নাঈমুল হাসান তানযীম

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, সর্বশেষ নবী ও রাসুল। তাঁর পবিত্র জীবনে নবী-রাসুলদের যাবতীয় মহৎ গুণাবলির সমাবেশ ঘটেছিল। তিনি ছিলেন সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, কল্যাণকামিতা ও ন্যায়পরায়ণতার প্রোজ্জ্বল উদাহরণ। ছিলেন ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি যেন। সাহাবায়ে কেরাম উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-কে রাসুলের চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘পুরো কোরআনই ছিল তাঁর চরিত্র।’ অর্থাৎ তিনি ছিলেন কোরআনে কারিমের বাস্তব নমুনা। (আদাবুল মুফরাদ: ৩০৮)
তিনি এমন এক সময়ে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন যে সময়টা ছিল মানবেতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণ্যতম, বর্বরোচিত, কুসংস্কার আর অন্ধকারাচ্ছন্ন। ছিল গোত্রে গোত্রে কৌলীন্য, হানাহানি। তুচ্ছ বিষয়ে রক্তপাত ঘটার মতো ঘটনা ঘটত অহরহ। যুদ্ধ বিগ্রহ লেগেই থাকত সব সময়। তাঁর পবিত্র পরশে সে সমাজ ও সমাজের মানুষেরা আমূল পাল্টে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কল্যাণ ও ন্যায় ইনসাফভিত্তিক আদর্শিক সমাজ। তাঁর আদর্শের কথা তো স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলে দিলেন এভাবে, ‘নিশ্চয়ই আপনি সচ্চরিত্রের মহান আদর্শের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম: ৪)
রাসুল (সা.)-কে শান্তি ও কল্যাণের জন্য বিশ্ববাসীর রহমত আখ্যায়িত করে কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)
আদর্শ সমাজ গঠন ও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শ সর্বকালের সবার জন্য অনুকরণীয়। তিনি যে পদ্ধতি অবলম্বন করে একটি ভঙ্গুর সমাজব্যবস্থার সংস্কার করেছিলেন, সবদিক দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন উন্নতি অগ্রগতির শীর্ষ চূড়ায়—আজকের এই অস্থিতিশীল সমাজও চাইলে সেই পথ-পদ্ধতি অনুকরণের মাধ্যমে পৌঁছাতে পারে তেমন উচ্চতায়। রাসুল (সা.) আদর্শ সমাজ গঠনে যেভাবে ভূমিকা রেখেছিলেন, যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছিলেন তার কিঞ্চিৎ আলোচনা তুলে ধরা হলো:
হিলফুল ফুজুলে যোগদান
রাসুল (সা.) নবুওয়াত লাভের আগ থেকেই ছিলেন সকলের বিশ্বস্ত, আস্থাভাজন। মানুষেরা তাঁকে ভালোবেসে দিয়েছিল ‘আল-আমিন’ উপাধি। সমাজে তখন জুলুম, অনাচার, পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ, হিংসা কোন্দল লেগেই থাকত। সমাজের এহেন দুরবস্থা তাঁর কিশোর মনকে আহত করে। সে সময় তিনি যোগদান করলেন ‘হিলফুল ফুজুল’ নামের শান্তিসংঘে। পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হন অন্য সবার সঙ্গে। নবুওয়াত-পরবর্তী জীবনে এই চুক্তির কথা স্মরণ করে তিনি বলতেন, ‘এই চুক্তির বিনিময়ে কেউ যদি আমাকে লাল রঙের উট দিতে সম্মত হতো, তবু আমি চুক্তি পরিহার করতাম না।’ (মুসনাদ আহমাদ: ১৬৫৫)
নবুওয়াত-পরবর্তী সময়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন পদ্ধতি ও কর্মপন্থা অবলম্বন করেছিলেন। তার মধ্য থেকে কয়েকটি এই:
একাত্মবাদের দিকে আহ্বান
মানুষের একমাত্র সফলতা আল্লাহ ও রাসুলকে মনেপ্রাণে মানা এবং বিশ্বাস করার মধ্যেই নিহিত। তাই তিনি মানুষকে আহ্বান করলেন, ‘হে লোকসকল, তোমরা বলো, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই তাহলে সফলকাম হবে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৬ / ২৪)। রাসুলের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে যারা ইমান এনেছিল তাঁরা সফলকাম হয়েছিল। যারা আনেনি তারা হয়েছে বিফল।
নারীর যথাযথ মর্যাদা দান
জাহেলিয়াতের সে যুগে নারীরা ছিল অবহেলিত, নিগৃহীত, কেবলই ভোগ্যপণ্য। তাদের ছিল না বিন্দুমাত্র মর্যাদা, সম্মান। রাসুল (সা.) ফিরিয়ে দিলেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা। ঘোষণা করলেন, ‘যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা সম্পাদন করেছে, সেই কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নামে যাওয়া থেকে প্রতিবন্ধক হবে।’ (জামে তিরমিজি: ১৯১৩)
দাসদাসীর সঙ্গে সদাচরণ
তৎকালীন সমাজে গোলাম বাদীর প্রচলন ছিল। মনিবেরা তাদের সঙ্গে যাচ্ছেতাই আচরণ করত। কেমন যেন মানুষই ভাবত না। রাসুল (সা.) তাদের এই অমানবিক আচরণ থেকে বারণ করলেন। তাদের মৌলিক অধিকার প্রদানে নির্দেশ দিলেন—‘তারা তোমাদের ভাই, আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার অধীনে তার ভাই রয়েছে তার উচিত সে নিজে যা খায় তাকেও তা-ই খেতে দেওয়া, নিজে যা পরিধান করে তাকেও তা-ই পরতে দেওয়া এবং তার অসাধ্য কোনো কাজ তার ওপর না চাপানো। আর যদি এমন কোনো কষ্টসাধ্য কাজের ভার তাকে দেওয়া হয় তাহলে সে যেন তাকে সাহায্য করে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫১৫৮)
মদ জুয়া নিষিদ্ধকরণ
তখনকার সময়ে মদপান ছিল সকলের প্রিয় পানীয়। পারতপক্ষে অতি সামান্য উপকার ছাড়া মদপানে ক্ষতিই বেশি। কারণ, মানুষ যখন নেশাগ্রস্ত হয় তখন অজান্তে অনেক কিছু ঘটিয়ে ফেলে। আল্লাহ তাআলা রাসুলের ওপর বিধান নাজিল করলেন, ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন, উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ ও মানুষের জন্য উপকার। কিন্তু তাদের পাপ উপকার অপেক্ষা বেশি।’ (সুরা বাকারা: ২১৯)
তেমনিভাবে জুয়া থেকেও নিষেধ করেন। কারণ, তা অনিশ্চয়তা, লোভ এবং অনৈক্য সৃষ্টির মাধ্যম।
জাকাতের বিধান প্রবর্তন
দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনৈতিক দৈন্যদশা দূর করে সমাজের সাধারণ অসহায় দুস্থ মানুষদের দিকে তাকিয়ে রাসুলের ওপর আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করলেন জাকাতের বিধান। কোরআনের ভাষ্য, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত দাও’ (সুরা বাকারা: ৪৩)
পরস্পরের ভেতর শান্তি চুক্তি
ইসলামের অমিয় বাণী বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে থাকল। মানুষ ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে দলে দলে আশ্রয় নিচ্ছিল শাশ্বত এ দ্বীনের ছায়াতলে। সেই সঙ্গে বাড়ছিল ইসলামের শত্রু কাফের মুশরিকদের সংখ্যা। তারা ইসলামের নাম-নিশানাকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে নানা ষড়যন্ত্র আঁটছিল। রাসুল (সা.) অত্যন্ত সুকৌশলে তাদের দমন করেছেন। প্রথমে শান্তির প্রস্তাব পেশ করেছেন, তা মেনে নিলে তাদের সঙ্গে আর কোনো যুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা হতো না। আর যারা অমান্য করত, পেশিশক্তির দাপট দেখিয়ে যুদ্ধকেই বেছে নিত তাদের সঙ্গে একমাত্র ফয়সালা হতো তলোয়ারই। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সন্ধিচুক্তির মাধ্যমে সমাধান হয়ে যেত।
মদিনা সনদ
মদিনায় হিজরতের পর রাসুল (সা.) জাতীয় নিরাপত্তা এবং পারস্পরিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে প্রবর্তন করলেন ‘মদিনা সনদ’। সেসময় যেহেতু একই সমাজে মুসলিম এবং কাফের মুশরিকেরা বসবাস করত তাই উভয় পক্ষের মধ্যেই শান্তি এবং সন্ধিচুক্তি থাকত। কেউ কারও ক্ষতি করার চেষ্টা করত না। যারা এরূপ করত তাদের পরিণাম হতো খারাপ। আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে উল্লেখ করেছেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা: ৮)
সবিশেষ ইসলামের সত্য বাণী দ্রুতই পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। সত্যান্বেষী মানুষেরা দলে দলে আশ্রয় নিতে থাকে ইসলামের পতাকাতলে। অন্ধকার বিদূরিত হয়ে জ্বলে ওঠে সত্যের আলো। সমাজ থেকে দূর হয়ে যায় যাবতীয় পাপ, অন্যায় আর অসাধুতা। রাসুলের সংস্পর্শ লাভে একসময়ের পাষণ্ড, নির্দয় মানুষগুলোও পরিণত হয় সোনার মানুষে।
ইসলামের এই অগ্রযাত্রা কেবল সম্ভব হয়েছে রাসুল (সা.)-এর সদাচরণ, মানবিকতা আর ইনসাফি মনোভাবের ফলেই। এমনকি অমুসলিম দার্শনিকেরাও তা অকপটে স্বীকার করেছেন।

