Ajker Patrika

প্রি-অর্ডারে বেচাকেনা কি জায়েজ

ইসলাম ডেস্ক
প্রি-অর্ডারে বেচাকেনা কি জায়েজ

প্রশ্ন: প্রি-অর্ডার হলো, একটি নির্দিষ্ট পণ্য প্রস্তুত হওয়ার আগেই বিক্রেতার কাছে সেটির অর্ডার করা এবং প্রস্তুত হওয়ার পর ক্রেতার কাছে তা হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া। বর্তমানে বিভিন্ন পণ্য, বিশেষ করে বই-পুস্তক এভাবে বিক্রি করাটা খুব স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের বেচাকেনা শরিয়তসম্মত কি না? বিস্তারিত জানতে চাই। 
নজরুল ইসলাম, রংপুর 

উত্তর: প্রি-অর্ডারে বেচাকেনা করার বিষয়টি ফিকহের কিতাবে উল্লিখিত ইসতিসনা চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইসতিসনা হলো, কোনো প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানকে (ম্যানুফ্যাকচারার) ক্রেতার জন্য নির্দিষ্ট জিনিস তৈরি করে দেওয়ার অর্ডার দেওয়া। যদি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নিজেদের পক্ষ থেকে কাঁচামাল দিয়ে ক্রেতার জন্য দ্রব্য তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব নেয়, তাহলে ইসতিসনা চুক্তি অস্তিত্ব লাভ করবে। 

ইসতিসনা শরিয়তসম্মত হওয়ার জন্য অপরিহার্য শর্ত হলো, মূল্য উভয়ের সন্তুষ্টিতে নির্ধারিত করে নিতে হবে এবং কাঙ্ক্ষিত পণ্যের আবশ্যিক গুণাবলি উল্লেখ করে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পণ্যের দাম অগ্রিম, এককালীন বা কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। উৎপাদন ব্যয় নির্বাহের জন্য পণ্যের মূল্য অগ্রিম পরিশোধের দাবিও করা যাবে। আর উৎপাদনকাজ শুরু হলে চুক্তি বাতিল করা যাবে না। পণ্য কোথায়, কীভাবে, কার খরচে সরবরাহ করা হবে, তা চুক্তিতে উল্লেখ থাকতে হবে। কোনো পক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করলে দায়ী পক্ষের ওপর নির্দিষ্ট জরিমানা আরোপ করার শর্তও চুক্তিতে রাখা যাবে।

ইসতিসনা চুক্তির ব্যাপারে ফকিহদের বক্তব্য হলো, এটি জায়েজ। মূলত শুধু হানাফি মাজহাব মতেই ইসতিসনা বৈধ ছিল। পরে ১৯৯২ সালের মে মাসে সৌদি আরবের জেদ্দায় আন্তর্জাতিক ইসলামি ফিকহ সংস্থার ছয় দিনব্যাপী ‘সপ্তম ফিকহ সেমিনার’-এ সব মতের দলিল-প্রমাণ পর্যালোচনা করে চূড়ান্তভাবে সব মাজহাবে এর বৈধতা ঘোষণা দেওয়া হয়। (আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ) কারণ এর সপক্ষে কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের দলিল আছে।

সুরা কাহফের ৯৪ নম্বর আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘তারা বলল, হে জুলকারনাইন, ইয়াজুজ ও মাজুজ এ দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়ায়। আমরা কি আপনার জন্য কিছু মূল্য নির্ধারণ করব, যার বিনিময়ে আপনি আমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন?’ বোঝা গেল, পূর্ববর্তী শরিয়তে ইসতিসনা বৈধ ছিল। আর পূর্ববর্তী শরিয়তের যেসব বিধান ইসলাম নিষিদ্ধ করেনি, সেগুলো সর্বসম্মতিক্রমে বৈধ।

ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) স্বর্ণের একটা আংটি অগ্রিম অর্ডার দিয়ে বানিয়ে আনেন।...’ (বুখারি) অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) এক আনসারি নারীর কাছে লোক পাঠিয়ে বললেন, ‘তোমার কাঠমিস্ত্রি ক্রীতদাসকে বলো, সে যেন আমার জন্য একটি কাঠের মিম্বার বানিয়ে দেয়।...’ (বুখারি ও মুসলিম)

এ বিষয়ে ইজমা হওয়া সম্পর্কে ইমাম কাসানি বলেন, ইসতিহসানের ভিত্তিতে ইসতিসনা চুক্তি জায়েজ। কারণ যুগ যুগ ধরে মানুষ তা করে আসছে। (বাদায়িয়ুস সানায়ে)

কিয়াস তথা শরয়ি যুক্তির আলোকেও তা বৈধ। মানুষের এমন অনেক বস্তুর প্রয়োজন পড়ে, যা সাধারণত আগে থেকে তৈরি থাকে না। ফলে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে এগুলো তৈরি করিয়ে নিতে হয়। যদি ইসতিসনা বৈধ না হয়, তাহলে মানুষের অনেক কষ্ট হবে, যা ইসলাম কোনোভাবে চায় না। (বাদায়িয়ুস সানায়ে)

উল্লিখিত ফিকহ সেমিনারে ইসতিসনা বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত নির্ধারণ করা হয়। এক. অর্ডার করা পণ্যের ধরন, পরিমাণ ও উদ্দিষ্ট গুণাবলি স্পষ্ট করা। দুই. পণ্য ডেলিভারির তারিখ নির্ধারণ করা। (আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ)

প্রশ্নে উল্লিখিত বর্তমান ই-কমার্সের প্রি-অর্ডার পদ্ধতি যেহেতু ইসতিসনার সঙ্গে অনেকটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তাই উল্লিখিত শর্তসাপেক্ষে তা বৈধ হবে ইনশা আল্লাহ। 

উত্তর দিয়েছেন, মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ, শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার নিষিদ্ধ করল বিমান বাংলাদেশ

বংশরক্ষায় মৃত ছেলের শুক্রাণু চান মা, সংরক্ষণের নির্দেশ মুম্বাই হাইকোর্টের

আমাকে ধর্ষণের সময় পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল দুই যুবক: ধর্ষণের শিকার তরুণী

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত