Ajker Patrika

দ্বীনি শিক্ষা সন্তানকে শ্রেষ্ঠ মানুষ বানায়

ইসলাম ডেস্ক 
দাদা ও নাতি। ছবি: সংগৃহীত
দাদা ও নাতি। ছবি: সংগৃহীত

ইসলামি শরিয়তে সন্তানের সঠিক পরিচর্যা, নৈতিক উন্নয়ন, পারলৌকিক ও পার্থিব কল্যাণ, উত্তম গুণাবলি, আত্মশুদ্ধি ও আদর্শ নৈতিকতা গড়ে তোলার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর; যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য।’ (সুরা তাহরিম: ৬)

হজরত আলী (রা.) এই আয়াতের তাফসিরে বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের উত্তম শিষ্টাচার শেখাও।’ উম্মাহর ফকিহগণ এ ব্যাপারে একমত যে, ‘প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ফরজ হলো—সে যেন তার স্ত্রী-সন্তানকে দ্বীনি ফরজ শিক্ষা, হালাল-হারামের বিধান ও ইমানি দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে শিক্ষা দেয় এবং আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।’

হাদিসে সন্তান গঠনের গুরুত্ব

সন্তান গঠনের গুরুত্ব কতটুকু—তা আমরা রাসুল (সা.)-এর হাদিস থেকেও জানতে পারি। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, সাহাবায়ে কেরাম একবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমরা তো পিতামাতার হক জানলাম; এখন বলুন, সন্তানের কী কী হক রয়েছে আমাদের ওপর?’ তিনি বললেন, ‘তাদের সুন্দর নাম রাখো এবং তাদের উত্তম শিক্ষা ও আদব শেখাও।’ (সুনানে বায়হাকি)। আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো বাবা তার সন্তানকে আদবের চেয়ে উত্তম কিছু দান করতে পারে না।’ (সহিহ্ বুখারি)। অর্থাৎ, সন্তানকে সুশিক্ষা ও শিষ্টাচার শেখানোই পিতার পক্ষ থেকে সন্তানের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার।

ভবিষ্যতের শক্ত ভিত

শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ স্থপতি। যদি তাদের সঠিকভাবে গড়ে তোলা যায়, তাহলে সমাজের ভিত্তি হয় দৃঢ় ও মজবুত। কারণ, একটি ভালো গাছই ভবিষ্যতে দেয় ছায়া এবং ফুল ও ফলে ভরে ওঠে। তেমনিভাবে আজকের একটি শিশুই ভবিষ্যতে হয়ে উঠতে পারে মহান সমাজসংস্কারক।

শৈশবকে কাজে লাগাতে হবে

শৈশবের শিক্ষা ও চরিত্র গঠন পাথরে খোদাইয়ের মতো—স্থায়ী ও সুগভীর হয়। এ সময় যদি সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা না হয়, তাহলে বড় হয়ে তারা সাধারণত সঠিক পথে আসে না। তাই তাদের খারাপ কাজ ও চরিত্রের জন্য প্রথম দায়ী হবেন তার পিতামাতা, যাঁরা তাকে ছোটবেলায় গড়ে তোলেননি।

বিচার দিবসের জিজ্ঞাসা

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) বলেন, ‘তোমাদের সন্তানদের শিষ্টাচার শেখাও। কিয়ামতের দিন তোমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করা হবে—তোমরা তাদের কী শিক্ষা দিয়েছিলে এবং কেমন আদব শিখিয়েছিলে?’ (শুআবুল ইমান)

সন্তানের প্রথম শিক্ষক তার মা

সন্তানকে গঠন করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন তার মা। সন্তানের জীবনে সবচেয়ে প্রভাবশালী জায়গা হচ্ছে মায়ের কোল। একজন মা যদি দ্বীনদার, পরহেজগার, বিশ্বস্ত, দায়িত্ববান, মেহমানপরায়ণ, দরিদ্র-অসহায়ের সহায় এবং আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত হন, তাহলে সেই মায়ের ছায়ায় বেড়ে ওঠা সন্তান খুব দ্রুত হয়ে ওঠে সচ্চরিত্রবান, ন্যায়পরায়ণ, জ্ঞানপিপাসু ও সমাজের আলোকবর্তিকা। ইতিহাসে দেখা যায়, মহান ব্যক্তিদের গঠনের পেছনে তাঁদের মায়েদের ভূমিকা ছিল বিস্ময়কর।

তরবিয়তের মর্ম ও তার প্রকারভেদ

‘তরবিয়ত’ শব্দটি অনেক বিস্তৃত। এটি শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং পরিবার, সমাজ ও জাতির প্রশিক্ষণ এবং গঠনের বিষয়কেও অন্তর্ভুক্ত করে। এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো—একটি পরিশুদ্ধ, সুসংহত ও চরিত্রবান, ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।