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, সর্বশেষ নবী ও রাসুল। তাঁর পবিত্র জীবনে নবী-রাসুলদের যাবতীয় মহৎ গুণাবলির সমাবেশ ঘটেছিল। তিনি ছিলেন সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, কল্যাণকামিতা ও ন্যায়পরায়ণতার প্রোজ্জ্বল উদাহরণ। ছিলেন ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি যেন। সাহাবায়ে কেরাম উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-কে রাসুলের চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘পুরো কোরআনই ছিল তাঁর চরিত্র।’ অর্থাৎ তিনি ছিলেন কোরআনে কারিমের বাস্তব নমুনা। (আদাবুল মুফরাদ: ৩০৮)
তিনি এমন এক সময়ে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন যে সময়টা ছিল মানবেতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণ্যতম, বর্বরোচিত, কুসংস্কার আর অন্ধকারাচ্ছন্ন। ছিল গোত্রে গোত্রে কৌলীন্য, হানাহানি। তুচ্ছ বিষয়ে রক্তপাত ঘটার মতো ঘটনা ঘটত অহরহ। যুদ্ধ বিগ্রহ লেগেই থাকত সব সময়। তাঁর পবিত্র পরশে সে সমাজ ও সমাজের মানুষেরা আমূল পাল্টে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কল্যাণ ও ন্যায় ইনসাফভিত্তিক আদর্শিক সমাজ। তাঁর আদর্শের কথা তো স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলে দিলেন এভাবে, ‘নিশ্চয়ই আপনি সচ্চরিত্রের মহান আদর্শের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম: ৪)
রাসুল (সা.)-কে শান্তি ও কল্যাণের জন্য বিশ্ববাসীর রহমত আখ্যায়িত করে কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)
আদর্শ সমাজ গঠন ও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শ সর্বকালের সবার জন্য অনুকরণীয়। তিনি যে পদ্ধতি অবলম্বন করে একটি ভঙ্গুর সমাজব্যবস্থার সংস্কার করেছিলেন, সবদিক দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন উন্নতি অগ্রগতির শীর্ষ চূড়ায়—আজকের এই অস্থিতিশীল সমাজও চাইলে সেই পথ-পদ্ধতি অনুকরণের মাধ্যমে পৌঁছাতে পারে তেমন উচ্চতায়। রাসুল (সা.) আদর্শ সমাজ গঠনে যেভাবে ভূমিকা রেখেছিলেন, যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছিলেন তার কিঞ্চিৎ আলোচনা তুলে ধরা হলো:
হিলফুল ফুজুলে যোগদান
রাসুল (সা.) নবুওয়াত লাভের আগ থেকেই ছিলেন সকলের বিশ্বস্ত, আস্থাভাজন। মানুষেরা তাঁকে ভালোবেসে দিয়েছিল ‘আল-আমিন’ উপাধি। সমাজে তখন জুলুম, অনাচার, পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ, হিংসা কোন্দল লেগেই থাকত। সমাজের এহেন দুরবস্থা তাঁর কিশোর মনকে আহত করে। সে সময় তিনি যোগদান করলেন ‘হিলফুল ফুজুল’ নামের শান্তিসংঘে। পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হন অন্য সবার সঙ্গে। নবুওয়াত-পরবর্তী জীবনে এই চুক্তির কথা স্মরণ করে তিনি বলতেন, ‘এই চুক্তির বিনিময়ে কেউ যদি আমাকে লাল রঙের উট দিতে সম্মত হতো, তবু আমি চুক্তি পরিহার করতাম না।’ (মুসনাদ আহমাদ: ১৬৫৫)
নবুওয়াত-পরবর্তী সময়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন পদ্ধতি ও কর্মপন্থা অবলম্বন করেছিলেন। তার মধ্য থেকে কয়েকটি এই:
একাত্মবাদের দিকে আহ্বান
মানুষের একমাত্র সফলতা আল্লাহ ও রাসুলকে মনেপ্রাণে মানা এবং বিশ্বাস করার মধ্যেই নিহিত। তাই তিনি মানুষকে আহ্বান করলেন, ‘হে লোকসকল, তোমরা বলো, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই তাহলে সফলকাম হবে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৬ / ২৪)। রাসুলের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে যারা ইমান এনেছিল তাঁরা সফলকাম হয়েছিল। যারা আনেনি তারা হয়েছে বিফল।
নারীর যথাযথ মর্যাদা দান
জাহেলিয়াতের সে যুগে নারীরা ছিল অবহেলিত, নিগৃহীত, কেবলই ভোগ্যপণ্য। তাদের ছিল না বিন্দুমাত্র মর্যাদা, সম্মান। রাসুল (সা.) ফিরিয়ে দিলেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা। ঘোষণা করলেন, ‘যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা সম্পাদন করেছে, সেই কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নামে যাওয়া থেকে প্রতিবন্ধক হবে।’ (জামে তিরমিজি: ১৯১৩)
দাসদাসীর সঙ্গে সদাচরণ
তৎকালীন সমাজে গোলাম বাদীর প্রচলন ছিল। মনিবেরা তাদের সঙ্গে যাচ্ছেতাই আচরণ করত। কেমন যেন মানুষই ভাবত না। রাসুল (সা.) তাদের এই অমানবিক আচরণ থেকে বারণ করলেন। তাদের মৌলিক অধিকার প্রদানে নির্দেশ দিলেন—‘তারা তোমাদের ভাই, আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার অধীনে তার ভাই রয়েছে তার উচিত সে নিজে যা খায় তাকেও তা-ই খেতে দেওয়া, নিজে যা পরিধান করে তাকেও তা-ই পরতে দেওয়া এবং তার অসাধ্য কোনো কাজ তার ওপর না চাপানো। আর যদি এমন কোনো কষ্টসাধ্য কাজের ভার তাকে দেওয়া হয় তাহলে সে যেন তাকে সাহায্য করে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫১৫৮)
মদ জুয়া নিষিদ্ধকরণ
তখনকার সময়ে মদপান ছিল সকলের প্রিয় পানীয়। পারতপক্ষে অতি সামান্য উপকার ছাড়া মদপানে ক্ষতিই বেশি। কারণ, মানুষ যখন নেশাগ্রস্ত হয় তখন অজান্তে অনেক কিছু ঘটিয়ে ফেলে। আল্লাহ তাআলা রাসুলের ওপর বিধান নাজিল করলেন, ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন, উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ ও মানুষের জন্য উপকার। কিন্তু তাদের পাপ উপকার অপেক্ষা বেশি।’ (সুরা বাকারা: ২১৯)
তেমনিভাবে জুয়া থেকেও নিষেধ করেন। কারণ, তা অনিশ্চয়তা, লোভ এবং অনৈক্য সৃষ্টির মাধ্যম।
জাকাতের বিধান প্রবর্তন
দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনৈতিক দৈন্যদশা দূর করে সমাজের সাধারণ অসহায় দুস্থ মানুষদের দিকে তাকিয়ে রাসুলের ওপর আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করলেন জাকাতের বিধান। কোরআনের ভাষ্য, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত দাও’ (সুরা বাকারা: ৪৩)
পরস্পরের ভেতর শান্তি চুক্তি
ইসলামের অমিয় বাণী বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে থাকল। মানুষ ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে দলে দলে আশ্রয় নিচ্ছিল শাশ্বত এ দ্বীনের ছায়াতলে। সেই সঙ্গে বাড়ছিল ইসলামের শত্রু কাফের মুশরিকদের সংখ্যা। তারা ইসলামের নাম-নিশানাকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে নানা ষড়যন্ত্র আঁটছিল। রাসুল (সা.) অত্যন্ত সুকৌশলে তাদের দমন করেছেন। প্রথমে শান্তির প্রস্তাব পেশ করেছেন, তা মেনে নিলে তাদের সঙ্গে আর কোনো যুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা হতো না। আর যারা অমান্য করত, পেশিশক্তির দাপট দেখিয়ে যুদ্ধকেই বেছে নিত তাদের সঙ্গে একমাত্র ফয়সালা হতো তলোয়ারই। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সন্ধিচুক্তির মাধ্যমে সমাধান হয়ে যেত।
মদিনা সনদ
মদিনায় হিজরতের পর রাসুল (সা.) জাতীয় নিরাপত্তা এবং পারস্পরিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে প্রবর্তন করলেন ‘মদিনা সনদ’। সেসময় যেহেতু একই সমাজে মুসলিম এবং কাফের মুশরিকেরা বসবাস করত তাই উভয় পক্ষের মধ্যেই শান্তি এবং সন্ধিচুক্তি থাকত। কেউ কারও ক্ষতি করার চেষ্টা করত না। যারা এরূপ করত তাদের পরিণাম হতো খারাপ। আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে উল্লেখ করেছেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা: ৮)
সবিশেষ ইসলামের সত্য বাণী দ্রুতই পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। সত্যান্বেষী মানুষেরা দলে দলে আশ্রয় নিতে থাকে ইসলামের পতাকাতলে। অন্ধকার বিদূরিত হয়ে জ্বলে ওঠে সত্যের আলো। সমাজ থেকে দূর হয়ে যায় যাবতীয় পাপ, অন্যায় আর অসাধুতা। রাসুলের সংস্পর্শ লাভে একসময়ের পাষণ্ড, নির্দয় মানুষগুলোও পরিণত হয় সোনার মানুষে।
ইসলামের এই অগ্রযাত্রা কেবল সম্ভব হয়েছে রাসুল (সা.)-এর সদাচরণ, মানবিকতা আর ইনসাফি মনোভাবের ফলেই। এমনকি অমুসলিম দার্শনিকেরাও তা অকপটে স্বীকার করেছেন।
নাঈমুল হাসান তানযীম

