Ajker Patrika

তালগাছ, তুলাগাছ, বাঁশঝাড়ে কি জিন-ভূত থাকে?

ইসলাম ডেস্ক 
তালগাছ। ছবি: সংগৃহীত
তালগাছ। ছবি: সংগৃহীত

আমাদের দেশের কিছু মানুষের ধারণা, বাড়ির আশপাশে তালগাছ, তুলাগাছ ও বাঁশগাছ লাগালে সেগুলোর মাধ্যমে বাড়িতে খারাপ জিনের প্রভাব পড়তে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, কোরআন ও হাদিসের আলোকে এই ধারণার কি কোনো ভিত্তি আছে?

আশিকুর রহমান, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা

কোরআন মাজিদ, হাদিস শরিফ ও ইসলামি আইনশাস্ত্র অধ্যয়নে প্রতীয়মান হয় যে তালগাছ, তুলাগাছ, বাঁশগাছের সঙ্গে জিন বসবাসের কোনো সম্পর্ক নেই; এটি একটি কুসংস্কার। কোরআন ও হাদিসে জিনদের বসবাসের নির্দিষ্ট কোনো গাছ বা স্থান উল্লেখ করা হয়নি। জিনেরা সাধারণত মানুষের বসতি থেকে দূরে থাকে। তাই এসব কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকাই বাঞ্ছনীয়।

কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই

নির্দিষ্ট কোনো গাছ বা যেকোনো বস্তুকে অলক্ষুনে বা অশুভ মনে করা একটি অবান্তর ও ভিত্তিহীন চিন্তা। ইসলাম এ জাতীয় ভিত্তিহীন চিন্তা বা বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে। ভালো-মন্দ সবকিছু আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়। কোনো গাছ বা বস্তুর মধ্যে সত্তাগতভাবে ভালো-মন্দের প্রভাব সৃষ্টির কোনো ক্ষমতা নেই। নবীজি (সা.) এ জাতীয় অমূলক ভিত্তিহীন আকিদা বা বিশ্বাস থেকে বেঁচে থাকার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘রোগে সংক্রমণ নেই; শুভ-অশুভ আলামত বলে কিছু নেই। পেঁচায় অশুভ আলামত নেই এবং সফর মাসে অকল্যাণ নেই।’ (সহিহ বুখারি: ৫৭৫৭)

কোনো জিনিসকে কুলক্ষুনে বা অশুভ মনে করা শিরক। হাদিস শরিফে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে। তাই কোনো গাছ বা বস্তুকে কুলক্ষুনে বা অশুভ মনে করার কোনো সুযোগ নেই। এ জাতীয় ভ্রান্ত ও অমূলক চিন্তাভাবনা সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য বিষয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো বস্তুকে কুলক্ষণ মনে করা শিরক, কোনো বস্তুকে কুলক্ষণ ভাবা শিরক। আমাদের কারও মনে কিছু জাগা স্বাভাবিক; তবে আল্লাহর ওপর ভরসা করলে তিনি তা দূর করে দেবেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৩৯১০)

বৃক্ষরোপণ সওয়াবের কাজ

তালগাছ, তুলাগাছ তথা যেকোনো গাছই প্রকৃতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত। মহানবী (সা.) নিজেও একাধিক হাদিসে বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। বৃক্ষরোপণের ফজিলত বর্ণনা করেছেন। যেমন হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যেকোনো মুসলমান ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোনো ফসল ফলায়, আর তা থেকে পাখি, মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু আহার গ্রহণ করে, তবে তা তার পক্ষ থেকে সদকা বলে গণ্য হবে।’ (সহিহ বুখারি: ২৩২০)

এ ছাড়া হাদিসের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ মুসনাদে আহমাদের ২৩৫২০ নম্বর হাদিসেও বৃক্ষরোপণের ফজিলত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা রয়েছে। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃক্ষরোপণের প্রতি উৎসাহিত করে বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন গাছ লাগায়, ওই গাছে যত ফল হবে, তার আমলনামায় সেই ফল পরিমাণ সওয়াব লিপিবদ্ধ হবে।’

প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে বৃক্ষরোপণের তাৎপর্য অত্যধিক। কেননা দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি প্রাণীর বেঁচে থাকতে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে বৃক্ষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ জন্য নবী (সা.) বিনা কারণে বৃক্ষনিধনে নিষেধ করেছেন। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি (অপ্রয়োজনে) কোনো বরইগাছ কাটবে, আল্লাহ তাকে মাথা উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫২৩৯)

উত্তর দিয়েছেন: মুফতি আব্দুল্লাহ আল মামুন আশরাফী, মুফতি ও মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখযানুল উলুম, টঙ্গী, গাজীপুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