তরবিয়তের সংজ্ঞা এভাবেও হতে পারে যে ‘খারাপ আচরণ ও অসুস্থ সমাজকে উত্তম চরিত্র ও সুন্দর সমাজে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া’।

তরবিয়তের দুটি ধারা

  • ১. বাহ্যিক তরবিয়ত: সন্তানের পোশাকপরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, বন্ধুবান্ধব, চলাফেরা, পড়াশোনার অবস্থা ও জীবনধারাসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় নজরদারি।
  • ২. অভ্যন্তরীণ তরবিয়ত: ইমান, আকিদা, নামাজ-রোজা, সত্যবাদিতা, ভদ্রতা, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, আত্মশুদ্ধি ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি গড়ে তোলার বিষয়। এই দুই দিকের তরবিয়তের দায়িত্ব একান্তভাবেই পিতামাতার ওপর ন্যস্ত। এ দায়িত্ব পালন করা তাঁদের জন্য অপরিহার্য।

সংশোধন করুন সহানুভূতির সঙ্গে

পিতামাতার অন্তরে সন্তানদের জন্য থাকে অপরিসীম মমতা। সেই মমতাই তাঁদের দায়িত্ব পালনে উৎসাহ দেয়। সন্তান কোনো ভুল করলে সঙ্গে সঙ্গেই শাসন নয়, বরং বিষয়টি বুঝে ও কারণ অনুসন্ধান করে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে।

কখন উপদেশ কাজে দেবে আর কখন কঠোরতা প্রয়োজন—এটুকু বুঝে ব্যবস্থা নেওয়াই বুদ্ধিমানের পরিচায়ক হবে।

রাসুল (সা.)-এর স্নেহমাখা শিক্ষা

হজরত উমর ইবনে আবু সালাম (রা.) বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় রাসুল (সা.)-এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। খাওয়ার সময় আমার হাত এদিক-সেদিক যেত। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘‘হে বৎস, বিসমিল্লাহ বলে খাও, ডান হাতে খাও এবং তোমার সামনে থেকে খাও।’’ (সহিহ্ বুখারি)। এভাবে স্নেহ ও মমতা মিশিয়ে সন্তানকে শিক্ষা-দীক্ষা দেওয়াই একজন আদর্শ অভিভাবকের পরিচয়।

দ্বীনি ইলম—আলোর উৎস ও আত্মার খোরাক

তরবিয়তের সঙ্গে অপরিহার্যভাবে যুক্ত একটি দিক হলো—দ্বীনি ইলম। এটি কেবল শুধু পাঠ্য শিক্ষা নয়, বরং একে বলা যায় জীবনদর্শনের আলো। জ্ঞান ছাড়া আল্লাহ ও রাসুলের সঠিক পরিচয় জানা সম্ভব নয়। জান্নাত-জাহান্নাম, হালাল-হারাম, আখিরাত, ফেরেশতা ও পুনরুত্থান—এসব কিছুর সঠিক বুঝ ও বোধ আসে একমাত্র দ্বীনি শিক্ষার মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলাও ওহির প্রথম আয়াতে বলেছিলেন, ‘পড়ো, তোমার প্রভুর নামে...’ (সুরা আলাক)

ইলমে দ্বীনের মর্যাদা ও গুরুত্ব

হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ইলম সম্মানিত ব্যক্তিকে আরও সম্মানিত করে এবং গরিবকে রাজসিংহাসনে বসায়।’ বৃষ্টি যেভাবে মৃত জমিকে জীবিত করে তুলে, তেমনিভাবে জ্ঞান মানুষের হৃদয়কে জাগিয়ে তোলে। সূর্যের আলোতে যেভাবে পৃথিবীর অন্ধকার দূর হয়ে যায়, ঠিক তেমনিভাবে জ্ঞানের আলোতে মূর্খতার অন্ধকার দূর হয়ে যায়। এমনকি জ্ঞানই একমাত্র উপাদান, যা মানুষকে ফেরেশতার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছে। আর এটি এমন এক অলংকার, যা মানুষকে সব সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ বানিয়েছে।

লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, শিক্ষক, জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যেসব দোয়ায় রয়েছে পরকালীন মুক্তি ও অসামান্য সওয়াব