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, সর্বশেষ নবী ও রাসুল। তাঁর পবিত্র জীবনে নবী-রাসুলদের যাবতীয় মহৎ গুণাবলির সমাবেশ ঘটেছিল। তিনি ছিলেন সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, কল্যাণকামিতা ও ন্যায়পরায়ণতার প্রোজ্জ্বল উদাহরণ। ছিলেন ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি যেন। সাহাবায়ে কেরাম উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-কে রাসুলের চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘পুরো কোরআনই ছিল তাঁর চরিত্র।’ অর্থাৎ তিনি ছিলেন কোরআনে কারিমের বাস্তব নমুনা। (আদাবুল মুফরাদ: ৩০৮)
তিনি এমন এক সময়ে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন যে সময়টা ছিল মানবেতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণ্যতম, বর্বরোচিত, কুসংস্কার আর অন্ধকারাচ্ছন্ন। ছিল গোত্রে গোত্রে কৌলীন্য, হানাহানি। তুচ্ছ বিষয়ে রক্তপাত ঘটার মতো ঘটনা ঘটত অহরহ। যুদ্ধ বিগ্রহ লেগেই থাকত সব সময়। তাঁর পবিত্র পরশে সে সমাজ ও সমাজের মানুষেরা আমূল পাল্টে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কল্যাণ ও ন্যায় ইনসাফভিত্তিক আদর্শিক সমাজ। তাঁর আদর্শের কথা তো স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলে দিলেন এভাবে, ‘নিশ্চয়ই আপনি সচ্চরিত্রের মহান আদর্শের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম: ৪)
রাসুল (সা.)-কে শান্তি ও কল্যাণের জন্য বিশ্ববাসীর রহমত আখ্যায়িত করে কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)
আদর্শ সমাজ গঠন ও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শ সর্বকালের সবার জন্য অনুকরণীয়। তিনি যে পদ্ধতি অবলম্বন করে একটি ভঙ্গুর সমাজব্যবস্থার সংস্কার করেছিলেন, সবদিক দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন উন্নতি অগ্রগতির শীর্ষ চূড়ায়—আজকের এই অস্থিতিশীল সমাজও চাইলে সেই পথ-পদ্ধতি অনুকরণের মাধ্যমে পৌঁছাতে পারে তেমন উচ্চতায়। রাসুল (সা.) আদর্শ সমাজ গঠনে যেভাবে ভূমিকা রেখেছিলেন, যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছিলেন তার কিঞ্চিৎ আলোচনা তুলে ধরা হলো:
হিলফুল ফুজুলে যোগদান
রাসুল (সা.) নবুওয়াত লাভের আগ থেকেই ছিলেন সকলের বিশ্বস্ত, আস্থাভাজন। মানুষেরা তাঁকে ভালোবেসে দিয়েছিল ‘আল-আমিন’ উপাধি। সমাজে তখন জুলুম, অনাচার, পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ, হিংসা কোন্দল লেগেই থাকত। সমাজের এহেন দুরবস্থা তাঁর কিশোর মনকে আহত করে। সে সময় তিনি যোগদান করলেন ‘হিলফুল ফুজুল’ নামের শান্তিসংঘে। পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হন অন্য সবার সঙ্গে। নবুওয়াত-পরবর্তী জীবনে এই চুক্তির কথা স্মরণ করে তিনি বলতেন, ‘এই চুক্তির বিনিময়ে কেউ যদি আমাকে লাল রঙের উট দিতে সম্মত হতো, তবু আমি চুক্তি পরিহার করতাম না।’ (মুসনাদ আহমাদ: ১৬৫৫)
নবুওয়াত-পরবর্তী সময়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন পদ্ধতি ও কর্মপন্থা অবলম্বন করেছিলেন। তার মধ্য থেকে কয়েকটি এই:
একাত্মবাদের দিকে আহ্বান
মানুষের একমাত্র সফলতা আল্লাহ ও রাসুলকে মনেপ্রাণে মানা এবং বিশ্বাস করার মধ্যেই নিহিত। তাই তিনি মানুষকে আহ্বান করলেন, ‘হে লোকসকল, তোমরা বলো, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই তাহলে সফলকাম হবে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৬ / ২৪)। রাসুলের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে যারা ইমান এনেছিল তাঁরা সফলকাম হয়েছিল। যারা আনেনি তারা হয়েছে বিফল।
নারীর যথাযথ মর্যাদা দান
জাহেলিয়াতের সে যুগে নারীরা ছিল অবহেলিত, নিগৃহীত, কেবলই ভোগ্যপণ্য। তাদের ছিল না বিন্দুমাত্র মর্যাদা, সম্মান। রাসুল (সা.) ফিরিয়ে দিলেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা। ঘোষণা করলেন, ‘যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা সম্পাদন করেছে, সেই কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নামে যাওয়া থেকে প্রতিবন্ধক হবে।’ (জামে তিরমিজি: ১৯১৩)
দাসদাসীর সঙ্গে সদাচরণ
তৎকালীন সমাজে গোলাম বাদীর প্রচলন ছিল। মনিবেরা তাদের সঙ্গে যাচ্ছেতাই আচরণ করত। কেমন যেন মানুষই ভাবত না। রাসুল (সা.) তাদের এই অমানবিক আচরণ থেকে বারণ করলেন। তাদের মৌলিক অধিকার প্রদানে নির্দেশ দিলেন—‘তারা তোমাদের ভাই, আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার অধীনে তার ভাই রয়েছে তার উচিত সে নিজে যা খায় তাকেও তা-ই খেতে দেওয়া, নিজে যা পরিধান করে তাকেও তা-ই পরতে দেওয়া এবং তার অসাধ্য কোনো কাজ তার ওপর না চাপানো। আর যদি এমন কোনো কষ্টসাধ্য কাজের ভার তাকে দেওয়া হয় তাহলে সে যেন তাকে সাহায্য করে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫১৫৮)
মদ জুয়া নিষিদ্ধকরণ
তখনকার সময়ে মদপান ছিল সকলের প্রিয় পানীয়। পারতপক্ষে অতি সামান্য উপকার ছাড়া মদপানে ক্ষতিই বেশি। কারণ, মানুষ যখন নেশাগ্রস্ত হয় তখন অজান্তে অনেক কিছু ঘটিয়ে ফেলে। আল্লাহ তাআলা রাসুলের ওপর বিধান নাজিল করলেন, ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন, উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ ও মানুষের জন্য উপকার। কিন্তু তাদের পাপ উপকার অপেক্ষা বেশি।’ (সুরা বাকারা: ২১৯)
তেমনিভাবে জুয়া থেকেও নিষেধ করেন। কারণ, তা অনিশ্চয়তা, লোভ এবং অনৈক্য সৃষ্টির মাধ্যম।
জাকাতের বিধান প্রবর্তন
দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনৈতিক দৈন্যদশা দূর করে সমাজের সাধারণ অসহায় দুস্থ মানুষদের দিকে তাকিয়ে রাসুলের ওপর আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করলেন জাকাতের বিধান। কোরআনের ভাষ্য, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত দাও’ (সুরা বাকারা: ৪৩)
পরস্পরের ভেতর শান্তি চুক্তি
ইসলামের অমিয় বাণী বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে থাকল। মানুষ ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে দলে দলে আশ্রয় নিচ্ছিল শাশ্বত এ দ্বীনের ছায়াতলে। সেই সঙ্গে বাড়ছিল ইসলামের শত্রু কাফের মুশরিকদের সংখ্যা। তারা ইসলামের নাম-নিশানাকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে নানা ষড়যন্ত্র আঁটছিল। রাসুল (সা.) অত্যন্ত সুকৌশলে তাদের দমন করেছেন। প্রথমে শান্তির প্রস্তাব পেশ করেছেন, তা মেনে নিলে তাদের সঙ্গে আর কোনো যুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা হতো না। আর যারা অমান্য করত, পেশিশক্তির দাপট দেখিয়ে যুদ্ধকেই বেছে নিত তাদের সঙ্গে একমাত্র ফয়সালা হতো তলোয়ারই। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সন্ধিচুক্তির মাধ্যমে সমাধান হয়ে যেত।
মদিনা সনদ
মদিনায় হিজরতের পর রাসুল (সা.) জাতীয় নিরাপত্তা এবং পারস্পরিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে প্রবর্তন করলেন ‘মদিনা সনদ’। সেসময় যেহেতু একই সমাজে মুসলিম এবং কাফের মুশরিকেরা বসবাস করত তাই উভয় পক্ষের মধ্যেই শান্তি এবং সন্ধিচুক্তি থাকত। কেউ কারও ক্ষতি করার চেষ্টা করত না। যারা এরূপ করত তাদের পরিণাম হতো খারাপ। আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে উল্লেখ করেছেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা: ৮)
সবিশেষ ইসলামের সত্য বাণী দ্রুতই পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। সত্যান্বেষী মানুষেরা দলে দলে আশ্রয় নিতে থাকে ইসলামের পতাকাতলে। অন্ধকার বিদূরিত হয়ে জ্বলে ওঠে সত্যের আলো। সমাজ থেকে দূর হয়ে যায় যাবতীয় পাপ, অন্যায় আর অসাধুতা। রাসুলের সংস্পর্শ লাভে একসময়ের পাষণ্ড, নির্দয় মানুষগুলোও পরিণত হয় সোনার মানুষে।
ইসলামের এই অগ্রযাত্রা কেবল সম্ভব হয়েছে রাসুল (সা.)-এর সদাচরণ, মানবিকতা আর ইনসাফি মনোভাবের ফলেই। এমনকি অমুসলিম দার্শনিকেরাও তা অকপটে স্বীকার করেছেন।

