Ajker Patrika

অপচয় করলে পরকালে রক্ষা নেই

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 
ডাস্টবিনে পড়ে আছে খাওয়ার উপযুক্ত ফলমূল। ছবি: সংগৃহীত
ডাস্টবিনে পড়ে আছে খাওয়ার উপযুক্ত ফলমূল। ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহ পাক আপনাকে সম্পদ দিয়েছেন—এর মানে এই নয়, আল্লাহ পাক আপনাকে সম্পদের অপচয় করার অধিকার দিয়েছেন। বরং এই যে সম্পদ, যা নিয়ে মানুষের অহংকারের শেষ নেই—এই সম্পদ কাল কিয়ামতের দিন বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ, আল্লাহ পাক সম্পদের হিসাব চাইবেন।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে—কীভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে—কী কাজে তা বিনাশ করেছে; তার ধনসম্পদ সম্পর্কে—কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে এবং তা কোন কোন খাতে খরচ করেছে এবং সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মোতাবেক কী কী আমল করেছে। (জামে তিরমিজি: ২৪১৬)

রুমে কেউ নেই। ফ্যান চলছে। লাইট জ্বলছে অনেক সময় ধরে। ম্যাচের একটি কাঠি বাঁচাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গ্যাসের চুলা জ্বলছে। বাড়িতে পানির পাম্প সেই কখন ছেড়েছেন, একদমই খেয়াল নেই। ট্যাংক ভরে পানি পুরো রাস্তা ভিজিয়ে দিচ্ছে। এই যে প্রাত্যহিক জীবনে অপচয়—হয়তো পৃথিবীর কেউ এর হিসাব আপনার থেকে নেবে না, কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিনকে আপনার হিসাব দিতে হবে।

ঢাকা শহরে এভাবে মোটর ছেড়ে পানির অপচয় করতে প্রচুর দেখা যায়। বাড়িওয়ালা না হয় ভুল করছেন, কিন্তু বাড়ির ভাড়াটিয়ারা কি কিছুই দেখেন না? তারা কেন চুপ করে আছেন? তারা তো বাড়িওয়ালাকে বলতে পারেন।

এটা তো বাসাবাড়িতে অপচয়ের কথা বললাম, এবার একটু বিয়েবাড়ির কথা ভাবুন। কী পরিমাণ খাবারের অপচয় হয় ভেবে দেখেছেন কখনো? এক থালা খেতে পারে, অথচ পাঁচ থালা নিয়ে বসে থাকে। খাদ্যের অপচয়ের চাইতে নিকৃষ্ট কাজ আর কী হতে পারে?

আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তান যে সমস্ত ভান্ডার পূর্ণ করে, এর মধ্যে পেট হলো সবচেয়ে খারাপ। আদম সন্তানের জন্য স্বল্প কিছু লোকমাই যথেষ্ট, যা দিয়ে সে তার পিঠ সোজা রাখতে পারে। এর বেশি করতে চাইলে এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ নিশ্বাসের জন্য যেন নির্দিষ্ট করে।’ (জামে তিরমিজি ২৩৮০, সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৩৪৯, মুসনাদে আহমাদ ৪ / ১৩২)

আল্লাহ পাক কিন্তু পরিষ্কারভাবে সম্পদের ব্যবহার বিষয়ে বলে দিয়েছেন। অথচ আমরা আল্লাহর নির্দেশ মানছি না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো—যারা অপব্যয় করে—তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৭)।

সুরা আরাফের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’

আপনি ভালো খাবার খান, কেউ নিষেধ তো করে নাই। শুধু বলা হয়েছে—অপচয়, অপব্যয় করা যাবে না। যেখানে দুটো জামায় আপনার চলে যায়, সেখানে ১০টি জামা ক্রয় করার কি কোনো মানে হয়? যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা ব্যয় করে, কিন্তু অপব্যয় করে না; আবার কৃপণতাও করে না। বলা হয়েছে—‘আর তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে।’ (সুরা ফুরকান: ৬৭)।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অপচয় ও অপব্যয় সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি অন্যদেরও সচেতন করতে হবে। এটা ইমানি দায়িত্ব। কারণ, এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। ভাই অন্যায় করবে, গুনাহ করে যাবে অবলীলায়, আপনার চোখের সামনে—আপনি কীভাবে চুপ থাকবেন? বলুন তো! এই চুপ থাকা ইসলামের শিক্ষা নয়।

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১৫ শিক্ষার্থীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ ইবির এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে

এক নারীকে স্ত্রী দাবি করে দুই পুরুষের টানাটানি, শেষে ৩ জনই কারাগারে

মার্কা শাপলাই হতে হবে, না হলে নির্বাচন কীভাবে হয় দেখে নেব: সারজিস আলম

ইসির তালিকায় ‘শাপলা’ নেই, বিকল্প প্রতীক নিতে হবে এনসিপিকে

এই আক্রমণ আখতার হোসেনকে এক বিন্দুও দুর্বল করবে না: তাসনিম জারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত