Ajker Patrika

কোরআনের আলোকে নতুন পৃথিবীর অধিবাসী যারা

মাহমুদ হাসান ফাহিম 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

একদিন এ পৃথিবী পরিবর্তন হয়ে সূচনা হবে নতুন পৃথিবীর। মহাবিশ্বের ধ্বংসের পর পৃথিবী নতুন রূপ লাভ করবে। শুরু হবে নতুন কালের হিসাব।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যে দিন এ পৃথিবীকে অন্য এক পৃথিবীতে বদলে দেওয়া হবে এবং আকাশমণ্ডলীকেও। সেদিন সকলেই এক পরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪৮)

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘সেই দিনকে স্মরণ করো, যখন আকাশমণ্ডলীকে গুটিয়ে নেব, লিখিত দস্তাবেজের মতো। পুনরায় আমি তা সৃষ্টি করব, যেভাবে সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম। এটা আমার প্রতিশ্রুতি, আমি তা অবশ্যই পূরণ করব।’ (সুরা আম্বিয়া: ১০৪)

আয়াত দুটি থেকে জানা গেল, কিয়ামতের ধ্বংসের পর এ পৃথিবীকে আবার নতুন করে সৃষ্টি করা হবে। অতঃপর সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে হাশর, আদালত ও বিচার।

পবিত্র কোরআনে নতুন যে পৃথিবীর সুসংবাদ এসেছে, তার উত্তরাধিকারী এবং অধিবাসী কারা হবে? কালের সেই অধ্যায়ে পৃথিবীর অধিবাসী হবে তারা, যারা এই পৃথিবীতে ইমান আনে এবং আমলে সালেহ করে। অর্থাৎ আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে মেনে নেয় এবং তাঁর প্রদত্ত জীবন পদ্ধতির অনুসরণ করে।  

কোরআনের ভাষায়, ‘আমি জাবুর কিতাবে উপদেশ বাণীর পর লিখে দিয়েছিলাম—পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে আমার নেক বান্দাগণ।’ (সুরা আম্বিয়া: ১০৫)

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তারা (জান্নাতে প্রবেশ করে) বলবে, সমস্ত শোকর আল্লাহর, যিনি আমাদের সঙ্গে কৃত ওয়াদা সত্যে পরিণত করেছেন এবং আমাদের এই পৃথিবীর এমন অধিকারী বানিয়েছেন যে আমরা যেখানে ইচ্ছা বসবাস করতে পারি। সুতরাং, সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কত-না উত্তম!’ (সুরা জুমার: ৭৪)

তাফসিরবিদদের মতে, এখানে (পৃথিবী) বলে জান্নাত বোঝানো হয়েছে। ইবনে জারির ইবনে আব্বাস থেকে এমনই বর্ণনা করেছেন। মুজাহিদ, ইবনে জুবায়ের, ইকরিমা, সুদ্দি, আবুল আলিয়া থেকেও এই তাফসির বর্ণিত আছে।  

নতুন পৃথিবীর অধিবাসী হবেন তাঁরা, যাঁরা আল্লাহর নির্দেশিত সঠিক পথে চলবেন। পবিত্র কোরআনে তাঁদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে।  

পবিত্র কোরআন এসেছে, ‘তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, সেটাকে যে ব্যক্তি সত্য বলে জানে, সে তার মতো নয়, যে এ মহা সত্য সম্পর্কে অন্ধ। উপদেশ বিবেকবান লোকেরাই গ্রহণ করে। যারা আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং চুক্তির বিপরীত কাজ করে না। আল্লাহ যেসব সম্পর্ক অটুট রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন, সেগুলো যারা অক্ষুণ্ন রাখে, যারা তাদের প্রভুকে ভয় করে এবং ভীত থাকে আখিরাতের ভয়াবহ হিসাবের ব্যাপারে। আর তারা তাদের প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে ধৈর্য ধারণ করে এবং একাগ্রতার সঙ্গে সালাত আদায় করে, আমার দেওয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে এবং ভালো দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করে, তাদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম তথা চিরস্থায়ী জান্নাত। সেখানে তারা প্রবেশ করবে।’ (সুরা রাদ: ১৯-২৩)

আয়াতসমূহে পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, ওই পৃথিবীর উত্তরাধিকারীদের বৈশিষ্ট্য হবে নিম্নরূপ:

  • ১. তাঁরা আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাবকে সত্য বলে বিশ্বাস করেন এবং একে জীবনব্যবস্থারূপে গ্রহণ করেন।
  • ২. তাঁরা অজ্ঞতা ও অন্ধতার পথ পরিহার করে চলেন।
  • ৩. তাঁরা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার রক্ষা করেন।
  • ৪. তাঁরা প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন না।
  • ৫. তাঁরা আল্লাহর নির্দেশিত সম্পর্কসমূহ অটুট রাখেন।
  • ৬. তাঁরা তাঁদের মহান প্রভুকে ভয় করেন।
  • ৭. তাঁরা আখিরাতের ভয়াবহ হিসাবের ব্যাপারে ভীত থাকেন।
  • ৮. তাঁরা প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্য ও অবিচলতা অবলম্বন করেন।
  • ৯. তাঁরা সালাত কায়েম করেন।
  • ১০. তাঁরা আল্লাহর প্রদত্ত জীবিকা থেকে দান করে গোপনে এবং প্রকাশ্যে।
  • ১১. তাঁরা মন্দকে ভালো দিয়ে প্রতিবিধান করেন।
  • ১২. তাঁরা নিজেদের মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আমলে সালেহ করেন।

সার কথা হলো, জান্নাতই হবে সেই পৃথিবী। আর এর ওয়ারিশ (উত্তরাধিকারী) হবেন ইমান এবং আমলে সালেহকারী বান্দাগণ।

বাম দলের মানুষ এই পৃথিবীতে বসবাসের সুযোগ পাবেন না। তাঁরা বঞ্চিত হবে তা থেকে এবং নিক্ষিপ্ত হবে চিরস্থায়ী জাহান্নামে।  

লেখক: প্রাবন্ধিক ও মাদ্রাসাশিক্ষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ গ্রেপ্তার

জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে শেষ মুহূর্তে এসে অনিশ্চয়তা, সন্ধ্যায় ‘অতি জরুরি’ বৈঠক

ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ক্রিপ্টো কেলেঙ্কারি, ১৪ বিলিয়ন ডলারের কয়েন জব্দ

বিহার নির্বাচন: লড়বেন না প্রশান্ত কিশোর, ‘নিশ্চিত পরাজয়’ দেখছেন বিজেপি জোটের

প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট চালু করছে চ্যাটজিপিটি, শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়

এলাকার খবর
Loading...