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, সর্বশেষ নবী ও রাসুল। তাঁর পবিত্র জীবনে নবী-রাসুলদের যাবতীয় মহৎ গুণাবলির সমাবেশ ঘটেছিল। তিনি ছিলেন সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, কল্যাণকামিতা ও ন্যায়পরায়ণতার প্রোজ্জ্বল উদাহরণ। ছিলেন ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি যেন। সাহাবায়ে কেরাম উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-কে রাসুলের চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘পুরো কোরআনই ছিল তাঁর চরিত্র।’ অর্থাৎ তিনি ছিলেন কোরআনে কারিমের বাস্তব নমুনা। (আদাবুল মুফরাদ: ৩০৮)
তিনি এমন এক সময়ে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন যে সময়টা ছিল মানবেতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণ্যতম, বর্বরোচিত, কুসংস্কার আর অন্ধকারাচ্ছন্ন। ছিল গোত্রে গোত্রে কৌলীন্য, হানাহানি। তুচ্ছ বিষয়ে রক্তপাত ঘটার মতো ঘটনা ঘটত অহরহ। যুদ্ধ বিগ্রহ লেগেই থাকত সব সময়। তাঁর পবিত্র পরশে সে সমাজ ও সমাজের মানুষেরা আমূল পাল্টে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কল্যাণ ও ন্যায় ইনসাফভিত্তিক আদর্শিক সমাজ। তাঁর আদর্শের কথা তো স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলে দিলেন এভাবে, ‘নিশ্চয়ই আপনি সচ্চরিত্রের মহান আদর্শের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম: ৪)
রাসুল (সা.)-কে শান্তি ও কল্যাণের জন্য বিশ্ববাসীর রহমত আখ্যায়িত করে কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)
আদর্শ সমাজ গঠন ও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শ সর্বকালের সবার জন্য অনুকরণীয়। তিনি যে পদ্ধতি অবলম্বন করে একটি ভঙ্গুর সমাজব্যবস্থার সংস্কার করেছিলেন, সবদিক দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন উন্নতি অগ্রগতির শীর্ষ চূড়ায়—আজকের এই অস্থিতিশীল সমাজও চাইলে সেই পথ-পদ্ধতি অনুকরণের মাধ্যমে পৌঁছাতে পারে তেমন উচ্চতায়। রাসুল (সা.) আদর্শ সমাজ গঠনে যেভাবে ভূমিকা রেখেছিলেন, যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছিলেন তার কিঞ্চিৎ আলোচনা তুলে ধরা হলো:
হিলফুল ফুজুলে যোগদান
রাসুল (সা.) নবুওয়াত লাভের আগ থেকেই ছিলেন সকলের বিশ্বস্ত, আস্থাভাজন। মানুষেরা তাঁকে ভালোবেসে দিয়েছিল ‘আল-আমিন’ উপাধি। সমাজে তখন জুলুম, অনাচার, পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ, হিংসা কোন্দল লেগেই থাকত। সমাজের এহেন দুরবস্থা তাঁর কিশোর মনকে আহত করে। সে সময় তিনি যোগদান করলেন ‘হিলফুল ফুজুল’ নামের শান্তিসংঘে। পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হন অন্য সবার সঙ্গে। নবুওয়াত-পরবর্তী জীবনে এই চুক্তির কথা স্মরণ করে তিনি বলতেন, ‘এই চুক্তির বিনিময়ে কেউ যদি আমাকে লাল রঙের উট দিতে সম্মত হতো, তবু আমি চুক্তি পরিহার করতাম না।’ (মুসনাদ আহমাদ: ১৬৫৫)
নবুওয়াত-পরবর্তী সময়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন পদ্ধতি ও কর্মপন্থা অবলম্বন করেছিলেন। তার মধ্য থেকে কয়েকটি এই:
একাত্মবাদের দিকে আহ্বান
মানুষের একমাত্র সফলতা আল্লাহ ও রাসুলকে মনেপ্রাণে মানা এবং বিশ্বাস করার মধ্যেই নিহিত। তাই তিনি মানুষকে আহ্বান করলেন, ‘হে লোকসকল, তোমরা বলো, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই তাহলে সফলকাম হবে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৬ / ২৪)। রাসুলের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে যারা ইমান এনেছিল তাঁরা সফলকাম হয়েছিল। যারা আনেনি তারা হয়েছে বিফল।
নারীর যথাযথ মর্যাদা দান
জাহেলিয়াতের সে যুগে নারীরা ছিল অবহেলিত, নিগৃহীত, কেবলই ভোগ্যপণ্য। তাদের ছিল না বিন্দুমাত্র মর্যাদা, সম্মান। রাসুল (সা.) ফিরিয়ে দিলেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা। ঘোষণা করলেন, ‘যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা সম্পাদন করেছে, সেই কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নামে যাওয়া থেকে প্রতিবন্ধক হবে।’ (জামে তিরমিজি: ১৯১৩)
দাসদাসীর সঙ্গে সদাচরণ
তৎকালীন সমাজে গোলাম বাদীর প্রচলন ছিল। মনিবেরা তাদের সঙ্গে যাচ্ছেতাই আচরণ করত। কেমন যেন মানুষই ভাবত না। রাসুল (সা.) তাদের এই অমানবিক আচরণ থেকে বারণ করলেন। তাদের মৌলিক অধিকার প্রদানে নির্দেশ দিলেন—‘তারা তোমাদের ভাই, আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার অধীনে তার ভাই রয়েছে তার উচিত সে নিজে যা খায় তাকেও তা-ই খেতে দেওয়া, নিজে যা পরিধান করে তাকেও তা-ই পরতে দেওয়া এবং তার অসাধ্য কোনো কাজ তার ওপর না চাপানো। আর যদি এমন কোনো কষ্টসাধ্য কাজের ভার তাকে দেওয়া হয় তাহলে সে যেন তাকে সাহায্য করে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫১৫৮)
মদ জুয়া নিষিদ্ধকরণ
তখনকার সময়ে মদপান ছিল সকলের প্রিয় পানীয়। পারতপক্ষে অতি সামান্য উপকার ছাড়া মদপানে ক্ষতিই বেশি। কারণ, মানুষ যখন নেশাগ্রস্ত হয় তখন অজান্তে অনেক কিছু ঘটিয়ে ফেলে। আল্লাহ তাআলা রাসুলের ওপর বিধান নাজিল করলেন, ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন, উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ ও মানুষের জন্য উপকার। কিন্তু তাদের পাপ উপকার অপেক্ষা বেশি।’ (সুরা বাকারা: ২১৯)
তেমনিভাবে জুয়া থেকেও নিষেধ করেন। কারণ, তা অনিশ্চয়তা, লোভ এবং অনৈক্য সৃষ্টির মাধ্যম।
জাকাতের বিধান প্রবর্তন
দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনৈতিক দৈন্যদশা দূর করে সমাজের সাধারণ অসহায় দুস্থ মানুষদের দিকে তাকিয়ে রাসুলের ওপর আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করলেন জাকাতের বিধান। কোরআনের ভাষ্য, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত দাও’ (সুরা বাকারা: ৪৩)
পরস্পরের ভেতর শান্তি চুক্তি
ইসলামের অমিয় বাণী বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে থাকল। মানুষ ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে দলে দলে আশ্রয় নিচ্ছিল শাশ্বত এ দ্বীনের ছায়াতলে। সেই সঙ্গে বাড়ছিল ইসলামের শত্রু কাফের মুশরিকদের সংখ্যা। তারা ইসলামের নাম-নিশানাকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে নানা ষড়যন্ত্র আঁটছিল। রাসুল (সা.) অত্যন্ত সুকৌশলে তাদের দমন করেছেন। প্রথমে শান্তির প্রস্তাব পেশ করেছেন, তা মেনে নিলে তাদের সঙ্গে আর কোনো যুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা হতো না। আর যারা অমান্য করত, পেশিশক্তির দাপট দেখিয়ে যুদ্ধকেই বেছে নিত তাদের সঙ্গে একমাত্র ফয়সালা হতো তলোয়ারই। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সন্ধিচুক্তির মাধ্যমে সমাধান হয়ে যেত।
মদিনা সনদ
মদিনায় হিজরতের পর রাসুল (সা.) জাতীয় নিরাপত্তা এবং পারস্পরিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে প্রবর্তন করলেন ‘মদিনা সনদ’। সেসময় যেহেতু একই সমাজে মুসলিম এবং কাফের মুশরিকেরা বসবাস করত তাই উভয় পক্ষের মধ্যেই শান্তি এবং সন্ধিচুক্তি থাকত। কেউ কারও ক্ষতি করার চেষ্টা করত না। যারা এরূপ করত তাদের পরিণাম হতো খারাপ। আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে উল্লেখ করেছেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা: ৮)
সবিশেষ ইসলামের সত্য বাণী দ্রুতই পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। সত্যান্বেষী মানুষেরা দলে দলে আশ্রয় নিতে থাকে ইসলামের পতাকাতলে। অন্ধকার বিদূরিত হয়ে জ্বলে ওঠে সত্যের আলো। সমাজ থেকে দূর হয়ে যায় যাবতীয় পাপ, অন্যায় আর অসাধুতা। রাসুলের সংস্পর্শ লাভে একসময়ের পাষণ্ড, নির্দয় মানুষগুলোও পরিণত হয় সোনার মানুষে।
ইসলামের এই অগ্রযাত্রা কেবল সম্ভব হয়েছে রাসুল (সা.)-এর সদাচরণ, মানবিকতা আর ইনসাফি মনোভাবের ফলেই। এমনকি অমুসলিম দার্শনিকেরাও তা অকপটে স্বীকার করেছেন।