ইসলাম ডেস্ক 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পরকালীন সফলতার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা জরুরি। তবে ইবাদতের ক্ষেত্রে ইসলাম আমাদের বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই দ্বীন সহজ-সরল। দ্বীন নিয়ে যে কড়াকড়ি করে, দ্বীন তার ওপর বিজয়ী হয় (অর্থাৎ সে ক্লান্ত হয়ে আমল ছেড়ে দেয়)। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন করো এবং তার নিকটবর্তী থাকো। আশান্বিত থাকো এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের শেষাংশে (ইবাদতের মাধ্যমে) আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (সহিহ বুখারি: ৩৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) সকাল-সন্ধ্যায় মহান রবের কাছে কল্যাণ কামনার বিশেষ কিছু দোয়া শিখিয়েছেন। এমন একটি জিকির আছে, যা নিয়মিত করলে কিয়ামতের দিন সওয়াবের দিক থেকে কেউ তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে জেগে উঠে ১০০ বার বলবে—‘সুবহানাল্লাহিল আজিম, ওয়া বিহামদিহি’ এবং সন্ধ্যায়ও অনুরূপ বলে, তাহলে সৃষ্টিজগতের কেউই (কিয়ামতের দিন) তার মতো মর্যাদা ও সওয়াব অর্জনে সক্ষম হবে না।’ (সুনান আবু দাউদ: ৫০৯১)

দৈন্য, অলসতা ও কবরের আজাব থেকে সুরক্ষা পেতে রাসুল (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করতেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী দোয়াটি হলো—‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়াল কাসালি, ওয়া-আরদালিল উমুরি, ওয়া-আজাবিল কাবরি, ওয়া-ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কৃপণতা, অলসতা, বয়সের নিকৃষ্টতম সময় (বার্ধক্যের দৈন্য), কবরের আজাব এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৬২৯)

প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার মাঝে সকাল ও সন্ধ্যায় এই ছোট ছোট আমল আমাদের আত্মিক প্রশান্তি দেওয়ার পাশাপাশি পরকালে বিশাল সাফল্যের পথ সুগম করতে পারে। আল্লাহ আমাদের নবীজি (সা.)-এর শেখানো এই দোয়া ও জিকিরগুলোর ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১০ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ০৪ রজব ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৬ মিনিট
ফজর০৫: ১৭ মিনিট০৬: ৩৭ মিনিট
জোহর১১: ৫৯ মিনিট০৩: ৪২ মিনিট
আসর০৩: ৪৩ মিনিট০৫: ১৮ মিনিট
মাগরিব০৫: ২০ মিনিট০৬: ৩৮ মিনিট
এশা০৬: ৩৯ মিনিট০৫: ১৬ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যে তিন শ্রেণির নামাজির জন্য রয়েছে দুর্ভোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৯
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নামাজ বা সালাত অন্যতম প্রধান ফরজ ইবাদত। পবিত্র কোরআনের ৮২টি স্থানে নামাজের কথা উল্লেখ করে এর অপরিসীম গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যখন তোমরা সালাত (নামাজ) পূর্ণ করবে, তখন দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে। অতঃপর যখন নিশ্চিন্ত হবে, তখন সালাত (পূর্বের নিয়মে) কায়েম করবে। নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ।’ (সুরা নিসা: ১০৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসেও বারবার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ওয়াক্তমতো নামাজ আদায়ের ওপর। এমনকি আল্লাহর কাছেও এটি অত্যন্ত প্রিয় একটি আমল। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, ‘যথাসময়ে সালাত আদায় করা।’ আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার।’ আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘এরপর কোনটি?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর পথে লড়াই করা’। (সহিহ্ বুখারি: ৫০২)

নামাজ পড়া সত্ত্বেও তিন শ্রেণির নামাজির জন্য পরকালে রয়েছে ভয়াবহ শাস্তির হুঁশিয়ারি। এই তিন শ্রেণি হলো: ১. যারা লোক দেখানোর জন্য নামাজ আদায় করে। ২. যারা নামাজে চরম অমনোযোগী। ৩. যারা নামাজে চুরি করে, অর্থাৎ রুকু-সিজদা ঠিকমতো আদায় করে না।

পবিত্র কোরআনে প্রথম দুই শ্রেণির কথা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন, ‘অতএব সেই নামাজ আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজেদের নামাজে অমনোযোগী এবং যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে।’ (সুরা মাউন: ৪-৬)

অন্যদিকে, তৃতীয় শ্রেণির নামাজি তথা নামাজ চোরদের সম্পর্কে আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘চোরদের মধ্যে সবচেয়ে বড় চোর হলো ওই ব্যক্তি, যে নামাজে চুরি করে।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, নামাজে চুরি কীভাবে হয়?’ জবাবে নবীজি (সা.) বললেন, ‘নামাজে চুরি হলো রুকু-সিজদা পূর্ণ না করা (ঠিকমতো আদায় না করা)।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ্: ৮৮৫)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ০৯ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ০৩ রজব ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৬ মিনিট
ফজর০৫: ১৭ মিনিট০৬: ৩৭ মিনিট
জোহর১১: ৫৯ মিনিট০৩: ৪১ মিনিট
আসর০৩: ৪২ মিনিট০৫: ১৭ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৯ মিনিট০৬: ৩৮ মিনিট
এশা০৬: ৩৯ মিনিট০৫: ১৬ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত