গবেষকদের মধ্যে সাকিনা অনন্য। সমকালীন আরব নারী গবেষকদের মধ্যে তর্কহীনভাবে সাকিনাই সেরা। তাঁর সঙ্গে পত্রবিনিময় ও সরাসরি সাক্ষাতের আগে থেকে তাঁর সম্পাদিত “তারিখে ইবনে আসাকির”-এর মাধ্যমে তাঁকে চিনি। সরাসরি সাক্ষাতের পর তাঁকে আমি খুব বিনয়ী ও উত্তম স্বভাবের অধিকারী পেয়েছি।’
জীবনাবসান
২০০৬ সালের ১৪ জুলাই দামেস্কে মৃত্যুবরণ করেন চিরকুমারী মহীয়সী সাকিনা আশ শিহাবি। তাঁকে জন্মভূমি আল বাবে সমাধিস্থ করা হয়।
জ্ঞানসমুদ্রে ডুব দিয়ে চিরকুমারীত্ব বরণ করে পুরো জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন, এমন নারীর সংখ্যা পৃথিবীতে বিরল। তবে আজ এমন এক মহীয়সীর গল্প বলব, যিনি জীবনের ৭৫টি বসন্ত একান্ত জ্ঞানসাধনায় কাটিয়ে দিয়েছেন। তিনি খুব বেশি দিন আগের মানুষ নন, ২০০৬ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অনন্তকালের যাত্রী হয়েছেন। বলছি বিখ্যাত গবেষক ও ইসলামি পণ্ডিত সাকিনা আশ শিহাবির কথা।
বেড়ে ওঠা
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার বিখ্যাত আলেপ্পোর আল বাব শহরে ১৯৩৩ সালের ১২ আগস্ট আলী হামদান আশ শিহাবির ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেন সাকিনা। পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে এতিম হন। ফলে সংগ্রামী এক জীবনের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠেন সাকিনা। জ্ঞানচর্চার প্রতি ছিল তাঁর প্রচণ্ড ঝোঁক। ঘরে বসে পবিত্র কোরআন হিফজ করেন। লেখাপড়ায় নিজের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন। ১৯৬২ সালে দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স সম্পন্ন করেন। তিনি আল বাব শহরের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত নারী। অধ্যাপক সায়িদ আফগানী ও শুকরি ফয়সালের মতো বিখ্যাত অধ্যাপকেরা তাঁর শিক্ষক ছিলেন।
কর্মজীবন
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে সিরিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত টিচার সিলেক্ট কম্পিটিশনে অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন সাকিনা। এরপর টানা ১০ বছর আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে সিরিয়ার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কাজ করেন। এই এক দশকে সাকিনা লেবাননভিত্তিক ‘আল আদিব’ ম্যাগাজিনে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অসংখ্য মূল্যবান প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখেন। ১৯৭৩ সালে মায়ের মৃত্যুতে প্রচণ্ড আঘাত পান সাকিনা। এরপর তিনি তাঁর পূর্ণ মনোযোগ জ্ঞান-গবেষণায় নিয়োজিত করেন। ১৯৭৩ সালে সাকিনার শিক্ষক দামেস্কের আরবি ভাষা একাডেমির সেক্রেটারি জেনারেল শুকরি ফয়সাল তাঁকে একাডেমিতে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি ও সাহিত্যবিষয়ক গবেষক হিসেবে নিয়োগ দেন। প্রাচীন পাণ্ডুলিপি সম্পাদনার কাজে তিনি পারঙ্গমতার পরিচয় দেন।
সেরা কীর্তি
ইসলামের ইতিহাসের বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইমাম ইবনে আসাকির ‘তারিখে দিমাশক’ নামে ৮০ খণ্ডে বিস্তৃত এক ইতিহাস বিশ্বকোষ রচনা করেন। ইতিহাস শাস্ত্রে এত বড় রচনা কমই আছে। মূল্যবান রচনাটি পাণ্ডুলিপি আকারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল পৃথিবীর নানা গ্রন্থাগারে। একে সম্পাদনা করে আধুনিক সাজে সজ্জিত করে প্রকাশের উদ্যোগ নেয় দামেস্কের আরবি ভাষা একাডেমি। প্রফেসর শুকরি ফয়সালের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে সাকিনা ৩৯টি খণ্ডের সম্পাদনার কাজে যুক্ত ছিলেন। প্রথম ৩ খণ্ডে তিনি শুকরি ফয়সালের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করলেও বাকি কাজগুলো একাই সমাপ্ত করেন। এ কাজে তিনি রাত-দিন এক করে ফেলেন। বইটির সঙ্গে তাঁর আসক্তি এতটা গভীর হয়েছিল যে তিনি আশা করেছিলেন, জান্নাতে তিনি ইমাম ইবনে আসাকিরের স্ত্রী হবেন। তারিখে দিমাশক ছাড়াও তিনি ১৪টি প্রাচীন পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা করেন।
বরেণ্যদের চোখে
সিরিয়ান গবেষক মুহাম্মাদ মুতি আল হাফেজ বলেন, ‘১৯৭৩ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আমি সাকিনার সহকর্মী ছিলাম। আমার মতে, তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক, সময়ের প্রতি সচেতন, আত্মপ্রত্যয়ী, গুরুগম্ভীর, নিবেদিতপ্রাণ ও ধৈর্যশীল। শেষ বয়সে হজ করেছিলেন। চিরকুমারী ছিলেন।’
ইতিহাসবিদ ও অধ্যাপক আহমাদ আল আলাবিনার মতে, ‘আমার চেনাজানা গবেষকদের মধ্যে সাকিনা অনন্য। সমকালীন আরব নারী গবেষকদের মধ্যে তর্কহীনভাবে সাকিনাই সেরা। তাঁর সঙ্গে পত্রবিনিময় ও সরাসরি সাক্ষাতের আগে থেকে তাঁর সম্পাদিত “তারিখে ইবনে আসাকির”-এর মাধ্যমে তাঁকে চিনি। সরাসরি সাক্ষাতের পর তাঁকে আমি খুব বিনয়ী ও উত্তম স্বভাবের অধিকারী পেয়েছি।’
জীবনাবসান
২০০৬ সালের ১৪ জুলাই দামেস্কে মৃত্যুবরণ করেন চিরকুমারী মহীয়সী সাকিনা আশ শিহাবি। তাঁকে জন্মভূমি আল বাবে সমাধিস্থ করা হয়।
পবিত্র কোরআনের ৬২ তম সুরা, সুরা জুমুআ। এটি মাদানি সুরা, যা জুমার দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে কেন্দ্র করে নাজিল হয়েছে। এই সুরার মূল বার্তা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের মাধ্যমে ইমানদারদের পরিশুদ্ধ জীবন লাভ এবং ইহুদিদের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।
১৫ ঘণ্টা আগেজনসম্পদকে আমানত হিসেবে দেখা, এর প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং এর অপব্যবহার থেকে বিরত থাকা ইমানের অপরিহার্য অংশ। এটি একজন মুমিনের সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্যের পরিচায়ক। এই সম্পদের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নৈতিক ও ইমানি কর্তব্য।
১৮ ঘণ্টা আগেআমি প্রবাসে আছি সাত বছর হলো। এখনো বিয়ে করিনি। বিয়ের পর আর প্রবাসে আসার ইচ্ছে নেই। তাই মা-বাবাকে বলেছি, পাত্রী দেখার জন্য। যদি সবকিছু ঠিক থাকে মোবাইলের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করে দেশে চলে আসব। প্রবাসে বসে মোবাইলে বিয়ে করা কি আমার জন্য জায়েজ হবে? এ বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা জানতে চাই।
১৮ ঘণ্টা আগেজীবিকা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম ব্যবসা-বাণিজ্য। ইসলামে ব্যবসা এক মর্যাদাপূর্ণ পেশা। তবে এই পেশার মর্যাদা নির্ভর করে সততা ও নিষ্ঠার ওপর। আজকের দুনিয়ায় যখন লাভ ও প্রতিযোগিতার মোহে সততাকে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে, তখন ইসলামে একজন সৎ ব্যবসায়ীর জন্য রয়েছে এক অনন্য সুসংবাদ। কিয়ামতের সেই ভয়াবহ দিনে, যখন সূর্যের
১৮ ঘণ্টা আগে