ইসলামের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত রোজা। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দেবেন। এ ছাড়া জান্নাতে রোজাদারদের জন্য থাকবে বিশেষ প্রবেশপথ, যা দিয়ে একমাত্র তারাই প্রবেশ করবে।
৭ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৪ ঘণ্টা আগে
সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ দূর হয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সালামের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম জানানো হয়, তখন তার চেয়েও উত্তমভাবে জবাব দাও অথবা অন্তত সেভাবে জবাব দাও।’ (সুরা নিসা: ৮৬)
২১ ঘণ্টা আগে
হাদিয়া শুধু একটি বস্তুগত বিনিময় নয়, এটি হৃদয়ের অনুভূতি, ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছার এক শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। ইসলামে এই আমলটিকে অত্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, এর মাধ্যমে পাষাণ হৃদয়ও নরম হয়ে যায় এবং তিক্ত সম্পর্কও মধুর হয়ে ওঠে। হাদিয়া আদান-প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মাঝে আন্তরিকতা সৃষ্টি করা।
১ দিন আগেইসলাম ডেস্ক

ইসলামের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত রোজা। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দেবেন। এ ছাড়া জান্নাতে রোজাদারদের জন্য থাকবে বিশেষ প্রবেশপথ, যা দিয়ে একমাত্র তারাই প্রবেশ করবে।
মহানবী (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোজাদাররা প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাদের প্রবেশের পরই সেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে, যেন এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে না পারে।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৯৬)। প্রিয় নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘যে রোজা অবস্থায় ইন্তেকাল করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। (সহিহ আল জামে: ৬২২৪)
নবী করিম (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতে বলতেন। নিজেও বছরের নানা দিনে নফল রোজা রাখতেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) যেসব দিন নফল রোজা রাখতেন, তার মধ্যে অন্যতম সোমবার। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সোম ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখাকে প্রাধান্য দিতেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ১০২৭)
আবু কাতাদাহ আনসারি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে একবার সোমবারে রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম এবং এই দিনেই আমাকে নবুওয়াত দেওয়া হয়েছিল। অথবা, এই দিনে আমার ওপর (কোরআন) নাজিল করা হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
হাফসা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখতেন। (মাসের প্রথম সপ্তাহের) সোম ও বৃহস্পতিবার এবং (দ্বিতীয় সপ্তাহের) সোমবার।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৪৫১)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, রোজা তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম। সোমবারের রোজা আমাদের জন্য হতে পারে তাকওয়া অর্জনের অপার সুযোগ।

ইসলামের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত রোজা। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দেবেন। এ ছাড়া জান্নাতে রোজাদারদের জন্য থাকবে বিশেষ প্রবেশপথ, যা দিয়ে একমাত্র তারাই প্রবেশ করবে।
মহানবী (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোজাদাররা প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাদের প্রবেশের পরই সেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে, যেন এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে না পারে।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৯৬)। প্রিয় নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘যে রোজা অবস্থায় ইন্তেকাল করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। (সহিহ আল জামে: ৬২২৪)
নবী করিম (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতে বলতেন। নিজেও বছরের নানা দিনে নফল রোজা রাখতেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) যেসব দিন নফল রোজা রাখতেন, তার মধ্যে অন্যতম সোমবার। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সোম ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখাকে প্রাধান্য দিতেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ১০২৭)
আবু কাতাদাহ আনসারি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে একবার সোমবারে রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম এবং এই দিনেই আমাকে নবুওয়াত দেওয়া হয়েছিল। অথবা, এই দিনে আমার ওপর (কোরআন) নাজিল করা হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
হাফসা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখতেন। (মাসের প্রথম সপ্তাহের) সোম ও বৃহস্পতিবার এবং (দ্বিতীয় সপ্তাহের) সোমবার।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৪৫১)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, রোজা তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম। সোমবারের রোজা আমাদের জন্য হতে পারে তাকওয়া অর্জনের অপার সুযোগ।

ইসলামের সত্য বাণী দ্রুতই পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। সত্যান্বেষী মানুষেরা দলে দলে আশ্রয় নিতে থাকে ইসলামের পতাকাতলে। অন্ধকার বিদূরিত হয়ে জ্বলে ওঠে সত্যের আলো। সমাজ থেকে দূর হয়ে যায় যাবতীয় পাপ, অন্যায় আর অসাধুতা। রাসুলের সংস্পর্শ লাভে একসময়ের পাষণ্ড, নির্দয় মানুষগুলোও পরিণত হয় সোনার মানুষে।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৪ ঘণ্টা আগে
সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ দূর হয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সালামের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম জানানো হয়, তখন তার চেয়েও উত্তমভাবে জবাব দাও অথবা অন্তত সেভাবে জবাব দাও।’ (সুরা নিসা: ৮৬)
২১ ঘণ্টা আগে
হাদিয়া শুধু একটি বস্তুগত বিনিময় নয়, এটি হৃদয়ের অনুভূতি, ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছার এক শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। ইসলামে এই আমলটিকে অত্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, এর মাধ্যমে পাষাণ হৃদয়ও নরম হয়ে যায় এবং তিক্ত সম্পর্কও মধুর হয়ে ওঠে। হাদিয়া আদান-প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মাঝে আন্তরিকতা সৃষ্টি করা।
১ দিন আগেইসলাম ডেস্ক

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
| নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
|---|---|---|
| তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ০৪: ৫১ মিনিট |
| ফজর | ০৪: ৫২ মিনিট | ০৬: ০৯ মিনিট |
| জোহর | ১১: ৪৩ মিনিট | ০৩: ৩৮ মিনিট |
| আসর | ০৩: ৩৯ মিনিট | ০৫: ১৪ মিনিট |
| মাগরিব | ০৫: ১৬ মিনিট | ০৬: ৩১ মিনিট |
| এশা | ০৬: ৩২ মিনিট | ০৪: ৫১ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
| নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
|---|---|---|
| তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ০৪: ৫১ মিনিট |
| ফজর | ০৪: ৫২ মিনিট | ০৬: ০৯ মিনিট |
| জোহর | ১১: ৪৩ মিনিট | ০৩: ৩৮ মিনিট |
| আসর | ০৩: ৩৯ মিনিট | ০৫: ১৪ মিনিট |
| মাগরিব | ০৫: ১৬ মিনিট | ০৬: ৩১ মিনিট |
| এশা | ০৬: ৩২ মিনিট | ০৪: ৫১ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

ইসলামের সত্য বাণী দ্রুতই পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। সত্যান্বেষী মানুষেরা দলে দলে আশ্রয় নিতে থাকে ইসলামের পতাকাতলে। অন্ধকার বিদূরিত হয়ে জ্বলে ওঠে সত্যের আলো। সমাজ থেকে দূর হয়ে যায় যাবতীয় পাপ, অন্যায় আর অসাধুতা। রাসুলের সংস্পর্শ লাভে একসময়ের পাষণ্ড, নির্দয় মানুষগুলোও পরিণত হয় সোনার মানুষে।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ইসলামের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত রোজা। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দেবেন। এ ছাড়া জান্নাতে রোজাদারদের জন্য থাকবে বিশেষ প্রবেশপথ, যা দিয়ে একমাত্র তারাই প্রবেশ করবে।
৭ ঘণ্টা আগে
সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ দূর হয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সালামের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম জানানো হয়, তখন তার চেয়েও উত্তমভাবে জবাব দাও অথবা অন্তত সেভাবে জবাব দাও।’ (সুরা নিসা: ৮৬)
২১ ঘণ্টা আগে
হাদিয়া শুধু একটি বস্তুগত বিনিময় নয়, এটি হৃদয়ের অনুভূতি, ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছার এক শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। ইসলামে এই আমলটিকে অত্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, এর মাধ্যমে পাষাণ হৃদয়ও নরম হয়ে যায় এবং তিক্ত সম্পর্কও মধুর হয়ে ওঠে। হাদিয়া আদান-প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মাঝে আন্তরিকতা সৃষ্টি করা।
১ দিন আগেইসলাম ডেস্ক

আদব ও আন্তরিকতার সঙ্গে সালাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শান্তি, কল্যাণ ও নিরাপত্তার বার্তা বহন করে, যা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করে। দুঃখজনকভাবে, সমাজে এই মহান সুন্নাহর চর্চা কমে আসছে।
সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ দূর হয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সালামের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম জানানো হয়, তখন তার চেয়েও উত্তমভাবে জবাব দাও অথবা অন্তত সেভাবে জবাব দাও।’ (সুরা নিসা: ৮৬)
নবীজি (সা.) সালামের মাধ্যমে জান্নাতের পথ সহজ করার শিক্ষা দিয়েছেন। হাদিস অনুসারে, সালামের পূর্ণ বাক্য বিনিময়ে ৩০ নেকি লাভ হয়। (সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৫)
রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাসবে। আর তা হলো পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন করা।’ (সহিহ মুসলিম: ৫৪)
সালামের এত গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও অবহেলা, মনোযোগের অভাব, সালামকে স্রেফ সৌজন্য মনে করার কারণে এর চর্চা কমছে। অপরিচিত বা কম পরিচিত ব্যক্তিকে সালাম দিতে দ্বিধা করা হয়, অথচ হাদিস অনুযায়ী এতেই বেশি সওয়াব। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সালামের চর্চা উল্লেখযোগ্য হারে কমছে।
সালাম কেবল একটি সুন্নাহ নয়, এটি সামাজিক নিরাপত্তা ও আত্মিক শান্তির প্রতীক। যিনি প্রথমে সালাম দেন, তিনি আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় এবং উত্তম। আমরা এই মহান সুন্নাহর ব্যাপক অনুশীলনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও ভালোবাসা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারি।
লেখক: মির্জা রিজওয়ান আলম, প্রাবন্ধিক

আদব ও আন্তরিকতার সঙ্গে সালাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শান্তি, কল্যাণ ও নিরাপত্তার বার্তা বহন করে, যা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করে। দুঃখজনকভাবে, সমাজে এই মহান সুন্নাহর চর্চা কমে আসছে।
সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ দূর হয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সালামের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম জানানো হয়, তখন তার চেয়েও উত্তমভাবে জবাব দাও অথবা অন্তত সেভাবে জবাব দাও।’ (সুরা নিসা: ৮৬)
নবীজি (সা.) সালামের মাধ্যমে জান্নাতের পথ সহজ করার শিক্ষা দিয়েছেন। হাদিস অনুসারে, সালামের পূর্ণ বাক্য বিনিময়ে ৩০ নেকি লাভ হয়। (সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৫)
রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাসবে। আর তা হলো পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন করা।’ (সহিহ মুসলিম: ৫৪)
সালামের এত গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও অবহেলা, মনোযোগের অভাব, সালামকে স্রেফ সৌজন্য মনে করার কারণে এর চর্চা কমছে। অপরিচিত বা কম পরিচিত ব্যক্তিকে সালাম দিতে দ্বিধা করা হয়, অথচ হাদিস অনুযায়ী এতেই বেশি সওয়াব। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সালামের চর্চা উল্লেখযোগ্য হারে কমছে।
সালাম কেবল একটি সুন্নাহ নয়, এটি সামাজিক নিরাপত্তা ও আত্মিক শান্তির প্রতীক। যিনি প্রথমে সালাম দেন, তিনি আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় এবং উত্তম। আমরা এই মহান সুন্নাহর ব্যাপক অনুশীলনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও ভালোবাসা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারি।
লেখক: মির্জা রিজওয়ান আলম, প্রাবন্ধিক

ইসলামের সত্য বাণী দ্রুতই পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। সত্যান্বেষী মানুষেরা দলে দলে আশ্রয় নিতে থাকে ইসলামের পতাকাতলে। অন্ধকার বিদূরিত হয়ে জ্বলে ওঠে সত্যের আলো। সমাজ থেকে দূর হয়ে যায় যাবতীয় পাপ, অন্যায় আর অসাধুতা। রাসুলের সংস্পর্শ লাভে একসময়ের পাষণ্ড, নির্দয় মানুষগুলোও পরিণত হয় সোনার মানুষে।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ইসলামের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত রোজা। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দেবেন। এ ছাড়া জান্নাতে রোজাদারদের জন্য থাকবে বিশেষ প্রবেশপথ, যা দিয়ে একমাত্র তারাই প্রবেশ করবে।
৭ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৪ ঘণ্টা আগে
হাদিয়া শুধু একটি বস্তুগত বিনিময় নয়, এটি হৃদয়ের অনুভূতি, ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছার এক শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। ইসলামে এই আমলটিকে অত্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, এর মাধ্যমে পাষাণ হৃদয়ও নরম হয়ে যায় এবং তিক্ত সম্পর্কও মধুর হয়ে ওঠে। হাদিয়া আদান-প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মাঝে আন্তরিকতা সৃষ্টি করা।
১ দিন আগেসাকী মাহবুব

মানবসমাজে পারস্পরিক ভালোবাসা, সদ্ভাব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা ইসলামের অন্যতম প্রধান শিক্ষা। এই লক্ষ্য অর্জনে হাদিয়া বা উপহার আদান-প্রদান একটি অত্যন্ত কার্যকরী ও পরীক্ষিত পদ্ধতি।
হাদিয়া শুধু একটি বস্তুগত বিনিময় নয়, এটি হৃদয়ের অনুভূতি, ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছার এক শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। ইসলামে এই আমলটিকে অত্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, এর মাধ্যমে পাষাণ হৃদয়ও নরম হয়ে যায় এবং তিক্ত সম্পর্কও মধুর হয়ে ওঠে। হাদিয়া আদান-প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মাঝে আন্তরিকতা সৃষ্টি করা। এটি মানুষের মন থেকে রাগ, বিদ্বেষ ও শত্রুতার ভাব দূর করে ভালোবাসার বীজ বপন করে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর উপহার আদান-প্রদান করো, তাহলে তোমাদের মাঝে ভালোবাসা বৃদ্ধি হবে।’ (জামে তিরমিজি)
অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি বা তিক্ততা সৃষ্টি হয়, যা থেকে শত্রুতার জন্ম নেয়। হাদিয়া এ ক্ষেত্রে জাদুকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। আন্তরিকভাবে দেওয়া একটি উপহার কঠিন হৃদয়ের দেয়াল ভেঙে দিতে সক্ষম।
হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা পরস্পর হাদিয়া আদান-প্রদান করো। কেননা, হাদিয়া অন্তর থেকে বিদ্বেষ দূর করে দেয়।’ (জামে তিরমিজি)। আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলাও, তাহলে তোমাদের বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে; আর তোমরা পরস্পরকে উপহার দাও, তাহলে শত্রুতা দূর হয়ে যাবে।’ (মুআত্তা ইমাম মালেক, আল-আদাবুল মুফরাদ)
বাস্তব জীবনে দেখা যায়, একজন তিক্ততা পোষণকারী আত্মীয় বা প্রতিবেশীকে আন্তরিকতার সঙ্গে একটি উপহার দিলে তার পাষাণ হৃদয়ে পরিবর্তন আসে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এটি প্রমাণ করে যে হাদিয়া মানুষের ভেতরের নেতিবাচক অনুভূতিকে ইতিবাচক রূপে রূপান্তরিত করতে পারে।
হাদিয়া গ্রহণ ও প্রদান করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি প্রিয় অভ্যাস ছিল। তিনি উপহার গ্রহণ করতেন এবং বিনিময়ে কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করতেন। এটি ছিল তাঁর উচ্চ নৈতিকতার প্রমাণ।
আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং এর প্রতিদান দিতেন।’ (সহিহ্ বুখারি)
সামান্য ও নগণ্য হাদিয়াও তিনি ফিরিয়ে দিতেন না। এর মাধ্যমে তিনি উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন যে উপহারের মূল্য নয়, বরং আন্তরিকতাই আসল। হাদিয়া আদান-প্রদান শুধু একটি সামাজিক প্রথা নয়, এটি একটি ইবাদত এবং নবুওয়াতের শিক্ষা। এটি এমন এক মানবিক কৌশল, যা মানুষের হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করে বিদ্বেষ দূর করে ভালোবাসা ও সদ্ভাব প্রতিষ্ঠা করে।
আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সম্পর্কগুলোকে সুন্দর ও মজবুত করার জন্য হাদিয়ার এই ঐশী মাধ্যমটিকে গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য। হাদিয়ার মূল্য নয়, বরং এর পেছনে থাকা আন্তরিকতাই পারে যেকোনো মানুষের অন্তর পরিবর্তন করে সম্পর্ককে স্থায়ী ও মধুর করতে।
লেখক: সহকারী শিক্ষক, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, কশবামাজাইল, পাংশা, রাজবাড়ী।

মানবসমাজে পারস্পরিক ভালোবাসা, সদ্ভাব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা ইসলামের অন্যতম প্রধান শিক্ষা। এই লক্ষ্য অর্জনে হাদিয়া বা উপহার আদান-প্রদান একটি অত্যন্ত কার্যকরী ও পরীক্ষিত পদ্ধতি।
হাদিয়া শুধু একটি বস্তুগত বিনিময় নয়, এটি হৃদয়ের অনুভূতি, ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছার এক শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। ইসলামে এই আমলটিকে অত্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, এর মাধ্যমে পাষাণ হৃদয়ও নরম হয়ে যায় এবং তিক্ত সম্পর্কও মধুর হয়ে ওঠে। হাদিয়া আদান-প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মাঝে আন্তরিকতা সৃষ্টি করা। এটি মানুষের মন থেকে রাগ, বিদ্বেষ ও শত্রুতার ভাব দূর করে ভালোবাসার বীজ বপন করে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর উপহার আদান-প্রদান করো, তাহলে তোমাদের মাঝে ভালোবাসা বৃদ্ধি হবে।’ (জামে তিরমিজি)
অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি বা তিক্ততা সৃষ্টি হয়, যা থেকে শত্রুতার জন্ম নেয়। হাদিয়া এ ক্ষেত্রে জাদুকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। আন্তরিকভাবে দেওয়া একটি উপহার কঠিন হৃদয়ের দেয়াল ভেঙে দিতে সক্ষম।
হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা পরস্পর হাদিয়া আদান-প্রদান করো। কেননা, হাদিয়া অন্তর থেকে বিদ্বেষ দূর করে দেয়।’ (জামে তিরমিজি)। আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলাও, তাহলে তোমাদের বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে; আর তোমরা পরস্পরকে উপহার দাও, তাহলে শত্রুতা দূর হয়ে যাবে।’ (মুআত্তা ইমাম মালেক, আল-আদাবুল মুফরাদ)
বাস্তব জীবনে দেখা যায়, একজন তিক্ততা পোষণকারী আত্মীয় বা প্রতিবেশীকে আন্তরিকতার সঙ্গে একটি উপহার দিলে তার পাষাণ হৃদয়ে পরিবর্তন আসে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এটি প্রমাণ করে যে হাদিয়া মানুষের ভেতরের নেতিবাচক অনুভূতিকে ইতিবাচক রূপে রূপান্তরিত করতে পারে।
হাদিয়া গ্রহণ ও প্রদান করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি প্রিয় অভ্যাস ছিল। তিনি উপহার গ্রহণ করতেন এবং বিনিময়ে কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করতেন। এটি ছিল তাঁর উচ্চ নৈতিকতার প্রমাণ।
আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং এর প্রতিদান দিতেন।’ (সহিহ্ বুখারি)
সামান্য ও নগণ্য হাদিয়াও তিনি ফিরিয়ে দিতেন না। এর মাধ্যমে তিনি উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন যে উপহারের মূল্য নয়, বরং আন্তরিকতাই আসল। হাদিয়া আদান-প্রদান শুধু একটি সামাজিক প্রথা নয়, এটি একটি ইবাদত এবং নবুওয়াতের শিক্ষা। এটি এমন এক মানবিক কৌশল, যা মানুষের হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করে বিদ্বেষ দূর করে ভালোবাসা ও সদ্ভাব প্রতিষ্ঠা করে।
আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সম্পর্কগুলোকে সুন্দর ও মজবুত করার জন্য হাদিয়ার এই ঐশী মাধ্যমটিকে গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য। হাদিয়ার মূল্য নয়, বরং এর পেছনে থাকা আন্তরিকতাই পারে যেকোনো মানুষের অন্তর পরিবর্তন করে সম্পর্ককে স্থায়ী ও মধুর করতে।
লেখক: সহকারী শিক্ষক, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, কশবামাজাইল, পাংশা, রাজবাড়ী।

ইসলামের সত্য বাণী দ্রুতই পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। সত্যান্বেষী মানুষেরা দলে দলে আশ্রয় নিতে থাকে ইসলামের পতাকাতলে। অন্ধকার বিদূরিত হয়ে জ্বলে ওঠে সত্যের আলো। সমাজ থেকে দূর হয়ে যায় যাবতীয় পাপ, অন্যায় আর অসাধুতা। রাসুলের সংস্পর্শ লাভে একসময়ের পাষণ্ড, নির্দয় মানুষগুলোও পরিণত হয় সোনার মানুষে।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ইসলামের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত রোজা। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দেবেন। এ ছাড়া জান্নাতে রোজাদারদের জন্য থাকবে বিশেষ প্রবেশপথ, যা দিয়ে একমাত্র তারাই প্রবেশ করবে।
৭ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৪ ঘণ্টা আগে
সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ দূর হয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সালামের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম জানানো হয়, তখন তার চেয়েও উত্তমভাবে জবাব দাও অথবা অন্তত সেভাবে জবাব দাও।’ (সুরা নিসা: ৮৬)
২১ ঘণ্টা আগে